![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"হাসনাত"
দুই সপ্তাহ পর চমক জয় আবার নানা মুজিবকে পক্ দিল। মুজিব বললেন, এত দিন পর পক্ দিলি? চমক বলল, জি নানাজি বড়ই পেরেশানিতে আছি,দেশে এখন হরতাল,ধর্মঘট আর অবরোধ চলছে।শুনলাম সামনে লাগাতার অসহযোগ আসছে,এসব ঠেকাতেই সময় চলে যাচ্ছে। এ কারনে তোমাকে পক্ দিতে পারি নাই। আমি তোদের চিন্তায় বড় অস্হির থাকি,রেষ্ট পাইনা, বললেন মুজিব। যাক তোর মাকে কানেকশান দে।" আর কথা না বাড়িয়ে চমক মাকে কানেকশান দিল।
আব্বা কেমন আছ তুমি? বললেন হাসিনা। আমি কেমন আছি সেটা জেনে তোর কাজ নেই। তুই কেমন আছিস সেইটা বল আগে, বললেন মুজিব। ভাল আছি আব্বা। টুকটাক সমস্যাতো থাকবেই,তবে সব আন্ডার কনট্রোল। তুমি জান,সংসদের নব্বই পার্সেন্ট সীট আমার জোটের। প্রশাসন আর পুলিশে আশানুরুপ দলীয় করন করা হয়েছে, মিডিয়ার কন্ঠ রোধ করা হয়েছে,বিরোধী দল গতি হারা-বাড়ি ছাড়া,বিডিআর মিউটিনিতে মিলিট্রি মাজা ভাংগা। এতেও যদি কাজ না হয় পরশি বাড়ির দাদারা তো আছেনই, তারা তাদের মত চেষ্টা করছে, এক দমে কথা বলে থামল হাসিনা। বুঝতে পারছি তুই অনেক কিছু করে ফেলছিস। কিন্তু আমি এসব কিছুতেই ভরসা রাখতে পারছিনা। কেন জানতে চাস? তয় মনযোগ দিয়া শুন।এবার শেখ মুজিব বলা শুরু করলেন।...
তুই জানিস সংসদে আমার ২৯৩টা আসন ছিল। আমার দল ছাড়া দেশে আর কোন দল ছিল না, সারা দেশ আমার নামে পাগল ছিল। কিন্তু ৭২-৭৫, মাত্র তিন বছরেই সব উলট-পালট হয়ে যায়। আমার পপুলারিটি শুন্যে নেমে আসে। কাজেই ২৬৩ আসনের বরাই করিসনা। আমি তোর বর্তমান নিয়া বেশ চিন্তায় আছি। চার দিকে আওয়াজ আছে সুষ্ঠু ইলেকশন হলে তুই ২৬৩ আসনে জামানত হারাবি।
প্রশাসনে দলীয় করনের কথা বলছিস? আমিতো ৭২‘ এ একটা ব্যাজই ঢোকাইছিলাম কেবল ছাত্র লীগ আর যুব লীগের ক্যাডার। তোফায়েলরে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। সরকারের ঐ চাকুরেদের নাম হয়ে গিয়েছিল তোফায়েল ক্যাডার। কিন্তু ওরা কি আমার ধস ঠেকাইতে পারছিল? পারে নাই। পুলিশ গুলারে রাস্তা থেকে ধরে এনে আইজি,এসপি,ওসি বানাইছিলাম। ওরা কেউই আমার বিপদের দিনে কাজে আসে নাই। আমারতো মনে হয়না এই সব দলবাজ অফিসার তোর বিপদে কোন কাজে আসব। খুজ নিয়া দেখ যেই গুলা তোর থেকে বেশী সুবিধা নিছে তলে তলে ওরা খালেদার সাথে যোগাযোগ শুরু করে দিছে।
তুই মিডিয়া কন্ট্রোলের কথা বলছিস। তার মানে যারা তোর পক্ষে ওদের কাজ করার সুযোগ দিছিস আর যারা তোর ভুল ধরাইয়া দেওয়ার চেষ্টা করে ওদের গলা চেপে ধরিস। তোর মনে আছে আমি চাইরটা বাদে সব কাগজ বন্ধ করে দিছিলাম। কিন্তু ঐসব কইরা তো আর পতন ঠেকানো যায় নাই। আজ বুঝতে পারছি ঐ কাগজ গুলারে বন্ধ না কইরা যদি কাজ করার সুযোগ দিতাম, ওদের সমালোচনা গ্রাহ্য করে সংশোধন হইতাম, তাহইলে আমার আজকের করুন পরিণতি হইতনা। আশ-পাশের চাটুকার গুলা আমারে ভুল বুঝাইয়া যেমন ডুবাইছে আমারে, তেমনি ডুবাইছে দেশটারে। তোরে একটা কথা কই,এখনও সময় আছে গোয়ারতুমি ছাইড়া মত প্রকাশের সুযোগ দে। নাহলে তো বুঝতেই পারিস......
বিরোধীদলকে কোনঠাসা করে তুই বড়ই তৃপ্তিতে আছিস মনে হয়। আমার সময় অত কোন বড় বিরোধীদল ছিলনা। জাসদ-বাসদ যারা ছিল ওদেরে মাইরের উপর রাখছিলাম। সিরাজ সিকদাররে তো হাওয়া করে দিছিলাম। ভাল কথা ইনুর থেকে তুই সাবধানে থাকিস। ভয় হয় ও আবার না ভিতরে ঢোকে তোর আপন সেজে পুরানা শত্রুতা সাধন করে। যে ইনু আমার মরার খবর শুনে ট্যাংকের উপর উঠে লাফায়, সে হঠাৎ এত ভাল হয়ে গেল। ওর ভেতরে নিশ্চই মতলব আছে।
বিডিআর মিউটিনিতে মিলিট্রির মাজা ভাংগা নিয়ে তুই কৌতুক করেছিস। শুন, আমার সময়ে নামে মাত্র একটা মিলিট্রির ডিভিশন রাখছিলাম। ওদের না ছিল পুশাক না ছিল খাবার। আর দাদাদের প্রেশকৃপশনে রক্ষী বাহিনী বানিয়ে ওদের কতই না জৌলুসে রাখছিলাম। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। হাবাতে মিলিট্রিরা অতি বৈশম্যে দিশা হারা হয়ে যখন আমার উপর ঝাল মিটায়, তখন ঐ নাদুস-নুদুস শুয়র গুলা আমারে বাচানো দূরে থাক, নিজেরাই জান ভয়ে পালাইছিল। হেড কোয়ারটারে থাকা কাপুরুষ গুলা ভয়ে কাপর নষ্ট করে ফেলছিল। অথচ ঐ ইদুর গুলা একবারও ভাবলনা ওদের জন্যই আমার এই অবস্থা। আজকে কিন্তু মিলিট্রির আগের অবস্থা নাই। ওরা গত ৩৫ বছরে অনেক চৌকস হইছে, সারা দুনিয়া জোরে পিস কিপিং করে। কয়েক জনকে মেরেই যদি মনে করিস ওরা সব শেষ তাহলে ভুল করবি। আমার মনে হয় ওদেরে নিয়া যত কম ঘাটাঘাটি করা যায় ততই ভাল।
পাশের বাড়ির দাদাদের কথা বলে আমার মনের জালা বাড়িয়ে দিয়েছিস। ওদের আমি কি দেই নাই? করিডোর দিয়েছি, দেশের সামরিক সরঞ্জাম অবাধে নিয়ে গেছে বাধা দেইনি, ব্যাবসা দিয়েছি, পানির হিস্যা ছেড়েছি, ওদের প্রেসকৃপশনে মিলিট্রিকে দুরবল করেছি। ওরা বলেছিল আমার নিরাপত্তায় ওরাই যথেষ্ট। কিন্তু দেখ ওদের লাভ দেখতে গিয়া দেশের মানুষ ক্ষেপাইলাম, মিলিট্রি চেতাইলাম। আমার জানটা যখন আজরাইলের হাতে, ওরা ফিড়েও চায় নাই। ওরা নিজের লাভ ছাড়া কিছুই বুঝেনা। এখনও সময় আছে দাদার পিরিতি ছাইরা দেশের পিরিতে পড়। নাহইলে কি পরিণতি হয় সেটাতো আমাকেই দেখছিস।
অনেক ক্ষন চুপ থেকে হাসিনা বাবার কথা শুনছিল। কিন্তু দাদার পিরিতি ছাড়তে বলায় সে ক্ষেপে গিয়ে বলল, আববা আগের সেই দিন নাই। দাদারা এখন আগের চাইতে অনেক মোটা-তাজা আর শক্তি শালী হইছে। ওদের পিরিতি ছাড়া আমার একদিনও চলবেনা। দুনিয়ার সব ছাড়তে বলো ছাড়ব, কিন্তু ওদেরে ছাড়তে বলোনা ও আমি পারবনা। মেয়ের কথায় হতাস হয়ে মুজিব বললেন,"আমাকে দেখেও যদি না শিখিস তয় তুই বড়ই অভারে। আমিও মুরুব্বিদের কথা শুনতাম না, মুরুব্বিদের কথা না শুনার ফল কি তা আমি জানি, জানে দেশ বাসী। সময় থাকতে জানলিনা কেবল তুই-আর সেটাই আমার দূঃখ।
©somewhere in net ltd.