| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মহিউদ্দিন হায়দার
শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।

আমি শুভংকর—নন্দিনির শুভংকর।
আজ চট্টগ্রামের এক নিঃশব্দ হোটেল রুমে বসে আছি। জানালার বাইরে সমুদ্রের ঢেউ ভাঙছে, কিন্তু আমার ভেতরে কেবল ভাঙনের শব্দ। ব্যবসা-বাণিজ্যে কয়েক মাস ধরেই লোকসান, আর্থিক অবস্থা এমনই শোচনীয় যে নিজেকেই নিজের আয়নায় চিনতে কষ্ট হয়।
নন্দিনিকে জানিয়েছিলাম—আমি চট্টগ্রামে আসবো।
সে এসেছিলোও। যথারীতি, তার মতোই নিঃশব্দে, কিন্তু এবার তার চোখে আর সেই আলোটা ছিল না। ছয় মাস আগের সেই প্রাণচঞ্চল নন্দিনি কোথায় হারিয়ে গেল! যে নন্দিনি পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের পাশে আমার নামের আদ্যক্ষর লিখে রাখতো—“শুভ” লিখলেই বলতো, “তোমার নাম দেখলেই আত্মবিশ্বাস পাই”—সে আজ এক নিঃসাড় মানুষ।
তার মুখে অন্য এক নাম শুনছি আজকাল, “মিজান।”
একজন আমেরিকাপ্রবাসী, এক ডিভোর্সপ্রাপ্ত মানুষ, যার অতীতের বোঝা আছে, কিন্তু ডলারের জৌলুসও আছে। আমি বুঝতে পারি, নন্দিনির চোখে এখন আমি অতীত, আর মিজান তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ।
আমি তাকে পাশে বসালাম।
একসময় সে নিজের হাতে আমার শার্টের বোতাম লাগাতো, আর আজ একই হাত নিজের আঁচল গুটিয়ে কোলের উপর রেখে বসে আছে—অপরিচিত, ঠাণ্ডা, অনিশ্চিত।
আমি বললাম,
— “নন্দিনি, ব্যবসা-বাণিজ্যে একটু সমস্যা যাচ্ছে… সময়ের ব্যাপার।”
সে তাকালো না আমার দিকে। খুব শান্ত স্বরে বললো,
— “তোমার দ্বারা কিছুই হবে না শুভ। বরং আমরা আলাদা হয়ে যাই। তুমি তোমার কাজে মন দাও।”
আমার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন শ্বাস চুরি করে নিচ্ছিলো।
নন্দিনির নামে কেনা প্রতিটি লটারিতেই আমি কিছু না কিছু পেতাম। বিশ্বাস করতাম, ওর নামই আমার সৌভাগ্য। এবারও একটা লটারি কিনেছিলাম—জিতেছিলাম কিছু মেয়েদের ব্যবহার্য জিনিস। আমি ভেবেছিলাম, নন্দিনিকে দেবো—যেমন আগে দিতাম।
কিন্তু আমি যখন ব্যাগ থেকে সেটা বের করলাম, সে নির্বিকারভাবে আমার হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রাখলো।
তারপর নিজের কব্জি থেকে খুলে ফেললো সেই সোনার চুড়িটা—যেটা আমি ওর জন্য বানিয়েছিলাম।
সে চুড়িটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— “এগুলো বিক্রি করে তোমার ব্যবসায় কাজে লাগিও।”
এক মুহূর্ত থেমে, খুব ঠাণ্ডা গলায় বললো,
— “আর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি।”
আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
শব্দটা যেন পুরো হোটেলরুম ভেদ করে বুকের ভেতর ঢুকে গেলো।
— “এই দারিদ্র্যের সময়েই তুমি ছেড়ে যাচ্ছো আমাকে?”
আমি অনুনয় করলাম, হাত ধরলাম, চোখে জল চলে এলো।
কিন্তু সে আর নন্দিনি নয়—সে এখন যুক্তি, বাস্তবতা, হয়তো মিজানের আমেরিকার টান।
সে মুখ ফিরিয়ে বললো,
— “দারিদ্র্য বড় অসুখ শুভ। ভালোবাসা তা সারাতে পারে না।”
তারপর দরজা খুলে চলে গেলো।
আমি বসে রইলাম সেই চুরি হাতে—যেটা এখন আর সোনার নয়, বরং নন্দিনির শেষ ছোঁয়ার স্মৃতি হয়ে ঠাণ্ডা লোহার মতো ভারী।
বাইরে ঢেউ ভাঙছে, কিন্তু আমার ভেতরে কেবল নীরবতা।
মিতু, তার সেই “অতি-ভালো বান্ধবী”, নিশ্চয় এখন তাকে বোঝাচ্ছে—“তুমি ঠিক কাজ করেছো।” আর মিজান হয়তো ভিডিও কলে বলছে, “Come to me, you deserve better.”
কিন্তু আমি জানি—
আমি নন্দিনির শুভংকর, সেই নামের পাশে আজও সে ছোট একটা দাগ দিয়ে রেখেছে হয়তো—শুধু এবার সেটা ভালোবাসার নয়, বরং বিদায়ের।
---
গল্পের ভাবার্থ:
এটা এক ভালোবাসার পতনের গল্প। যেখানে অর্থনৈতিক সংকট, বন্ধুর নেতিবাচক প্রভাব, আর প্রবাসী প্রলোভন মিলে এক নারীর অনুভূতির মৃত্যু ঘটিয়েছে। শুভংকর হারিয়েছে শুধু নন্দিনিকে নয়, নিজের বিশ্বাসকেও।
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:০৯
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: অভাবের অসুখ কে ভালোবাসা দিয়ে সাড়ানো যায় না। ধন্যবাদ প্রিয় স্বপ্নের শঙ্কচিল।
২|
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:১৪
শ্রাবণধারা বলেছেন: বহুদিন পরে নন্দিনী-শুভঙ্কর এই নাম দুটি শুনলাম। আপনার লেখায় দুজনের নামের বানান অবশ্য ভিন্ন।
পূর্ণেন্দু পত্রীর কবিতার বই "কথোপকথন" এর নায়ক-নায়িকা ছিলেন তারা। আমাদের বাল্যকালে "কথোপকথন" খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। সেসময় কোন এক বছরে বোধহয় পত্রী ঢাকাতেও এসেছিলেন (সেটা আরও আগের ঘটনা)। পত্রীর লেখা আর সব কবিতা প্রায় ভুলে গেছি শুধু "সেই গল্পটা" ছাড়া। সেই কবিতায় এরকম একটা লাইন ছিল "ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী/ পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ।"
কিন্তু সে যাক। আপনার গল্পটা পড়ে এমনিতেই বোঝা গেছে, ভাবার্থের দরকার ছিল না বোধহয়। শুভকামনা।
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৯
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ এবং পূর্ণেন্দু পত্রীর "কথোপকথন" থেকে নন্দিনী-শুভঙ্করের সেই চিরস্মরণীয় নাম দুটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। সাহিত্য আর কবিতার জাদু যে কীভাবে জীবনের বিভিন্ন মুহূর্তে ফিরে এসে স্পন্দন জাগায়, তা আপনার কথায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। "ভালোবাসলে নারীরা হয়ে যায় নরম নদী, পুরুষেরা জ্বলন্ত কাঠ"—এই লাইনটি সত্যিই হৃদয় ছুঁয়ে যায় এবং সম্পর্কের সূক্ষ্ম দিকগুলো অসাধারণভাবে তুলে ধরে। আপনার প্রশংসা ও শুভকামনার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
৩|
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:২৬
অপু তানভীর বলেছেন: এটাই আসলে বাস্তব চিত্র। অর্থের অভাবের কাছে দুনিয়ার সব ভালোবাসা কম হয়ে পড়ে। দিন শেষে আর্থিক স্বচ্ছলতার থেকে বড় কিছু নেই। একটা বয়স ছিল যখন নন্দিনীকে হয়তো খুব খারাপ মনে হত কিন্তু এখন সেটা মনে হয় না।
আপনার এই লাইনটা আমার পছন্দ হয়েছে। দারিদ্র্য বড় অসুখ। ভালোবাসা তা সারাতে পারে না।
শ্রাবণধারার সাথে আমিও একমত। পোস্টের শেষের ভাবার্থের দরকার ছিল না। পাঠক গল্প পড়েই বুঝতে পারবে।
পোস্টে প্লাস
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২১
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: আপনার বক্তব্যে বাস্তবতার মূলে যে দারিদ্র্যের প্রভাব পড়ে, সেটি খুব স্পষ্ট। ভালোবাসা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, আর্থিক সমস্যার সামনে অনেক সময় তা অসফল বা অপ্রতুলই হয়ে থাকে—এটাই সত্যিকারের জীবনের কঠিন বাস্তব। "দারিদ্র্য বড় অসুখ"—এই লাইনটি গভীর অর্থপূর্ণ এবং বর্তমান সময়েও একদম প্রাসঙ্গিক। আপনার মতামত ও অনুভূতির জন্য ধন্যবাদ, যা গল্পের ভাবনার গভীরতাকে আরও মজবুত করেছে।
৪|
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ৯:৫৮
রাজীব নুর বলেছেন: অভাব অথবা দারিদ্রতা খুব খারাপ জিনিস। তিলে তিলে মানুষকে শেষ করে দেয়।
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:২৭
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: সত্যিই, অভাব মানুষকে শুধু কষ্টই দেয় না—তার স্বপ্ন আর মানসিক শান্তিও কেড়ে নেয়।
৫|
২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।
২২ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:১৯
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ। আপনাকে আন্তরিক স্বাগতম।
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:২৫
স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অভাব যেখানে তাড়ায়
ভালবাসা সেখানে পালায় !!!