নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"জীবন শেখায়, আমি লিখে রাখি। গল্প অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মিশেলে এটাই আমার ছোট্ট জগৎ\"

মহিউদ্দিন হায়দার

এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।

মহিউদ্দিন হায়দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

নন্দিনির হাতের চুড়ি

২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:১৫




আমি শুভংকর—নন্দিনির শুভংকর।
আজ চট্টগ্রামের এক নিঃশব্দ হোটেল রুমে বসে আছি। জানালার বাইরে সমুদ্রের ঢেউ ভাঙছে, কিন্তু আমার ভেতরে কেবল ভাঙনের শব্দ। ব্যবসা-বাণিজ্যে কয়েক মাস ধরেই লোকসান, আর্থিক অবস্থা এমনই শোচনীয় যে নিজেকেই নিজের আয়নায় চিনতে কষ্ট হয়।

নন্দিনিকে জানিয়েছিলাম—আমি চট্টগ্রামে আসবো।
সে এসেছিলোও। যথারীতি, তার মতোই নিঃশব্দে, কিন্তু এবার তার চোখে আর সেই আলোটা ছিল না। ছয় মাস আগের সেই প্রাণচঞ্চল নন্দিনি কোথায় হারিয়ে গেল! যে নন্দিনি পাঠ্যবইয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের পাশে আমার নামের আদ্যক্ষর লিখে রাখতো—“শুভ” লিখলেই বলতো, “তোমার নাম দেখলেই আত্মবিশ্বাস পাই”—সে আজ এক নিঃসাড় মানুষ।

তার মুখে অন্য এক নাম শুনছি আজকাল, “মিজান।”
একজন আমেরিকাপ্রবাসী, এক ডিভোর্সপ্রাপ্ত মানুষ, যার অতীতের বোঝা আছে, কিন্তু ডলারের জৌলুসও আছে। আমি বুঝতে পারি, নন্দিনির চোখে এখন আমি অতীত, আর মিজান তার সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ।

আমি তাকে পাশে বসালাম।
একসময় সে নিজের হাতে আমার শার্টের বোতাম লাগাতো, আর আজ একই হাত নিজের আঁচল গুটিয়ে কোলের উপর রেখে বসে আছে—অপরিচিত, ঠাণ্ডা, অনিশ্চিত।

আমি বললাম,
— “নন্দিনি, ব্যবসা-বাণিজ্যে একটু সমস্যা যাচ্ছে… সময়ের ব্যাপার।”
সে তাকালো না আমার দিকে। খুব শান্ত স্বরে বললো,
— “তোমার দ্বারা কিছুই হবে না শুভ। বরং আমরা আলাদা হয়ে যাই। তুমি তোমার কাজে মন দাও।”

আমার বুকের ভেতর থেকে কেউ যেন শ্বাস চুরি করে নিচ্ছিলো।
নন্দিনির নামে কেনা প্রতিটি লটারিতেই আমি কিছু না কিছু পেতাম। বিশ্বাস করতাম, ওর নামই আমার সৌভাগ্য। এবারও একটা লটারি কিনেছিলাম—জিতেছিলাম কিছু মেয়েদের ব্যবহার্য জিনিস। আমি ভেবেছিলাম, নন্দিনিকে দেবো—যেমন আগে দিতাম।

কিন্তু আমি যখন ব্যাগ থেকে সেটা বের করলাম, সে নির্বিকারভাবে আমার হাত থেকে নিয়ে টেবিলে রাখলো।
তারপর নিজের কব্জি থেকে খুলে ফেললো সেই সোনার চুড়িটা—যেটা আমি ওর জন্য বানিয়েছিলাম।

সে চুড়িটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
— “এগুলো বিক্রি করে তোমার ব্যবসায় কাজে লাগিও।”

এক মুহূর্ত থেমে, খুব ঠাণ্ডা গলায় বললো,
— “আর আমি তোমাকে ডিভোর্স দিচ্ছি।”

আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
শব্দটা যেন পুরো হোটেলরুম ভেদ করে বুকের ভেতর ঢুকে গেলো।

— “এই দারিদ্র্যের সময়েই তুমি ছেড়ে যাচ্ছো আমাকে?”
আমি অনুনয় করলাম, হাত ধরলাম, চোখে জল চলে এলো।

কিন্তু সে আর নন্দিনি নয়—সে এখন যুক্তি, বাস্তবতা, হয়তো মিজানের আমেরিকার টান।
সে মুখ ফিরিয়ে বললো,
— “দারিদ্র্য বড় অসুখ শুভ। ভালোবাসা তা সারাতে পারে না।”

তারপর দরজা খুলে চলে গেলো।

আমি বসে রইলাম সেই চুরি হাতে—যেটা এখন আর সোনার নয়, বরং নন্দিনির শেষ ছোঁয়ার স্মৃতি হয়ে ঠাণ্ডা লোহার মতো ভারী।

বাইরে ঢেউ ভাঙছে, কিন্তু আমার ভেতরে কেবল নীরবতা।
মিতু, তার সেই “অতি-ভালো বান্ধবী”, নিশ্চয় এখন তাকে বোঝাচ্ছে—“তুমি ঠিক কাজ করেছো।” আর মিজান হয়তো ভিডিও কলে বলছে, “Come to me, you deserve better.”

কিন্তু আমি জানি—
আমি নন্দিনির শুভংকর, সেই নামের পাশে আজও সে ছোট একটা দাগ দিয়ে রেখেছে হয়তো—শুধু এবার সেটা ভালোবাসার নয়, বরং বিদায়ের।

---

গল্পের ভাবার্থ:
এটা এক ভালোবাসার পতনের গল্প। যেখানে অর্থনৈতিক সংকট, বন্ধুর নেতিবাচক প্রভাব, আর প্রবাসী প্রলোভন মিলে এক নারীর অনুভূতির মৃত্যু ঘটিয়েছে। শুভংকর হারিয়েছে শুধু নন্দিনিকে নয়, নিজের বিশ্বাসকেও।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১২:২৫

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: অভাব যেখানে তাড়ায়
ভালবাসা সেখানে পালায় !!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.