![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শব্দে আমার আশ্রয়, লেখায় আমার মুক্তি। এখানে আমি লিখি, ভেবে দেখি, আর খুঁজি মানুষের মনের গল্প।
অধিকার নামের রাস্তায় সভা বসেছে
ভোর ছ’টা।
অফিসগামী নারী-পুরুষের জীবনে এ সময়টা সূর্যোদয়ের মতো নয়—বরং যুদ্ধের ঘোষণার মতো। কারও হাতে কাপ ভরা গরম চা, কারও হাতে ইস্ত্রি করা শার্ট, কারও আবার ঘড়ির দিকে এক ঝলক আতঙ্কিত দৃষ্টি। আজও দেরি করা চলবে না, আজও বসের মুখে “লেট হয়ে গেলো?”—এই শব্দটা শুনতে হবে না, এই আশা নিয়েই শুরু হয় তাদের সকাল।
বাইরে তখন শহরটা ধীরে ধীরে জেগে উঠছে—কিন্তু এই জেগে ওঠা কোনো কবিতার মতো নয়।
এটা হর্ণ, ধুলো, ভ্যাপসা গরম আর রাস্তায় রাস্তায় থেমে থাকা ক্লান্ত মানুষের কোলাহল।
এই মানুষগুলোই এই দেশের সত্যিকারের ‘জনগণ’।
যাদের ঘামেই গড়ে ওঠে অফিস, কারখানা, বাজার, শহর—সবকিছু।
কিন্তু এই জনগণের জন্যই যেন সবচেয়ে কম জায়গা এই দেশটাতেই।
অফিস শুরু আটটায়, কারও নয়টায়।
তাই তৈরি হতে হয় সকাল ছয়টা থেকেই।
কারও কাছে সকালের মানে শিশির নয়, বরং অ্যালার্মের শব্দ।
কারও কাছে সূর্যোদয় মানে চোখের নিচের কালচে দাগ ঢেকে ফাউন্ডেশন লাগানো।
এই মানুষগুলো রোজ যুদ্ধ করে—কাউকে না মেরে, বরং নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য।
বিকেল পাঁচটা, কারও ছয়টা।
কাজ শেষ হয়, কিন্তু ক্লান্তি শেষ হয় না।
কাজের পরেও আছে বাজার, আছে বাসা ফেরার লড়াই, আছে রাস্তায় ধৈর্যের পরীক্ষা।
তবুও তারা হাসে, কারণ জানে—এটাই জীবন, এটাই তাদের কর্তব্য।
কিন্তু হঠাৎই কোনো একদিন সেই পরিচিত রাস্তায় “সভা বসেছে”।
রাস্তায় বাঁশ দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে, টেন্ট বসানো হয়েছে, মাইক লাগানো হয়েছে,
আর কিছু পেশাদার মুখ গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে—
“আমরা জনগণের অধিকার চাই!”
অদ্ভুত এক দৃশ্য—যেখানে জনগণের অধিকার আদায়ের নামে জনগণই রাস্তায় আটকে থাকে।
অফিস ফেরত নারী-পুরুষের মুখে বিরক্তি, বাসের জানালায় ঠাসাঠাসি মানুষ, রিকশাওয়ালা গাল দিচ্ছে, কেউ ক্লান্ত হয়ে চোখ বন্ধ করছে—কিন্তু মাইকের আওয়াজ তবুও থামে না।
তারা বলে, “আমরা জনগণের কণ্ঠস্বর।”
কিন্তু সেই কণ্ঠস্বরের চাপে সাধারণ মানুষের নিজের কণ্ঠই হারিয়ে যায়।
রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে থাকা এক গার্মেন্টস কর্মী হয়তো তখন ভাবে—
“এই সভায় যদি একবার বলে, শ্রমিকদের জন্য একটা সাশ্রয়ী বাস সার্ভিস দরকার।”
কিন্তু না, সে কথা কেউ বলে না।
তাদের আলোচনার বিষয়—চেয়ার, পদ, ক্ষমতা আর প্রতিশোধ।
মানুষ? তারা কেবল পটভূমি।
এই সভার পর যা থাকে তা হলো—ভাঙা চেয়ার, ছেঁড়া ব্যানার, মাইকের তার, আর ধুলোয় ঢাকা কিছু নষ্ট ফুল।
আর থাকে হাজারো মানুষ—যারা দেরি করে ঘরে ফিরছে, ক্লান্ত পায়ে টলছে,
মাথার মধ্যে মাইকের আওয়াজ এখনো ঘুরছে—“অধিকার, অধিকার, অধিকার…”
তাদের চোখে অধিকার শব্দটা এখন রাগ, ব্যঙ্গ আর অসহায়ের এক প্রতীক।
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতাকামী জনগণের স্লোগান ছিল
“আমরা বাঁচতে চাই, আমরা অধিকার চাই।”
৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে সেই উচ্চারণের পর।
কিন্তু আজও সাধারণ মানুষ সেই একই দাবি জানায়—
তফাৎ শুধু এতটুকু, তখন মানুষ রক্ত দিয়েছিল,
এখন দেয় ধৈর্য, সময় আর নিঃশ্বাস।
রাজনীতির নামে এখন চলছে অপরাজনীতি—
যেখানে সভা হয়, কিন্তু আলোচনা হয় না;
যেখানে স্লোগান ওঠে, কিন্তু সমাধান নামে না।
জনগণের নামে শপথ নেয়া মানুষগুলো জনগণের কষ্টকেই আজ ট্রাফিক সিগনালে দাঁড় করিয়ে রাখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
এই দেশে নাগরিক হওয়ার অর্থ—যানজটে আটকে থাকা।
এই দেশে করদাতা হওয়ার অর্থ—অবমাননা সহ্য করা।
আর এই দেশে সাধারণ হয়ে জন্মানো মানে—
একটি রাষ্ট্রীয় পাপ, যার শাস্তি প্রতিদিনের জীবনে দিতে হয়।
হ্যাঁ, হয়তো এই দেশটা স্বাধীন হয়েছে,
কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন এখনো বন্দি—
রাজনীতির নামে ক্ষমতার লড়াইয়ে,
অধিকার নামের রাস্তার ধারে বসা সভায়,
আর সেই সভার মাইকে চিৎকার করা কিছু ভাড়াটে গলার কর্কশ শব্দে।
একটা প্রশ্ন থেকেই যায়—
আমরা কি সত্যিই স্বাধীন? নাকি এখনো সেই অধিকারহীন মানুষের সারিতেই দাঁড়িয়ে আছি—যেখানে পথের ধুলোই আমাদের নিয়তি?
২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:২৮
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: ভালোবাসাই উন্নয়নের প্রথম শর্ত—দেশকে ভালোবাসলেই আসবে সত্যিকারের মুক্তি।
২| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:০০
রাজীব নুর বলেছেন: যারা রাস্তায় সভা, মিটিং মিছিল করে তারা অসভ্য। ইতর।
জনজীবন বিধ্বস্ত করে কিসের বালের মিটিং মিছিল।
২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:১৭
মহিউদ্দিন হায়দার বলেছেন: আপনার বক্তব্যে জনদুর্ভোগের বিষয়টি ঠিকই বলেছেন, তবে সব মিছিলই অসভ্যতার প্রতীক নয়। অনেক সময় মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয় হয়ে দাঁড়ায় রাস্তায় নামা। সভা-মিছিলের সংস্কৃতি গণতন্ত্রেরই অংশ—শর্ত শুধু একটাই, তা যেন শৃঙ্খলা ও জনস্বার্থের প্রতি সম্মান রেখে হয়।
অশেষ ধন্যবাদ।
৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৪৮
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: দাবি আদায় করতে হলে এছাড়া গতি নেই।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৯
শোভন শামস বলেছেন: আমাদেরকে ভালবাসতে হবে এই দেশক
কবে নিস্তার পাবে এই দেশ, হবে উন্নয়ন