নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৪২


শরীফা বুলবুল : বিজয় সময়ের ব্যাপার মাত্র। এ দিনে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সর্বাত্মক হামলার মুখে পাকসেনারা দিনাজপুর থেকে সৈয়দপুরে পালিয়ে যায় এবং দিনাজপুর হয় শত্রুমুক্ত। এদিকে, ঢাকা বিজয়ে প্রচণ্ড হামলা রাজধানীর চারদিকে। ১৩ ডিসেম্বর রাত থেকে ১৪ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত পূর্ব ও পশ্চিম দিক থেকে মিত্রবাহিনীর কামান অবিরাম গোলা ছুড়ে চলল। নিয়াজিসহ পাক-হানাদারদের হৃদকম্প শুরু হয়ে গেছে। মিত্রবাহিনীর কামানের গোলা গিয়ে পড়ল ঢাকা ক্যান্টনমেন্টেও। সে গোলার আওয়াজে গোটা শহর কাঁপল। ঢাকার সবাই বুঝল, আর রক্ষা নেই। গভর্নর মালিক সেদিন সকালেই ‘সমগ্র পরিস্থিতি’ বিবেচনার জন্য গভর্নর হাউজে মন্ত্রিসভার এক জরুরি বৈঠক ডাকলেন।

ওই বৈঠক বসানোর ব্যাপারেও রাও ফরমান আলী এবং চিফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেনের হাত ছিল।

মন্ত্রিসভার বৈঠক বসল বেলা ১১টা নাগাদ। একটি পাকিস্তানি সিগন্যাল থেকে দিল্লির বিমান সদর দপ্তর জানতে পারে, মাত্র ঘণ্টাখানেক বাদে ঢাকার গভর্নর ভবনে গভর্নরের মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। তৎক্ষণাৎ ওই বৈঠক চলাকালেই গভর্নর ভবন আক্রমণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং মেঘালয়ের শিলং বিমান ঘাঁটি থেকে প্রেরিত অর্ধ ডজন মিগ-২১ সঠিক সময়ে গভর্নর ভবনের ওপর নির্ভুল রকেট আক্রমণ চালায়। গোটা পাঁচেক গিয়ে পড়ল গভর্নর হাউজের ছাদের ওপর। মালিক ও তার মন্ত্রীরা ভয়ে প্রায় কেঁদে উঠল। চিফ সেক্রেটারি, আইজি পুলিশসহ বড় বড় অফিসারও মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন। তারাও ভয়ে যে যেমন পারল পালালেন। বিমান হানা শেষ হওয়ার পর মালিক সাহেব তার পাকিস্তানি মিত্রদের সঙ্গে আবার বসলেন। তারপর আর পাঁচ মিনিটও লাগল না তাদের সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে। তারা সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিলেন। পদত্যাগের সিদ্ধান্ত তারা সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির প্রতিনিধি রেনডকে জানান এবং তার কাছে আশ্রয় চান। রেনড তখন ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলকে (বর্তমানে রূপসী বাংলা হোটেল) রেডক্রসের অধীনে ‘নিরাপদ এলাকা’ করে নিয়েছেন। বহু বিদেশি এবং পশ্চিম পাকিস্তানি আশ্রয় নিয়েছিল ওই হোটেলে। রেনডের এলাকায় মালিক ও তার দলকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে, খবর পৌঁছল জেনেভায়। সে বার্তায় বলা হলো ‘পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সর্বোচ্চ কর্মকর্তারা পদত্যাগ করেছে এবং রেডক্রস আন্তর্জাতিক অঞ্চলে আশ্রয় চেয়েছে। জেনেভা চুক্তি অনুযায়ী তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। ভারত এবং বাংলাদেশ সরকারকে যেন অবিলম্বে সব ঘটনা জানানো হয়। খবরটা যেন ভারতীয় সামরিক বাহিনীকেও জানানো হয়।’

মালিক ও তার গোটা ‘পূর্ব পাকিস্তান সরকারের’ এই সিদ্ধান্তের পর নিয়াজির অবস্থা আরো কাহিল হলো। ঢাকার ওপর তখন প্রচণ্ড আক্রমণ চলছে। প্রধান লক্ষ্য কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট। নিয়াজি তখনো মার্কিনিদের ভরসায় মুখে বলছেন, শেষ পর্যন্ত লড়ে যাব। কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিরাপদ আত্মসমর্পণের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন। নিয়াজি বারংবার নিরাপদ আত্মসমর্পণ নিশ্চিত করতে ভারতের সেনাপ্রধান মানেকশর সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আত্মসমর্পণের পর হামলা নয়, জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাইছিলেন জেনারেল নিয়াজিসহ পাক জেনারেলরা।

মার্কিন সপ্তম নৌবহর যে বঙ্গোপসাগরের দিকে এগুচ্ছে এ খবর চার-পাঁচদিন আগে থেকেই জানা ছিল। গোটা দুনিয়ায় তখন সপ্তম নৌবহরের বঙ্গোপসাগরে আগমন নিয়ে জোর জল্পনা-কল্পনা চলছে। মার্কিন সরকার যদিও ঘোষণা করল যে, কিছু আমেরিকান নাগরিক অবরুদ্ধ, বাংলাদেশ থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার জন্যই সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ তা বিশ্বাস করল না। সবার মনে তখন প্রশ্ন, প্রেসিডেন্ট নিক্সন কি ইয়াহিয়াকে রক্ষার জন্য মার্কিন নৌবহরকে যুদ্ধের মাঠে নামাবেন? ঠিক কী উদ্দেশে মার্কিন সপ্তম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে এসেছিল এবং কেনইবা তারা কিছু না করে ( বা করতে না পারে) ফিরে গেল সে রহস্যের এখনো সম্পূর্ণ কিনারা হয়নি।

ওদিকে, মিত্রবাহিনী তখন প্রচণ্ডভাবে ঢাকার সামরিক লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তখনো তারা ঠিক জানে না যে, ঢাকার ভেতরের অবস্থাটা কী। পাকবাহিনী কিভাবে ঢাকার লড়াইয়ে লড়তে চায় এবং ঢাকায় তাদের শক্তিই বা কতটা, সে খবর মিত্রবাহিনী জানে না। নানাভাবে আসল খবরটা কিছুতেই পাওয়া গেল না। যা পাওয়া গেল সব ভুল। মিত্রবাহিনী মনে করল, ঢাকার ভেতরে লড়াই করার জন্য যদি সৈন্যদের এগিয়ে দেয়া যায় এবং সঙ্গে সঙ্গে যদি বিমান আক্রমণ চালানো হয়, তবে লড়াইয়ে সাধারণ মানুষও মরবে। মিত্রবাহিনী এটা কিছুতেই করতে চাইছিল না। তাই ওই দিনই তারা একদিকে যেমন ফের পাকবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানাল এবং তেমনি অন্যদিকে ঢাকার সাধারণ নাগরিকদের অনুরোধ করল, আপনারা শহর ছেড়ে চলে যান। উত্তর এবং পূর্বরাজধানীর দুদিকেই তখন আরো বহু মিত্রসেনা এসে উপস্থিত। চাঁদপুরেও আর একটা বাহিনী তৈরি হচ্ছে নদীপথে অগ্রসর হওয়ার জন্য।

এ দিনে ৯ মাসের রক্তগঙ্গা পেরিয়ে গোটা জাতি যখন উদয়ের পথে দাঁড়িয়ে, পূর্ব দিগন্তে বিজয়ের লাল সূর্য উদিত হচ্ছে, ঠিক সে সময়ই রাতের আঁধারে পাক-হানাদার বাহিনীর দোসর এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বেছে বেছে হত্যা করে। ঘর থেকে তুলে নিয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় বাঙালি জাতির সেরা শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাহিত্যিকসহ দেশের বরেণ্য কৃতী সন্তানদের।

তালিকা প্রণয়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরও হাত রয়েছে বলে জানা গেছে। ‘বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন ১৯৭১’ প্রফেসর ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেইন কর্তৃক প্রণীত একটি দলিল পায় বলে জানা যায়। কিছু সূত্র মতে, তালিকা প্রণয়নে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ভূমিকা রয়েছে বলে জানা যায়। বুদ্ধিজীবী হত্যায় যারা ঘৃণ্য ভূমিকা রাখে তাদের মধ্যে রয়েছে যুদ্ধাপরাধী পাকি অফিসার ব্রিগেডিয়ার রাজা, ব্রিগেডিয়ার আসলাম, ক্যাপ্টেন তারেক, কর্নেল তাজ, কর্নেল তাহের, ভিসি প্রফেসর ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেইন, ড. মোহর আলী, আলবদরের এ বি এম খালেক মজুমদার, আশরাফুজ্জামান ও চৌধুরী মাইনুদ্দিন। এদের নেতৃত্ব দেয় মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী। স্বাধীনতা লাভের পর ৪৩ বছরেও বুদ্ধিজীবী হত্যার কোনো কিনারা আজো হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের কে কোথায় কিভাবে শহীদ হয়েছেন তারও কোনো কিনারা হয়নি। তাদের পরিবারবর্গও জানতে পারেনি প্রিয় এই মানুষগুলোর লাশ কোথায়? রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে কয়েকজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু এর বেশি কিছুই আজো উন্মোচিত হয়নি। ঠিক কত জন বুদ্ধিজীবী নিধন করা হয়েছিল তা এখনো আমাদের অজানা। বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ’ (১৯৯৪) থেকে জানা যায় ২৩২ জনের কথা। কিন্তু এটি যে অসম্পূর্ণ তা ওই গ্রন্থেই স্বীকার করা হয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের নিধনের প্রকৃতি, পরিধি, রহস্য ও অপরাধীদের চিহ্নিতকল্পে কোনো সরকারি তদন্ত হয়নি। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৮, মতান্তরে ২৯ তারিখে বেসরকারিভাবে গঠিত ‘বুদ্ধিজীবী নিধন তদন্ত কমিশন’-এর রিপোর্টও আলোর মুখ দেখেনি। উল্লেখ্য, ওই কমিশনের আহ্বায়ক ছিলেন চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান যিনি নিখোঁজ হন ৩০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে। প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত তাজউদ্দীন আহমেদ একটি তদন্ত কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেন ১৯৭১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। ৪৩ বছর পার হয়ে গেলেও আজ পর্যন্ত কোনো বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার হয়নি। ফলে খুনিরা আজো অধরাই রয়ে গেছে।

এই দিনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর। খুব সকালেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মহানন্দা নদীর তীরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকসেনাদের তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। পাকসেনাদের বাঙ্কার থেকে আসা অবিরাম গুলির জবাব দিয়ে যাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা। ওই যুদ্ধে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীরসহ আরো আট মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। একজন কমান্ডার ও সাতজন সঙ্গী হারিয়ে শোকে মুহ্যমান মুক্তিযোদ্ধারা। একইসঙ্গে নিস্তব্ধ পাকসেনাদের বাঙ্কার। নেই কোনো গুলির আওয়াজ। বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধারা সামনের দিকে এগিয়ে যান। পাকসেনাদের বাঙ্কার ও আস্তানা উড়িয়ে দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের দখল নেয় মুক্তিবাহিনী। সব শত্রু খতম করে অস্ত্র উঁচিয়ে বিজয়ের ঘোষণা দেন।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৯

জানা বলেছেন:

খুব ভাল একটি লেখা।

অনুগ্রহ করে ভোরের কাগজের লিঙ্কটি দিয়ে দিন পোস্টে।

২| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩

ইমরান আশফাক বলেছেন: এই দিনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়।


এবং এরপরই উত্থান ঘটে বর্তমানে সুশীল সমাজ নামধারী কিছু সুবিধাভোগীদের। এরা রাজাকার নামক মূদ্রারই অপরপিঠ। আমার বক্তব্য একাত্তরের চূড়ান্ত বিজয়ের স্বাদ আমরা এখনও পাই নাই অর্থাৎ প্রকৃত যুদ্ধ এখনও শেষ হয় নাই।

৩| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৮

আলম দীপ্র বলেছেন: বাহ ! খুব ভালো পোস্ট !

৪| ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: তথ্যবহুল সুন্দর একটি পোষ্ট । +++++

৫| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৮

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: তথ্যবহুল সুন্দর একটি পোষ্ট ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.