নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতৃভাষা বাংলায় আবহাওয়া বিজ্ঞান চর্চা: পর্ব ৭ (মেডেন-জুলিয়ান স্পন্দন বা সংক্ষেপে এমজেও চক্র এর মাধ্যমে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির চক্র ব্যাখ্যা)

১১ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:২৭



বাংলাদেশে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাত পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বেশ কিছুদিন দেশব্যাপী নিয়মিত বৃষ্টির পরে এক থেকে তিন সপ্তাহ প্রায় বৃষ্টিহীন থাকে। এ অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির চক্রটা আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা ব্যাখ্যা করেন এমজেও নামে একপ্রকার আবহাওয়া চক্রের মাধ্যমে (MJO is an eastward moving disturbance of clouds, rainfall, winds, and pressure that traverses the planet in the tropics and returns to its initial starting point in 30 to 60 days, on average.)। আবহাওয়া চক্রটি আবিষ্কার করেন রোনাল্ড মেডেন ও পাউল জুলিয়ান নামে দুজন বিজ্ঞানী, ১৯৭০ সালে। আবহাওয়া চক্রটি বিষুবীয় অঞ্চলের সমুদ্র ও তত্সংলগ্ন আকাশের মধ্যে একটি মিথস্ক্রিয়া।

এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে প্রথমত দুটি ভাগে ভাগ করা হয়: সক্রিয় বাষ্পীভবন দশা ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন দশা। শীতকালে সকালবেলা পুকুরের পানির তাপমাত্রা পুকুরের পানির উপরের বাতাসের তাপমাত্রা থেকে বেশি থাকার কারণে পুকুরের পানি থেকে ধোঁয়া (বাষ্প) উঠতে দেখা যায়। ঠিক একই কারণে শীতকালে নিঃশ্বাস ছাড়লে মুখ থেকে বের হওয়া আর্দ্র গরম বাতাস ঠাণ্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এলে ধোঁয়ার কুণ্ডলির রূপ নেয়। এ ধোঁয়াকে আমরা মানুষসৃষ্ট মেঘও বলতে পারি। ঠিক একই প্রক্রিয়ার সমুদ্রপৃষ্ঠের গরম পানি বাষ্পায়িত হয়ে আকাশে উড়ে যায়। পদার্থবিজ্ঞান বা ভূগোল বিষয়ে পড়েছি, বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠতে থাকলে বায়ুর চাপ কমতে থাকার কারণে বাতাসের তাপমাত্রাও কমতে থাকে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বাষ্পায়িত হয়ে আকাশে উড়ে যাওয়া জলীয়বাষ্পের তাপমাত্রাও কমতে থাকে এবং একসময় ওই জলীয়বাষ্পের কণাগুলো ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি হয়। এমজেও আবহাওয়া চক্রটির দশা দুটিকে যথাক্রমে অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টি বলা হয়। কারণ সক্রিয় বাষ্পীভবন দশা যখন সমুদ্রের কোনো স্থানে অবস্থান করে তখন ওই স্থানের সমুদ্রের পানি বেশি পরিমাণে বাষ্পায়িত হতে থাকে। ফলে বেশি মেঘের সৃষ্টি হয় এবং বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন দশায় বিপরীত ঘটনা ঘটে।



এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবনের ওপর ভিত্তি করে আটটি দশায় ভাগ করা হয়। এমজেও যখন ২ ও ৩ নম্বর দশায় (ফেস) থাকে, তখন উত্তর ও উত্তর-পূর্ব ভারত মহাসাগরের পানিতে প্রচণ্ড সক্রিয় বাষ্পীভবন হয়ে থাকে। ফলে আকাশ ভর্তি থাকে মেঘে। গ্রীষ্মকালে এমজেওর অবস্থান কিছুটা উত্তর দিকে সরে যায়। ফলে এমজেও যখন ২ ও ৩ নম্বর দশায় (ফেস) থাকে, তখন বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ভারি বৃষ্টি হয়ে থাকে। মে মাসের ১৭ তারিখের পর থেকে এমজেও ২ নম্বর দশায় ছিল এবং ২৮ তারিখ থেকে ৩ নম্বর দশায় প্রবেশ করেছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এমজেও ৪ নম্বর দশায় প্রবেশ করবে। আগামী এক সপ্তাহ পরে যখন এমজেও ৫ নম্বর দশায় প্রবেশ করবে তখন বাংলাদেশের ওপর চলমান বৃষ্টিপাতে সাময়িক বিরতি দেখা যায়। দেশব্যাপী দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত অবস্থা বিরাজ করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এমজেও আবহাওয়া চক্রটি আবারো ২ ও ৩ নম্বর দশায় ফিরে আসে। দ্বিতীয় চিত্রে দেখা যাচ্ছে এমজেও আবহাওয়া চক্রটির কোন ফেজে অবস্থান করার সময় বাংলাদেশ ও ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে কমা বা বেশি পরিমাণ বৃষ্টি হয়। বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় তার সাথে এমজেও আবহাওয়া চক্রটির সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এমজেও আবহাওয়া চক্রটি কোন দশায় অবস্থান করছে তার উপর নির্ভর করে ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পূর্ব উপকূলে নাকি, বাংলাদেশের সুন্দরবন উপকূলে নাকি মায়ানমার উপকূলে আঘাত হানবে তা সম্বন্ধে পূর্বাভাষ জানা যায়।



প্রথম চিত্রে লাল ও নীল লাইনটি কালো বৃত্তের পরিধির ভিতেরে অবস্থান করলে এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে গণ্য করা হয়। পক্ষান্তরে লাল ও নীল লাইনটি কালো বৃত্তের পরিধির বাহিরে যত দূরে অবস্থান করবে এমজেও আবহাওয়া চক্রটিকে তত শক্তিশালী বলে গণ্য করা হয়। বর্ষা মৌসুমে লাল ও নীল লাইনটি যখন বৃত্তের পরিধির বাহিরে ১, ২ ও ৪ নম্বর দশায় (ফেজ) অবস্থান করে তখন বাংলাদেশ ও ভারতে ভারি বৃষ্টিপাত হয় ১ থেকে ২ সপ্তাহ ধরে।

আবহাওয়া ও জলবায়ু বিজ্ঞানীরা এমজেও আবহাওয়া চক্রটির অবস্থান দেখে কোনো স্থানের দৈনন্দিন ও সাপ্তাহিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস করে থাকেন। পক্ষান্তরে এল-নিনো ও লা-নিনার অবস্থা দেখে কোনো স্থানের মাসিক বা মৌসুমি আবহাওয়ার পূর্বাভাস করেন। ভারত মহাসাগরের ওপর এমজেও আবহাওয়া চক্রটির সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় অবস্থান দেখে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস করা সম্ভব পাঁচ-সাতদিন আগে। একইভাবে এল-নিনো ও লা-নিনার অবস্থা দেখে মৌসুমি বা উপমৌসুমি আবহাওয়ার পূর্বাভাস করা সম্ভব। পরবর্তী পর্বে এল-নিনো ও লা-নিনা চক্র সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করবো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:১২

রোকনুজ্জামান খান বলেছেন: আপনার এই লেখাটি পড়ে , আমরা সেই পদার্থ বিজ্ঞানের ফরিদুল ইসলাম স্যার এর কথা মনে পড়ে গেল। ধন্যবাদ

১১ ই জুন, ২০২১ রাত ১০:৩২

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ পড়ে মন্তব্য করার জন্য। আপনার উল্লেখিত পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক কোথায় কর্মরত রয়েছেন ও কেন নির্দিষ্ট করে তার কথা মনে হয়েছে আপনার?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.