নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশু/কিশোর-কিশোরী/পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি সম্বন্ধে বাংলাদেশের মানুষের ভুল ধারণা ও বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা

২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৫:১৪


বাংলাদেশে সমাজের সর্বোচ্চ শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও বড় অংশটিরই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু (যাদেরকে অটিজম রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশু বলা হয়) এর সম্বন্ধে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ফেসবুকে কয়েক হাজার মানুষের আচরণ লক্ষ করলাম যারা মনে করে কোন মানুষ হাটা-চলাফেরা করলেই কিংবা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করলেই ভেবে নেওয়া হয় সে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী হতে পারে না। অটিস্টিক শিশুরা যে রোগে আক্রান্ত হয় তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় Autism spectrum disorder (ASD) বলে। যে কারণে এই শিশুদের অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশু বলা হয়। এই রোগটিতে আক্রান্ত মানুষদের ব্রেইনের বিভিন্ন অংশ অন্যান্য স্বাভাবিক মানুষের ব্রেইন এর বিভিন্ন অংশের মতো কাজ করে না। মানুষের ব্রেইন এর বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজ করার নির্দেশনা প্রদান করে মানুষের দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজ করার জন্য। যেমন আপনার বাড়িতে আগুন লাগলে আপনার ব্রেইন এর একটি অংশ নির্দেশ প্রদান করে যে বিপদ আসন্ন; সুতরাং, এখনই এই বাড়ি ত্যাগ করতে হবে। কোন কোন অটিস্টিক রোগে আক্রান্ত মানুষের ক্ষেত্রে ব্রেইনের ঐ অংশটি আসন্ন বিপদের কথা যাচাই করতে পারে না। কিংবা ঘরে পরে থাকা হাতুড়ি দিয়ে নিজের মাথায় আঘাত করলে ব্যথা পাবে বা নিজের ক্ষতি হবে তা বুঝতে অক্ষম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অংক করতে ভালো বাসে পরীক্ষায় ১০০ এর মধ্যে সবসময়ই ১০০ পায় অথচ খুবই সাধারণ বিষয় ফেল করে। কোন-কোন শিশু শুকনো খাবার পছন্দ করে কিন্তু ভেজা খাবার কখনও হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বিশ্বে জন্মানো প্রতি ১৬০ জন শিশুর মধ্যে ১ জন শিশুর মধ্যে অটিজম রোগের উপসর্গ পাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে এই রোগ নির্ণয় অনেক সহজ লভ্য সেখানে প্রতি ৬০ জন শিশুর ১ জনের মধ্যে এই রোগের উপসর্গ পাওয়া যায়। উন্নত দেশগুলোতে অটিজম রোগ সম্বন্ধে জানার জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এই রোগ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিকদের জানার পরিধি এখন খুবই সীমাবদ্ধ যে কারণে এখন পর্যন্ত এই রোগ নিরাময়ের জন্য পূর্ণ কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নি। তবে বৈজ্ঞানিকরা এই রোগের কিছু উপসর্গ সম্বন্ধে জানতে পেরেছেন। শিশুর জন্মের পরে যত দ্রুত এই উপসর্গ গুলো নিরাময় করার চেষ্টা করা যাবে তত দ্রুত এই সমস্যাগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। শিশুর বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সমস্যাগুলো স্থায়ী রূপ নিবে যখন সেই সমস্যাগুলো আর নিরাময় করা সম্ভাবনা অনেক কমে আসবে।

বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে খুব অল্প সংখ্যক অভিভাবক আছে যারা স্বীকার করে তাদের ছেলে কিংবা মেয়ে এর কোন প্রকার শারীরিক বা মানসিক সমস্যা রয়েছে। আমি নির্দিষ্ট করে বলতে চাইছি শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধীত্বর কথা। যেহেতু এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের সমানে কোন আলোচনা হয় না বললেই চলে (অল্প কয়েক বছর পূর্বে আমি নিজেও জানতাম না) তাই এই বিষয়ে বাংলাদেশের সমাজে অনেক কুসংস্কার রয়েছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ হলও নিশো ও মাহজাবিন অভিনীত ঈদের নাটক "ঘটনা সত্য"। যে নাটকে বলা হয়েছে যে মা কিংবা বাবা বা উভয়ের পাপ বা খারাপ কাজের জন্য তাদের জন্মানো শিশিরা অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়।
একজন নাট্যকার, নাটক পরিচালক, অভিনেতা ও অভিনেত্রীর অজ্ঞতার পরিমাণ কোন পর্যায়ে হলে এই ধরনের নাটক নির্মাণ করে ও একটা সমাজে মানুষের অজ্ঞতা কোন পর্যায়ে হলে এই রকম নাটক সেই সমাজে পরিবেশ করা হয় তা ভেবে নিজেই লজ্জিত।



Ashfaque Kabir নামে এক অভিভাবক অটিজম বাংলাদেশ নামক ফেসবুকে এই নাটকটি কি প্রভাব পড়তে পারে তা নিয়ে নিম্নোক্ত মন্তব্য করেছেন

"প্রতিবন্ধীতা কোন পাপের ফসল নয়, একথা বোঝানোর জন্য এত বছর ধরে কথা বলে যাচ্ছি আমরা সবাই। ৯ মাস যাবত সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে নীচের ভিডিও আমাদের চ্যানেলে দেয়া হয়েছে তাতে ভিউ হয়েছে মাত্র ১০০০.আর একটি ভুল তথ্য সম্বলিত নাটক ১ দিনে ৮লাখ মানুষের কাছে পৌছে গেলো শুধুমাত্র তারা সেলিব্রিটি বলে।এতোদিনের এই যে সম্মিলিত প্রচেষ্টার অর্জন আবারও পিছিয়ে গেলো।যে মাকে প্রতিক্ষন অপয়া ভাবা হয় তার কষ্ট কি শুধুমাত্র একটা sorry বলাতে কমিয়ে দেয়া সম্ভব????? যারা আমাদের ভালো কাজের সংগে যুক্ত হতে পারবেন না তাতে অসুবিধা নাই কিন্তু সে কাজকে পিছিয়ে নিয়ে গিয়ে আমাদের ক্ষতি করবেন না।"

অটিজম নিয়ে বাংলা ভাষায় তথ্যপূর্ন একটি ডকুমেন্টারি রয়েছে সবাইকে অনুরোধ করবো সেই ডকুমেন্টারিটি দেখার জন্য নিম্নোক্ত লিংক থেকে:



আমার খুবই সীমিত অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই অটিজম রোগে আক্রান্ত মানুষদের শারীরিক কিংবা মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক শিশুদের মতো না। কোন-কোন ক্ষেত্রে অটিজম রোগে আক্রান্ত শিশুদের আচরণে মাত্র ৫ থেকে ১০% পার্থক্য পাওয়া যায় অন্যান্য স্বাভাবিক শিশুদের সাথে। ক্ষেত্র ভেদে অটিজম রোগে আক্রান্ত শিশু, কিশোর কিংবা পূর্নাঙ্গ ব্যক্তির ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সীমাবদ্ধতা দেখা যায় (অল্প কিছু উল্লেখ করলাম):

১) কাজের প্রতি মনোযোগ না থাকা, কোন স্থানে স্থির ভাবে বসে না থাকা,

২) Abnormal Motor skills (স্নায়ু জনিত বিভিন্ন কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতা): (Motor skills are divided into gross and fine. Gross motor skills include standing, walking, going up and down stairs, running, swimming, and other activities that use the large muscles of the arms, legs, and torso. Fine motor skills, on the other hand, involve the muscles of the fingers, hands, and wrists, and, to a lesser extent, toes, feet, and ankles.),
৩) Abnormal cognitive skills (অস্বাভাবিক জ্ঞানীয় দক্ষতা): চিন্তা করা, পড়তে পারা, মনে রাখার ক্ষমতা, শেখার ক্ষমতা, বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা, মনোযোগ দেওয়ার ক্ষমতা

৪) Communication skills (অপর্যাপ্ত যোগাযোগ সক্ষমতা বা স্বাভাবিক ভাবে নিজের চিন্তা বা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারার সীমাবদ্ধতা): মনোযোগ দিয়ে শোনা, আত্মবিশ্বাস, অন্যকে পরামর্শ দেওয়া কিংবা অন্যের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া, কোন পরিস্থিতিতে কোন ধরনের কথা বলতে হবে বা কথা বলার টোন কেমন হবে তা বিশ্লেষণের সক্ষমতা না থাকা, অন্যের প্রতি যথাযোগ্য পরিমাণ সনুভূতি কিংবা সম্মান না থাকা।

৫) Activities of Daily Living skills (নিজের দৈনন্দিন কাজ কর্ম করার সীমাবদ্ধতা): (নিজের কাপড় নিজে পড়তে না পারা, জুতার ফিতা বাধতে না পারা, চামচ দিয়ে খেতে না পারা, নিজের দাঁত মাজতে না পারা, কলম ঠিকমতো ধরতে না পারা, ইত্যাদি),

৬) Socialization (সামাজিক ভাবে মেলা-মেশার সীমাবদ্ধতা): (স্কুলে গিয়ে অন্য শিশুদের সাথে খেলাধুলা না করা, নিজের খেলাধুলার সামগ্রী বন্ধুদের সাথে শেয়ার না করা, অন্য বন্ধুদের খেলার সামগ্রী কেড়ে নেওয়া, অন্য শিশুদের সাথে আক্রমানাত্নক আচরণ করা) ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

৭) Unacceptable Behaviors: প্রচণ্ড রকমের অভিমান (কিছু বললেই ঘরের এক কোনে গিয়ে একা-একা বসে থাকা), নিজের ভয়ংকর রকমের ক্ষতিকরার চেষ্টা (নিজের মাথা বা শরীর দেয়ালের সাথে আঘাত করা, নিজের হাত দিয়ে নিজের শরীরে প্রচণ্ড ভাবে আঘাত করা, ইত্যাদি)



বেশিভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের উপরোক্ত সীমাবদ্ধতাগুলোর অল্প কিছু দেখা যায়। আপনাদের আর একটা তথ্য দেওয়া প্রয়োজন মনে করছি যে অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশুদের উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো যে অন্যান্য ছেলে-মেয়ে অপেক্ষা কম থাকে তা না। কোন কোন ক্ষেত্রে কোন কোন শিশুর উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো খুবই অল্প বয়সে (৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে) অর্জন করে যা স্বাভাবিক ছলে-মেয়েরা ২৫ থেকে ৩০ বছরের পূর্বে অর্জন করতে পারে না। কোন কোন শিশু এমন অসাধারণ মেধে নিয়ে জন্মায় কিংবা কিছু সক্ষমতা অর্জন করে যা পৃথিবীতে আর কারো নেই। আমি নিচে ৩ টা উদাহরণ দিবো ৩ জন অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির এই রকম অসাধারণ প্রতিভার:

১) বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠতম তাত্ত্বিক পদার্থ বিজ্ঞান গবেষণা ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হলও কানাডার Perimeter Institute for Theoretical Physics (ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের (আমার পূর্বের বিশ্ববিদ্যালয়) আন্ডারে একটি উচ্চশিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউট)। প্রয়াত পদার্থ বিজ্ঞানি স্টিফেন হকিং এই প্রতিষ্ঠানের ভিজিটিং শিক্ষক ছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এক ছেলে পিইচডি শুরু করেছে (গবেষণার বিষয় কোয়ান্টাম গ্রাভিটি), নাম জাঁকব বার্নেট, যে নিজের জুতার ফিতা নিজে বাঁধতে পারে না; অন্য মানুষের সাথে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলে না বা মিশে না। মায়ের হাত ধরে ক্লাসে আসে, মায়ের হাত ধরে বাসায় যায়। তার দেখা-শুনা করার জন্য তার পরিবার আমেরিকা থেকে কানাডায় ওয়াটারলু শহরে চলে আসতে বাধ্য হয়েছে। কোন মানুষের আই কিউ স্কোর ১৩০ এর বেশি থাকলে সেই মানুষকে বলা হয়ে থাকে Very gifted। বিশ্বের মাত্র ২ % মানুষের আই কিউ স্কোর থাকে ১৩০ এর বেশি। উপরে বর্ণিত ছেলেটির আই কিউ স্কোর ১৭০ যা গত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বৈজ্ঞানিক আলবার্ট আইনস্টাইনের আই কিউ স্কোর অপেক্ষা বেশি। আমেরিকার ইন্ডিয়ানা রাজ্যের হাই স্কুল (বাংলাদেশের কলেজ পর্যায়) এর গণিত সিলেবাসের পুরোটা শেষ করেছিল মাত্র ২ সপ্তাহে। ৮ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত ক্লাসে যাওয়া শরু করেছিল। ৯ বছর বয়সে পদার্থ বিজ্ঞানের বিভিন্ন তত্ব লেখা শুরু করেছি ও ১০ বছর বয়সে সরা বিশ্বে পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ গবেষণা জার্নাল ফিজিকাল রিভিউ এ গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে। বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম অনেক পদার্থ বিজ্ঞানী মন্তব্য করেছে যে এই ছেলে একদিন পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার পাবে। Perimeter Institute for Theoretical Physics এর অফিসিয়াল ওয়েবসাই থেকে জাঁকব বার্নেট সম্বন্ধে জানতে পারবেন Jacob Barnett

কানাডার বিভিন্ন সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেলে জাঁকব বার্নেটকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ শিরোনাম:

15-year-old Jacob Barnett: One of the world's most promising physicists

Teen prodigy finds home at Waterloo’s Perimeter Institute

Perimeter Welcomes Exceptional Young Talent

২) ড্যানিয়েল ট্যামিন নামে এক ব্যক্তি পাই এর মান দশমিকের পরে ২৫ হাজার ডিজিট পর্যন্ত বলতে পারে। মাত্র ৭ দিনে আইসল্যান্ডিক ভাষা শিখেছে। বিশ্বের অন্যতম পরিচিত অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হলেন কিম পিক। মাত্র ৩ সেকেন্ডে কোন বই এর দুই পৃষ্ঠা পরতে পারেন। শুধু পড়া না; উনি জীবনে যত বই পড়েছেন বা যত কিছু পরেছেন সকল কিছু মনে রাখতে পারেন ও বলতে পারেন। কোন বই এর কত পৃষ্ঠায় কি আছে তা বলতে পারেন। কিম পিকের অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে হলিউডে ছবি তৈরি হয়েছে যার নাম রেইন ম্যান। নিম্নোক্ত লিংক থেকে বিশ্বের অন্যতম ১০ জন সেরা গড গিফটেড প্রতিভাবান অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অসাধারণ ক্ষমতার সম্বন্ধে জানতে পারবেন।

৩) আমি বর্তমানে কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিভাগে পিএচডি করতেছি সেই বিভাগে লরি ব্রাডফোর্ড নামে একজন অধ্যাপিকা আছেন যিনি একজন অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। প্রচণ্ড ভালো শিক্ষিকা ও গবেষক। আমার বিশ্বাস তাকে দেখলে বা তার সাথে কথা বললে কিংবা তার ক্লাস করলে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছাত্র-ছাত্রীও মানতে চাইবে না যে অধ্যাপিকা লরি ব্রাডফোর্ড একজন অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি। আমি যেহেতু আমার ডিপার্টমেন্টের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্বপালন করছি গত ২ বছর ধরে ও প্রতি মাসে ডিপার্টমেন্টের শিক্ষকদের মিটিং এ উপস্থিত থাকি ও সকল কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি তাই তার সম্বন্ধে বিস্তারিত জেনেছি। দুর্ভাগ্যক্রমে তার ২ টি অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। ২ মাস পূর্বে তার সাথে ফোনে কথা হয়েছিল। কথা প্রসঙ্গে তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে উনার কিছু অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী বৈশিষ্ট্যের কারণেই আজ কানাডার শীর্ষস্থানীয় ১৫ টি গবেষণা প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটির শিক্ষক হতে পরেছেন। প্রত্যেক অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশু কিছু গড গিফটেড প্রতিভা বা বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মায়। মা-বাবারা যদি শৈশবেই সেই বৈশিষ্ট্যগুলো সনাক্ত করতে পারে ও ঠিক মতো পরিচর্যা করে তবে সেই শিশু শুধু সেই পরিবারের জন্যই না পুরো বিশ্বের জন্য সম্পদ হয়ে উঠে ও মানব কল্যাণে অবেদন রাখে নিজের অসাধারণ শিল্প, সাহিত্য, ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে।

আপনারা যারা আমার এই লেখা পড়তেছেন সেই সকল ব্লগারদের প্রতি বিনীত অনুরোধ এই লেখাটি সকলের মাঝে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন; অথবা, নিজেদের পরিচিত সকলে আলোচনা করুন; নিজেদের পরিবারে কিংবা পরিচিত মহলে কোন অটিস্টিক বা প্রতিবন্ধী শিশু/কিশোর-কিশোরী/ পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তাদের সাথে মানবিক আচরণ করুন; তাদের পরিবারের সাথে মানবিক আচরণ করুন। সমাজকে সচেতন করুন, মানুষকে বলুন Autism spectrum disorder (ASD) বা অটিজম মানুষের অন্যান্য স্বাভাবিক রোগের মতোই একটি শারীরিক বা মানসিক সমস্যা। বৈজ্ঞানিকরা এই সমস্যা সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু জানে না এখনও তাই এই রোগের পূর্নাঙ্গ চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নি। তবে এই রোগের কিছু উপসর্গ সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিকরা নিশ্চিত হয়েছে; যে উপসর্গগুলোর কোন-কোনটি শিশুর শৈশব বয়স থেকে উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমে সারিয়ে তুলা যায়।



মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:০৫

সোহানী বলেছেন: বলো কি এ যুগে এসে এরকম নাটক আবার প্রচারও হয় দেশে!!! কি ভয়ংকর অজ্ঞতা।

ভালো লাগলো বিষয়টি নিয়ে লিখছো বলে। আমাদের দেশে যেখানে সুস্থ্য সন্তানদেরই কোন যত্ন নেয় না সেখানে অটিজমের শিশুদের কি হাল তা আর নাই বা বল্লাম।

২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:০০

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
আপু আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি এই রকম একটি নাট তৈরি করে সেটা ঈদের সময় বাংলাদেশের একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়েছে। আমার নিজের পরিবারে অটিজমে আক্রান্ত মানুষ আছে; আমার ও আপনার পরিচিত খুব কাছের ব্লগারের সন্তান আছে একই রোগে আক্রান্ত। আমার নিজের পরিচয়ের আলোকে বলতে পারি এই ব্লগারটি আমার জীবনে পরিচয় হওয়া অন্যতম ভালো মানুষ। আমার পোষ্টে বর্নিত উপরোক্ত অধ্যাপিকা ছাড়াও আমার ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধানের একটি ছলে আছে সেও অটিজম রোগে আক্রান্ত। এই শিক্ষকটিও অসাধারণ ভালো মানুষ।

২| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:৪৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



এই বিষয়ে আপনার যতটুকু ধারণা ও জ্ঞান আছে, উহা দ্বারা এই শ্রেণীর বাচ্চাদের জন্য কিছু করা সম্ভব?

২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:০২

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
আমি এই অটিজম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ না। আমার নিজের পরিবার ও আশ-পাশে পরিচিত বেহ কিছু মানুষের অটিজমে আক্রান্ত সন্তানদের লালন-পালনের অভিজ্ঞতার আলোকেই এই পোষ্ট লিখা। আমি মনে করেছি আমার অভিজ্ঞতার সকলের সাথে শেয়ার করা দরকার। ব্লগার হিসাবে আপনারা পারেণ এই তথ্যগুলো দেশের মানুষের কাছে, নিজের পরিচিত মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া।

৩| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:৫৩

সাসুম বলেছেন: এটা চরম অজ্ঞতার কারন। বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। আমার ছেলে জন্মের পর থেকে অদ্ভুত চঞ্চল। ৬ মাস বয়স না হতেই সে হাত পা ছূড়ে ভয়াবহ দুস্টামি। ২ বছর হতে না হতেই ঘরের সবাই তার দুস্টামি তে অস্থির।

ডাক্তার টেস্ট করে এবনরমাল মোটর স্কিল পেল। এত দ্রুত হাটাচলা আর দৌড়াদৌড়ি করে অবাক করা কান্ড। সাথে অদ্ভুত কগ্নিটিভ ডেভেলপমেন্ট। নীল, হলুদ আর লাল রং এর প্রতি অদ্ভুত টান। ২.৫ বছর বয়স তার , এই ৩ রঙ এর জামা কাপড় ছাড়া আর কিছু পড়বেনা। বাসায় শত শত গাড়ি আছে তার দুনিয়ার হাজার রংগের। শুধু লাল আর হলুদ গাড়ি নিয়ে খেল্বে বাকি গুলা ভুলেও দেখবেনা।

এখন, এটা কোন সমস্যা না। ডাক্তার জাস্ট বল্লো, একদম লেভেল ১ এ আছে এ এস ডি টেস্টে। এক্টাই সমাধান- যেমন চলছে তেমন চলতে দেয়া, জাস্ট কেয়ার করা যাতে ব্যাথা না পায় বা কোন কিছুতে হার্ট না হয়।

এক্মাত্র সচেতনতা আমাদের কে রক্ষা করতে পারে অজ্ঞতা থেকে। এক্মাত্র সু শিক্ষা পারে আমাদের কে বের করে আনতে অজ্ঞতার গহবর থেকে।

২৬ শে জুলাই, ২০২১ সকাল ৮:০৪

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ নিজের সন্তানের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। আপনার এই মন্তব্য আমার পোষ্টকে সমৃদ্ধ করেছে। আমি আশাকরি আপনি আরও বিস্তারিত ভাবে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন আমাদের সাথে।

৪| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:৪৬

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
শিশুরা কখনোই কারও পাপের ফসল হতে পারে না।
এই নাটকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বাবা-মাকে
অপরাধী ও দোষী হিসেবে দেখিয়ে অপমানিত করা
হয়েছে, যার তীব্র নিন্দা জানাই।
এই ধরনের ঘটনার
পুনরাবৃত্তি
যেন না
হয়।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:১১

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আমাদের সমাজে এমনিতেই অনেক কুসংস্ককার চালু আছে। অনেক শিক্ষিত মানুষকেও বুঝানো যায় না বিজ্ঞানের অনেক বিষয়। এই ধরনের নাটক একটি ভয়ংকর ম্যাসেজ দেয় সমাজে। এই ধরনের নাটকের পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তা নিশ্চিত করা উচিত উপযুক্ত কতৃপক্ষের।

৫| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:২৪

জুন বলেছেন: আমরা এখনো একে জ্বীনের আছর বলেই ধরে নেই । আমার কাজিনের ছেলে অটিস্টিক আমেরিকায় থাকে , তাঁর শারিরীক সক্ষমতা মত পড়াশোনা করে সে এখন চাকরি করে । গাড়ি চালিয়ে অফিসে যায়। খুব খেয়াল না করলে কেউ বুঝতেও পারে না। বাংলাদেশে থাকলে তাকে মানুষের কথার চোটে লুকিয়ে হয়তো রাখতে হতো ঘরের ভেতর ।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:১৬

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপু, আমি বর্তমানে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া-লেখা করছি সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স লেভেলের ছাত্র সংসদের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (বাংলাদেশে আমরা যাকে ভিপি বলি) সে আমার ভাতিজি। আপনি অবাক হবে শুনে যে আমার সেই ভাতিজি জন্মের ২ বছর পর থেকে কোনদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে নি। যে এমন এক বিরল রোগে আক্রান্ত যে রোগের কোন চিকিৎসা আবিষ্কার হয় নি পৃথিবীতে। তার শহরীরের সকল হাড়ে ফাটল বা চিড় রয়েছে। এই রকম একটি মেয়ে প্রায় ২০ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছে। টেড টক এ স্পিকার হয়েছে, নিয়মিত ভাবে কানাডার বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দেয়।

৬| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২০

কামাল১৮ বলেছেন: ধর্মীয় কুসংস্কার থেক এই ধারনার সৃষ্টি।লাইভে একটি মায়ের করুন আকুতি আমি শুনেছি।বাবা মাকে অনেকে খারাপ চোখে দেখে।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:২০

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
বাংলাদেশের মতো দেশে এমনিতেই মানুষ যত কু-সংস্কারে ভুগে ও অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে যত কটু কথা বলে আড়ালে-আবডালে ও সেই সকল শিশুদের মা-বাবাদের নিয়ে, এর পরে এই ধরনের একটি নাটক যা মাত্র ১ দিনের মধ্যে ৮ লক্ষ মানুষ দেখেছে সেই মানুষগুলোর বিশাল বড় একটা অংশ যে এই নাটকটি বিশ্বাস করবে তা হলফ করেই বলা যায়। আমি ভাবতেছি এই ৮ লক্ষ মানুষের মাধ্যমে এই নাটকের ম্যাসেজটি কত মানুষের কাছে পৌছাবে?

৭| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:৪৭

ঢাবিয়ান বলেছেন: এটা শুধু অজ্ঞতা নয় রীতিমত একটা অপরাধ। ঐ নাট্যকারকে উচিত গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া। সে মানবতার সীমা লংঘন করেছে।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:২৬

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: শুধু নাটক প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ায় কারণে এই নাট্যকার, পরিচালক ও নটকের প্রধান অভিনেতা ও অভিনেত্রীকে ক্ষমা করে দেওয়ার মাধ্যমে এই অপরাধের বিচার শেষ হয়ে যায় না। আমি মনে করি এই এদের আরও বেশি শাস্তি পাওয়া উচিত। তার মানে এই না যে আমি বলছি জেল ও জরিমানা হওয়া উচিত। তবে এই অভিনেতা ও অভিনেত্রীর মাধ্যমেই মানুষকে জানানো উচিত আর একটি নাটকের মাধ্যমে যে অটিজম মানুষের একটি রোগ যা অন্যান্য রোগের মতোই যে কারো হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত শিশুদের পর্যাপ্ত কেয়ার নিলে তারা স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠে ও পূর্ণ ভাবে কর্মক্ষম হয়ে দেশ ও সমাজের উপকার করে।

৮| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৯:৩৩

নতুন বলেছেন: অবস্থা আগের থেকে বেশ ভালো হয়েছে। আমার ছোট বেলাতেই তো অনেক কে জ্বীনে ধরেছে বা প্রতিবন্ধী সন্তান হয়েছে কারন বাবা মায়ের পাপের ফল জাতীয় কথা অনেক শুনেছি।

এখন গ্রামেও মানুষ ডাক্তারের কাছে যায় ওঝা কম ডাকে।

হাতে ইন্টারনেট আসাতে অনেকেই ভালো জিনিস শিখছে।

অটিস্টিক শিশু, হিজড়া, মানুষিক রোগীদের উপরে সমাজ অনেক নিচু চোখে দেখে। এটা ঠিক করতে হলে সরকারের এই বিষয়ে প্রচারনা বাড়াতে হবে।

স্কুলে শেখাতে হবে টিভি এবং ফেসবুকের কিছু স্লট সরকারকে এই সব কাজের জন্য ফ্রী দেওয়া উচিত।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:২৭

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
"অটিস্টিক শিশু, হিজড়া, মানুষিক রোগীদের উপরে সমাজ অনেক নিচু চোখে দেখে। এটা ঠিক করতে হলে সরকারের এই বিষয়ে প্রচারনা বাড়াতে হবে।"

আপনার সুন্দর মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপনার সাথে আমিও একমত। সেই সাথে আমাদেকেও চেষ্টা করতে হবে চার পাশের মানুষগুলোকে সঠিক তথ্য জানানোর জন্য।

৯| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১০:৪৫

জাতিস্মরের জীবনপঞ্জী বলেছেন: নাটকটার ইউটিউব থেকে তুলে নেয়ার দাবি উঠেছে শুধু তাই শুনেছিলাম, এর ভেতর এত ঘটনা জানতাম না। আমার খালাতো ভাই শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তার জন্মের সময় আমিও ছোট ছিলাম, কিন্তু তখন আমার খালাকে কি কি গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে এখন বুঝি। যারা এ ধরণের ব্যবহার করেছে, বিশেষ করে তার দাদি বাড়ির লোকেরা, তারা ঠিকভাবে তার খোঁজও নেয় না। এই নাটক তো ভয়ংকর মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করেছে, এদের গোবর মাখা ছেড়া জুতা দিয়ে জুতাপেটা করা উচিৎ।

২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ১:৩২

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
আপনার সাথে একমত। অটিজমে আক্রান্ত শিশুর জন্য বেশিভাগক্ষেত্রে গ্রাম অন্বচলে মায়েদের দায়ি করা হয়। অটিজম অনেক ক্ষেত্রে বংশানুক্রমে হতে পারে। অর্থাৎ, মা কিংবা বাবার দিকের কারো হলে জেনেটিকালি তা ভবিষ্যত প্রজন্মের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই নাটক অবশ্যই বাংলাদেশের মানুষদের মাঝে কুসংস্কার আরও বাড়িয়ে দেবে তা হলফ করেই বলা যায়।

১০| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৩:০২

আমারে স্যার ডাকবা বলেছেন: আমি একটু ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলি, নাটকটির শেষের একটি সংলাপ নিয়েই যত বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও নাটকটি চ্যানেল আইতে প্রচার হয়েছে, কিন্তু তারা ঐ অংশটি বাদ দিয়েই প্রচার করেছে।

একাত্তর টিভি চ্যানেলের আলোচনা অনুষ্ঠানে এই নাটকটির নির্মাতা বলেছেন যে, তিনি একটা মেসেজ দিতে চেয়েছেন যে পাপ করলে সেটার শাস্তি কোন না কোন ভাবে পেতেই হয়। কিন্তু এই বিষয়টা বোঝাতে তিনি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুর বিষয়টা না টেনে অন্য কোন ভাবে বোঝাতে পারতেন। অবশ্যই মারাত্মক ভুল করেছেন, শিল্পী ও সংশ্লিষ্টরাও মারাত্মক দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে এর জন্য দায়ী সচেতনতার অভাব। তাদের হয়তো অটিজম নিয়ে তেমন কোন ধারনাই ছিলো না।
সত্যি বলতে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষেরই এই বিষয়ে সঠিক ধারনা নেই। নাটকটি ইউটিউবে ৮-৯ লাখ ভিউ হয়ে গেলেও কেউ এই বিষয়টা ধরতে পারে নাই। যখন একজন অটিস্টিক সন্তানের অভিভাবক বিষয়টা নজরে আনলেন, তখনই সবাই বুঝতে পারলো ভুলটা কোথায়।

আমি বলবো চ্যানেল আই এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দায়িত্বশীল আচরন করেছে। চ্যানেল আই ঐ সংলাপের অংশ কেটে প্রচার করেছে এবং সিএমভি বিষয়টি টের পাওয়ার পর ইউটিউব থেকে নাটকটি সরিয়ে নিয়েছে। এবং এরপর নির্মাতা ও শিল্পীগন বিবৃতি দিয়ে ক্ষমাও চেয়েছেন।

কিন্তু এই বিষয়ে কিছু কিছু মানুষ ও সাংবাদিক একটু বেশিই মাতামাতি করছেন। একাত্তরের ঐ অনুষ্ঠানেই শুরুতে নির্মাতা ক্ষমা চাওয়ার পরও মিথিলা ফারজানা যেভাবে নির্মাতা রুবেলকে লাইভে অপমান করলেন, এটা ঠিক হয়নি। এমনকি রুবেল এর নাট্যগুরু শিহাব শাহীনকেও যেভাবে নির্মাতা রুবেল এর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করলেন, এটাও দৃষ্টিকটু লেগেছে।

মানুষ মাত্রই ভুল, একজন না জেনে ভুল করে ফেলেছে, তারপর নাটক সরিয়ে নিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমাও চেয়েছে। তারপরও তাকে গালমন্দ করা ঠিক মনে করছি না।

এবার আসি সংলাপের বিষয়ে, সংলাপটি মনে হয় ছিলো "আমি পাপ করেছি, আমার পোলা কি পাপ করেছে?" এরকম কিছু। এইটা কিন্তু আহাজারির দৃশ্য ছিলো, এবং বাংলাদেশে যেকোন জায়গায় যান না কেন, বিলাপ আর আহাজারি এইভাবেই করা হয়, "আল্লাহ আমি কি পাপ করলাম যে এই শাস্তি দিলা?", "আল্লাহ আমার পাপের শাস্তি এইভাবে দিলা?"
নাটকটির সবকিছুই ঠিক ছিলো, শুধু পাপের শাস্তির বিষয়টা অটিস্টিক বাচ্চা দিয়ে বোঝানো চরম ভুল হয়েছে, এটা মারাত্মক ভুল, হালকা করে দেখার কিছুই নাই। নির্মাতাদের সচেতনতার অভাব ছিলো।

এবং সত্যি বলতে যার সন্তান স্পেশাল নিডস চাইল্ড, সেই এই বিষয়টা ভালো বুঝতে পারে। বাকিদের অটিজম নিয়ে সচেতনতার অভাব আছে।

১১| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: খুবই সুন্দর একটি পোস্ট দিয়েছেন। এই পোস্টের জন্য আপনাকে স্যলুট।

একটা কথা- সিনেমা নাটকে যখন দেখায় ঘুষ খাওয়া ভালো না। তা দেখে মানুষ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে না কেন?

১২| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৫২

সাসুম বলেছেন: পলাশ ভাই,
আমার বাচ্চার একটা মামাতো ভাই অটিস্টিক। আমার দেখা বাচ্চাদের মধ্যে তার মত টেলেন্ট বাচ্চা আর দেখিনাই। সে ৬ বছর বয়স না হতেই চমৎকার ছবি আকে, মুখে মুখে প্রাইম নাম্বার কেল্কুলেট করতে পারে, কিউব রুট আর স্কয়ার বের করতে পারে মনে মনে, এক কথায় এই বাচ্চা একটা প্রডিজি।

কিন্তু আমার বড় সমন্দি কে পাড়া প্রতিবেশী আর রিলেটিভস দের অত্যাচারে পালিয়ে বেড়াতে হয়। যদিও তারা বাচ্চাকে কখনো বকা দেয় না অতি জ্বালানোর পরেও। ডাক্তার এর কথা মতই টেক কেয়ার করছে এবং বাচ্চা ও কিন্তু অনেক উন্নতি করছে।

আসলে, উন্নত দেশ গুলাতে প্রতিটা প্রাণ সরকারের কাছে ইম্পরট্যান্ট, কারন সরকার জনবান্ধব। আমাদের ৩য় বিশ্বে এটা হয়না।

এই সচেতনতা বাড়াতে মানুষের শুশিক্ষার অন্ত নেই। সাথে সরকার এর প্রচুর প্রচার ও প্রসার এর দরকার। সেই সাথে দরকার স্পেশাল নিডস বাচ্চাদের জন্য ফ্যাসিলিটি বাড়ানো, স্কুল থেকে শুরু করে সব যায়গায়।

তাহলেই একমাত্র উন্নতি হতে পারে।

আমার বাচ্চার ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন- ভয়াবহ দুষ্ট একটা। এখনো সব ঠিক আছে। শুধু একটা জিনিষ একটু কস্ট লাগে- প্রায় ৩ বছর হতে চল্লো এখনো চুল উঠেনা। ডাক্তার বল্লো, তেমন সমস্যা না, জাস্ট হরমোনাল ডিফরমিটি। বড় হলে আস্তে আস্তে উঠতে ও পারে, নাও উঠতে পারে।
আর এমনি নরমাল সব কিছু এখন পর্যন্ত। প্রচুর প্রানশক্তি। সারাদিন এঘর ওঘর দৌড়ে বেড়ায়।


বিঃদ্রঃ আমাদের সহব্লগার আপনার সেই বড় ভাইর বাচ্চাকে নিয়ে রাজনৈতিক কারনে বাজে মন্তব্য করা এক সেলেব্রিটি ব্লগার কে আমরা সবাই মিলে পরিত্যাগ করেছিলাম। এখনো মনে আছে।

১৩| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৯

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: নাটক টি দেখিনি তবে আপনার লেখা পড়ে দেখার ইচছা হচছে। আর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু নানা কারনেই জন্ম নেয় ।আর সব ধরনের অটিজম যে দৃশ্যমান হয় তাও নয়।তবে আমাদর সমাজে এ ধরনের বাচচাদের জন্য নানা রকম অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার সাথে সাথে আপনজনদের থেকেও নানা রকম বিরুপ মন্তব্য শুনতে হয় ।যা সত্যিই বেদনা দায়ক এবং মানবতার অপমানও বটে।

১৪| ২৭ শে জুলাই, ২০২১ রাত ৮:০৩

মনিরা চৌধুরী বলেছেন: খুব প্রয়োজনীয় পোষ্ট।

১৫| ২৮ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৫:২২

কাওসার মাহমুদ বলেছেন: নাটকটা দেখিনি তবে দেখতে হবে।

১৬| ২৯ শে জুলাই, ২০২১ ভোর ৬:২০

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: সর্বশেষ উদাহরণ হলও নিশো ও মাহজাবিন অভিনীত ঈদের নাটক "ঘটনা সত্য"। যে নাটকে বলা হয়েছে
যে মা কিংবা বাবা বা উভয়ের পাপ বা খারাপ কাজের জন্য তাদের জন্মানো শিশিরা অটিজম রোগে আক্রান্ত হয়।

.........................................................................................................................................
নাট্যকার ক্ষমা চেয়ে তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে ।
তাহলে জানতে হয়, এসব প্রচারের পূর্বে কেন সংকৃতিক মনা
সূধী জনের মতামত নেয়া হয় না ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.