নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হোসেন মৌলুদ তেজো

লিখতে ভালোবাসি

হোসেন মৌলুদ তেজো › বিস্তারিত পোস্টঃ

মরুভূমির জলচক্র

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৬

পরিবর্তন হলে বৈচিত্র আসে, বৈচিত্র বয়ে আনে বিপ্লব…কিন্তু বিপ্লবের ফলাফল আবার দ্বিমুখী, এটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছি আমরা। এই হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অবিশ্বাস আর পরিকল্পনাহীনতার মাঝে বয়ে চলা এ জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে উপলব্ধি করছি আমরা। বাইরের অস্থিরতা, ব্যস্ততা, সব ঝেড়ে ফেলে এক একটা কর্মব্যস্ত দিনের সমাপ্তি নিয়ে মানুষ ফিরে আসে তার নিজস্ব জগতে। এই বিশাল পৃথিবীর ভেতরে আরো একটা ছোট্ট পৃথিবীতে। আরো একটা নতুন আর সৃজনশীল দিনের বার্তা নিয়ে সকালের রোদ এসে পড়ে অধীরের চোখে। ব্যাচেলরদের জন্য তৈরি বড়ীটির তিন তলায় অধীরের বাসা। দুইটা রুম, একটা বাথরুম আর একটা রান্নাঘর। অধীরের বিছানা ফ্লোরে পাতানো। ঘুম ভাঙলে অধীর বিছানাতে উঠে বসে। সারা রুমে ছড়ানো অবস্থায় পড়ে আছে কাগজ, রংতুলি, কাপড়, জুতা, সিগারেটের খালি প্যাকেট, ষ্ট্রে আর একটা বিয়ারের ক্যান। অধীর উঠে এসে প্রস্রাব করতে বাথরুমে যায়। ফ্রেস হয়ে রুমে ঢুকলেই তার চোখ পড়ে অসম্পূর্ণ ছবিটার দিকে। অধীর এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে আটকে থাকে। কাল প্রায় পুরোটা রাত সে ছবিটার পেছনে কাটিয়েছে। সিগারেট হাতে ছিল প্রায় সারাক্ষণ। তবুও শেষ করতে পারেনি। এখন ছবিটা নিয়ে বসবে কি না – তাই ভাবছে। ব্রেড আর কলা দিয়ে নাস্তা সেরে এক কাপ কফি বানায় অধীর। তারপর সিগারেটের প্যাকেট হাতে নিয়েই চরম বিরক্ত হয়… প্যাকেট খালি! বাধ্য হয়ে নিচে যায় সিগারেট আনতে। অধীরের আজ বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না তাছাড়া সকালে রোদ উঠলেও এখন আকাশ অনেকটা মেঘলা। মনে হয় বৃষ্টি হবে। অধীর সিগারেট আর কফি শেষ করে রংতুলি নিয়ে বসে।

একটা মেয়ে শীতের সন্ধ্যায় রাস্তার পাশ দিয়ে হাটছে। পরিবেশটা ঝাপসা, কুয়াশা মুটোমুটি অন্ধকার করে রেখেছে চারপাশ…এতটুকু বেশ ভালোভাবেই ফুটিয়ে তুলেছে সে। কিন্তু বাকিটা পারছে না। মেয়েটার হাটার অভিব্যক্তিতে তার শীত লাগার অনুভূতিটা প্রকাশ করতে পারছে না। অধীর একটা সিগারেট ধরায়। এমন সময় কলিংবেলের শব্দে সচকিত হয় সে। খুব বিরক্তি নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দরজা খুলতেই চেহারায় রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে নিনার প্রশ্ন “এত দেরী করলি যে দরজা খুলতে?” অধীর কোন উত্তর করে না, নিনা ভেতরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়। রুমে ঢুকেই নিনা বলে, “কয়টা খেলি, এতো ধোয়া কেন?” এবারও নিরুত্তর অধীরের উত্তরের অপেক্ষ্যা না করে এগিয়ে গিয়ে পর্দাটা টেনে জানালা খুলে দেয় নিনা। অধীর জিজ্ঞেস করে “কফি খাবি?” নিনা মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানায়।

অধীর ও নিনা দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। নিনা তার বিষণ্ণ দৃষ্টি আকাশ থেকে নামিয়ে পায়ে নিয়ে আসে। নীরবতা ভেঙ্গে নিনা বলেঃ
– তুইতো ছবি আকিস, মাঝে মধ্যে কবিতাও লিখিস। ছবি ও কবিতা এই দুইটার মধ্যে কোনটা বেশি আবেদনময়ী।
– মানে!
– মানে কোনটা বেশি কথা বলে, বেশি ভাব প্রকাশ করে?
– ছবির ভাষাটা স্থীর এর গতিশীল। একটা ছবিকে যখন কেউ বুঝতে চেষ্টা করে তখন তার দৃষ্টি থাকে স্থীর আর তার চিন্তাটা থাকে গতিশীল। আবার কবিতার ভাষাটা বিভক্ত এবং গতিশীল। কবিতার প্রতিটি শাখা আলাদা করে বুঝতে হয় এবং সেগুলোকে নিজস্ব চিন্তা ও চেতনা দিয়ে যুক্ত করে নিজস্ব একটা ভাব দাড় করাতে হয়। কবিতার দুইটি সত্তা থাকে যার একটি লেখকের এবং অন্যটি পাঠকের। অন্যদিকে ছবিকে বুঝতে হলে সামগ্রিক ছবিকে নিয়ে ভাবতে হয় ছবিকে পড়তে হয় শিল্পীর মতো করে।
– তার মানে শিল্পীর কারো কাছে কোন দায়বদ্ধতা নেই।
– দায়বদ্ধতা আছে বলেইতো ছবি আঁকে, তবে ছবিটা সবার জন্য নয়। ছবিতে শিল্পী সৃষ্টিশীলতাকে জাগিয়ে তুলে তবে সেটা অনুধাবন করার মনন চাই।
– আচ্ছা ঠিক আছে। এখন বল মানুষের সংসারে জীবনটা ছবি না কবিতার মতো?
– বুঝলাম না।
– আরে গাধা, সংসার কি ছবি না কবিতা? সংসারকে নিজের মতো না কর্তার মতো…
– কি হয়েছে?
– কিছু না।
– মিথ্যে বলবি না, তোর মুখে মিথ্যা মানায়না।
– তুইতো বলিস, মিথ্যাটা একটা শিল্প।
– কিন্তু, তুই এই শিল্পের শিল্পী না, নিনা। মিথ্যাটা তখনই শিল্প হয় যখন তা বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে পারা যায়, যা তুই পারিস না।
– মিথ্যার শিল্পী!
– আসল ঘটনা বল।
– তুই স্বীকার কর উত্তর দিতে পারবি না।
– তুই পারবি?
– হ্যাঁ।
– বল দেখি?
– সংসার হলো ছবি ও কবিতা দুটোই। তবে তা ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে বিভক্ত। যদি ছেলেদের দৃষ্টিতে বলি তাহলে সংসারটা একটা কবিতা আর মেয়েদের দৃষ্টিতে বললে তা একটা ছবি।
– জটিল!
– মিথ্যার শিল্পীদের কাছে সত্য সবসময়ই জটিল। কারণ সত্য এমন এক জিনিস যা মিথ্যার মতো শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড়ো হুমকি। মিথ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য করতে আরো দশটা মিথ্যা বলতে হয়। ছবিকে যেমন ফুটিয়ে তুলতে রং ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সত্য সবসময়ই বাস্তব, প্রাকৃতিক এবং জটিল। যেমন জটিল ঈশ্বর, পৃথিবী, মানুষ এবং…
– তোর বিয়ের পর তুই বেশ গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছিস। ভালো জানিস।
– তাই?
– আচ্ছা, ঠিক আছে আরো একটু বুঝিয়ে বল।
– সংসার মানে কি? একটা ব্যবস্থা। যার একটা পরিধি আছে। নির্দিষ্ট একটা ব্যাপ্তি আছে। মনে কর একজন স্বামী আর একজন স্ত্রী। সে সংসারটা যদি স্বামীর দৃষ্টিকোণ থেকে বলি তাহলে এটা একটা কবিতা যার দুইটি সত্তার একটি স্ত্রীর। এখানে আবার স্ত্রীদের সত্তাটা অবহেলিত, কবিতায় যেমন পাঠকের সত্তাটা অবহেলিত থাকে। লেখকের সত্তাটা সবার কাছে মুখ্য। প্রগতিবাদী কবিরা যেমন…
– ভুল কবিতায়তো পাঠককে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে কিন্তু পাঠকরা যদি তার অপব্যবহার করে।
– যেমন।
– যেমন, কবি বোদলেয়ার। ফ্রান্সের এই বিখ্যাত কবির প্রথমদিকের অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। তার কবিতা পাঠকতো বটে বড় বড় চিন্তাবিদরাও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এমনকি তার বইয়ের পান্ডুলিপি রাজপথে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু লাভ হলো কি? একসময় সেই বেদালেয়ারই হয়ে উঠলেন বিশ্বময় আধুনিক কবিতার জনক। আজ এতটা বছর ধরে তার কবিতার ধরনটা এখনও আধুনিক কবিতার আদর্শ আর তা ছাড়া কোন পাঠকতো কবিতা পড়তে বাধ্য না, সে না চাইলে না পড়লেই পারে।
– হ্যাঁ, সংসারের ক্ষেত্রে যেমন, তালাক। স্ত্রীর স্বামীর কবিতা পারলে পড়বে, না পারলে বাপের বাড়ি চলে যাবে।
– কিন্তু, এটাইতো ঠিক একটা প্রজন্ম যখন কোন প্রগতিবাদীকে প্রত্যাখ্যান করে। তার পরের প্রজন্মতো ঠিকই তাকে সাধুবাদ জানায়।
– ঠিক! পরের প্রজন্মওতো আরো একজন প্রগতিবাদীর মুখোমুখি হয়। স্ত্রীরা যেমন ধৈর্য্য ধরে সংসার ঠিক রাখে তার সন্তানের জন্য, তার সন্তানওতো পরে আরো কঠিন পরিবেশের মুখোমুখি হয়।
– বুঝলাম। এবার স্ত্রীর দৃষ্টিকোন থেকে বল।
– স্ত্রীর দৃষ্টিকোন থেকে বললে সংসারটা একটা ছবি আর শিল্পী সে না, তার স্বামী। তাকে সেভাবেই ছবিটা পড়তে হয় যেভাবে শিল্পী পড়াতে চায়।
– সেটাতো আবার স্থান ভেদে বিভক্ত।
– স্থানভেদে বিভক্ত, মানে?
– মানে, এটা হয়তো আমাদের সমাজ ব্যবস্থার কথা কিন্তু বাইরের কথা ধর।
– বাইরের জিনিস দেখে নিজেকে বিন্যাস করতে গেলেই তো মানুষকে বিচ্যুত হতে দেখা যায়।
– তাহলে তো আর বিপ্লব আশা করা যায় না।
– অনুকরণ কখনও বিপ্লব হতে পারে না। অবস্থান হারানো নয়, অবস্থানের উন্নতিটাই গ্রহণযোগ্য।
– তাহলে তুই বলতে চাস। সংসার একটা ছবি, যার শিল্পী হচ্ছে স্বামী আর দর্শক হচ্ছে তার স্ত্রী। ঠিক আছে তোর কথাই থাক, এতে তো খারাপের কিছু নাই। স্ত্রীকে ওই রকম দর্শক হতে হবে যে ছবির ভাষা বুঝে।
– শিল্পীর মতো করে মানে স্বামীর মতো করে নিজের মতো না।
– কিন্তু শিল্পের মূল্যায়ন এবং শিল্পী দুটো জন্যইতো যোগ্যতা দরকার।
– যোগ্যতার মূল্যায়ন করার মতো বিচারীওতো দরকার।

নিনার গলাটা গাঢ় হয়ে যায়। নি:শ্বাস গভীর ও দ্রুত হয়। অধীর আরো একটা সিগারেট ধরায়। অধীর তার এ বন্ধুটার কাছ থেকে অনেক কিছুই পেয়েছে। অহংকার করার মতো সম্পর্ক। নিনাকে সে অনেকদিন থেকেই চেনে কিন্তু বিয়ের পর নিনা কেমন যেন বিষন্ন হয়ে যেতে থাকে। ওর চোখের দৃষ্টি, চাওয়ার ভাষ্যটা দিন দিন কমে আসতে থাকে। আত্মতুষ্টি বলতে মনে হয় অধীরের এই রুমটাই। নিনা এখানে আসলেই যেন নিজের একরাল অভিমান, অভিযোগ, অনুযোগ নিয়ে আসে। মনে হয় যেন অনেকদিন পর কথা বলতে শুরু করেছে। অধীর নিবিষ্টচিত্তে নিনাকে দেখে, নিনার কথা শুনে, ইচ্ছে করে ওর ভিতর থেকে সব কথা বের করে নিয়ে আসতে, কিন্তু পারে না, নিনা অনেক বদলে গেছে। জাবেদ নামের ছেলেটা ওর জীবনে জড়ানোর পর থেকেই ও বদলে যেতে থাকে। অধীরও আর আগের মতো বন্ধুত্বের অধিকার নিয়ে দাবি খাটাতে পারেনি, মনে হয় যতক্ষণ সামনে থাকে ততক্ষণই। অধীর অস্থির হয়ে ওঠে, আরো একটা সিগারেট ধরায়। নিনা বিরক্তিকর দৃষ্টি দিয়ে দেখে আবার বাইরে তাকায়। অধীর সিগারেটটা লম্বা টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ে। সে ধোয়ায় তাদের ক্যাম্পাসের ছবি ভাবতে শুরু করে। ধোয়ায় ভেতরের আগের নিনা আর এই নিনার মধ্যে অনেক পার্থক্য। অধীরের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে। ঘরের ভিতর অস্থির পায়চারি করে অধীর। একবার ওঠে আবার চেয়ারে বসে। নিনা ওই ভাবেই বসে থাকে। অধীর ওর চেয়ারটা নিনার কাছাকাছি নিয়ে যায়। অধীর বলেঃ
– চল ঘুরে আসি।
– কোথায়?
– কোথাও না এমনি রিকশা করে।
নিনা কোন উত্তর দেয় না অধীর আবার প্রশ্ন করেঃ
– আজ হঠাৎ না জানিয়ে আসলি যে?
– এতক্ষণ পর এই প্রশ্ন!
– কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
– আচ্ছা, অধীর তুইতো আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু তাই না?
– আমিতো তাই জানি।
– তুই কি কোনদিন আমাকে তোর সাথে বিছানায় ভেবেছিস।
– ভাবতে হবে!
– সত্য করে বল?
– জাবেদের সাথে ঝগড়া করেছিস?
– …না।
– নিনা তুইতো বলতি, মানুষের মুখের চেয়ে চোখ বেশি কথা বলে। তোর কি মনে হয়?
– এক বছর আগে আমার জন্য উত্তরটা সহজ ছিল। এখন না।
– নিনা বিয়ের পর তুই অনেক বদলে গেছিস। জাবেদের ব্যাপারে তুই কোন কথাই আমাকে বলিস না কেন জানি না। তবে মনে রাখিস জাবেদ কিন্তু তোরই পছন্দের ছেলে ছিলো।
– তাই বলে কি আমার কোন পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে না, যখন তখন সে আমাকে চাইবে? সারাদিনে সে যখন ঘরে ফিরে তখন কি আমার কিছুই তার শোনার থাকে না। তার সাথে আমার একটাই সম্পর্ক।
– এই কথাটা জাবেদকে তো তুই বুঝিয়ে বললেই পারিস।
– তোর কি মনে হয়, ছবি ও কবিতার কথাগুলো আমি তোর মেধা যাচাইয়ের জন্য বলেছি।
কোন উত্তর দেয় না অধীর। আরো একটা সিগারেট ধরায়। নিনা উঠে গিয়ে দু’কাপ চা করে নিয়ে আসে। আগের মতোই ওরা বসে থাকে। বৃষ্টির গুমোট ভাবটা এখনও কাটেনি। ঘরের ভেতর এবং বাইর দুই জায়গার পরিবেশটাই নীরব আর বিষন্ন। নিনা একটু নিচুস্বরে বলে,
– অধীর, তুই আমার বন্ধু না হয়ে যদি স্বামী হতি অথবা, বন্ধু থেকে যদি স্বামী হতি তাহলে কি তুইও জাবেদের মতো করতি?
– হয়তো বা।
নিনা কঠোর দৃষ্টিতে অধীরের দিকে তাকায়। একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বলেঃ
– তোরা ছেলেরা কি সবাই এরকম?
– কি রকম?
– মিথ্যার শিল্পী!
– নিনা, সবকিছুর মধ্যেই পজেটিভ, নেগেটিভ থাকে। তুই ওর ব্যাপারটাকে পজেটিভ হিসেবে নে। কারণ, হিংস্রতাতো স্নেহ ভালোবাসারই বিকৃত প্রকাশ।
– প্রথম প্রথম তাই ভাবতাম। খুব উপভোগ করতাম ওর পাগলামি কিন্তু এখন আমি জানি না এটা জাবেদের প্রেম না কাম। অসুন্দরকে কাছে আসতে না দেয়াইতো ভালোবাসার ধর্ম। কিন্তু জাবেদের ভালোবাসাতো অসুন্দরে ভরপুর।
– নিনা, আমি কিছুই বলতে পারছি না। বন্ধু হিসেবে অনুভূতিটা শেয়ার করতে পারি মাত্র। তোর খারাপ লাগলে চলে আসিস। অধীরের হাতটা তোর জন্য সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাত হতে পারে।
– কিন্তু আমার যে বিশ্বাস নেই। কিভাবে করি? এক বছর আগে হলেতো আমার কোন কষ্ট হতো না এখনতো আমি নিজের ওপরই বিশ্বাস রাখতে পারছি না।
– ঠিক আছে বাবা, আমি কোন জাবেদ হবো না। আমি অধীরই থেকে যাবো।
– ইচ্ছে ছিল নাকি?
– ছিলো, তবে নিনার জাবেদ না, রেবার জাবেদ।

নিনা হেসে ওঠে। নিঃশব্দ কিন্তু প্রাণ খোলা হাসি। সে হাসি অধীর সিগারেটের ধোয়ায় দেখা নিনার মুখে দেখেছিলো। অধীর সিগারেট হাতে নিয়ে ধরাতে চায় কিন্তু নিনা না করে। অধীর সিগারেট রেখে দেয়। অধীর নিনার কাধে হাত রাখে। নিনা অধীরের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলে। দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়ে নিনার কোলে। নিনা, তার ভিতরে গভীর এক প্রশান্তি অনুভব করে, সে বুঝতে পারে তার কাধে পৃথিবীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত হাত বন্ধুত্বের হাত। অধীরের চোখও ঝাপসা হয়ে ওঠে। বাইরে অঝর ধারায় বৃষ্টি হচ্ছিল, কিন্তু বাইরের এই নির্ঝর বৃষ্টির চেয়ে অধীরের কাছে নিনার চোখের জলের আবেদন অনেক বেশি। অধীরের মনে হলো যেন, এই দুই ফোটা জলের সিক্ত করার ক্ষমতা আকাশের জলের চেয়ে অনেক অনেক বেশি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: মিথ্যা কখনও শিল্প হতে পারে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.