নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শুদ্ধচারী হৃদয়ের বিশুদ্ধ মানুষ হতে চাই। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর আগামীর। কল্পনায় আঁকি সমৃদ্ধ ও সুখী বাংলাদেশের চিত্র।

আশাবাদী মানব

জ্ঞান চর্চায় হতে চাই অগ্রগামী। শুদ্ধতার ফুলে সাজাতে চাই জীবনের পুষ্প কানন।

আশাবাদী মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

অসুস্থ মনের কাল্পনিক বাসনা ........................

১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

মানুষ আর মানুষের মন দুটিই ব্যক্তিবিশেষে একই কিন্তু ব্যক্তি নিজেকে চিনলেও তার মনকে কোনদিনই চিনতে পারে না বলে অনেকে মনে করেন। পৃথিবীর বহু অনাবিষ্কৃত নির্জন ভূমির মত এই রহস্যময় মনও রয়ে গেছে অজানার আড়ালে। অনেকে আবার এও মন্তব্য করেছেন যে মনস্তত্বের সিদ্ধান্তে গড়া নকশার খাঁজে খাঁজে খাপ খাইয়ে মনকে আঁকা যায় না।

এই বহুরূপী মনের কিছু চাওয়া আর তা পাওয়ায় রূপান্তর করার জন্য মানুষের চেষ্টার কোন কমতি লক্ষ্য করা যায় না সর্বদা তা কাজ করেই যায়। সহজে কোন কিছু লাভ করার ইচ্ছা মানব মনের মাঝে সর্বদা সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে। অল্পতেই যদি বিজয় মুকুট ছিনিয়ে নিয়ে আসা যায় তবে হৃদয়ের গহীনে বয়ে চলা শুরু করে আনন্দের ঢেঊ।এই ঢেউয়ের দোলায় দুলতে দুলতে কেউ কেউ এতই পাগলপারা হয়ে উঠে যে ভুলে যায় বাস্তবতা বলে কিছু একটা আছে। মনের মাঝে কল্পনার আকাশ রচনা করা, সেই আকাশে বাধাহীন অবাধ চলা ফেরা করার সাথে সাথে অনেক কিছুর স্বপ্ন দেখা আর পরম আয়েশে সুখনিদ্রায় মগ্ন হওয়া বুদ্ধিহীন কূপমুন্ডক ছাড়া আর কেউ কল্পনা করতে পারে না। এরকমই সব কাল্পনিক চিন্তার স্তূপ আমাদের তরুণ প্রজন্মের মাঝে স্থান করে নিয়েছে যায় ফল লক্ষ করা যাচ্ছে এবারের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে ।

আনন্দ বা ভাল কিছুকে সবাই আলিঙ্গন করতে চায় যা সবার কাছেই এক পরম আরাধ্য বস্তু।পরম আরাধ্য বস্তুকে লাভ করার জন্য যে কত কঠোর পরিশ্রম করতে হয় ,বিশ্বের কালজয়ী মানুষদের সাফল্যগাথার প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। তাইতো বৈজ্ঞানিক এডিসন বলেছেন,” প্রতিভা – একভাগ প্রেরণা আর নিরানব্বই ভাগ পরিশ্রম ও সাধনা।” কিন্তু আমাদের মাঝে, বর্তমান প্রজন্মের মাঝে কম পরিশ্রমে অতি সহজে সব কিছু লাভ করার যে প্রবণতা তৈরি হয়েছে তা যদি আরও কিছুদিন স্থায়িত্ব অর্জন করতে পারে তবে এই প্রজন্মের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে বলে আমার মনে হয়ে না।

সাম্প্রতিক সময়ের বহুল আলোচিত একটি ঘটনার উপর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেই ব্যপারটা পরিষ্কার হয়ে উঠবে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অসধুপায় অবলম্বন ও রেকর্ড সংখ্যক পরীক্ষার্থীর ফেল করার ঘটনা। এ নিয়ে চারিদিকে কথার ফুলঝুরি আগুনের ফুলকির মত ছুটে চলেছে দেশের সর্বময়। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষায় বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থী অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এটা শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ ডেকে আনছে। তাই এ বিষয়ে মূল্যায়ন করে ভুলভ্রান্তি বের করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষামন্ত্রী যদি মনে করেন ভর্তি-প্রক্রিয়ায় ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে, তাহলে সেগুলো সুষ্পষ্টভাবে বলতে পারেন। তবে এখনকার ভর্তি-প্রক্রিয়া বহুদিনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল। আর আসন সীমাবদ্ধতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড উঁচু থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যারা ভর্তির সুযোগ পায়নি, তাদের কম মেধাবী বলতে চাই না।পরস্পর বিপরীতমুখী কথার বানে আক্রমণ করে এ সমস্যার সমাধান করা যাবে না, নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। সুন্দর এই স্বদেশকে ধবংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে এখনই উপযুক্ত সময় কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার।

বর্তমান সমস্যার প্রকট রূপ যে আমাদের নিজেরই সৃষ্ট তা বলার অপেক্ষা রাখে না।পৃথিবীর এমন দেশ খুঁজে পাওয়া সত্যিই দুস্কর যেখানে পরীক্ষার আগেই পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয় আবার সেই প্রশ্ন সমাধানের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত স্যারদের দরজায় করাঘাত চলে । অভিভাবকদের লাইন পড়ে যায় ফটোকপির দোকানে দোকানে।যে ভাবেই হোক ভাল ফলাফল করাটাই তখন মুখ্য হয়ে উঠে, অন্য সবকিছুই তখন গৌণ রুপে ধরা দেয়। অনৈতিকতার সয়লাব মানুষকে তার স্বাভাবিক চিন্তার রাজ্য থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। সবার মাঝে আশ্রিত সৃজনশীলতাকে বিকশিত করার ইচ্ছা দিন দিন মরে যাচ্ছে নিজের অজান্তেই। সৃজনশীলতার এই অকাল মৃত্যু বন্ধ করার জন্য আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কে স্যার পার্সি নান বলেছেন, শিক্ষার তিনটি লক্ষ্য হতে পারে – ১.ব্যক্তি চরিত্রের পুনর্গঠন ২. পরিপূর্ণ জীবনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ৩.ভাল দেহে ভাল মন বিনির্মাণ । গ্রীক দার্শনিক প্লেটোও বলেছেন-‘ শিক্ষার উদ্দেশ্য হল সুস্থ শরীরে একটি সুস্থ মনকে বিকশিত করে তোলা’ । আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা অসুস্থ মন তৈরি করছে বলেই আশানুরূপ ফল লাভ করতে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি।অসুস্থ মনের কাল্পনিক চাওয়া যে যুক্তিহীন আর বাস্তবতা বিবর্জিত তা বারবার প্রমাণ হচ্ছে । চারিদিকে দুর্নীতি আর অনৈতিক কর্মকাণ্ড বর্তমান প্রজন্মের মাঝে যে ভাইরাস হিসেবে প্রবেশ করেছে, শক্তিশালী কোন এন্টি ভাইরাস তৈরি না করা যায় তবে অচিরেই জাতি হিসেবে আমাদের অবস্থান সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে যাবে ।

শব্দের ছন্দে কথার মালায় চায়ের কাপে ঝড় তুলে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়, একে অপরের প্রতি দোষারোপ বন্ধ করে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে সমস্যার সমাধান করতে। নিজের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে, আর কতকাল আমরা ঘুমিয়ে থাকব! এখন সময় এসেছে জেগে উঠার, একবিংশ শতাব্দীর এই ক্রান্তিলগ্নে মানুষ হিসেবে আমরাই পারি একটি সুন্দর সমাজ আর সুন্দর একটি সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। কেননা P. Gisbert তার Fundamentals of Sociology তে বলেছেন ‘Man is more than a hardworker or a skillful artisian; what is more he has wide duties to discharge and higher aspiration to fulfill.’

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.