নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী

সাধারণত গল্প লেখি, কবিতা আর তেমন মনে আসে না। এক কথায় গল্প নিয়ে আমার বসবাস। নিজের মত জোরালোভাবে প্রকাশের চেষ্টা করি। দেশকে ভালোবাসি, প্রেমকে শ্রদ্ধা করি।

মোস্তাফিজ ফরায়েজী জেরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ বাঘ মামার বিয়ে

২৩ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২০





১.



অনেক দিন শিয়াল পণ্ডিতের কোন খোঁজ খবর নাই। বাঘ মামাতো শিয়ালের উপর খ্যাপা। শিয়াল পণ্ডিতও ভয়ে ভয়ে আছে। কবে যে ডাক পড়ে। ভয়ে আড়ালে আবডালে শিয়াল পণ্ডিত ঘুরে বেড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত রেহায় পেল না শিয়াল পন্ডিত। বাঘ মামার দরবারে ডাক পড়ল শিয়াল পন্ডিতের।



শিয়াল পন্ডিত তো আধমরা! তবে শিয়াল পন্ডিত তা বুঝতে দেবার পাত্র নয়। একদিন হাঁপাতে হাঁপাতে বাঘ মামার কাছে হাজির। এসেই অনুনয় বিনয় করে বলে, ‘মামা খুব কষ্টে আছি। দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। লোকজন মুরগী ঘর এখন এমনভাবে বানাচ্ছে, আমি বুঝি শেষ। একটাকেও ঘায়েল করতে পারছি না। ক্ষুধার জ্বালায় মরে যাচ্ছি মামা।’



‘তোর তো এখনো কুমির ছানার মাংসই হজম হয় নি। চালাকি আর কত করবি? আমার রাজ্যে তুই এমন বেয়াদপি করলি, তোকে কিভাবে মাফ করব বল? তোকে তো কুমিরের ডেরায় রেখে আসা ফরজ হয়ে গেছে।’



শিয়াল পণ্ডিত তো একথা শুনে অক্কা যাবার অবস্থা। বাঘ মামাকে নানা অনুনয় বিনয় করে শিয়াল পণ্ডিত। কিন্তু কোন লাভ হয় না। বাঘ মামা বলে, ‘অনেক জ্বালিয়েছিস তুই। কুমির হচ্ছে জলের মোড়ল। আর সেই কুমিরের সাথে বাটপারি এ আমি মেনে নেব না। আজকেই তোকে কুমিরের ডেরায় যেতে হবে।’



শিয়াল পণ্ডিত মনে মনে কল্পনা করে, সে কুমিরের ডেরায় আর কুমির তাকে ছিঁড়ে-ছুটে খাচ্ছে। ভাবতেই আতকে ওঠে শিয়াল পণ্ডিত।



শিয়াল পণ্ডিত এবার কান্না কাটি করে বলে, ‘মামা, মামা, আমি কুমিরের ডেরায় গেলেতো মরেই যাব। মরার আগে আমার যে একটা শেষ ইচ্ছা আছে।’



বাঘ মামা বলে, ‘হাজার হলেও তুই আমার ভাগ্নে, তোর শেষ ইচ্ছা আমি না পূরণ করে পারি। বল তোর শেষ ইচ্ছা কি?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘সেটাতো এখন বলা যাবে না মামা, আমাকে দুই দিন সময় দাও। আমি ইচ্ছা পূরণ করে তারপর আবার ফিরে আসব।’



বাঘ মামা বলে, ‘ঠিক আছে, যা। তবে চালাকি করবি না আবার। তাহলে কিন্তু তোর ঘাড় মটকে দেব।’



শিয়াল পণ্ডিত বলে,'তা আবার বলতে মামা!’





২.



পরদিন কথা নাই বার্তা নাই, শিয়াল পণ্ডিত তার ডোল পিটিয়ে সারা রাজ্যে জানিয়ে দিল, ‘বাঘ মামার বিয়ে! বাঘ মামার বিয়ে!’



সবাই জিজ্ঞাসা করে, ‘কি পণ্ডিত সাব, কার সাথে মামার বিয়ে দিচ্ছ?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘বিয়ের সময় দেখে নিও সবাই। কণের নাম বলতে মামার নিষেধ।’



এ সংবাদ বাঘ মামার কানে যেতে না যেতেই বাঘ মামা রেগেমেগে অস্থির। শিয়াল পন্ডিতের ডাক পড়ল আবার। শিয়াল পণ্ডিত আসতেই বাঘ মামা তার থাবা দিয়ে শিয়ালের টুটি ধরে বলে, ‘আমি জানি না আর আমার বিয়ে! তোর ঘাড় আমি এখনি মটকে দেব!’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘দেখ মামা, আজ হোক আর কাল হোক আমি মরবোই। জীবনের প্রতি আমার মায়া নেই। তবে মামা, মরার আগে আমি মামীকে দেখে যেতে চাই।’



এ কথা শুনে বাঘ মামার মন গলে গেল। ভাবল, ভাগ্নে তাহলে মনে মনে আমাকে এত ভালোবাসে। ভাগ্নে তো ঠিকই বলেছে, বয়স তো কম হল না, রাজ্য চালানোর ঝামেলা টানতে টানতে বিয়ে করার কথা তো ভুলেই গেছি।



বাঘ মামা এবার নরম সুরে বলে, ‘বিয়ে তো বুঝলাম, কিন্তু কণে কে? রাজ্যের সবাইতো আমাকে ভয় পায়। আমাকে বিয়ে করবে কে বল?’



শিয়াল পণ্ডিত বলে, ‘মামা, ও নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবে না। কালকেই বিয়ে, তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো।’



এদিকে শিয়াল পণ্ডিত সবাইকে জানিয়ে দিল, বাঘ মামার কণে পছন্দ হয়ে গেছে। যাকেই পছন্দ হোক না কেন, তাকে বিয়ে করতেই হবে, তা না হলে সবার কপালে কষ্ট আছে।





৩.



বনের রাজার বিয়ে আর দাওয়াত হবে না। তা কি হয়! বাঘ মামা রাজ্যের সবাইকে দাওয়াত করল। সবাই নাচতে নাচতে বাঘ মামার বিয়েতে চলে আসল। কিন্তু কণের খোঁজ নাই, শিয়াল পণ্ডিতেরও খোঁজ নাই। বাঘ মামা পড়ল বিপাকে। ভাবলো শিয়াল পণ্ডিত কি এবারও তাকে ধোকা দিল!



বাঘ মামা চিন্তায় পড়ে গেল। তবে সূর্য ডোবার ঠিক আগে শিয়াল পণ্ডিতের দেখা মিলল। তার সাথে একটা হরিণী। শিয়াল পণ্ডিত এসেই বাঘ মামাকে আড়ালে ডেকে বলে, ‘মামা কণের বড় অভাব। তারপর আবার কণেকে হতে হবে সুন্দরী। হাজার হলেও আমার মামী হবে। খুব কষ্টে রাজী করিয়ে তারপর নিয়ে আসতে হল। তাই দেরী হয়ে গেল।’



বাঘ মামা বাইরে বেরিয়ে নাদুস-নুদুস হরিণীটির দিকে তাকাতেই জিভে জল চলে আসে। তারপর শিয়াল পণ্ডিতকে বলে, ‘ভাগ্নে, তোর পছন্দের তারিফ করতে হয়।’



বাঘ করছে হরিণীকে বিয়ে। বিষয়টা মানায় না। তবু সবাই আনন্দ-উল্লাস করে, কারণ পাছে আবার বাঘ যদি ঘাড় মটকে দেয় এই ভয়ে।



পরদিন সকালে সেজে-গুঁজে চোখে-মুখে কান্না নিয়ে শিয়াল পণ্ডিত হাজির বাঘ মামার কাছে। কারণ সেদিন কুমিরের ডেরায় যেতে হবে শিয়াল পণ্ডিতকে। শিয়াল পণ্ডিত যেয়ে দেখে, বাঘ মামা আছে ফুরফুরে মেজাজে। শিয়ালকে দেখেই বাঘ তার ধারলো দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলে, ‘ভাগ্নে আয়। তোর জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। পারলে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দে না আমায়। জানিস তো আগের মত দৌড়াতে পারি না এখন।’



ফুরফুরে মেজাজে এসব নানান কথা বলতে বলতে বোকা বাঘ ভুলেই যায় শিয়াল পণ্ডিতকে কুমিরের ডেরায় পাঠানোর কথা। শিয়াল পণ্ডিতও বুঝল টোপে কাজ হয়েছে। এ যাত্রায় রক্ষা পেল শিয়াল পণ্ডিত।



বাঘ মামার কাছ থেকে ফেরার পথে শিয়াল পণ্ডিত ভাবল, কিছুদিন শান্তিতে থাকা যাবে তাহলে।



----সমাপ্ত---

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.