নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঝিনুক নীরবে সহো,ঝিনুক নীরবে সহো ঝিনুক নীরবে সহে যাও, ভিতরে বিষের বালি, মুখ বুঁজে মুক্তো ফলাও।
ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে নেমে মন খারাপ হয়ে গেলো।
প্লেনের জানালা দিয়েই সাদা ধবধবে তুষারের রাজত্ব দেখতে পেলাম। আমি গরমের দেশের লোক,তুষার দেখলেই খুক খুক করে গলায় কফ জমে যায়।
বাড়তি যে জামা কাপড় এনেছি, সেটা প্লেনের পেটে জমা,লাউঞ্জে বেরুবার যে গরম জামাটা হাতে থাকা উচিত ছিলো,
সেটিও চেকড ব্যাগে ভরা।
ট্রাঞ্জিট লাউঞ্জে চলে গেলাম,এখানে নিয়ম মোতাবেক আমার ট্রাঞ্জিট থাকবে ৪ ঘন্টা।
লাউঞ্জ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ করা, কিন্ত যে তাপমাত্রা দেওয়া আছে,সেটা আমাদের দেশের মাঘ মাসের শীতের কাপা কাপা ঠান্ডা।
বাড়তি উষ্ণতার জন্য ক্যাফের খোজ করতেই, নিরো ক্যাফেকে পেয়ে গেলাম।
কিছু আধো আলো,আধো অন্ধকারের ভেতর ছোট্ট একটা ক্যাফে, টিলে একজনই ষ্টাফ, অর্ডার সেই নিচ্ছে আর সার্ভও সেই করতেছে।
মিডিয়াম ল্যাটে, সাবুদানার টেষ্টলেস বিস্কুটের অর্ডার দিয়ে নিরাসক্ত ভাবে ক্যাফের ভেতরে তাকিয়ে দেখি,
অপরূপ স্বর্ণকেশী এক রমণী ক্যাফের এক কোণায় হাতে পেপারব্যাক নিয়ে খুব মজার, রোমাঞ্চকর কিছু একটা পড়ছে। বিশেষণ গুলা মনে হলো কারণ, মেয়েটি বসে আছে যে মোটা ডিভাইডিং গ্লাসের পাশে, সেটি এপ্রোণ থেকে যে রোদ এনে মেয়েটির গালে ছিটকে ফেলছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, মেয়েটির হাতের বইটি খুবই বেষ্ট সেলিং টাইপের একটা বই!
সারা ক্যাফেতে সে আর আমি ছাড়া টিলের কালো বাদামী মেয়েটি। কোন প্যাসেঞ্জার নেই, খুব অলস একটা সময়।
আমি এই ৪ ঘন্টা কিভাবে কাটাবো বুঝতেছিনা, ক্যাফের ভেতরে যে উষ্ণতাটুকু রয়েছে, ক্যাফের বাইরে সেটি নেই।
আমি ঠান্ডায় কাবু হওয়ার রিস্ক নিতে চাচ্ছিনা।
ল্যাটে ও ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেলো। বিস্কুট ও ফুরিয়ে গেলো কিন্ত মেয়েটির বই পড়া ফুরোলো না। সে খুবই ইন্টারেষ্টিং বইটি পড়ছে, সেটির থেকে সে একটি পলক ও বাইরে ফেলছেনা।
বিষয় বস্তুর মুগ্ধতা তাকে যেভাবে আচ্ছন্ন করে রেখেছে, সে রকম্ভাবে একাগ্রচিত্তে, এই জীবনে আমি কাউকে বই পড়তে দেখিনি।
দু ঘন্টা কাটাবার পর পাবলিক এড্রেসে শুনলাম, দুর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার কারণে, আমার নিউইর্যক গামী আরো ৫ ঘন্টা দেরী হবে।
মেজাজ প্রচন্ড খারাপ হয়ে গেলো। এভাবে চুপচাপ বসে থাকাটা আমার মতোন একজন বাচাল লোকের পক্ষে অসম্ভব একটা ব্যাপার।
কাউন্টারে আবার ফিরতি কফির অর্ডারের জন্য গেলাম। সেখান থেকেও আড়চোখে মেয়েটির দিকে তাকালাম,
সে কি এমন বই পড়ছে যে, যেটির জন্য আমার দিকে একটি পলক ও ফেলা যাচ্ছে না -- সেটির নাম ও দেখার চেষ্টা করলাম।
কিন্ত মেয়েটি এতো সুন্দরী যে বইয়ের পাতায় এক সেকেন্ড তাকাই তো, তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকি এক ঘন্টা।
টিলের মেয়েট ছোট্ট কাশি দিয়ে হালকা হেসে দিয়ে আমার কল্পনা ভাংগিয়ে দিয়ে, খুব আস্তে বললো,
মিষ্টার ইউর কফি ইজ ওয়েটিং।
এবার আর আমি পারলাম না, কফিটি নিতে গিয়ে আস্তো পিরিচ টা ইচ্ছে করে ফেলে দিলাম।
যেটুকু শব্দ হলো, তাতে অনেকের ই চমকে যাবার কথা।
কিন্ত স্বর্ণ কেশীনি, বইয়ের পাতা থেকে একটি পলক ও সরালো না।
জীবনের সবচেয়ে অলস, বিরক্তিকর ৮/৯ ঘন্টা কাটিয়ে আড়মোড়া ভেংগে যখন প্লেনের ডাক শুনে সেদিকে পা বাড়ালাম, টিলের মেয়েটি --
হাসিমুখে আমাকে উইশ করে জানালো, হ্যাভ এ নাইস ট্রিপ স্যার।
আমি বেরিয়ে যেতে যেতে তাকে বললাম, ধন্যবাদ সুইট। নেক্সট টাইম তোমার এখানে যদি আসি, তবে মানুষ হিসেবে নয়, একটি বই হিসেবেই আসিতে চাই।
স্বর্ণকেশীনি তখনও হাতের পেপারব্যাকে মশগুল।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩১
নিমচাঁদ বলেছেন: মতামতের জন্য ধন্যবাদ
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৭
পার্থ তালুকদার বলেছেন: ডেঞ্জেরাস মেয়ে তো !!
একবারও তাকায় নি !!
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩২
নিমচাঁদ বলেছেন: প্রেম শুধু মানুষের সাথে মানুষেরই হয় না , বইয়ের সাথেও হয়
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৩৭
সুমন কর বলেছেন: এইমাত্র ফেসবুকে পড়ে আসলাম......
০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৬
নিমচাঁদ বলেছেন: ও হ্যা , সেখানে তো থাকবেই
৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৯
মেঘনা পাড়ের ছেলে বলেছেন: ফেবুতে যখন পোস্টাইছিলেন, তখনি দেখেছিলেম, কিন্তু ক্যান জানি, ভাল করে পড়িনি, শুধু চোখ বুলিয়েছিলেম। এখন প্রতিটি অক্ষর বাই অক্ষর পড়লাম। আপনার মত গাঢ় নয়, একটা হালকা হতাশা গ্রাস করলো। একটু ফিরলে কি এমন ক্ষতি হতো?
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:১৭
নিমচাঁদ বলেছেন: অন্যের কাহিনী , আমার গল্প
৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০৩
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ভালো স্মৃতিচারণা...
৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:৩১
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: পড়ে ভাল লেগেছে।
৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:০৪
মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
আধুনিক ট্রাজিডিগুলো বুঝি এরকমই হয়! একটা 'মিজাজ-খারাপ করা' গল্প পড়ালেন আমাকে দিয়ে। তবু পড়লাম, কারণ এটি আপনার লেখা। কেউ বা শালিকের বেশে ফিরে আসতে চায়, কেউবা আসতে চায় পেপারব্যাক বই হয়ে। সবারই একই উদ্দেশ্য, প্রেম। কিন্তু আমি ভাবছিলাম সেই অসহায় পিরিচটির কথা, যে আপনার প্রেমের জন্য কুরবানি হলো! সেই বাদামি মেয়েটি কিন্তু তবুও আপনাকে উইশ করেছে। তো... প্রেম কার বেশি, অথবা প্রেম কোথা থেকে কোথায় নিক্ষিপ্ত হলো... সেটি নিয়ে ভাবছি
বটমলাইন: অনেক মজা পেলাম... নিমচাদ ভাই
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩০
নিমচাঁদ বলেছেন: ভালো লাগা ,ভালোবাসা শুধু মানুষ মানুষেই হয় না -- অজৈবের সাথে জৈবেরও হয়
৮| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯
খায়রুল আহসান বলেছেন: বেশ মজার গল্প। ভাল লেগেছে।
গল্পটা পড়ার সময় লেখকের সাথে সাথে নিজেও কেমন যেন একটা অস্বস্তি অনুভব করছিলাম। একটু চোখ তুলে তাকালে কী আর এমন ক্ষতি হতো! সৌরজগতের ঘূর্ণন নিশ্চয়ই থেমে যেত না!
০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৩১
নিমচাঁদ বলেছেন: বাস্তবতা হলো ,আপনি যেমন করে ভাবেন , নিয়তি সেভাবে ভাবে না -- এসবই আসলে ভাবাভাবির অসাড়তা
৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৩১
নীলসাধু বলেছেন: পেপারব্যাক প্রতি কিছুটা রাগ ই হলো
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৩
ফয়সাল রকি বলেছেন: শুধু পেপারব্যাক হবার কি দরকার, কফির কাপ কিংবা মিরর হলে মন্দ হয় না!!!
+++