নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসুদ কামাল

মাসুদ কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাবলীতে খুবই হতাশ বোধ করছি। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা, ছাত্ররাজনীতি, শিক্ষকরাজনীতি, শিক্ষাঙ্গনে সরকারের হস্তক্ষেপ, আর এই ব্যবস্থার মধ্যে থেকে বেড়ে ওঠা পরবর্তী প্রজন্মের সম্ভাব্য চেহারা-সবই আমাকে অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছে। সিলেটের এই ঘটনাগুলোকে আমি তিনটি ভাগে ভাগ করব। প্রথমত, প্রশাসনিক বিবেচনায় এই বিশ্বদ্যালয়টিতে কি ঘটেছে? এই ঘটনাবলীতে ন্যায় কতটুকু, আর অন্যায়ই বা কতটুকু? দ্বিতীয়ত, এই ঘটনাপ্রবাহের পেছনে শিক্ষক রাজনীতির প্রকৃতিটা কী? তৃতীয়ত, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।

বিশ্ববিদ্যালয়টিতে একজন ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগের পর থেকেই এই ভদ্রলোককে নিয়ে যত গণ্ডগোল। সেখানকার শিক্ষকদের একটা অংশ এই ভদ্রলোককে পছন্দ করতে পারেননি। এর মধ্যে তিনি নাকি বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন, নিজে কিছু দুর্নীতি করেছেন, মিথ্যা বলেছেন। এই কারণেই শিক্ষকদের ওই অংশটি তাকে অপসারণের জন্য আন্দোলন শুরু করেছেন। এ ধরনের আন্দোলন এই দেশে কি নতুন কিছু? এখানে তো তাও আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভিসিকে অফিসে ঢুকতে বাধা দিয়েছেন। মাত্র কিছুদিন আগেই আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কি দেখেছি? সেখানে অফিসেই কেবল নয়, নিজের বাসভবনে পর্যন্ত ঢুকতে পারেননি নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি। আন্দোলনরত শিক্ষকরা ভিসির বাসভবনের সামনে বসে থেকে একটা উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে সেখানে যাওয়া ভিসিকে লেজ গুটিয়ে ঢাকায় ফিরতে হয়েছে। সরকারই কিন্তু এই ভদ্রলোককে সেখানে পাঠিয়েছিল। সিলেটের এই ভিসিকেও পাঠিয়েছিল একই সরকার।

সিলেটের শিক্ষকরা কি সে ধরনেরই কিছু আশা করেছিলেন? কিন্তু তারা একটা বিষয় ভুলে গিয়েছেন, সেটা হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের তেমন কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না সরকারের প্রতি। তাই তারা যে কোনো কিছু করার মতো অবস্থায় ছিল। সিলেটের শিক্ষকদের ক্ষেত্রে কিন্তু তেমনটি নেই। একভাবে বলতে গেলে তাদেরকে সরকার সমর্থক শিক্ষকই বলা চলে। বিপত্তিটা ঠিক এখানেই, সরকার সমর্থক শিক্ষকরা কিভাবে সরকারের পছন্দের একজন ব্যক্তিকেই উৎখাত করবেন? এটা অনেকটা সেই সাপটির মতো অবস্থা, যে কি-না নিজের লেজটিকে নিজেই গিলতে শুরু করেছিল।

ভিসি কামেল মানুষ। তিনি বুদ্ধি খাটিয়ে এখানে ছাত্রলীগকে কাজে লাগিয়েছেন। ভিসি, তা তিনি যত সাধারণই হোন না কেন, ভিসি তো! ওই চেয়ারের একজন ব্যক্তি যদি একজন সাধারণ ছাত্রের কাছে সাহায্যপ্রার্থী হয়ে যান, তখন ছাত্রটির মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। ভিসি সাহেব কি আন্দোলনরত শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলতে বলেছিলেন? বলার কি কোনো দরকার আছে? তিনি যদি বলেন, ‘কাল আমি একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে যাব, ওরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করবে, তোমরা একটা ব্যবস্থা করো।’ এই কথা শোনার পর ছাত্রদের হাতে যে আন্দোলনরত শিক্ষকদের মাথা ফাটেনি, সেটাই কি তাদের ভাগ্য নয়? দোষ আমরা কাকে দেব? ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের, নাকি যে তাদের লেলিয়ে দিয়েছে তাকে?

এই যে শিক্ষকদের পছন্দ না হওয়ার কারণে ভিসিকে বিতাড়ন প্রচেষ্টা, এর পেছনে অন্তর্নিহিত কারণটা কি? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগের একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সে নিয়ম কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথাযথভাবে পালিত হচ্ছে? ভিসি নিয়োগ হচ্ছে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী। সিলেটেও তাই হয়েছে। সিলেটের আন্দোলনরত এই শিক্ষকরা কি এই ভিসি নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে ক্ষুব্ধ? নাকি ব্যক্তিটিকে নিয়ে তাদের আপত্তি? সেখানকার মোট শিক্ষকের সবাই কি এই ভিসির উপর অসন্তুষ্ট? ভিসি নিয়োগের সময় কি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত শিক্ষকদের পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে, নাকি সিনেট সদস্যেদর পছন্দকে মানতে হবে? আন্দোলন যদি ব্যক্তির ব্যাপারে হয়ে থাকে, তাহলে এর পরিবর্তে যাকে নিয়োগ দেওয়া হবে, তাকে নিয়েও তো কারও কারও আপত্তি থাকতে পারে। তখন কি তাহলে আবার আন্দোলন করতে হবে? এভাবে আন্দোলনই যদি ভবিতব্য হয়, তাহলে শিক্ষকদের ক্লাসরুমে যাওয়ার সময় হবে কখন? এরা যদি নিয়োগ পদ্ধতির মধ্যেই যে অনিয়মতান্ত্রিক ব্যাপারটা রয়ে গেছে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতেন, তাহলে বরং একে আদর্শিক বলা যেত। সেটা কি হচ্ছে?

কেবল ভিসির নিয়োগই নয়, শিক্ষক নিয়োগ নিয়েই কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে প্রবল রাজনীতিকরণ চলছে না? দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে তাকালে সেখানকার শিক্ষকদের মাঝেমধ্যেই প্রবল রাজনৈতিক কর্মী ছাড়া কিছু মনে হয় না। কেউ আওয়ামী লীগ, কেউ বিএনপি, কেউ জামায়াত কিংবা কেউ বাম। এই তো পরিচয়। একজন শিক্ষক কেন কোনো রাজনৈতিক দলের লেজুড়ে পরিণত হবেন? ওই দলের কাছ থেকে বিশেষ কিছু সুবিধা পাওয়ার আশাতেই তো। এতে কি তার সম্মান বাড়ছে? সম্মান বাড়ুক বা কমুক তা নিয়ে এই শিক্ষকদের কোনো চিন্তা নেই। আত্মসম্মান বিষয়টা তাদের মধ্যে এতটাই অনুপস্থিত ওই লাইনে চিন্তা করাই তারা ছেড়ে দিয়েছেন।

সব মিলিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীগত চাওয়া- পাওয়া কিংবা পছন্দ-অপছন্দ এসবই হচ্ছে সিলেটের শিক্ষকদের আন্দোলনের ভিত্তি। এখানে আদর্শিক ব্যাপার স্যাপার তেমন একটা আছে বলে তো মনে হচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে যারা আন্দোলনে সময় আর শ্রম বিনিয়োগ করছেন, তাদেরই বা কতটুকু আদর্শবাদী বলা যায়, তা নিয়েও ভাবা যেতে পারে। তবে এর বিপরীতে ছাত্রলীগের বীর পুরুষরা যা করল, তাকে কিভাবে মূল্যায়িত করা যাবে? শিক্ষকদের অপমান করার পেছনে কোনো যুক্তিই থাকতে পারে না। এই অপমানকর্মে যদি অন্য কোনো শিক্ষকের ইন্ধনও থাকে, তবুও নয়। এরা তো আর প্রাইমারি স্কুলের ছাত্র নয় যে ভালো-মন্দ বিচারের ক্ষমতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত আসতে আসতে আমাদের দেশে এখন ১৮ বছরের বেশি লেগে যায়। তাই এরা কেউ অপ্রাপ্তবয়স্ক নাবালক নয়। এরা ভোট দিয়ে সরকার নির্বাচন করে। এরা দায়িত্বশীল নাগরিক। ভুল করার কোনো নৈতিক অবস্থানই এদের থাকা উচিত নয়। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার মতো গর্হিত কোনো অপরাধ করলে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই দেওয়া উচিত।

আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে তৃতীয়টি সবচেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ হতে পারত। কারণ পুরো ঘটনা প্রবাহের মধ্যে মুহাম্মদ জাফর ইকবাল তেমন ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত কোনো ব্যক্তি নন। ভিসির বিরুদ্ধে গত এপ্রিল মাস থেকেই যে আন্দোলন চলছে, তাতে তিনি সরাসরি জড়িত নন। আন্দোলনে স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক রয়েছেন। সেই কারণেই হোক বা অন্য কোনো কারণেই হোক, তিনি জানিয়েছেন যে, আন্দোলনরত শিক্ষকদের প্রতি তার সমর্থন রয়েছে। অফিসিয়ালি আন্দোলন এবং তার প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে তিনি ঠিক অতটুকুই জড়িত। কিন্তু ঘটনাগুলো ঘটে যাওয়ার পর অধ্যাপক জাফর ইকবালই যেন প্রধান একটি পক্ষ হয়ে গেছেন। আলোচনা এখন তাকে নিয়ে হচ্ছে, তার প্রতিক্রিয়া নিয়ে হচ্ছে।

তিনি চান বা না চান, তিনি একটা পক্ষ বনে গেছেন। সেদিন ছাত্রলীগের মাস্তানরা শিক্ষকদের হেনস্তা করেছেন, অপমান করেছেন। সন্দেহ নেই, এটা খুবই ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো, যারা সরাসরি হেনস্তা হয়েছেন, এমন যার মধ্যে অধ্যাপক ইয়াসমিন হকও আছেন, তারা কেউ কিন্তু দুঃখে অভিমানে বৃষ্টিতে ভিজেননি। পত্রিকায় দৃশ্যটি দেখেছি, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সিঁড়ির উপর বসে আছেন হতভম্ব হয়ে, অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে, পাশে একটা ছাতা পড়ে আছে, তিনি ছাতাটি খুলে মাথার উপর ধরার আগ্রহও পাচ্ছেন না! তার সামনে যিনি বসে আছেন, তিনি কিন্তু ঠিকই নিজের মাথার উপর ছাতাটি ধরে আছেন। তাহলে তিনি কি অতটা অপমানিত হননি? নাকি তার বোধটা তেমনভাবে জাগেনি?

এটা ঠিক, সব মানুষের মান সম্মান জ্ঞান একরকম নয়। মানুষের আবেগ অনুভূতি আত্মসম্মানও একরকম হয় না। আমার কাছে অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালকে খুবই আবেগপ্রবণ ও অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ মনে হয়। ব্যক্তিগতভাবে কখনো আমি তার মুখোমুখি হইনি। সাংবাদিকতা করার কারণে নিজেরা অতি সাধারণ মাপের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও প্রায়ই বড় মানুষের কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ পাই। এই লোকটির ক্ষেত্রে তেমন সুযোগ নিশ্চয়ই একাধিকবার পেয়েছিলাম। কিন্তু সচেতনভাবেই আমি তা এড়িয়ে গেছি। একবারের কথা বলি। তখন আমি দৈনিক আমার দেশে। সেটা ২০০৫ কি ২০০৬ সালের কথা। উনি এসেছিলেন, সঙ্গে ওনার স্ত্রী ও আরও কয়েকজন। আমাদের এডিটর কিংবা এক্সিকিউটিভ এডিটর কার কার সঙ্গে কথা বললেন, এখন এতদিন পর আর মনে নেই। কেবল এতটুকু মনে আছে যে, আমাদের প্রায় সব কলিগ এগিয়ে গিয়েছিলেন ওনার সঙ্গে হাত মেলাতে। ওনারা চলে যাওয়ার পর জানতে আগ্রহ হলো- কেন এসেছিলেন? যা জানতে পারলাম, অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হকের প্রমোশন নিয়ে কি একটা জটিলতা হচ্ছে। সেসব নিয়ে রিপোর্ট করা নিয়ে আলোচনা। অর্থাৎ এসেছিলেন তিনি তার স্ত্রীর ‘পেশাগত বঞ্চনা’ নিয়ে কথা বলতে। এত বছর পর এবারও কাকতালীয় কি-না জানি না, দেখা যাচ্ছে ওনার এই যে আবেগময় রিঅ্যাকশন, এর সঙ্গেও জড়িত রয়েছে ওনার স্ত্রীর পেশাগত কিছু বিষয়।

আমার অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, "বড় মানুষ" দের কাছাকাছি যেতে নেই। এদের দূর থেকে দেখা, এদের সৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার মাধ্যমে মুগ্ধ হওয়া- এসবই নিরাপদ। কাছাকাছি গেলে, এদের অনেক সীমাবদ্ধতা, পার্থিব সামান্য কিছুর জন্যও লোভ, ঈর্ষা চোখে পড়ে। বড় সেই মানুষটিকে তখন "যে কোনো মানুষ" মনে হয়, অতি সাধারণ মানুষ। ছোটদের জন্য মুহাম্মদ জাফর ইকবালের লেখাগুলো আমাকে মুগ্ধ করেছে।ওনাকে আমার একজন স্বাপ্নিক মানুষ মনে হয়েছে। পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে উনি একটা স্বপ্ন দেখেন, খুবই ইতিবাচক স্বপ্ন। আবার ওনার বিজ্ঞান কল্পকাহিনিগুলোর চেয়েও আমাকে বেশি স্পর্শ করেছে বিভিন্ন ইস্যুতে লেখা ওনার কলামগুলো।

সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখলাম, অনেকে বলছেন জাফর ইকবাল সাহেবের লেখায় নাকি বেশ স্ববিরোধিতা রয়েছে। রয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিপোক্রেসি। আমি অবশ্য এই ধারণার সঙ্গে একমত নই। আমি তার এই কলামগুলোর খুবই ভক্ত। তার লেখায় আন্তরিকতা আছে, আছে খাঁটি দেশপ্রেম। আমি তার সৃষ্টির মাধ্যমেই তাকে চিনতে চাই। তার লেখাগুলো পড়তে চাই। তাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক চাই না। আশা করতে থাকি, তিনি এমন কোনো আচরণ করবেন না, এমন কোনো কাজে জড়াবেন না, যাতে তাকে নিয়ে কেউ বিতর্ক করার কোনো সুযোগ পায়। তিনি সতর্ক থাকবেন নিজের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ে। ছাত্রদের আচরণ দেখে রাগে ক্ষোভে যখন বলবেন, তার গলায় দড়ি দিতে ইচ্ছা করছে, তখন ঠিক পরের বাক্যটিতে বলবেন না, ‘তবে আমি এখন গলায় দড়ি দিচ্ছি না।’ আর যদিও বা বলেন, দুদিন পর দুর্বৃত্ত এই ছাত্রদের বিরুদ্ধে যখন শাস্তি প্রদানের কথা ওঠে, তখন বলবেন না যে, এই শাস্তি প্রদানের পক্ষে তিনি নন, বরং তিনি বেয়ারা ছাত্রদের মাথায় হাত বুলিয়ে পথে আনার পক্ষে।

এই বেয়ারাদের মাথায় হাত বুলিয়ে পথে ফিরিয়ে আনার যে মহৎ আকাঙ্খা, একেও কিন্তু অনেকে সরল সহজভাবে নিচ্ছে না। আমারই এক সহকর্মী দেখলাম মন্তব্য করেছেন, এ কথা না বলে ওনার আসলে কোনো উপায় নেই। কারণ কথাগুলো না বললে ওনার পক্ষে সিলেটে থাকাটাই নাকি কঠিন হয়ে যাবে। উনি নাকি আসলে এর মাধ্যমে এক ধরনের আপসই করেছেন। কেউ কেউ আবার এমন কথাও বলেছেন, এই যে উনি মাথায় হাত বুলিয়ে পথে আনার কথা বলছেন, ছেলেরা যদি ছাত্রলীগ না হয়ে ছাত্রদল বা শিবিরের হতো, তাহলেও কি বলতেন?

এই সবই আসলে বিতর্ক। ওনার একটা মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে। যদিও জানি আমার আশাবাদের কোনোই মূল্য নেই, তারপরও আশা করতে ইচ্ছা করে, যে মানুষটিকে শ্রদ্ধা করি তিনি কোনো বিতর্কের কারণ হবেন না। আমার এক পরিচিত ভদ্রলোক, সক্রিয়ভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, সেদিন মুহাম্মদ জাফর ইকবাল সম্পর্কে একটা কথা বললেন। বললেন, আর সব যদি বাদও দিই, তারপরও মাত্র একটি কাজের জন্যই এই লোকটিকে আমি খুব শ্রদ্ধা করব। তিনি দেশের শিশু কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনিয়েছেন, তাদের জন্য সহজ ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের উপর বই লিখেছেন, বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে তাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের কথা বলেছেন।

আমার নিজের কাছেও সেরকমই মনে হয়। এই একটি কাজের জন্যই তো তাকে মাথার ওপর তুলে রাখা যায়। এমন একজন লোককে নিয়ে বিতর্ক হোক- তা চাই না। তাকে কেন আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারি না। তিনি নিজেই কেন বা আমাদের সে কাজে সাহায্য করবেন না?

পাদটীকা: লেখাটা শেষ করার আগে আরও কিছু বলতে ইচ্ছা করছে। এটা অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবালের একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস নিয়ে। ১ সেপ্টেম্বর তিনি স্ট্যাটাসটা দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, এ স্ট্যাটাসটি তিনি দিয়েছেন তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের জন্য। তিনি লিখেছেন, অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের কোনো ফেসবুক আইডি নেই বলে তিনি তার স্ট্যাটাসে অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের একটি বক্তব্য হুবহু প্রকাশ করছেন।

সেখানে ইয়াসমিন হক লিখেছেন, ‘‘৩১ আগস্ট প্রথম আলোতে আমার একটা ছবি ছাপানো হয়েছে যেখানে দেখানো হয়েছে আমি আঙুল তুলে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আখতার হোসেনকে ‘শাসাচ্ছি’ এবং তিনি করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। আঙুল নাড়িয়ে কথা বলা আমার একটি বদ অভ্যাস এবং সেই সুযোগটি গ্রহণ করে প্রথম আলো এই কুরুচিপূর্ণ ছবিটি দিয়ে জনাব আখতার হোসেনকে যেভাবে অসম্মানিত করেছে সেটি আমাকে অত্যন্ত ব্যথিত করেছে।

প্রকৃতপক্ষে ৩০ আগস্ট জনাব আখতার হোসেনের নেতৃত্বে একটি মহিলা পুলিশের দল আমাকে রক্ষা না করলে আমি আরও বড় ধরনের আঘাত পেতে পারতাম এবং সেজন্য তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। প্রথম আলোতে প্রকাশিত ছবিটির জন্য আমি আজকে জনাব আখতার হোসেনের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। জনাব আখতার হোসেনকে তার প্রাপ্য সম্মান দেওয়ার জন্য এবং মহিলা পুলিশের দলের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য আমি দুটি ছবি যুক্ত করে দিচ্ছি।”

এরপর তিনি দুটি ছবি সেখানে জুড়ে দিয়েছেন। যেখানে দেখা যাচ্ছে ইয়াসমিন হক পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন। কোনো সন্দেহ নেই, পুলিশের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ইয়াসমিন হকের লেখা বক্তব্যটি খুবই সুচিন্তিত এবং সুলিখিত। কিন্তু এখানে প্রথম আলোকে যেভাবে তিনি আক্রমণ করেছেন সেটাকে তেমন শোভন মনে হয়নি।

আর সবচেয়ে বড় কথা, এই বক্তব্যটা অধ্যাপক জাফর ইকবালের ফেসবুক স্ট্যাটাসেই বা কেন প্রকাশ করতে হবে? আচ্ছা, ইয়াসমিন হকের ফেসবুক আইডি নেই কেন? যার ফেসবুক আইডি নেই, যিনি এর প্রয়োজন অনুভব করেননি, তিনি কেন নিজের বক্তব্যের বহুল প্রচারের জন্য স্বামীর ফেসবুকের সাহায্য নেবেন? এবারও কি অধ্যাপক ইয়াসমিন হক নিজের প্রচারের জন্য খ্যাতিমান স্বামীকে ব্যবহার করলেন?

আবার একটা অনাকাঙ্খিত বিতর্ক!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৮

চলন বিল বলেছেন: জাফর ইকবাল তুমি খুব বাড়াবাড়ি করতেছ।তুমি জননেত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত, প্রধানমন্ত্রীর মনোনীত ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে সংবিধান লঙ্গন করেছ।তোমার নামে রাষ্ট্রদোহীর মামলা করা হবে।তোমার জন্য ছাত্রলীগ নেতারা বহিস্কৃত হইছে।তোমার মুখোশ খুলে দেয়া হবে।তোমার শরীরে যে রাজাকারের রক্ত তার প্রমান আমাদের হাতে আছে।দরকার হলে তোমার DNA টেস্ট করে রাজাকারের পরিচয় নিশ্চিত করে যুদ্ধপরাধের ট্রাইব্যুনালে বিচার করে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে।তুমি প্রস্তুত হও।তুমি ছাত্রলীগের লেজে পা দিয়েছ।জননেত্রী শেখ হাসিনা তোমাকে ছাড় না দিতে ইতিমধ্যে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন।অপেক্ষা করো,ছাত্রলীগ আসছে।

জয় বাংলা,
জয় বঙ্গবন্ধু।

২| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৯

ফাহাদ মুরতাযা বলেছেন: :D :D

মুরীদের হাজির হইতে দেরি হয়া গ্যাসে!!!

৩| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৫

বটপাকুড় বলেছেন: আচ্ছা একটা ব্যাপার আমার কাছে আজো ক্লিয়ার হয়না, শিক্ষক হিসাবে ওনার কাজ হইলো ছাত্র পড়ানো আর গবেষনা করা। কিন্তু উনি হইলো কয়েক দিন পর পর আন্দোলনের ডাক দেন। হদাই ফাঁপর, কেন বাবা, এতো খায়েস থাকলে পিএমকে বলেন আপনাকে শাবিপ্রবি এর ভিসি বানিয়ে দেয়া হোক, নাকি সেইটা হলেও হবে না

আমি বাজি ফেলে বলতে পারি, ওনার চেয়ে ভালো কোয়ালিটির সিএসই এর টিচার এই দেশে আরো একশ জন আছেন।
গবেষণার করার কোন নাম নাই, সারা দিন ধরে খালি আগডুম বাগডুম... আর আর আরসি ড্রন বানিয়ে উড়ান।

ছাত্ররা অন্যায় করছে, শাস্তির ব্যাপারে আবার না বলেন। কি চান নিজেই জানেন না, নাকি ভিসি কে বারে বারে বুঝিয়ে দিতে চান, আপনি ভিসি হইতে পারেন কিন্তু আমি ভার্সিটি কন্ট্রোল করি

আমি বুঝি না, এই লোকরে পীর মানার কি আছে। ৭১ এর সালে ভার্সিটিতে পড়েও উনি যুদ্ধ করেন নাই। ওনার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। কিন্তু এরকম অনেক পরিবার আছেন, তাদের বাবা মা সব ফেলে জীবন তুচ্ছ করে মুক্তিযুদ্ধ এ ঝাঁপিয়ে পরছেন। উদাহরণ চান, আমাদের বীর শ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান নিজের স্ত্রী আর কন্যা কে ফেলে যুদ্ধে আসার জন্য নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.