নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসুদ কামাল

মাসুদ কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিছিয়ে পড়া কওমি শিক্ষা ও হুজুরদের দলাদলি

০৬ ই মে, ২০১৭ দুপুর ২:৩৪


কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়াকে কেন্দ্র করে দেখা যাচ্ছে নানা বিতর্ক। বিতর্কটা নতুন নয়, আগেও ছিল। কিন্তু অতি সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক ঘোষণার পর বিতর্কটি যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরা-ই-হাদিসকে তার সরকার মাস্টার ডিগ্রির সমমান দিতে চান।
এই বক্তব্যের পর থেকেই যেন বেড়ে গেছে বিতর্কের মাত্রা। এমনিতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিটা বড় বিচিত্র। এখানে নীতি-নৈতিকতা, সত্য-মিথ্যা নির্ভর করে শীর্ষ নেতা-নেত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর। কিছুদিন আগেও যারা কওমি মাদ্রাসাকে জঙ্গি প্রশিক্ষণের কেন্দ্র মনে করতেন, সে অনুযায়ী বক্তব্য দিতেন, তারা হঠাৎ করেই চুপ মেরে গেলেন। দিন কয়েক একটু দেখলেন, তারপর আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলেন- প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত কত বেশি সঠিক হয়েছে, এটা এখনই বাস্তবায়ন করা দরকার, ইত্যাদি। নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা, পুরো দেশের মানুষ যাকে এক নামে চেনে, সেই শামীম ওসমান বলে বসলেন ২০১৩ এর মে মাসে মতিঝিলে যে তাণ্ডব চলেছিল সেটা নাকি কওমি মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক বা হেফাজতে ইসলাম করেনি। ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে কি হয়েছিল, কেন হয়েছিল, সে আলোচনায় আমরা একটু পরে আসবো। কিন্তু শামীম ওসমান এখন এটা কেন বলছেন? প্রধানমন্ত্রী সেদিন ওই ঘোষণাটি না দিলে ওনার পবিত্র মুখে এই বাণী কি শোনা যেতো? ২০১৩ সালের পর চার চারটি বছর পার হয়ে গেছে। কই, এই চার বছরে একবারও কি তার মুখে এমন কথা শোনা গেছে?
উলামা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমএ ডিগ্রি প্রদান ছাড়া অন্য একটি প্রসঙ্গেও কথা বলেন। সেটি হাইকোর্টের সামনে থাকা ভাস্কর্য নিয়ে। এটিও ছিল হেফাজতে ইসলামের একটি দাবি। ‘গ্রীক দেবী’ থেমিসের ভাস্কর্যটি হাইকোর্টের সামনে থাকা ঠিক নয়, এটি অনতিবিলম্বে অপসারনের দাবি ছিল হেফাজতে ইসলামের। উলামা সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী নিজেই জানালেন ওই ভাস্কর্যটি তাঁরও পছন্দ নয়। বললেন- গ্রীক ভাস্কর্য অথচ তার গায়ে শাড়ি পরিয়ে দেয়া হয়েছে! প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের আগে আমি কোন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বা আওয়ামী লাইনের বুদ্ধিজীবীর মুখে এই ভাস্কর্য নিয়ে একটি নেতিবাচক শব্দও শুনিনি। উল্টো বরং সকলের মধ্যে দেখে গেছে ভাস্কর্যটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য জান লড়িয়ে দেয়ার মত একটা দৃঢ় প্রতিজ্ঞা। এখন আশা করা যায়, উল্টো কিছু দেখা যাবে। এটাই এখন এদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হয়ে গেছে। নিজস্ব জ্ঞান, যুক্তিবোধ- এসব আর কারও মধ্যে নেই। আসলে থাকতেই নেই। আমি যেন সেটাই ভাবি, যা আমার নেতা ভাবেন। আমার সব যুক্তি বা চিন্তাই ভুল, যদি আমার নেতা সেটাকে সঠিক মনে না করেন। নেতা কেন সেটাকে সঠিক মনে করেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতাও যেন আমরা হারিয়ে বসেছি।
এটা কিন্তু কেবল সরকারি দলের জন্যই নয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, কিংবা এই যে এখন এত আলোচনা চলছে যে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে- তাদের ক্ষেত্রেও শতভাগ প্রযোজ্য। ২০১৩ সালের সেই ঢাকা অবরোধ বা মতিঝিলে অবস্থান কর্মসূচির কথাই ধরা যাক। মাদ্রাসার যে ছাত্র শিক্ষকরা তখন কোচরে চিড়া মুড়ি নিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করেছিলেন, তারা কি জানতেন- কি উদ্দেশ্য ছিল তাদের এই কর্মসূচির? এই কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়েছিলেন, এমন দু’একজনের সঙ্গে পরে আমার কথা হয়েছে। জানতে চাইলে তারা কেবল এতটুকু বলতে পেরেছিলেন- শফী হুজুর বলেছেন তাই গিয়েছিলাম। শফী হুজুর কেন বলেছেন, বলাটা ঠিক হয়েছিল কি না, বললেনই যদি তাহলে তিনি নিজে কেন মতিঝিলের সমাবেশে হাজির হলেন না- এসব নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। হুজুর বলেছেন, অতএব ওটা মেনে চলা, জান লড়িয়ে দেয়াই তাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
এখন আলোচনার বিষয় হচ্ছে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থা। এনিয়ে আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা এখন বেদম বেকায়দায়। এতদিন যেভাবে কাছা দিয়ে বিরোধিতা করেছেন, এখন দলের শীর্ষ নেত্রীর বক্তব্যের পর কি বলবেন বুঝতে পারছেন না। তারা যেহেতু একেবারে দলীয় কর্মী নন, তাই ডিগবাজি দিলেও একটু রয়ে সয়ে দিতে হয়। অনেক বুদ্ধিজীবী অবশ্য এমনও ভাবছেন, আহা প্রধানমন্ত্রীর এমন মনোভাবটা যদি একটু আগেভাগে বুঝতে পারতাম! এখন যা বলে ফেলেছি, সেটাকে আবার ফেরত নিই কিভাবে? তাদের হয়েছে থুতু ফেলে সেটাকে আবার চেটে খাওয়ার মত অবস্থা।
কিন্তু এই বুদ্ধিজীবীদের এতটা দুরবস্থা হতো না, যদি তারা এ বিষয়ে কিছুটা লেখাপড়া করতেন। যদি তারা সরকারের বিভিন্ন সময়ে নেয়া পদক্ষেপগুলো আগে থেকেই কিছুটা বিবেচনায় নিতেন, তাহলে দেখতেন এই পদক্ষেপটা অনেকটা অবধারিতই ছিল। কওমি শিক্ষাকে সরকারি স্বীকৃতি দেয়ার কথা সরকার অনেক আগে থেকেই ভাবছে। ২০১২ সালে প্রথম তারা এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তখন একটা কমিটিও গঠন করা হয়। সেই কমিটির প্রধানও ছিলেন এই আহমদ শফী। এই কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, কওমি শিক্ষাকে কিভাবে সরকারি নীতিমালার মধ্যে আনা যায়, তার একটা পথ অনুসন্ধানের। ১৭ সদস্যের সেই কমিটি তেমন কার্যকর কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এই যে না পারা, তার মূলে কিন্তু কোন আদর্শগত দ্বন্দ্ব ছিল না। বরং ছিল রাজনৈতিক টানাপড়েন। কমিটির চেয়ারম্যান আহমদ শফী থাকলেও কো-চেয়ারম্যান ছিলেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। এই ভদ্রলোককে বরাবরই আওয়ামী ভাবদর্শের বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। আবার কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন মাওলানা রুহুল আমীন। নির্বিরোধী হিসাবে রুহুল আমীন সাহেবের একটা পরিচিতি থাকলেও, গোপালগঞ্জের মানুষ হওয়াটাই ওনার জন্য অযোগ্যতা হিসাবে বিবেচিত হলো অনেকের কাছে। শফী হুজুর তখন এই দু্টি পদে পরিবর্তনের দাবি জানালেন। কাদের কাদের নিতে হবে, সেটাও জানালেন। এনিয়ে সরকারের সঙ্গে তার দু’টি বৈঠকও হলো। কোন সুরাহা হলো না। কমিটি আগেরটাই থাকলো। শফী হুজুর কমিটির মিটিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। মিটিংয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিলেও, চেয়ারম্যান হিসাবে সরকার নির্ধারিত ভাতা ও সুযোগ সুবিধা নিতে কিন্তু কোন গড়িমসি করলেন না। এরই মধ্যে এসে গেলো ২০১৩ সালের মে মাসের সেই ঢাকা অবরোধের ঘটনা। সরকারের সঙ্গে হেফাজতের তৈরি হলো বিশাল এক দূরত্ব।
এরপর কিছুদিন বিরতি দিয়ে সরকার সেই কমিটিকে আবার চাঙ্গা করলো। তারা একটা সুপারিশও দিল। কিন্তু বাধ সাধলো শফী হুজুরের হেফাজত। বললো- সরকার ওই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গেলে দেশজুড়ে গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে। এই যে প্রতিবাদ, গৃহযুদ্ধের হুমকি- এটা কেন? কোন নৈতিকতার প্রশ্নে কি? না, সেরকম কিছুর কথা কিন্তু হেফাজতের পক্ষ থেকে তখনও বলা হয়নি, এখনো বলা হয় না। পুরো বিরোধিতাটাই ছিল কমিটির লোকজন নিয়ে। বিরোধটা নীতি-নৈতিকতা নিয়ে নয়, পছন্দের ব্যক্তিকে কমিটিতে রাখা না রাখা নিয়ে। এমনকি এবার যে নীতিমালাটা তৈরি হচ্ছে, সেটা কিন্তু ওই আগের নীতিমালার আলোকেই হচ্ছে, এবং ধরে নেয়া যায় দু’একটা বাক্যের এদিক সেদিক ব্যতিরেকে হয়তো আগেরটাই গৃহিত হবে। তবে এবার গৃহযুদ্ধের হুমকি কেউ দেবে না। কারণ, এবারকার কমিটি হয়েছে পছন্দের লোকদের নিয়ে। অথবা আগের অপছন্দের লোকগুলোকে এখন তারা পছন্দ করছেন। কেন পছন্দ করছেন- সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন।
আসলে সমস্যার মূলটা নিহিত এখানেই। সিদ্ধান্ত বলুন, নীতি বলুন, নিয়ম বলুন- সবই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে। আমার পরিচিত এক মুফতি আছেন, ভদ্রলোক বয়সে অতটা প্রবীণ নন, কিছুটা তরুণই বলা যায়, তিনি সেদিন দুঃখ করে বললেন, আমাদের এই হুজুরদের দলাদলির কারণেই দেশে ধর্মীয় শিক্ষার এই দুরবস্থা।
হুজুরদের এই দলাদলির বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায় তাদের শিক্ষা বোর্ডগুলোর দিকে তাকালেই। দেশে এখন সরকারি হিসাবেই কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী আছে প্রায় ১৫ লাখ। আর বেসরকারি হিসাবে এটা ২৪ লাখের ওপর। এই যে এত ছাত্র ছাত্রী, এদের নিয়ন্ত্রণ কিন্তু একক কোন বোর্ডের অধীনে নেই। কওমি শিক্ষার জন্য দেশে এখন ছয়টি বোর্ড। কেউ কাউকে মানে না। এদের নামের মধ্যেও কোন মিল নেই। যেমন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ ঢাকা, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়া চট্টগ্রাম, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়্যা গওহরডাঙ্গা, আযাদ দ্বীনি এদারা সিলেট, তানজীমুল মাদারিসিল কওমিয়া বগুড়া এবং জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ। কেবল পদ দখলের অভিপ্রায় থেকেই এত দ্বিধাবিভক্তি।
সেই কওমি শিক্ষাকে সরকার একটা নীতিমালার মধ্যে আনার চেষ্টা করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাকে একটা শুভ উদ্যোগ বলেই বিবেচনা করি। সেদিন একটা টেলিভিশন টকশোতে দেখলাম, একজন বুদ্ধিজীবী বলছিলেন- কওমি শিক্ষাকে স্বীকৃতি দেয়া হলে, ডিগ্রি দেয়া হলে জব মার্কেটে নাকি একটা অস্থিরতা তৈরি হবে। এই শিক্ষা বাস্তব জীবনে কি এমন কাজে লাগবে যে এদেরকে সার্টিফিকেট দিতে হবে? ইত্যাদি। এসব কথা আসলে অনেকদিন ধরেই উচ্চারিত হয়ে থাকে। আবার এর বিপরীত মতও আছে। সেদিন একজন বললেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি ও সংস্কৃতি নামে একটা বিভাগ আছে। এখান থেকে মাস্টার ডিগ্রি দেয়া হয়ে থাকে। দেশে পালি ও সংস্কৃতির কি ব্যবহার আছে? এরকম্ একটি মৃত ভাষা নিয়ে যদি স্নাতকোত্তর সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, তাহলে ধর্ম বিষয়ক সর্বোচ্চ জ্ঞান লাভের পর কেন স্বীকৃতি মিলবে না?
এ প্রশ্নের জবাব আমার কাছে নেই। আমার কাছে আরও কিছু প্রশ্নের জবাবও নেই। যেমন, অনেকে কওমি শিক্ষা ব্যবস্থাকে বিজাতীয় শিক্ষা বলে থাকেন। বলেন- এখানে নাকি বাঙালি সংস্কৃতির কিছুই শিক্ষা দেয়া হয় না। তাদের পাঠ্য তালিকায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, জাতির পিতা, আমাদের ঐতিহ্য- এসব কিছুই নেই। আছে কি নেই, আমি অতটা জানি না। না থাকলে যোগ করে দিলেই তো হয়। কিন্তু পাল্টা একটা প্রশ্নও কিন্তু রয়েছে এক্ষেত্রে। ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষা ব্যবস্থায় কি আছে সেসব? এই যে ক্যামব্রিজ বা এডেক্সেলে আমাদের বাচ্চারা পরীক্ষা দেয়, ওদের সিলেবাসের দিকে কি কেউ একবার তাকিয়ে দেখেছেন? আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য বা সংস্কৃতির কতটুকু প্রতিফলন রয়েছে সেখানে?
সরকারের এই সিদ্ধান্তটি আমার বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি নিজে কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার সমর্থক নই। আমার পরিবারের কেউ এ শিক্ষায় শিক্ষিতও নয়। তারপরও আমি মনে করি, এই শিক্ষাটিকে একটা নীতিমালার মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। সারা দেশের কওমি শিক্ষা পরিচালিত হওয়া দরকার সেই নীতিমালার মধ্যেই। এই নীতিমালাটা দরকার এর ব্যাপকতার কারণে। সরকারি এবং বেসরকারি হিসাবের গড় করলে বলতে হয়, দেশে এখন ২০ লাখের মত ছেলে মেয়ে রয়েছে যারা কওমি মাদ্রাসায় পড়ে। এর বাইরে প্রতি বছর এক লাখ করে হিসাব করলে গত ২০ বছরে কওমি মাদ্রাসা থেকে বের হয়েছে আরও ২০ লাখ। এই ২০ লাখ লোক এই সমাজেই আছে। তাদের পরিবারের কথা ধরলে আরও কমপক্ষে ৪০ লাখ। এভাবে, এই দেশে ৮০ লাখের মত মানুষ রয়েছে যারা কওমি মাদ্রাসায় পড়ছে, পড়েছে, কিংবা এই শিক্ষায় শিক্ষিতদের সঙ্গে বসবাস করছে। এই বিপুল জনসংখ্যাকে আপনি অপছন্দ করতে পারেন, সমালোচনা করতে পারেন, এমনকি ঘৃণাও করতে পারেন; কিন্তু উপেক্ষা কোনভাবেই করতে পারবেন না। আমাদের এই দেশটা এদেরকেও নিয়ে। এরাও এই দেশের নাগরিক। তারা যদি দেশবিরোধী বেলাইনে কিছু করে থাকে, তাদেরকে লাইনে আনুন। কিন্তু তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বিবেচনার কোন অধিকার আপনার নেই, কারোরই নেই।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:০৩

মানবী বলেছেন: "আমি যেন সেটাই ভাবি, যা আমার নেতা ভাবেন। আমার সব যুক্তি বা চিন্তাই ভুল, যদি আমার নেতা সেটাকে সঠিক মনে না করেন। নেতা কেন সেটাকে সঠিক মনে করেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন করার যোগ্যতাও যেন আমরা হারিয়ে বসেছি।
এটা কিন্তু কেবল সরকারি দলের জন্যই নয়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, কিংবা এই যে এখন এত আলোচনা চলছে যে হেফাজতে ইসলামকে নিয়ে- তাদের ক্ষেত্রেও শতভাগ প্রযোজ্য"


- দুর্ভাগ্যজনক যে ব্যক্তিপূজার এই অসুস্থ সংস্কৃতি আমাদের অনেক গ্যিরে প্রোথিত। প্রধান দুটি দলে জিয়া আর মুজিব পূজা দিয়েই তা স্পষ্ট হয়। এই ব্লগেই দেখেছি, শেখ মুজিব কে শেখ মুজিব বা শেখ মুজিবর র্ঞান বললে যেনো কারো কারো অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে! কি ভয়ংকর কথা!

কতোটা হীণমন্যতাবোধ থাকলে আমরা এমনি ভাবে ব্যক্তি পূজায় মেতে উঠতে পারি। আর একারনেই আমাদের চেয়েও বেশী দারিদ্রতা, সুকসংস্কার আর অশিক্ষার হার নিয়ে ভারত আমাদের চেয়ে উন্নয়নে পথে এগিয়ে। আমরা নিজেদের উন্নয়ন নয়, জনগণের স্বার্থ নয় বরং "জ্বী হুজুর" দিয়ে সকল প্রচার মাধ্যম মাতিয়ে রাখি।

ঠিক এই হীণমন্যতাবোধের কারনেই আমরা মাদ্রাসা আর কওমী শিক্ষার সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠি। সেকেলে বলেই যথেষ্ট নয়, এখন এদের সকলকে জঙ্গী ট্যাগ দিয়ে বন্চিত করে সত্যিকারের জঙ্গীদের তোষণ করা হচ্ছে। আমেরিকা ইউরোপের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে, আছে চার্চ, সিনাগগ আর মসজিদের নিজস্ব স্কুল। কখনও সেসব নিয়ে সমালোচনা হয়না যদিও একটি বড় অংশ ধর্মচর্চা সেভাবে করেনা।


আপনার তথ্য সমৃদ্ধ লেখা ব্লগের অধিক সংখ্যাক পাঠকের কাছে পৌঁছে যেতে অন্যদের পোস্টে মন্তব্য করা জরুরী।
এখানে ব্লগীও ইন্টারএ্যাকশনটা গুরুত্বপূর্ণ।



তথ্যবহুল সুন্দর পোস্টের জন্য ধন্যবাদ মাসুদ কামাল।

*দীর্ঘকাল আগে দৈনিক জনকন্ঠে মাসুদ কামাল নামে একজন সাংবাদিক ছিলো, আপনি তিনি কিনা বুঝতে পারছিনা।*

০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:২৭

মাসুদ কামাল বলেছেন: সময় নিয়ে লেখাটি পড়েছেন বলে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আর যে পরামর্শ দিয়েছেন, সেজন্য ধন্যবাদ। যদিও কিছুটা ব্যস্ত থাকি, তারপরও আপনার পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করবো।

আপনার অনুমান সঠিক। দীর্ঘকাল আগে দৈনিক জনকণ্ঠে মাসুদ কামাল নামে যে সাংবাদিক ছিল, আমিই সেই লোক। জনকণ্ঠ আমি ছেড়েছি ২০০৪ সালের শুরুর দিকে। এরপর বিভিন্ন মিডিয়া হাউজ ঘুরে এখন কাজ করছি বাংলাভিশন টিভিতে।

২| ০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:২৭

মানবী বলেছেন: জবাবের জন্য ধন্যবাদ(মন্তব্যের উপরে একটি সবুজ তীর চিহ্ন আছে, সেখানে ক্লিক করে জবাব দিলে তা মন্তব্যকারীর কাছে পৌঁছে যাবে আর প্রতিটি মন্তব্যের সাথে সাথে জবাব প্রকাশিত হবে)।

আপনার মনে আছে দীর্ঘকাল আগে বাংলাদেশের প্রথম ডেঙ্গু কেসটি সম্পর্কে একজন মেডিকেলের ছাত্রী/ডাক্তার আপনাকে ফোন করে সংবাদটি জানিয়েছিলো? এবং কোনভাবেই নিজের পরিচয় প্রকাশ করেনি?
আমার খুব ভুল না হয়ে থাকলে আমি প্রায় নিশ্চিত সেই সাংবাদিকের নাম মাসুদ কামাল ছিলো।


০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫

মাসুদ কামাল বলেছেন: না, আপনার কিছুমাত্র ভুল হয়নি। আমিই সেই মাসুদ কামাল।
আর টেলিফোনে ওই সংবাদটি পাওয়ার পর ডেঙ্গু নিয়ে আমি বেশ কিছু রিপোর্ট করেছিলাম। আমার এটাও মনে আছে রোগটির নাম আপনি 'ডেঙ্গি' বলেছিলেন। তখন এই রোগটি আমাদের এখানে নতুন ছিল। রিপোর্টটি লেখার সময় আমিও 'ডেঙ্গি'ই লিখেছিলাম। কিন্তু আমার অফিসের যে সিনিয়র সাংবাদিক রিপোর্টটি এডিট করেছিলেন, তিনি শব্দটিকে কেটে 'ডেঙ্গু' করে দেন। পরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ এবিএম আবদুল্লাহ আমাকে বলেছিলেন শব্দটি আসলে 'ডেঙ্গি', কিন্তু যেহেতু ভুলটাই প্রচার পেয়ে যাচ্ছে, তখন সেটাকে আর পরিবর্তনের চেষ্টা করে লাভ নেই। সেই থেকে বাংলাদেশে এটি 'ডেঙ্গু' হয়ে গেছে! যে কারণেই হোক, ভুলটির দায় আমাকেই নিতে হবে। এতদিন পর ( তা প্রায় ১৭-১৮ বছর তো হবেই) সুযোগ পেয়ে সেই ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
ভালো আছেন আপনি?

কিভাবে মন্তব্যকারীকে জবাব দিতে হবে, বলে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।

৩| ০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:

" দেশে এখন সরকারি হিসাবেই কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রী আছে প্রায় ১৫ লাখ। আর বেসরকারি হিসাবে এটা ২৪ লাখের ওপর।

-২৪ নাগরিকের লেখাপড়া হচ্ছে সরকারের আওতার বাহিরে; এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

৪| ০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৩:৫০

চাঁদগাজী বলেছেন:

"কিন্তু তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসাবে বিবেচনার কোন অধিকার আপনার নেই, কারোরই নেই। "

-এরা পড়ালেখা করছে নিজেদের কারিকুলামে, দেশের শিক্ষা ব্যবস্হার বাহিরে কোন এক নিয়মে, ওদের শিক্ষা জাতির পথ-চলার সাথে গরমিল; এই বিষয়ে আপনার মতামত?

০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৯

মাসুদ কামাল বলেছেন: এবিষয়ে মতামত কিন্তু আমি দিয়েছি। হয়তো আমার লেখাটি ভালো হয়নি, অতটা পাঠযোগ্য হয়নি, তাই ওই বিষয়গুলো আপনার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তাই আরও একবার বলছি।
কওমি শিক্ষার কারিকুলাম এখন যেটা আছে, সেটা আমাদের জাতির পথচলার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়- আপনার এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। কেবল কওমি শিক্ষা কেন, ইংরেজি মিডিয়ামের যে শিক্ষা এখন দেশের বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দেয়া হয়, সেগুলোও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। কি কওমি, কি ইংলিশ মিডিয়াম- সবগুলোকেই আমাদের জাতীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর নীতিবোধের সঙ্গে মিলাতে হবে। না হলে ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে আমরা বিকশিত হবো কিভাবে?

৫| ০৬ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১

মানবী বলেছেন: ভিসেরাল লিশমেনিয়েসিস ভারত বর্ষে এসে যদি কালাজ্বর হতে পারে, ডেঙ্গে বাংলাদেশে ডেঙ্গু হলে কোন অসুবিধা নেই। আপনার সেই সিনিয়র সাংবাদিককে অভিনন্দন বাংলা অভিধানে নতুন শব্দ সংযোজনের জন্য :-)

আমি লগআউট করে চলে গিয়েছিলাম, আপনার পোস্ট আর সাথে নামটি দেখে আবারও লগিন করেছি। আপনি সেই মাসুদ কামাল জেনে কতোটা খুশি হয়েছি তা আমার এখানের সময়টা জানলেই স্পষ্ট হবে, এখানে এখন ফজরের সময়, প্রায় ভোর সাড়ে চারটা!

আপনাকে আমার কখনও ধন্যবাদ জানানো হয়নি। একজন মানুষের পকষে সহনীয় সম্ভব সর্বোচ্চ্ হার্টবিটের চেয়েও বেশি হার্টবিট নিয়ে সেদিন ফোনটা করেছিলাম। পরিবার পরিজন সবাই বাঁধা দিয়েছিলো। আমার কাটা কাটা কথাবার্তার কারনে্ কিনা জানিনা মেডিকেল কলেজে ঢোকার পর পরই আমাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিলো সাংবাদিক আর পুলিশ থেকে দূরে থাকার জন্য, এরা ক্ষেপে গেলে যেকোন মানুষকে বিপদে ফেলতে পারে। তারপরও সেদিন সকলের বিরুদ্ধে গিয়ে ফোন করেছিলাম দেশের স্বার্থে।

আমি যখন আপনাকে বার বার বলছিলাম, "প্লিজ আপনি পি জি হাসপাতালে গিয়ে খোঁজ নিন, ডাঃ শামসুল ইসলামের(নামটা সঠিক মনে আছে আশা করি) লাশটা এখনও ওখানে আছে। এটা ভয়ংকর মহামারী হয়ে ছড়িয়ে পরতে পারে, দেশের মানুষকে সচেতন করুন" আমার মা অবাক হয়ে আমাকে দেখছিলেন, হয়তো ঠিক সেসময় তিনি রিয়ালাইজ করেন আমি আর ছোট্ট মেয়েটি নেই।
আর আপনি যখন বলছিলেন, "এমন একটি খবর দিলেন, আপনার নামটা বলুন। এই রোগ সম্পর্কে কিছুই জানিনা, এটা সম্পর্কে আমাকে জানাতে পরিচয়টা বলুন"- তখন আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ের সাথে সাথে টিএন্ডটি বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাচ্ছিলাম তখনও দেশে কলার আইডির প্রচলন হয়নি দেখে :-)

পরদিন পত্রিকায় কোন খবর না দেখে মন খারাপ করেছিলাম, আমার মা বুঝিয়েছেন ওনারা খোঁজখবর না করে কিভাবে রিপোর্ট লিখবে! খুব সম্ভবত তার পরদিন অথবা ২ দিন পর বড় বড় লাল অক্ষরে জনকন্ঠে আর তার পরদিন প্রায় সব পত্রিকায় খবরটা ছাপা হয়। সেই খবর দেখে একসাথে কষ্ট, ভালোলাগা আর একজন অসাধারন চিকিৎসক সদ্যপ্রায়ত ডাঃ শামসুল ইসলামের(তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি) জন্য কান্নার এক অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো।

সেদিন একদম অজানা অচেনা এক মানবীর কথায় আপনি যে খোঁজ খবর নিয়েছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা। সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ডেঙ্গের মতো এক ভয়াবহ মহামারী সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে দেবার জন্য। আপনি সেদিন বিষয়টি এড়িয়ে গেলে হয়তো আরো ভয়ংকর পরিনতির পর সতর্কতার সৃষ্টি হতো!

হলুদ সাংবাদিকতার আড়ালে আমাদের দেশের সৎ নির্ভিক সাংবাদিকদের মহৎ কাজগুলো্ আড়াল হয়ে যায়। আপনার মতো সাংবাদিকদের অবদান সম্পর্কে দেশের মানুষ অজ্ঞ থেকে যায় অথবা বিস্মৃত হয়।

আপনাকে কৃতজ্ঞতা আর ধন্যবাদ জানানোর সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগলো।
অনেক অনেক ভালো থাকুন।

৬| ০৭ ই মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮

টারজান০০০০৭ বলেছেন: আফনে যৌনকণ্ঠের ছাম্বাদিক আছিলেন, এহন বাংলা বিভীষণের ছাম্বাদিক হইছেন ! আফনেরে শুভেচ্ছা ! চালায়া যান ! পুলিৎজার নিশ্চিত !

০৮ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:৩৩

মাসুদ কামাল বলেছেন: আপনি আপনার মতোই মন্তব্য করেছেন, ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.