নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাসুদ কামাল

মাসুদ কামাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিগনেচার: শিল্পকর্ম নাকি ভূমিকম্প?

২৩ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৫৩

পৃথিবীর তাবৎ মানুষের মধ্যে বর্তমান সময়ে কার সিগনেচার বা স্বাক্ষরটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

সন্দেহ নেই এ্টি একটি সহজ প্রশ্ন। ডোনাল্ড ট্রাম্পই যে সেই ব্যক্তি, এটা বলতে অনেককেই তেমন কিছু ভাবতে পর্যন্ত হবে না। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ। সেই দেশের প্রেসিডেন্টের হাতে অসীম ক্ষমতা। এমন ব্যক্তির স্বাক্ষর গুরুত্বপূর্ণ হবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরও আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর নিয়ে যত আলোচনা হচ্ছে, সম্ভবত এতটা আগে কখনো হয়নি।
এই আলোচনার একাধিক কারণ রয়েছে। প্রথমত, প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে রাষ্ট্রীয় কোন কর্মকাণ্ডের অভিজ্ঞতা ট্রাম্পের ছিল না। তিনি ছিলেন নিছকই একজন ব্যবসায়ী। রাজনীতির সঙ্গেও তেমন একটা জড়িত ছিলেন না। এমনই একজন ব্যক্তি, অস্বাভাবিক সব অরাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মন্তব্যের পরও যখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে গেলেন, তখন আগের যে কোন প্রেসিডেন্টের তুলনায় হয়ে গেলেন তিনি বেশি বিপদজনক। গত কয়েক মাসে বারবার এলোমেলো কথা বলে তিনি কেবল আলোচনাতেই আসেননি, একই সঙ্গে নিজেকে আরও বেশি আতঙ্কিত ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন। মানুষ সব সময়ই একটা শঙ্কায় থাকে, না জানি কখন কোন বিপদজনক আদেশে স্বাক্ষর করে বসেন তিনি।

প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নেয়ার কিছু্ক্ষণ পরেই প্রথা অনুযায়ী বেশ কয়েকটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি। তিনটি ফোল্ডারে থাকা প্রায় গোটা ত্রিশেক কাগজে স্বাক্ষর দেন। এ কাজটি করেন তিনি বেশ ঘটা করেই। তার পরিবারের বিভিন্ন বয়সী বেশ কয়েকজন সদস্য, কংগ্রেসের কয়েকজন সদস্য সে সময় তার আশপাশে ছিল। যে টেবিলটিতে বসে তিনি স্বাক্ষর করেন, তার চারপাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলেন সবাই। তার সেই স্বাক্ষর করার দৃশ্যটি টেলিভিশনেও প্রচারিত হয়েছে। তিনি টেবিলে বসে একের পর এক স্বাক্ষর করছেন, আর মুখ তুলে টেবিলের চারপাশে দাড়িয়ে থাকা লোকগুলোর দিকে তাকাচ্ছেন বাহাদুরির ভঙ্গিতে। টেবিলের ডানদিকে ছিল একটা কলমের বাক্স, সেখান থেকে একটি করে কলম বের করছেন, দু’টি তিনটি কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে কলমটি দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের কোন একজনকে উপহার হিসাবে দিচ্ছেন। আবার ফাঁকে ফাঁকে এর ওর সঙ্গে কথা বলছেন। এভাবে পুরো দশ মিনিট ধরে চললো সেই প্রথম স্বাক্ষরপ্রদান পর্বটি।

একেবারে প্রথম স্বাক্ষরটির কথা যদি ধরা যায়, দেখা গেলো তিনি কলমটি বের করে বেশ জোরের সঙ্গে ত্রিশবারেরও বেশি উঠানামা করেছেন। ফুলস্কেপ একটা কাগজের এক চতুর্থাংশেরও বেশি জায়গাজুড়ে যে আঁকাআঁকি করলেন, এটাই তার সিগনেচার। এই স্বাক্ষরটি করতে ট্রাম্প সময় নিয়েছেন পুরো ছয় থেকে সাত সেকেন্ড। এরপর দেখা গেল প্রতিটিতেই এরকম সময় লাগছে। সাধারণত, অধিকাংশ মানুষের স্বাক্ষরে এত সময় লাগে না, দু’ থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যেই হয়ে যায়। এমনকি তার আগের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্বাক্ষরে সময় লাগতো এক থেকে দুই সেকেন্ড।



ট্রাম্পের স্বাক্ষর নিয়ে আলোচনার দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে এর দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য। আগেই বলেছি, এটি সম্পূর্ণ করতে তিনি কলমটিকে কেবল উপরে-নিচে ওঠানামা করেন বেশ কয়েকবার। ফলে পুরো স্বাক্ষরটিতে বেশ কিছু শার্প লাইন থাকে, কোথাও কোন লুপ বা বৃত্তাকার রেখা দেখা যায় না। প্রথম দর্শনে কারো কারো কাছে এটিকে একটি শিল্পকর্ম বলেও ভুল হতে পারে। কিন্তু একটু সতর্কভাবে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, তিনি আসলে তার পুরো নামটাই এখানে লিখেছেন। টানা লিখে গেছেন- ‘ডোনাল্ড জে ট্রাম্প’। যদি এটাকে শিল্পকর্মের মতোই মনে হয়, তাহলে কিসের মত? প্রথমবার যখন আমি এটি দেখি, একবার মনে হলো বুঝি কোন নগরের দালানকোঠার ল্যান্ডস্কেপ জাতীয় কিছু দেখছি। তবে কেউ কেউ এই শিল্পকর্মের সঙ্গে লর্ড অভ রিংস মুভির শয়তানের আবাসস্থল মরডরের যে প্রধান ফটক রয়েছে, তার সঙ্গে খুব মিল খুঁজে পান। কেউ বা বলেন এটি দূষিত ডিএনএ’র রেখাচিত্রের মত। আবার কারো কারো কাছে মনে হয়েছে, এটি বুঝি ভূমিকম্পের সময়কার রিখটার স্কেলের কোন রিডিং। এই মিলগুলো যে একেবারেই অমূলক তা নয়, পাশাপাশি রাখলে মিলগুলো খুবই স্পষ্ট হয়ে যায়।


ট্রাম্পের স্বাক্ষর ও মরডরের কালো ফটক

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিগনেচার নিয়ে এরই মধ্যে বেশ গবেষণা হয়ে গেছে। হস্তরেখাবিদরা এই স্বাক্ষর নিয়ে বেশ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করেছেন। এমনিতে হোয়াইট হাউজে প্রবেশের আগে থেকেই ট্রাম্পকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তার অনেক অনেক মন্তব্য, আচরণ, কর্মকাণ্ড, পরিকল্পনা, মিডিয়াতে এসেছে। সাধারণ মানুষের কাছে সবকিছুই কেমন যেন এলোমেলো ঠেকেছে। হয়তো এসব কারণেই নির্বাচনী প্রচারণার সময় সচেতন মানুষেরা ভাবতেই পারেনি যে, এই কৌতুককর এবং অনভিজ্ঞ মানুষটিই শেষ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে যাবেন। কেউ কেউ এমনও ভেবেছিলেন যে, প্রেসিডেন্টের চেয়ারে বসার পর হয়তো তার এইসব পাগলামি থেমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেরকম কিছু ঘটেনি। দায়িত্ব নেয়ার পরও নানা উদ্ভট সিদ্ধান্ত তিনি একের পর এক নিয়ে চলেছেন। সেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হয়ে, আইনগত জটিলতা তৈরি হয়েছে, কোন কোনটিতে তাকে পিছু হটতে হয়েছে, কিন্তু পরিবর্তন হয়নি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। হস্তরেখাবিদরাও অবশ্য এমনটিই বলেছেন। তাদের মতে, ট্রাম্পের এই সব আচরণের ইঙ্গিত কিন্তু হাতের লেখাতেই আছে, আছে তার অস্বাভাবিক সিগনেচারে। তারা ট্রাম্পের একেবারে যৌবন কালের হাতের লেখার সঙ্গে বর্তমান সময়ের রেখা তুলনা করেছেন, তারপর দেখিয়েছেন, কিভাবে আগের তুলনায় এখন আরও বেশি একরোখা, অতি আত্মবিশ্বাসী, এবং তর্কপ্রিয় মানুষে পরিণত হয়েছেন ট্রাম্প।


রিখটার স্কেল রিডিং

ট্রাম্পের সিগনেচার বা স্বাক্ষর দেয়ার একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- তিনি লেখেন বেশ মোটা নিবের কলম দিয়ে। কলমটি বেশ জোরের সঙ্গে কাগজের উপর চেপে ধরেন। আর লেখার সময় কেমন একটা খসখসে শব্দ হয়। এমনই শব্দ যে, টেলিভিশনের দর্শকরা পর্যন্ত সেই শব্দটি ঠিক শুনতে পেরেছেন। শব্দটির সঙ্গে রিখটার স্কেলের গ্রাফ তৈরির সময়কার শব্দের মিল পাওয়া যায়। অনেকে আবার এই শব্দটির সঙ্গে হরর মুভিতে শয়তানের যে হিসহিসে চিৎকার, তার সঙ্গে সাদৃশ্য খুঁজে পান।

আমেরিকার পলেটিকো ম্যাগাজিনে হস্তলেখা বিশেষজ্ঞ মিশেল ড্যাশবোর্ড ট্রাম্পের সিগনেচার নিয়ে বেশ একটা গবেষণাধর্মী আর্টিকেল পর্যন্ত লিখেছেন। তার মতে, ট্রাম্প স্বাক্ষর দেন বড় বড় আক্ষরে। এই যে বড় বড় করে লেখা, এর মধ্যে নিজেকে বড় করে দেখানোর একটা মানসিকতা কাজ করে। হয়তো এটা সচেতন ভাবে নয়, কিন্তু অবচেতনে ঠিকই যেন তিনি বলতে চান, দেখো আমি কত ক্ষমতাবান! মিশেলের কাছে যে বিষয়টি খুবই ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে, সেটা হলো সিগনেচারের একেবারে শেষের অক্ষরটি। অর্থাৎ, ট্রাম্প-এর শেষ অক্ষর ‘পি’। এই ‘পি’ অক্ষরটি লিখেন তিনি বেশ বড় করে। বিশেষ করে পি এর মাথাটি বড় করে দেন। মাথাটি বড় করলেও সাধারণ ‘পি’ এর বৃত্তাকার ভাবটা কিন্তু থাকে না এতে, বরং এটাও হয়ে যায় সরল রৈখিক আর সুঁচালো মাথার।

আর একজন বিশেষজ্ঞ ট্রাম্পের সিগনেচারকে তুলনা করেছেন হেনরিক হিমলারের সঙ্গে। এই হিমলার ছিলেন জার্মানির হিটলারের সহযোগী। নাৎসী বাহিনীর যে নির্যাতন ক্যাম্পগুলো হয়েছিল, তার রূপকার হিসাবে বিবেচনা করা হয় হেনরিক হিমলারকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সে জার্মানীর কমান্ডার ইন চিফ ছিল। হিমলারের স্বাক্ষরও ছিল অনেকটা ট্রাম্পের মত, অক্ষরগুলো খাড়া খাড়া, সেখানে তেমন কোন বৃত্তাকার বর্ণচিহ্ন থাকতো না। তবে হিমলারের স্বাক্ষরটি ছিল দুই ভাগে, প্রথমে এইচ লিখে একটা বিরতি, তারপর হিমলার। আর ট্রাম্পেরটা একেবারে টানা।


হেনরিক হিমলারের স্বাক্ষর

মানুষের সিগনেচার কিন্তু পরিবর্তন হয়। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। সময়ের ব্যবধানে পাল্টে যায়। অনেক সময় মানুষের ব্যক্তিত্ব, চরিত্র, কিংবা মানসিকতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় এটি। তবে শিলা লোয়ে নামক একজন গবেষক দাবি করেছেন, গত বিশ বছরে ট্রাম্পের সিগনেচারে তেমন কোন পরিবর্তন আসেনি। হুবহু আগের মতই রয়েছে। অর্থাৎ তিনি বলতে চাচ্ছেন, গত কুড়ি বছর ধরে একই চিন্তা ও আচরণের মানুষ রয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একগুয়ে, গোয়ার ও আত্মম্ভরি মানুষ। তবে নিজেকে বড় করে দেখানো র যে প্রবণতা ট্রাম্পের রয়েছে তাকে নিছকই ফাঁপা বলেও অভিহিত করেছেন শিলা লোয়ে। তার মতে, এ ধরনের মানুষের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নিজে যা নয় সেটাই মানুষের মধ্যে প্রচার করতে চায়। শিলা লোয়ে আরও বলেন, তার সিগনেচারে কোন নমনীয়তা নেই। দাগগুলোতে কেমন যেন একগুয়ে ভাব। আত্মকেন্দ্রিক আর একরোখা। দাগগুলো এত ঘনঘন যে, মাঝে কোন ফাঁকা জায়গা নেই। যেন তিনি নিজের জগতে আর কাউকে কোন জায়গা দিতে রাজি নয়। নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত, নিজেকে যেন সে আড়াল করে রাখতে চায় একটা দেয়ালের মধ্যে। যেখানে আর কারো প্রবেশাধিকার নেই। তিনি যেন মানুষের সামনে প্রকাশিত হতে ভয় পান। এই ধরনের মানুষ অনেকটাই তর্কপ্রিয় হয়, চিৎকার চেচামেচি করে হলেও তর্কে জিততে চায়। এবং প্রতিটি তর্কের পরেই, কে কি বললো বা ভাবলো সেসব তার কাছে গুরুত্ব পায় না, সে এই চিন্তা করে আত্মতৃপ্তি লাভ করে যে- এই তর্কে সে জিতেছে। বাস্তবে, এই সব বৈশিষ্ট্যের অনেক কিছুই দৃশ্যমান যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে। প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটের কথা হয়তো অনেকেই মনে করতে পারবেন। তিনটি বিতর্কের প্রতিটিতে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছেন, কিন্তু তার কিছুমাত্র প্রতিফলন দেখা যায়নি তার চেহারায়। তিনি যেন ছিলেন পুরোই ড্যামকেয়ার মুডে। কে কি বললো বা ভাবলো, তা যেন তিনি থোড়াই কেয়ার করেন। তিনি ভেবেছেন, বিতর্কে তিনিই জিতেছেন, অতএব এটাই চুড়ান্ত!

গ্রাফোলজিস্টরা মনে করেন, স্বাক্ষর এবং হাতের লেখার মধ্যে সেই মানুষটির অনেক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে। দৃশ্যমান ব্যক্তিটির ভিতরে আসলে কেমন চরিত্র লুকিয়ে আছে, সেটা প্রকাশিত হয় তার লেখার অক্ষরের মধ্যে, স্বাক্ষরের দাগগুলোর মধ্যে। বৃটিশ ইন্সটিটিউট অভ গ্রাফোলজিস্টের মুখপাত্র এলিন কুইগলির মতে, হ্যান্ডরাইটিং আসলে ব্রেনরাইটিং। হাতের লেখার মধ্যে দিয়েই প্রকাশিত হয় লোকটির চিন্তার বা মানসিকতার অনেক কিছু। তার অনুভূতি, উদ্বেগ, আনন্দ, বেদনা, চাপ সহ্য করার ক্ষমতা, মন্দ থেকে ভালোতে যাওয়ার ক্ষমতা- এই সবই হাতের লেখার মধ্যে প্রতিফলিত হয়।

এই যে আত্মম্ভরি ভাব, এই ভাবের অধিকারীদের মধ্যে সেটা প্রকাশেরও একটা প্রবণতা খুব বেশি কাজ করে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যেও সেটা দেখা যায়। ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই প্রথম যে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে তিনি স্বাক্ষর করে সেটি হচ্ছে বারাক ওবামার স্বাস্থ্যনীতির পরিবর্তন। আগের নীতিতে বৃদ্ধকালীন যে ভাতা ছিল, সেটি তিনি বাতিল করে দেন। এই আদেশটি জারি করতে যেয়ে রীতিমত নাটকীয় দৃশ্যের অবতারণা করেন ট্রাম্প। সিগনেচারের পর সেটি আবার টিভি ক্যামেরার দিকে তুলে ধরেন, যাতে সবাই তা দেখতে পারে। তার সেই উদ্দেশ্য পুরণ হয়েছে, দুনিয়াজোড়া মানুষ স্পষ্ট দেখতে পেরেছে। কিন্তু টিভিতে দর্শকরা কি দেখেছে? ওই নির্বাহী আদেশে কি আছে সেটা, নাকি কেবল ট্রাম্পের বিশাল সিগনেচারটি? টিভি ক্যামেরায় ছোট ছোট হরফে লেখা আদেশের বাক্যগুলো পড়া সম্ভব নয়, আসলে তার দরকারও নেই। বিস্তারিত তো জানাই যায়। ট্রাম্পের আসল লক্ষ্য ছিল সকলকে নিজের সিগনেচারটি দেখানো। এবং সম্ভবত এটাও সত্য যে, তিনি নিজের এই অস্বাভাবিক সিগনেচারের বিশেষ ভক্তও বটে।



নিজের দেয়া স্বাক্ষরের সঙ্গে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দুর্দান্ত মিলের প্রমাণও ট্রাম্প দিয়ে চলেছেন। দেখা গেছে ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম একশ’দিনে তিনি ৯০টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন! এত অল্প সময়ে এতগুলো স্বাক্ষর আমেরিকার ইতিহাসে অভূতপূর্ব। এইসব নির্বাহী আদেশ নিয়ে দেশে বিদেশে অনেক বিতর্কের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। আবার অনেক আদেশের কার্যকারিতা স্থগিতও করে দিয়েছে আদালত। তারপরও থমকে যাননি। দেশে যেমন, বিদেশেও তেমনি। একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন, মন্তব্য করছেন, আচরণ করছেন। বিদেশের রাষ্ট্রনায়কদের সম্পর্কে হুটহাট অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তাদের সঙ্গে করমর্দন করতে যেয়ে বেশি সময় ধরে হাত ধরে রেখেছেন, নিজের শক্তির পরিচয় দিয়ে আমোদ অনুভব করেছেন। কখনো আবার ফটো সেশনের জন্য পিছন থেকে সবাইকে ঠেলে অশোভনভাবে সামনের সারিতে চলে এসেছেন। বিষয়টি সকলের কাছে দৃষ্টিকটু লাগলেও তিনি এমন একটা ভাব করেছেন যেন হয়নি কিছুই! আসলে তিনি মনে করছেন, তিনি যেটাকে ভালো মনে করছেন, সেটাই চুড়ান্ত ভালো। অন্য সকলে যা মনে করছে, সেসব ঠিক নয়! তার এক এক সিগনেচার তার দেশে, দেশের বাইরে যেন ভূমিকম্প ঘটিয়ে দিচ্ছে। তার তিনি নিজে, নিজের সিগনেচারের দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন। দেখছেন সেখানে অভূতপূর্ব এক শিল্পকর্ম, আর সাধারণ মানুষের কাছে মনে হচ্ছে যেন রিখটার স্কেলে ক্যাটাসট্রফিক আর্থকোয়াকের সঙ্কেত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.