![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছর কয়েক আগের কথা। আমার এক বন্ধু ইংল্যান্ডে কিছু টাকা পাঠাতে চাইলেন। তার দুই সন্তান সেখানে থাকে, তারা ইংল্যান্ড এবং বাংলাদেশ দুই দেশেরই নাগরিক। আর এদেশে বলতে গেলে সে একরকম একা। তাই ভাবলেন এখানকার প্রপার্টিগুলো বিক্রি করে টাকা পয়সা নিয়ে ছেলেমেয়েদের কাছে পাঠাবেন, তারপর হয়তো একসময় নিজেও চলে যাবেন। ঢাকা শহরে কয়েকটি ফ্লাট রয়েছে তার, সে সব বিক্রির জন্য দু’একটা বিজ্ঞাপনও দিলেন।
গ্রাহক যখন ঠিকঠাক, তখনই প্রশ্ন উঠলো, বিক্রি তো করবেন, কিন্তু টাকা পাঠাবেন কি করে? তিনি নিজে কয়েক জায়গায় যোগাযোগ করলেন। হতাশ হয়ে এক পর্যায়ে আমাকে বললেন, ‘এটা কোন কথা হলো? আমার টাকা আমি আমার সন্তানদের কাছে পাঠাতে পারবো না!?’
আমার মেয়ে তখন দার্জিলিং পড়ালেখা করে। তাই আমিও ঠিক বুঝতে পারছিলাম না, আমার বৈধ টাকা কেন আমি বিদেশে আমার প্রয়োজনে পাঠাতে পারবো না? আমি তো এখন থেকে অর্থ নিয়েই ওকে পড়াই। বিষয়টা এক ব্যাংকার বন্ধুকে বলতেই সে বললো, তুমি তো আর কোটি কোটি টাকা পাঠাও না। পকেটে করে কয়েকশ’ ডলার নিয়ে যাও। এই পরিমাণ অর্থ যে কেউ বৈধভাবে নিয়ে যেতে পারে। সরকার মনে করে, এই অর্থ তুমি নিয়ে যাচ্ছো তোমার পর্যটনের জন্য ব্যয় করতে, সন্তানের লেখাপড়ার জন্য নয়। লেখাপড়ার ব্যয়ের জন্য নিতে চাইলে তোমাকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। সেই অনুমতি পেতে ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আর এক্ষেত্রে যে নিয়ম কানুন, তা সম্পন্ন করতে করতে হয়তো তোমার সন্তানের শিক্ষাবর্ষই শেষ হয়ে যাবে। তাই নিয়মকানুন মেনে কেউ আর টাকা নিয়ে যায় না।
ব্যাংকার বন্ধুটির সঙ্গে আরও অনেক কথা হলো। ঘন্টাদুয়েক পর তার ওখান থেকে যখন বের হলাম, তখন আমি এক বিশেষ জ্ঞানপ্রাপ্ত ব্যক্তি। তখন আমি জানি, এ দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর বৈধ সহজ কোন উপায় নেই। আপনি বিদেশ থেকে টাকা আনতে পারবেন, কিন্তু বিদেশে পাঠাতে পারবেন না। তাহলে, এই যে চিকিৎসা করাতে লাখ লাখ টাকা অনেকে নিয়ে যায় বিদেশে? এর উত্তর হচ্ছে- এই অর্থ অবৈধ উপায়ে নেয়া হয়েছে। অন্য কোন উদ্দেশ্যের কথা বলে নিয়ে তারপর চিকিৎসা কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। চিকিৎসার জন্য নিতে হলেও লিখিত অনুমতি নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। সে কাজ করে কয়জন? আপনার কোন আত্মীয় সেভাবে নিয়েছে বলে শুনেছেন নাকি?
এই বিষয়গুলো নিয়ে পরে কোন একদিন হয়তো বিস্তারিত লিখবো। আজ কেবল এতটুকু বললাম, অন্য একটা প্রসঙ্গের ভূমিকা হিসাবে। মূল প্রসঙ্গ হচ্ছে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত ক্রমবর্ধমান অর্থ এবং তা নিয়ে দেশের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বয়বৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী’র সুচিন্তিত মন্তব্য। তবে তারও আগে বরং মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে বাংলাদেশিদের অসাধারণ ভূমিকা নিয়ে দু’একটি কথা বলে নিই।
মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম (এমএম২এইচ) নামের একটি প্রকল্প মালয়েশিয়া সরকার চালু করে ২০০২ সালে। তাতে বলা হয়, যে কোন বিদেশী সেখানে যেয়ে বাড়ি করতে পারবে, থাকতে পারবে সেখানকার বৈধ নাগরিক হিসাবে। এ কাজে তাকে শুরুতে কেবল একটা নির্দিষ্ট অংকের অর্থ সেখানে বিনিয়োগ করতে হবে। অংকটা এক লাখ ডলারেরও বেশি। এর সঙ্গে আরও কিছু অর্থনৈতিক বিনিয়োগের কথাও রয়েছে। ওখানে যেয়ে বাড়ি করতে হবে, তার বিশাল খরচ রয়েছে।
মালয়েশিয়া সরকার এটা করেছে তাদের জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করার কথা চিন্তা করে। চালুর পর এ পর্যন্ত ১২৬ টি দেশের ৩৩ হাজার ৩ শ’ মানুষ নিজের অর্থ ব্যয় করে সেখানে সেকেন্ড হোম তৈরি করেছেন। এই লোকের মধ্যে বাংলাদেশি আছে তিন হাজার পাঁচ শত ৪৬ জন। সংখ্যার হিসাবে ১২৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়! আমরা কি অতই ধনী দেশ? কি জানি, হতেও পারে। সেকেন্ড হোম তৈরিতে আগ্রহী আমাদের ধনীর সংখ্যা তিন হাজার ছাড়ালেও ভারত কিংবা পাকিস্তানের কিন্তু হাজারও হয়নি। তাহলে আমাদের দেশ থেকে এত বেশি বেশি লোক দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়াতে থাকতে যাচ্ছে কেন? রাজনৈতিক অস্থিরতা কিংবা জঙ্গি প্রকোপের আশঙ্কায়? তাই বা কি করে মানি? পাকিস্তানে জঙ্গি প্রভাব কেবল বেশিই নয়, তাদেরকে তো জঙ্গির উৎপত্তিস্থলও বলা যায়। তাহলে ঝামেলটা কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তরও না হয় আর একদিন খোঁজা যাবে, আজ বরং মূল প্রশ্নেই থাকি। সে প্রশ্নটা হচ্ছে- এই যে বিপুল অর্থ বিদেশে বিনিয়োগ করা হলো, সেটা পাঠানো হলো কিভাবে? এই তিন হাজার তিনশ’ বাংলাদেশি কি সেকেন্ড হোম তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে মালয়েশিয়াতে টাকা পাঠিয়েছেন? না হলে তারা কি পদ্ধতিতে পাঠালেন এত বিপুল অর্থ? পাচার করেছেন? তাহলে তো অর্থ পাচারকারীদের ধরতে সরকারের খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। এই তিনহাজার তিনশ’কে দিয়ে শুরু করলেই হয়। কিন্তু সেটা কি সম্ভব? সম্ভব যে নয়, সেটা কিন্তু সহজেই বলে দেয়া যায়। কারণ যাদের এই তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হবে, দেখা যাবে তাদের অনেকেরই হয়তো সেকেন্ড হোম আছে মালয়েশিয়াতে। কেবল তাই নয়, তারা হয়তো এক বা একাধিক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। তখন এমনও দেখা যেতে পারে, এদের পক্ষে সেই সব মন্ত্রীরা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বক্তব্যও দিচ্ছেন! এদেশে সবই সম্ভব।
সেই সব সম্ভবের দেশে আলোচনা ওঠেছিল সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমাকৃত অর্থ নিয়ে। সুইস ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল সেখান বাংলাদেশিদের জমা থাকা অর্থের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়েছে। এটা একটা নিরেট তথ্য। কিন্তু তথ্যটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই এ নিয়ে আলোচনা শুরু হলো। বিরোধী রাজনৈতিক দল বলতে থাকলো- সরকারী দলের লোকেরাই নাকি দেশের অর্থ পাচার করে সুইস ব্যাংকে জমা রাখছে। তারা কথাগুলো এমনভাবে বলতে লাগলেন যেন তাদের আমলে এমন কিছু হয়নি। কিংবা তাদের কারো টাকা নেই সুইস ব্যাংকে। এসব নিয়ে বিতর্ক হয়তো আরও কিছুদিন চলতো। কিন্তু এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বললেন, অত অর্থ সুইস ব্যাংকে পাচার হয়নি। টাকার অঙ্কটা যৎসামান্য। আসলে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা বাড়াবাড়ি করেছে। এসব বলার পর তিনি একটা জটিল ব্যাখ্যার মাধ্যমে প্রমাণ করতে চাইলেন- এসব আসলে সুইস ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের ব্যবসায়িক লেনদেন। এই সময়ে ব্যবসায়িক লেনদেন বেশি হয়েছে বলেই নাকি অঙ্কটাকে বড় আকারে দেখা যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রীর এমন বিবৃতি আমার কাছে কিছু বিভ্রান্তিকর মনে হয়েছে। আমি আবার সুইস ব্যাংকের রিপোর্টটিতে চোখ বুলালাম। সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের (এসএনবি) বার্ষিক প্রতিবেদন ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ তে বলা হয়েছে, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের জমা অর্থের পরিমাণ ২০১৫ সালের ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ হয়েছে। কই, এখানে স্পষ্টভাবে ‘জমা’ কথাটিই বলা হয়েছে, লেনদেনের কথা বলা হয়নি। এর মধ্যে খোঁজ খবর করে আরও একটা তথ্য পেলাম। সেখানে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের গত কয়েকবছরের হিসাব পাওয়া গেল। দেখা গেল ২০১২ সালে জমা ছিল ২২ কোটি ৮৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০১৩ সালে ৩১ কোটি ১৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০১৪ সালে ৫০ কোটি ৬০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ৮ লাখ সুইস ফ্রাঁ । গত বছর সেটা বেড়ে হয়েছে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঁ।
অর্থমন্ত্রী দাবি করেছেন, এসবই নাকি প্রাতিষ্ঠানিক লেনদেন, ব্যক্তিগত সঞ্চয় নয়। তাই যদি হয়, তাহলে একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে এ দাবি কি করতে পারি না যে, দয়া করে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম প্রকাশ করুন। এবং কে কোন খাতে কত লেনদেন করেছেন, সেটাও বলুন।
এমন দাবি করলেও তার কোন জবাব যে পাওয়া যাবে না, তা নিশ্চিত করেই বলতে পারি। পাওয়া যাবে না একারণে যে, আমাদের সরকারের ক্ষমতাই নেই সুইস ব্যাংকগুলো থেকে সেই হিসাব নিয়ে আসার। সুইস ব্যাংকগুলোর নিয়মই এই যে, তারা তাদের কাছে যারা অর্থ জমা রাখবে তাদের নাম ও তথ্য গোপন রাখবে। তাদের এই নিয়মের কারণেই দুনিয়াজোড়া মানুষ সুইস ব্যাংকে অর্থ লুকিয়ে রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করে। তাহলে যে অর্থ সম্পর্কে খোদ সরকারের কাছে কোন তথ্য নেই, অর্থের মালিক সম্পর্কে কোন তথ্য নেই, সেই অর্থ ব্যক্তির নাকি প্রতিষ্ঠানের, চোরাই নাকি ব্যবসায়িক লেনদেন, সেটাই বা আমাদের এই বয়োবৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী এত নিশ্চিত কি করে হলেন?
আমি আসলে বুঝি না। পাঠকরা কেউ বোঝেন নাকি?
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৪:১০
অনল চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশ সবদিক দিয়ে পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য দেশ।
দেশের সবাই তো গরীব না।
কেউ যদি তার ঘর-বাড়ি বিক্ক করে দিয়ে সভ্য দেশে বাড়ি কিনে থাকতে চায়,তাহলে কোন যুক্তিতে তাকে বাধা দেয়া হয়?
৩| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৪:১১
অনল চৌধুরী বলেছেন: বাংলাদেশ সবদিক দিয়ে পৃথিবীতে বসবাসের অযোগ্য দেশ।
দেশের সবাই তো গরীব না।
কেউ যদি তার ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে সভ্য দেশে বাড়ি কিনে থাকতে চায়,তাহলে কোন যুক্তিতে তাকে বাধা দেয়া হয়?
১৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০৬
মাসুদ কামাল বলেছেন: যুক্তিটা আমি ঠিক বলতে পারবো না। তবে আইনটা এরকমই। আপনি বিদেশে থেকে সেখানে আয় করে তা দিয়ে সেখানে ঘর বাড়ি বা সম্পদ কিনতে পারেন। কিন্তু আইন আপনাকে এ দেশ থেকে অর্থ বাইরে নিয়ে বাড়ি ঘর কেনার অনুমতি দেয়নি। আমাদের পার্লামেন্ট এমন আইনই তৈরি করে রেখেছে। যারা এই আইনটি তৈরি করেছে, তারা নিজেরাই সেটি কতটা পালন করে থাকে, সেটা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তোলাই যায়।
এত আগের একটা লেখা ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৩:০১
অনল চৌধুরী বলেছেন: জানি।
২০০৬ একবার চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়ে আর ২০১৭ তে বিদিশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য টাকা পাঠাতে গিয়ে খুব বিপদে পড়েছিলাম।
এদেশের নষ্ট নেতারা হুন্ডির মাধ্যমে মূহুর্তের মধ্যে বিদেশে হাজার কোটি টাকা পাঠাতে পারে।
কিন্ত বিপদে পড়ে সাধারণ মানুষ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১০:০৩
ঢাকার লোক বলেছেন: মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন!