![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাতীয়তাবাদী ব্লগার । তবে কাইজ্জার মধ্যে নাই । কর্পোরেট কালচারে অভ্যস্ত । ব্যস্ততার মাঝে সামুতেই আসি ।
দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বর্তমানে মূল আলোচ্য বিষয় আগামী সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার না অন্তর্বর্তী সরকারের অধীন হবে এ নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে চলছে বিরোধ। বিরোধ এমন পর্যায়ে যে, দুই দলই ক্রমশ রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত করছে।
স্বৈরাচার পতনের পর ১৯৯০ পরবর্তী চারবার দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করে আর সরকার গঠনের পরই প্রতিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে বিভিন্ন ইস্যুতে। ২০ বছরেও এর কোনো সঠিক সমাধান এবং কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা ছাড়ার পর কার অধীন কীভাবে নির্বাচন হবে সে বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেনি। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রাজনীতির মুখ্য ইস্যু হলো তত্ত্বাবধায়ক না অন্তর্বর্তী সরকার।
বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে অনড় এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনির্বাচিত সরকার ব্যবস্থায় না ফেরার শক্ত অবস্থানে। নির্বাচনের এক বছর আগে বড় দুই দলের এমন বিপরীতমুখী অবস্থানের কারণে অনিশ্চিত নির্বাচন পদ্ধতি।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৯৯৪ ও ১৯৯৫ সালে তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ ও অন্য দুই বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর দুর্বার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন বিএনপি সরকার ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন করে। হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার অবৈধ ঘোষণা করলে ২০১১ সালের জুনে আওয়ামী লীগ সরকার সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির বিলোপ সাধন করে।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, উচ্চ আদালতের রায়ে সংবিধান পরিবর্তন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন নির্বাচিত সরকার এবং বিরোধী দলের এমপির সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে কে থাকবেন তাও স্পষ্ট করেছে মহাজোট সরকার। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীই থাকবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান।
অন্যদিকে বিএনপির নির্বাচন অবস্থান বরাবরের মতোই উল্টো পথে। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন না হলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু সেটুকুই নয়, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচন তারা হতে দেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবিতে ইতিমধ্যে বিএনপি কয়েকবার হরতাল করেছে, গণমিছিল, গণঅনশন এবং রোডমার্চ করেছে।
আর সংকট কাটাতে দুই দলের মধ্যে সংলাপ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে অনেকদিন ধরেই। তবে সংলাপ বাস্তবায়নের কার্যকর কোনো উদ্যোগ ও তৎপরতা নেই কোনো পক্ষেরই। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে না পৌঁছালে সংলাপ অসম্ভব বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে শর্ত দিয়ে সংলাপ নয় বরং রাজপথের আন্দোলনের ওপরই গুরুত্বারোপ করছে বিরোধী দল বিএনপি। কখনো কখনো সংলাপ অনুষ্ঠানের কিছুটা আভাস দেখা দিলেও তা আবার মরীচিকার মতো মিলিয়ে যাচ্ছে।
কার অধীন ও কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে আগামী নির্বাচন- গুরুত্বপূর্ণ এ ইস্যুটি এখন অনিষ্পন্নই রয়ে গেছে। তবে কিছুটা ছাড় দিয়ে মাঝামাঝি কোনো বিকল্প প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমঝোতায় আসতে বড় দুই দলের নেতারাও এখন নমনীয় অবস্থানে। নানামুখী চাপে বড় দুই দলই সংলাপে আগ্রহ প্রকাশ করলেও কখন, কীভাবে এবং কে নেবে সংলাপের উদ্যোগ এ নিয়ে জনমনে সৃষ্ট প্রশ্নের এখনো সদুত্তর মেলেনি। নতুনভাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে সংলাপ চলছে বিরোধী দলের সঙ্গে। তবে এ কথা সরাসরি নাকচ করে দেন বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। পরে একই কথা যখন মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন তখন খালেদা জিয়া বলেছেন, সংলাপ হতে হবে প্রকাশ্যে।
উভয় দলের মধ্যে সংলাপ নিয়ে এ ধরনের নানা গুঞ্জন চললেও ক্ষমতাসীন দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা মনে করছেন, দুটি দলই নীতিগতভাবে বিপরীত মেরুতে অবস্থান করলে উভয়ের মতের সমন্বয় করা কঠিন হবে। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘সংলাপটি তখনই হতে পারে যখন নীতিগতভাবে একটি সিদ্ধান্ত হবে।’
অন্যদিকে সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই বলে জানালেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
সরকারের কাছ থেকে সংলাপের আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দাবি করছে বিরোধী দল। তবে সংলাপের পূর্বে নির্বাচন পদ্ধতির জটিলতা নিষ্পন্ন করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। আর এজন্য বিএনপিকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কেন্দ্রীয় নেতারা। পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধন কমিটির কো-চেয়ারম্যান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করাটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জ। আর বর্তমান সংবিধানের আলোকেই এ সমস্যা সমাধান সম্ভব। এজন্য বিরোধী দলকে এগিয়ে আসতে হবে। এর আগে সংবিধান সংশোধন কমিটির আহ্বানেও তারা আসেননি। এখনই সংসদে এসে তাদের দাবির পক্ষে কথা বলা উচিত। আর রাজপথে এ নিয়ে আন্দোলন করে সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, আগামী নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। কীভাবে নির্বাচন হবে এটাই এখন বড় ইস্যু। এ নিয়ে আগেও দেশের মানুষ অনেক ভোগান্তির শিকার হয়েছে। একতরফা নির্বাচন হলে দেশে কী হবে এ নিয়ে দেশের মানুষ চিন্তিত।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষক রওনক জাহান বলেন, শেষ পর্যন্ত যে ধরনের সরকারের অধীনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক না কেন প্রধান চ্যালেঞ্জ হবে একজন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করা যিনি সেই সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
©somewhere in net ltd.