নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন পোশাক চাই

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:২৬

পোশাক মানব সভ্যতার প্রতীক। পোশাকের দ্বারা মানুষের রুচিবোধ ফুটে ওঠে। পোশাক দ্বারা মানুষ সম্মানিত হয় আবার পোশাক দ্বারাই মানুষ অসম্মানিত হয়। তাই পোশাকের গুরুত্ব মানব সভ্যতায় অপরিসীম। মুসলমান যে কোনো পোশাক পরিধান করতে পারেন না। পোশাকের ক্ষেত্রেও তাকে কিছু বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। আশ্চার্যের বিষয় হলো আমাদের অনেকে তো জানেই না যে, পোশাকের ক্ষেত্রে আবার বিধি-বিধান থাকতে পারে। পোশাকের ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অভাবে আমরা নানা ভুলভ্রান্তি ও শিথিলতার শিকার। আমরা অনেকে মনে করি, পোশাকের বিষয়টি সম্পূর্ণই নিজেদের স্বাধীনতা ও ইচ্ছার ওপর নির্ভর। এক্ষেত্রে শরিয়তের কোনো বিধি-নিষেধ নেই। তাই আমরা অনেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ যাবতীয় ইবাদত-বন্দেগি করতে সচেষ্ট হলেও ইসলামি লেবাসের প্রতি গুরুত্ব দিতে পারি না। ুপোশাক-পরিচ্ছদের একটি বড় প্রভাব মানুষের স্বভাব-চরিত্রের ওপর পড়ে। কিছু পোশাক অন্তরে অহংকার ও আত্মগরিমা সৃষ্টি করে, আবার কিছু বিনয় ও নম্রতা সৃষ্টি করে। কিছু পোশাক মানুষকে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে, আবার কিছু মানুষকে মন্দ কাজে আকর্ষণ করে। তাই নির্বিচারে যে কোনো পোশাক পরিধান করা উচিত নয়। ইসলামি শরিয়ত পোশাকের ক্ষেত্রে কিছু বিধি-নিষেধ দিয়েছে। নিম্মে তা তুলে ধরা হলো।
১. পোশাক পূর্ণ সতর আবৃতকারী হতে হবে
পোশাক হতে হবে এমন যাতে সতর আবৃত করে। যে পোশাক দ্বারা সতরই ঢাকা যায় না সে পোশাক মূলত কোনো পোশাকই নয়। আমাদের সমাজের মেয়েরা যেসব পোশাক পড়েন তা ইসলামি পোশাক তো নয়ই বরং রুচিশীল কোনো পোশাক বলে আখ্যায়িত করা যায় না। একজন নারী তার গাইরে মাহরাম আত্মীয়-অনাত্মীয় সবার কাছে তার পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখবেÑ এটা শরিয়তের বিধান। সুস্থ রুচিশীল যারা তারাও অবশ্যই এই মতকে সমর্থন দেবেন। নারীর আকর্ষণীয় দেহ অন্য পুরুষের সামনে প্রদর্শন করার কী এমন প্রয়োজন? কিন্তু রূঢ় সত্য হলো, আমাদের সমাজের নারীদের রুচি এতটাই বিকৃত হয়ে গেছে যে, পাশাপাশি একজন পুরুষ আর নারীর মধ্যে পুরুষকে দেখা যায়, মাথা থেকে পা পর্যন্ত পূর্ণ শরীর মোটামুটি আবৃত, আর নারী প্রায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ বা অর্ধ উলঙ্গ। দেখে বুঝার উপায় নেই, কে পুরুষ আর কে নারী। ইসলাম বলে, পোশাক এমন হতে হবে যাতে তার সতর ঢেকে যায়। পুরুষের সতর হলো, নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত। আর নারীর সতরের চারটি ভাগ রয়েছে। প্রথমত. নারীর স্বামীর কাছে তার কোনো সতর নেই। স্বামী তার স্ত্রীর পুরো শরীর দেখতে পারবে। স্ত্রী তার স্বামীর পুরো শরীর দেখতে পারবে। দ্বিতীয়ত. একজন মুসলিম মহিলা অপর মুসলিম মহিলার সামনে শুধু নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত অংশ ঢেকে রাখবে। বাকি শরীর দেখাতে পারবে। তবে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া দেখানো রুচিহীনতার পরিচয়। তৃতীয়ত. নারী তার মাহরাম আত্মীয়-স্বজনদের (যাদের সঙ্গে স্থায়ীভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া নিষিদ্ধ) সামনে পুরো শরীর ঢেকে রাখবে; তবে চেহারা মাথা, ঘাড়, হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গগুলো দেখানোর অনুমতি আছে। যদিও প্রয়োজন ছাড়া দেখানো অনুচিত। চতুর্থত. নারীর গাইরে মাহরাম আত্মীয়-স্বজনদের (যাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয) সামনে পুরো শরীর ঢেকে রাখবে। কোনো অঙ্গ খোলা রাখার অনুমতি নেই। সুতরাং গাইরে মাহরামের সামনে এমন পোশাকই পরিধান করতে হবে, যে পোশাকে নারীর কোনো অঙ্গ-প্রতঙ্গ খোলা না থাকে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে বনী আদম! আমি তোমাদের জন্য অবতীর্ণ করেছি পোশাক, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করে এবং সৌন্দর্য দান করে।’ (সুরা আ’রাফ: ২৬)
২. নারী-পুরুষ একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করা উচিত নয়
পোশাকের ক্ষেত্রে নারী পুরুষের বেশধারণ করা, পুরুষ নারীর বেশধারণ করা নিষিদ্ধ। কেননা এ বিষয়ে হাদিস শরিফে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেন ওই সব নারীদের ওপর যারা পুরুষের বেশধারণ করেন এবং ওই সব পুরুষের ওপর যারা নারীদের বেশধারণ করেন।’ (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ৩৮৮৫) সুতরাং নারীর জন্য পুরুষের পোশাক পরিধান করা যেমন নিষিদ্ধ, তেমনি পুরুষের জন্য নারীর পোশাক পরিধান করাও জায়েয নয়। দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের সমাজের নারীরা যেমন পুরুষের পোশাক পড়তেই বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে থাকেন, তেমনি পুরুষরাও বিভিন্নভাবে নারীর রূপ ধারণ করে গর্ববোধ করেন। নারীদের পরনে আজ শোভা পায় পুরুষের ন্যায় জিন্সের প্যান্ট, গেঞ্জি, শার্ট। আবার ছেলেরা নারীদের বেশভূশা ধারণ করে মাথায় লম্বা লম্বা চুল রেখে মেয়ে সেজে মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ায়। মেয়েদের অশালীন পোশাক আজ পুরুষের মধ্যে চরম যৌন উম্মাদনা সৃষ্টি করছে। এতে সমাজে ঘটছে যিনা, ব্যভিচারের ন্যায় জঘন্য অপরাধমূলক কর্মকান্ড। অথচ এইসব বোনদের জানা উচিত, শালীন পোশাক পরিধান করে পথচললে অনেক অঘটন থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়। অশালীন পোশাক-আশাক যেমন সামাজিক বিপর্যয় ডেকে আনে তেমনি নৈতিক চরিত্রের অবক্ষয় ঘটায়।
৩. বিজাতির অন্ধ অনুসরণ নিষিদ্ধ
বিজাতির অন্ধ অনুকরণও নিষিদ্ধ। হাদিস শরিফে আছে, ‘যে কোনো জাতির সঙ্গে সামঞ্জ্যশীল হবে সে তাদের গোত্রভুক্ত বলেই গণ্য হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ২/৫৫৯) আরেক হাদিসে আছে, ‘যে যাকে ভালোবাসে সে তার সঙ্গে হাশর দিন উঠবে।’ সুতরাং কোনো বিজাতির অনুসরণ উচিত নয়। বরং সব ক্ষেত্রেই আমাদের স্বকীয়তা বজায় রাখা উচিত। আমাদের সমাজে নারীরা সাধারণত যখন যে ফ্যাশন বের হয় নির্বিচারে তার অনুকরণ শুরু করে দেয়। আর এ ক্ষেত্রে অমুসলিম ও ফাসেক লোকদের রীতি-নীতিই বেশি অনুকরণীয় হতে দেখা যায়। আজকাল পাশ্চাত্যের যে বেশভুষা আমাদের সমাজে চালু হয়েছে তা তো কোনো পোশাক হিসেবেই গণ্য হয় না। ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন কোনো ব্যক্তির পক্ষে তো দূরের কথা সাধারণ শালীনতাবোধসম্পন্ন কোনো ব্যক্তির পক্ষেও এ ধরনের কোনো পোশাক গ্রহণ করা সমীচিন নয়।
৪. পোশাক হবে নারী-পুরুষের স্বভাব-প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ
পোশাক হওয়া উচিত নারী-পুরুষের আপন স্বভাব-প্রকৃতি অনুযায়ী। নারীকে আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেছেন কোমল ও কমনীয় স্বভাব দিয়ে। তাদের কর্মক্ষেত্র হলো ঘর। যেখানে রোদ-বৃষ্টির ঝড়-ঝাপটা নেই। তাই তার পোশাকও হওয়া উচিত তার স্বভাব-প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে। পক্ষান্তরে পুরুষের স্বভাব-প্রকৃতি হলো কঠিন। তার কর্মক্ষেত্র হলো বাহিরের রুক্ষ পরিবেশ। রোদ-বৃষ্টির শত ঝড়-ঝাপটা সামাল দেয়ার এক অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন আল্লাহ তায়ালা। তাই তার পোশাকও হওয়া উচিত তার স্বভাব-প্রকৃতির সঙ্গে মিল রেখে। এ জন্যই পুরুষকে নিষেধ করা হয়েছে রেশমের পোশাক পরিধান করতে, স্বর্ণ ব্যবহার করতে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমরা রেশমের পোশাক পরিধান করো না। যে দুনিয়াতে রেশমের পোশাকের পরিধান করবে সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৮৩৪) অনুরূপ নারীর জন্য যে কোনো কালার ব্যবহারের অনুমতি থাকলেও পুরুষের জন্য তা নেই; বরং কিছু কিছু কালার পুরুষের জন্য ব্যবহার করা অপছন্দনীয়।
৫. অহংকার প্রদর্শনের মানসিকতা পরিহারযোগ্য
অহংকার প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে পোশাক পরিধান করা উচিত নয়। জাহিলি যুগে লোকেরা অহংকার প্রদর্শন করার উদ্দেশ্যে পোশাকের নিম্মাংশ মাটিতে ফেলে টেনে টেনে চলত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অহংকারবশত টাখনু গিরার নিচে কাপড় পরিধান করতে নিষেধ করেছেন। হাদিস শরিফে এসেছে, সাত শ্রেণীর লোকদের প্রতি আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। একশ্রেণী হলো যারা টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করে। আরেক হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি অহংকারবশত মাটিতে কাপড় টেনে টেনে চলে আল্লাহ তায়ালা তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৫৭৯১, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২০৮৫)
৬. পোশাক চাই পরিপাটি
পোশাক থাকা চাই পরিপাটি। একবার রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে বসা ছিলেন। এক সাহাবি রাসুলের দরবারে এলেন। তার চুল ও দাড়িগুলো ছিল উশকো-খুশকো, এলোমেলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হাতের ইশারায় পরিপাটি হয়ে আসতে বললেন। সে গেল। চুলগুলো চিরনি করে এলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো ব্যক্তির চুলগুলোকে উশকো-খুশকো করে শয়তানের ন্যায় মূর্তিমান ধারণ করে আসার চেয়ে বর্তমান অবস্থা কি উত্তম নয়? (মুয়াত্তা মালেক ২/২৬২)
৭. পোশাকের ক্ষেত্রে অপচয় মারাত্মক ব্যাধি
পোশাকের ক্ষেত্রে ইসরাফ বা অপচয় করা উচিত নয়। বিলাসিতা বা শখের বসে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পোশাক, বা সীমাতিরিক্ত মূল্যবান পোশাক ক্রয় করা ঠিক নয়। আমাদের সমাজের নারীরা এত পরিমাণ পোশাকের অপচয় করে যা রীতিমত বিস্ময়কর। কোথাও আসা যাওয়ার জন্য কিছু মূল্যবান পোশাক সংরক্ষিত থাকা দূষণীয় নয়। তবে সংরক্ষিত পোশাক এত বেশি থাকা উচিত নয় যে, যা অপচয়ের মধ্যে পড়ে যায়। আবার একবার কৃপণতাও উচিত নয়। হজরত আবুল আওয়াস তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এলাম। তখন আমার পরনে ছিল অত্যন্ত নিম্মমানের পোশাক। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমাকে কি আল্লাহ তায়ালা কোনো নেয়ামত দান করেননি। আমিবললাম, জি, দিয়েছেন। আমার রয়েছে উট, গোড়া, গরু, ছাগল ঘোড়া, গোলাম ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তোমার উচিত, আল্লাহর নেয়ামতের নিদর্শন যেন তোমার ওপর প্রকাশ পায়। (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস নং ৪০৫৭) অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বুঝাতে চাইলেন, যে সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নিম্মমানের কাপড় পরিধান করা উচিত নয়। মোটকথা অতিঅপচয় ও অতিকৃপণতা কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়।

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৫:৩৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


মানুষ ল্যাংটা জন্মে কেন, শরীয়তে কি ল্যাংটা থাকার নিয়ম আছে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.