![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব
মহান আল্লাহ তায়ালা সুদকে হারাম ঘোষণা করেছেন। তবে মানুষের লাভবান হওয়ার জন্য পুঁিজ বিনিয়োগের বিভিন্ন রাস্তা খুলে রেখেছেন। যাতে সুদের মতো ভয়াবহ হারাম কাজে লিপ্ত হতে না হয় এবং বিকল্প রাস্তায় সম্পদ উপার্জনের সুযোগ থাকে। অর্থ বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য কয়েক প্রকার বেচাকেনা নিম্মরূপ।
১. বাইয়ে মুরাবাহা (লাভযুক্ত বিক্রয়)
২. বাইয়ে মুয়াজ্জাল (বাকিতে ক্রয়-বিক্রয়)
৩. বাইয়ে মুদারাবা (উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে বিনিয়োগ)
৪. বাইয়ে সালাম (অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়)
৫. বাইয়ে মুশারাকা (অংশীদারী ক্রয়-বিক্রয়)
৬. বাইয়ে সারফ (স্বর্ণ রৌপ্য মুদ্রার বিনিয়োগ)
৭. বাইয়ে তাওলিয়া (সমমূল্যে ক্রয়-বিক্রয়)
৮. বাইয়ে মুতলাক (মূল্যের বিনিময়ে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়)
৯. বাইয়ে মুকায়াদা (পণ্যের বিনিময়ে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়)
১০. বাইয়ে মুসাওয়ামা (ক্রয়মূল্য হিসাব না করে বিক্রয়)
১১. বাইয়ে ওয়াদিয়া (ক্রয়মূল্য থেকে বিক্রয়মূল্য কম ধরে বিক্রয়)
১২. বাইয়ে মুজাদিল আলানিয়্যাহ (নিলামে ব্যবসা)
১৩. ইসতিসনা (শ্রমিক দ্বারা উৎপাদন)
১৪. ইজারা (ভাড়া)
ইসলামী ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান পুঁিজ বিনিয়োগের জন্য বেচাকেনার এই সব প্রকার ব্যবহার করতে পারে। এ ছাড়াও ইসলামী ব্যাংকের সামনে উপার্জনের আরও অনেক পন্থা রয়েছে, সেগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে।
মুরাবাহার সজ্ঞা :
মুরাবাহা শব্দটি ‘রিবহুন’ শব্দ থেকে উদগত। এর অর্থ অতিরিক্ত, বাড়তি, লাভ ইত্যাদি। (আলফিকহু আলাল মাজাহিবিল আরবায়া ২/১২০, মাকতাবা শামেলা সংস্করণ) ইসলামী অর্থনীতির পরিভাষায় মুরাবাহা বলা হয় “ক্রয় মূল্যের ওপর লাভ নিয়ে অপর কোনো ব্যক্তির কাছে বিক্রয় করা”। পবিত্র কোরআনে মুনাফা নিয়ে লাভ করা বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাইয়ে মুরাবাহা লাভজনক ব্যবসার একটি পদ্ধতি। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘হজরত হাকিম বিন হিযাম (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) তাকে এক দিনার দিয়ে বাজারে প্রেরণ করেন একটি বকরী খরিদ করার জন্য। তিনি গিয়ে এক দিনার দিয়ে একটি দুম্বা খরিদ করে আবার দুই দিনার দিয়ে বিক্রি করে গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন। আবার গিয়ে এক দিনারে একটি কোরবানীর পশু ক্রয় করে পশু ও অতিরিক্ত এক দিনার রাসুল (সা.) কে এনে দেন। রাসুল (সা.) ওই দিনার সদকা করে দেন এবং তার ব্যবসায় বরকত হওয়ার জন্য দোয়া করেন। তিরমিযি, আবু দাউদ) এই হাদিস দ্বারা ‘বাইয়ে মুরাবাহা’ এর বৈধ্যতা প্রমাণিত হয়।
মুরাবাহার গুরুত্বপূর্ণ শর্তসমূহ :
বাইয়ে মুরাবাহা শুদ্ধ হওয়ার জন্য নিম্মের কয়েকটি শর্ত পাওয়া যেতে হবে।
১. ক্রয় বিক্রয়ের জিনিস পণ্য হতে হবে।
২. কোন প্রকার টাকা পরিশোধ করবে তা চুক্তিপত্রে উল্লেখ থাকতে হবে।
৩. বিক্রিত মালের মূল্য টাকার অংকে নির্ধারিত হতে হবে।
৪. যে মাল বিক্রি করবে সে মাল বাস্তবে উপস্থিত থাকতে হবে।
৫. হালাল মাল হতে হবে।
৬. মাল অস্থাবর সম্পত্তি হলে এর ওপর বিক্রেতার পূর্ণ মালিকানা ও দখল থাকতে হবে।
৭. ক্রয় বিক্রয়ের চুক্তির মধ্যে নির্দিষ্ট সময় সীমা হতে পারবে না।
৮. একই ব্যক্তি ক্রেতা ও বিক্রেতা হতে পারবে না; বরং দুই পক্ষ অবশ্যই থাকতে হবে।
৯. উভয় পক্ষ বুদ্ধিমান হতে হবে। তবে বালেগ না হলেও চলবে।
১০. কোন প্রকারের মাল এবং তার পরিমাণ, গুনাগুণ, মূল্য ইত্যাদি নির্দিষ্ট হতে হবে। নতুবা বিবাদ ও প্রতারণা সম্ভবনা থাকবে।
১১. ক্রেতা ও বিক্রেতার ইজাব ও কবুল দ্বারা চুক্তি সম্পাদিত হতে হবে।
১২. ইজাব ও কবুল একই মজলিসে হতে হবে।
১৩. মালামাল উপকারী ও প্রয়োজনী হতে হবে।
১৪. বিক্রয়ের জিনিস হস্তান্তরযোগ্য হতে হবে।
১৫. মাল ক্রেতার নিকট পরিচিত হতে হবে।
১৬. মূল্য পরিশোধ ও মাল হস্তান্তরের মাধ্যমে চুক্তি কার্যকর হতে হবে।
১৭. নগদ বিক্রয়ের মূল্য পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিক্রেতা মাল হস্তান্তর বন্ধ রাখতে পারবে।
১৮. কোনো পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না এবং শরিয়ত পরিপন্থী নয় এরূপ যে কোনো শর্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা যাবে। কোনো পক্ষ চুক্তিতে উল্লেখিত শর্ত পালনে ব্যর্থ হলে এক তরফা চুক্তি বাতিল করতে পারবে।
১৯. ক্রয় বিক্রয়ের পর কোনো প্রতারণা প্রমাণিত হলে ফেরৎ দেয়ার এখতিয়ার থাকবে। রাখতে চাইলে পূর্ণ মূল্যই পরিশোধ করবে।
২০. আর ক্রেতার নিকট মাল নষ্ট হলে এখতিয়ার বাতিল হয়ে যাবে। ইমাম আবু ইউসুফ (রা.) এর মতে প্রতারণা অর্থ পরিমাণ মূল্য কম দিতে পারবে, উল্লেখিত শর্তসমূহ পাওয়া না গেলে বাইয়ে মুরাবাহা সহিহ হবে না।
সুদি ঋণের বিকল্প মুরাবাহা
ইসলামের দৃষ্টিতে সুদ প্রদান ও গ্রহণ যেহেতু হারাম তাই সুদি ঋণের বিকল্প হিসেবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাইয়ে মুরাবাহা ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই মুরাবাহার পদ্ধতি গ্রহণ করে বেশ ভালো ফল পাচ্ছে। যেমন কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো গ্রাহকের বাড়ি বানানোর প্রয়োজনে বিপুল অর্থের প্রয়োজন। সুদি ব্যাংক থেকে এই অর্থ গ্রহণ করলে সুদি ব্যাংক তার কাছে ঋণের ওপর সুদ গ্রহণ করবে। সুদ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে উক্ত গ্রাহকের সাথে মুরাবাহা চুক্তি করতে পারে। যেমন কোনো গ্রাহকের বাড়ি তৈরিতে এক কোটি টাকার প্রয়োজন। সে এক কোটি টাকা দিয়ে বাড়ির রড সিমেন্ট কিনবে তাহলে সে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বরং দ্রব্যটিই সরাসরি ব্যাংকের কাছ থেকে মুরাবাহার ভিত্তিতে কিনতে পারে। এ ধরনের গ্রাহকদের সাথে ব্যাংক এ মর্মে চুক্তি করতে পারে যে, আমরা এই দ্রব্যটি ক্রয় করে শতকরা ১০% লাভে আপনাকে সরবরাহ করব। উভয়পক্ষ সম্মত হলে বৃহৎমানের দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক এ ধরনের মুরাবাহার চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে। মুরাবাহা নগদ ও বাকি উভয় ধরনের হতে পারে। নগদ মূল্য পরিশোধ করলে ক্রয়মূল্যের ওপর শতকরা যত টাকা লাভ ধার্য করা হবে, ছয় মাস বা এক বছর পরে মূল্য পরিশোধ করার শর্তে লেনদেন করা হলে ক্রয় মূল্যের ওপর সংযোজিত লাভের হার অবশ্যই বেশি ধার্য করা যাবে। বর্তমানে এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশে ইসলামী ব্যাংকগুলো অর্থ বিনিয়োগ করছে। এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে, এই পদ্ধতিতে অর্থ বিনিয়োগ করার জন্য মুরাবাহার সব শর্ত মেনে চলতে হবে। অন্যথায় সামান্য কারণেই তা সুদে পরিণত হতে পারে।
বাইয়ে মুরাবাহার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা অবশ্যই মনে রাখতে হবে। অনেক দেশের ইসলামী ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মুরাবাহাকে অর্থায়নের মাধ্যমরূপে ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো অর্থায়ন পদ্ধতি নয়। এটি হচ্ছে ইসলামি অর্থনীতির এক বিশেষ প্রকার বেচাকেনার নাম। তাই বেচাকেনার মৌলিক বিধি-বিধানগুলো এতে লক্ষ্য রাখা জরুরি। বেচাকেনার মৌলিক বিধি-বিধানের প্রতি অবহেলা করলে কোনো বেচাকেনাই শরিয়তের দৃষ্টিতে শুদ্ধতার রূপ পায় না। তবে মুরাবাহা অর্থায়নের কোনো পদ্ধতি না হলেও একে কিছু শর্তসাপেক্ষে অর্থায়ন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত করা যায়। সেটা হতে হবে সীমিত পরিসরে এবং শুধু সুদ থেকে বাঁচার কৌশল হিসেবে। তবে মুরাবাহাকে কখনই বিনিয়োগের আদর্শ পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে অর্থায়নের আদর্শ পদ্ধতি হচ্ছে ‘মুদারাবা’ ও ‘মুশারাকা’। কোথায়ও যদি যৌক্তিক কারণে মুশারাকা বা মুদারাবাকে গ্রহণ করা না যায়, সেখানে প্রয়োজনের খাতিরে ফুকাহায়ে কেরাম সীমিত পরিসরে মুরাবাহার ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। তাই মুরাবাহার ব্যবহার শুধু সেই ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত যেখানে অর্থায়নের মৌলিক ও আদর্শ পদ্ধতি মুদারবা ও মুশারাকা প্রয়োগ করা যায় না।
মুরাবাহাকে অর্থায়ন পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করার ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা আছে। সামনের কোনো লেখায় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’
২| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০৩
রাতুলবিডি৪ বলেছেন: এ আর ১৫ : বানায় কথা বলেন কেন ?
সুরা আল ইমরানের ১৩০ তম আয়াতে 'চক্রবৃদ্ধি' সুদের কথা বলা হয়েছে : এইটা কৈ পাইলেন ?
৩| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:১২
এ আর ১৫ বলেছেন: সুরা আল ইমরান রাতুলবিডি৪-- আমি লিংক দিচ্ছি ঐ লিংক থেকে সুরা আল ইমরানের আয়াত ১৩০ পড়ুন ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
এ আর ১৫ বলেছেন: সরল সুদ কি গ্রহন যোগ্য ?? সুরা আল ইমরানের ১৩০ তম আয়াতে চক্রবৃদ্ধি সুদের কথা বলা হয়েছে।
----হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।---- ইসলামী ব্যাংক ক্রয় বিক্র্য় কন্সেপ্ট ব্যবহার করে । ইনভেস্টমেন্ট পাটনার হিসাবে লাভ বা ক্ষতি শেয়ার করে না তাহোলে অন্য ব্যাংকের সাথে তার কি পার্থক্য ?? পৃথিবীর সব ব্যাংক যদি ইসলামী ( যদিও ইসলামী নয়) ব্যাংকের ক্রয় বিক্রয় ফরমুলা ব্যবহার করে তাহোলে গ্রাহকের দায়বদ্ধত্বার কোন পরিবর্তন হবে না । ধর্ম ব্যবসার কত ধরন দেখতে হবে এই দুনি্যাতে ??