নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শালীন ভাষায় সাহসী উচ্চারণ

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

সহমর্মিতা চাই বউ-শাশুড়ির মাঝে

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫


বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বের কথা আমাদের সমাজে প্রায়ই শোনা যায়। শাশুড়ির প্রতি বউয়ের এক বস্তা অভিযোগÑ শাশুড়ি ভালো না, শুধুু জ্বালাতন করে, দোষ খুঁজে বেড়ায়। বউয়ের প্রতি শাশুড়ির অনুযোগÑ বউ অলস, অকর্মা, মান্যতা নেই ইত্যাদি। মোটকথা বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব আমাদের সমাজের চিরায়ত চিত্র। অথচ একটি সংসার আনন্দময়, সুখময় ও ফলপ্রসূ হওয়ার জন্য বউ শাশুড়ির মিল- মুহাব্বত অত্যন্ত জরুরি। বউ-শাশুড়ির মাঝে যদি মিল-মুহাব্বত থাকে তাহলে সংসারে সুখ-সমৃদ্ধির জোয়ার আসে। সংসার হয়ে ওঠে জান্নাতের টুকরা। আর যদি সংসারের এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভের মাঝে বিরূপ সম্পর্ক থাকে তাহলে সংসারের শান্তি হয়ে যায় সোনার হরিণ। জীবন তখন হয়ে ওঠে দুর্বিসহ। সংসার হয়ে যায় জাহান্নামের টুকরা। একটি সংসারকে সুখ-সমৃদ্ধ ও প্রাণবন্ত করার জন্য যেমনি প্রয়োজন শাশুড়ির সনিপুণ পরিচালনা, তেমনি প্রয়োজন বউয়ের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছা। তাদের দুজনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সংসারে প্রবাহিত হতে পারে সুখশান্তির নির্মল হাওয়া। সে জন্য বউ-শাশুড়ির সংঘাত নিরসনে তাদের উভয়েরই মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। উভয়েরই পারস্পরিক ছাড় দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের সমাজে দেখা যায় বউ শাশুড়ি দুজনের কেউই বিন্দুমাত্র ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি নয়। উভয়েই পূর্ণক্ষমতা খাটাতে চায়। যার অনিবার্য ফল হিসেবে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে উভয়ে যদি একে অপরকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা সৃষ্টি করে তাহলে অতি সহজেই এ সংকট নিরসন করা সম্ভব।
বউ তার শাশুড়িকে শ্রদ্ধা করবে। মনে করবে তার শাশুড়ি তার জন্য জননীতুল্য শ্রদ্ধার পাত্র। শ্বশুরকে মনে করবে পিতাতুল্য। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তার আচরণ হবে হৃদ্যতাপূর্ণ। অপর দিকে শাশুড়িকে মনে করতে হবে, নব অতিথি বউ তার সংসারের সৌন্দর্য। তার বাড়ির শোভা। বাড়ির প্রত্যেক সদস্য যেন তাকে আপন করে নেয়, তার সঙ্গে আপন জনের ন্যায় আচরণ করে, সেদিকে শাশুড়িকেই খেয়াল রাখতে হবে। একে অপরের প্রতি পূর্ণ সহমর্মিতা প্রদর্শন করতে হবে। অনেক শাশুড়ি আছেন, বউয়ের উপর মাত্রাতিরিক্তি বোঝা চাপিয়ে দেন। এমন কাজকর্ম পুত্রবধূর কাঁধে চাপিয়ে দেন যা মূলত তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত নয়। আবার সেই কাজটি সম্পাদন করা তার জন্য দুরূহ ও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
আমাদের সমাজের অধিকাংশ বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্বের প্রকৃত কারণ হলো, বউ-শাশুড়ি কেউই স্ব স্ব দায়িত্ব ও অধিকার সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নন। বরং তারা একতরফাভাবে অধিকার ভোগ করতে চান। ইসলামি শরিয়ত কর্তৃক বউ-শাশুড়ির জন্য যে সব বিধিবিধান প্রদান করা হয়েছে, শরিয়তের সেসব বিধান পালনে তারা চরম অমনোযোগী।
বউয়ের দায়িত্ব হলো শাশুড়িকে সম্মান করা। যৌথ পরিবার হলে তার নির্দেশ মতো সংসার চালানো। শাশুড়িকে নিজের প্রতিপক্ষ বা শত্রু না ভাবা। বউয়ের চিন্তা করা উচিত যে, শাশুড়ি যদি তার প্রতিপক্ষ বা শত্রু হত তাহলে তাকে ছেলের বউ করে ঘরে তুলত না। অনেক বউ আছেন, শাশুড়ি বা ননদের কথা তিলকে তাল বানিয়ে স্বামীর কাছে মায়া কান্না করে স্বামী ও তার মা-বোনদের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি করে দেয়। স্বামী বেচারা ও ধূর্ত স্ত্রীর প্রতারণায় পড়ে মা বোনদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এতে মা- ছেলের মায়া জড়ানো সম্পর্ক বিনষ্ট হয়ে যায় এবং মা বেচারি খুবই অপমান বোধ করেন। বউয়ের মনে রাখা উচিত যে, যে স্বামীর খেদমত করা মহান আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ফরয করে দিয়েছেন, তার জন্মদাতা মাকে খুশি করলে সে নিশ্চয় খুশি হবে। এতে তার স্বামীর জান্নাতের রাস্তাও যেমন সুগম হবে তেমনি তারও দুনিয়া আখেরাত কল্যাণকর হবে।
ঘর-সংসার করা বউয়ের কাছে নতুন অভিজ্ঞতা, সে কখনো এ কাজ করে আসেনি। সবকিছু তার জন্য নতুন। সুতরাং ঘর গোছানো, রান্নাবান্না করা, অতিথিদের আদরআপ্যায়ন করা মোটকথা সবকিছুতেই তার ভুলত্রুটি হতে পারে। এ ভুলত্রুটিগুলো শাশুড়ি ও হয়ত কোনো একসময় করেছিলেন। তার শাশুড়ি ও তা মেনে নিয়েছিলেন। সুতরাং এখন তাকে তার পুত্রবধূর সাথে সে আরচরণটাই করতে হবে, যে আচরণ সে অন্যের পুত্রবধূ থাকাবস্থায় তার শাশুড়ির কাছ থেকে কামনা করেছিলন।
শাশুড়িকে মনে রাখতে হবে, তার নিজের শরীরের যেমন আরাম-আয়েশের অনুভূতি হয়, তার বউয়েরও তেমনি হাড়মাংসে গড়া শরীর। তারও প্রয়োজন হয় একটু আরামের, একটু বিশ্রামের। সুতরাং তাকে বিশ্রামের যথেষ্ট সুযোগ দিতে হবে। তার ছেলের বউ তো তার ক্রয় করা দাসী নয়। সুতরাং তার উপর সংসারের সমস্ত কাজ চাপিয়ে দিয়ে শাশুড়ি তার ছেলেমেয়েদেরকে নিয়ে আম গাছের নিচে বসে দখিনা হাওয়া খাবে, ওই দিকে বউ বেচারির কাজের চাপে প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত হয়ে যাবে, এটা অবশ্যই অমানবিক। তার উপর যেমন স্বামীর অধিকার রয়েছে, তেমনি তার স্বামীর পর ও তার অধিকার রয়েছে। তাছাড়া শাশুড়িও একদিন বউ ছিল। তখন সে তার শাশুড়ির কাছ থেকে যেমন আচরণ কামনা করেছিল তার পুত্রবধূও তার কাছে তেমন আচরণই কামনা করে। তিনি যখন যৌবনে ছিলেন তখন যেমন তার সমস্ত কামনা-বাসনা ও যাবতীয় সখ পূরণ করে নিয়েছিলেন, এখন তার বউয়ের পালা। তার বউও তার যাবতীয় কামনা-বাসনা পূরণ করে নিতে চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই পুত্রবধূ কোনো অন্যায় করে ফেললে তাকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতে হবে। পুত্রবধূর সঙ্গে ¯েœহের কন্যা সুলভ আচরণ করবে। সামান্য ক্ষুদ্র কোনো বিষয়ে তাকে তিরস্কার করা উচিত নয়।
অনেক সময় শাশুড়িদের মনে এমন ধারণা আসে, আমার ছেলেটাকে এত দুঃখ-কষ্ট সহ্য করে শরীরের রক্ত পানি করে খাইয়ে দাইয়ে বড় করে তুললাম। এখন নতুন একটা মেয়ে এসে তার উপর রাজত্ব করবে, আমার কলিজার টুকরাকে আমার হাত ছাড়া করবে, এটা কীভাবে মেনে নেয়া যায়? তখন শাশুড়িকে চিন্তা করতে হবে যে, বাবামা সন্তানকে লালন পালন করে বড় করে অন্যের হাতে তুলে দেয়। এটাই মহান আল্লাহ তায়ালার অমোঘ বিধান। তিনি নিজের মেয়ের দিকে তাকাতে পারেন। এত কষ্ট করে মেয়েকে বড় করেছেন। পড়ালেখা করিয়েছেন। অতপর অন্যের ছেলের হাতে তুলে দিয়েছেন। সেখানে তার মেয়ে রানির হালতে থাকুক, এটাই তার কামনা। ঠিক তার পুত্রবধূও কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। তার মাও কামনা করে তার মেয়ে শশুরালয়ে রাণীর হালতে থাকুক। নিজের মেয়ের বেলায় যেমনটি কামনা করা হয়, পুত্রবধূর ব্যাপারেও তেমনি আচরণ করতে হবে। তাহলেই সংসারে সুখ আসবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.