নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি বাংলায় কথা কই

আমি অতি সাধারণ মানুষ

মুহিত আলম

অনুমতি ব্যতিত কোনো লেখা বা লেখার অংশ কপি করবেন না। এই নিন্দনীয় কাজটা আমিও করি না, আশা করবো আপনিও করবেন না।

মুহিত আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কেন সাকিবকে সমর্থন করি

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১০

সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বর্তমানে অনলাইন অফলাইনে প্রচুর বিতর্ক হচ্ছে। অনেকেই সাকিবকে তার জঘন্য অঙ্গভঙ্গির জন্য ধুয়ে দিচ্ছে। অনেকে আবার তার পক্ষ নিচ্ছে। মিডিয়া সরগরম। মুশফিক আবার সাকিবের শাস্তি কমিয়ে আনার জন্য অনুরোধ করেছে।



প্রথমেই বলে রাখি সাকিব যা করেছে তা অত্যন্ত জঘন্য, দৃষ্টিকটু একটা কাজ। সে যা করেছে তার জন্য তার শাস্তি প্রাপ্যই ছিল, তা সে অলরেডি ভোগ করছে। এ ব্যাপারে কোনো কথা নাই। কিন্তু যে ব্যাপারটা আমাকে ব্যাথিত করেছে তা হচ্ছে সাকিবকে নিয়ে মানুষের কথাবার্তা, তার স্ত্রীকে নিয়ে নোংরা কটুবাক্য।



অনেক উৎসাহিত মানুষকে দেখেছি যারা বলছে সাকিবকে আর দরকার নাই। আমাদের গন্ডায় গন্ডায় সাকিব হবে। ও দেশের মান-সম্মান সব ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে। ও অনেক অহংকারী, স্টুপিড একটা প্লেয়ার। অনেকেই বলছে ওকে দুই বছরের জন্য ব্যান করা হোক। সারাজীবনের জন্যও ব্যান করতে চাইছে কেউ কেউ! আমার এই লেখাটা তাদের উদ্দেশ্যে।



পাকিস্তানের ইমরান খান, ভারতের কপিল দেব, নিউজিল্যান্ডের স্যার রিচার্ড হ্যাডলি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্যার গরফিল্ড সোবার্স--এরা ছিলেন তাদের সময়ের সেরা সব অলরাউন্ডার। কিন্তু আজ এত বছর পরেও তাদের কোনো রিপ্লেসমেন্ট ঐসব দেশ পায়নি। আমরা কিভাবে ধরে নিবো আমাদের গন্ডায় গন্ডায় সাকিব হবে? সাকিব হওয়া কি এত্ত সোজা?



সাকিব হচ্ছে আমাদের সেই তুরুপের তাস, সেই যাদুর কাঠি। ও যেখানেই গিয়েছে, সাফল্য ধরা দিয়েছে। সাকিব হচ্ছে বাংলাদেশের একমাত্র প্লেয়ার যার অভিষেক হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত পারফর্ম্যান্স নিয়ে কেউ প্রশ্ন করেনি। দিনের পর দিন সে একইভাবে পারফর্ম করে গিয়েছে। বাংলাদেশে খেলেও যে এইভাবে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা যায় তা সাকিব করে দেখিয়েছে। এই ধারাবাহিকতার পুরষ্কার হিসেবে বিশ্বের ১ নাম্বার অলরাউন্ডার হয়েছে। কোনো একটা খেলার শীর্ষ পর্যায়ে ১ নাম্বার হওয়াটা চাট্টিখানি কথা না। ক্যালিসের মত লিজেন্ডারি প্লেয়ার যেখানে তার প্রতিপক্ষ, ওয়াটসনের মত বিস্ফোরক ব্যাটসম্যান যেখানে তাকে চোখ রাঙায়, ম্যাথুসের মত কুশলি প্লেয়ারের যেখানে পদচারণা।



সাকিব আমাদের দেশের মান সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিয়েছে- এরকমও বলছেন অনেকে। দেশের মান সম্মান আসলে এত সস্তা ব্যাপার না যে এরকম একটা বিচ্ছিন্ন ব্যাপারে তা ধূলায় মিশে যাবে। সাকিব শুধু একটা অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে ধর্ষণের সেঞ্চুরি কেক কেটে উদযাপিত হয়, আমাদের দেশে পরিমলের মত কিছু নরাধম শিক্ষক আছে- সেখানে সাকিব কি খুব খারাপ কিছু করেছে ওদের চেয়ে? এইসব নরাধম কি কখনো ক্ষমা চেয়েছে? তাদের দোষ স্বীকার করেছে?



সাকিবের এটিচিউড অনেকেরই পছন্দ না। ও অহংকারী, টাকা পয়সা পেয়ে মাটিতে পা পরে না, সাধারণ ছেলে হঠাৎ টাকা পয়সা পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করে- এরকম অনেক অভিযোগ আছে। টাকা পয়সা বেশি কামানো দোষের কিছু না, যদি না আপনি সেটা ন্যায়সঙ্গতভাবে উপার্জন করেন। যারা বিবিএর ছাত্র/ছাত্রী তারা জানেন, যেখানে রিস্ক বেশি, সেখানে ইনভেস্ট আপনি তখনই করবেন যখন প্রচুর রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নচেৎ আপনি রিস্ক খুব কম কিন্তু রিটার্ন অল্প এরকম জায়গায় ইনভেস্ট করেই সন্তুষ্ট থাকবেন। সাকিব যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করে তখন বাংলাদেশ সবেমাত্র টেস্ট স্ট্যাটাস পেয়েছে। খেলাকে তখন প্রফেশন হিসেবে নেয়াটা প্রচুর রিস্কি ছিল। তাছাড়া ইনজুরির ঝুঁকি তো আছেই। আর আপনি মাত্র ৩৫-৪০ বছর পর্যন্ত খেলতে পারবেন। তারপর কিন্তু আপনি বেকার। অন্য প্রফেশনে ঢুকতে হবে। তার ওপর জাতীয় দলে সারা দেশের মাত্র ১১ জন প্লেয়ার খেলার সুযোগ পায়। সুতরাং একজন যখন এই রিস্ক নিবে তখন একটা বিশাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে বলেই নিবে, নচেৎ নয়। কারণ দিনশেষে মানি ম্যাটারস।



আচ্ছা ধরুন আপনারা ৫ জন বন্ধু মিলে একটা ব্যবসা শুরু করলেন। প্রত্যেকেই সমান পরিমাণ বিনিয়োগ করলেন এবং মাস শেষে যেই লাভ হয় তা সমানভাবে বন্টন করেন। আপনি ব্যবসা যেহেতু ভাল বুঝেন তাই আপনি ব্যবসায় অনেক সময়, মেধা, শ্রম দেন। কিন্তু আপনার বন্ধুরা সেভাবে ব্যবসায় সময় দেয় না। কিন্তু মাস শেষে লাভটা সমানভাবে ভাগ হয়। এভাবে কয়েকমাস চলার পর কিন্তু আপনার মেজাজ খারাপ হবে। আপনি এরকমও ভাবতে পারেন, শালারা কোনো চ্যাটও বুঝে না ব্যবসা, কাজকর্ম ঠিকমত করে না, কিন্তু মাস শেষে লাভটা ঠিকমতই নিয়ে যায়। ধুর, আর কিছুদিন পরে ওদের সাথে আর ব্যবসা করবো না, আলাদা হয়ে যাব। সাকিবের ক্ষেত্রেও তো ঠিক সেই ব্যাপারটাই ঘটতে পারে। সে দিনের পর দিন দুর্দান্ত পারফর্ম করছে কিন্তু তার সাথে সেরকমভাবে তাল না মিলিয়েও অনেকেই তার সমান টাকা-পয়সা কামাচ্ছে।



সাকিব অনেকের আইডল, রোল মডেল। সে এরকম কাজ কেন করল? এই জায়গায় আমার একটা প্রশ্ন আছে। সে কি হিসেবে রোল মডেল? খেলোয়ার হিসেবে না মানুষ হিসেবে? আমরা অনেকেই সেলিব্রেটিদের মহামানব মনে করি। তারা কোনো অন্যায় করবে না, তারা কোনো ভুলভাল করবে না, কোনো উল্টাপাল্টা কাজ করবে না-এরকম একটা ধারণা আমাদের মনের ভিতরে থাকে। কিন্তু এটা একটা বড় ভুল ধারণা আমাদের। সাকিব একজন গ্রেট প্লেয়ার, কিন্তু সে একজন গ্রেট ম্যান নয়। গ্রেট প্লেয়ার আর গ্রেট ম্যানের মাঝে যে বড় ধরণের একটা পার্থক্য আছে তা আমরা ভুলে যাই। সাকিবকে একজন খেলোয়ার হিসেবে রোল মডেল বানানো যায়, কিন্তু মানুষ হিসেবে নয়।



সৌরভ গাঙ্গুলির কথা মনে আছে? ভারতকে সে কি থেকে কি বানিয়েছিলো তা মনে আছে? গাঙ্গুলি অধিনায়ক হওয়ার আগের আর পরের ভারতের মধ্যে বিশাল পার্থক্য আছে। আগে সেই জবুথবু ভারতের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই চেঞ্জ করে দেয় গাঙ্গুলি। এজন্য হ্যাপা কম পোহাতে হয় নি তাকে। অনেক রকম বিতর্কে সে জড়িয়েছে। উদ্ধত, রগচটা- এই ধরণের বহু বিশেষণে বিশেষিত হয়েছে। টেন্ডুলকারের মত ক্লিন পার্সোনালিটির ক্রিকেটার কিন্তু ভারতীয় দলে এই পরিবর্তন আনতে পারেনি যা এনেছে গাঙ্গুলি। এবার আপনি সাকিবের আসার আগের পরের বাংলাদেশের তুলনা করুন। আমাদের দলটার এটিচিউড সে কিভাবে বদলে দিয়েছে তা একবার চিন্তা করুন।



কেউ কেউ বলে সাকিব ছাড়াই আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছি। সাকিবকে তাই আর দরকার নাই। এরকম ভোঁতা মেমরির লোকদের আমি পুনরায় মনে করিয়ে দিতে চাই ২০১০ সালের প্রথম বাংলাওয়াশ, ২০১০ সালের ত্রিদেশীয় ফাইনালে মুরালির কাছে সেই হার, ২০১২ সালের এশিয়া কাপে সাকিবের পারফর্ম্যান্স।



আপনারা যত যাই বলুন না কেন, সাকিবকে আমাদের দরকার। দরকার বলেই মুশফিক ওর শাস্তি কমানোর জন্য আবেদন করেছে। সাকিব তার অপরাধের জন্য শাস্তি ভোগ করে আবার স্বরূপে ফিরে আসুক বাংলাদেশ দলে- এই আমার প্রত্যাশা।



©Muhit Alam









মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৩

হতাশ নািবক বলেছেন: সহ মত।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩০

পথহারা নাবিক বলেছেন: সাকিবকে ৩ ম্যাচ নয় সারা জীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা উচিৎ যাতে তার পরবর্তীতে কেই এই রকম দুঃসাহস না দেখাতে পারে। ব্যাক্তির থেকে দল বড়!!

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৪২

মুহিত আলম বলেছেন: আপনের লগে কথা কইয়া লাভ নাই। ক্রিকেট কদ্দূর বোঝেন তা আপনার কমেন্ট পইড়াই বুঝতে পারছি।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫০

পথহারা নাবিক বলেছেন: আপনার এতো বিশাল লেখা আমার পড়ার টাইম নাই!! শিরোনাম দেখে মন্তব্য করছি!! ব্লগে খুব কম লোকেরই এতো বড় লেখা পড়ার সময় আছে!!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৮

মুহিত আলম বলেছেন: তাইলে অফ যান। কাউ কাউ কইরেন না।

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৬

কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: আগে মানুষ চাই, খেলা পরে।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৮

মুহিত আলম বলেছেন: ভাই, আপ্নেও অফ যান।

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৮:১৮

দূর আকাশের নীল তারা বলেছেন: সাকিব যা করেছে, তার জন্য সে নিজেও অনুতপ্ত; সে দেশ ও ভক্তদের কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। এরপরও তো আর বলার কিছু থাকে না। যারা সাকিবকে দীর্ঘমেয়াদী বাদ দেয়ার কথা বলছেন, তারা বিচার-বুদ্ধি কতটুকু এব্যাপারে আমি সন্দিহান।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:০৯

মুহিত আলম বলেছেন: আমিও সন্দিহান।

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৩৯

হেডস্যার বলেছেন:

খুবই চমৎকার লেখা। পুরাপুরি একমত।

যারা এগুলো করছে তারা আসলে অকৃতজ্ঞ কুকুর এর মত।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:১১

মুহিত আলম বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:৫৫

মনসুর-উল-হাকিম বলেছেন: সাকিব একজন মানুষ| আমাদেরই কুশিক্ষা আর অপসোংষ্কৃতির মধ্যে সে দিন যাপন করছে| সে ভুল-ত্রুটি করতেই পারে।

আবার, সাকিব একজন প্রতিভাধর উচ্চমানের ক্রিকেটার| তার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা-পরিবেশ আমরা দিতে পারি নাই।

সাকিবের এই দুই পরিচয়ের মধ্যে জট পাকিয়ে সাকিবকে আরও সমস্যায় ফেলা অনুচিত ও ধ্বংসাত্বক, . . . . !!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.