নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুক্তপুরুষ

মুক্তপুরুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুইটি অনু গল্প

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২

গল্পঃ শেষ বিদায়





মাঝরাতে দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলে খুব অস্থির লাগে সুমনের। অজানা একটা ভয় চেপে বসে মনের ভিতর। এ ভয় যেন আসে অন্য কোন জগত্‍ থেকে। আজকেও বিশ্রী একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে সুমনের। মাথাটা কেমন যেন ঝিম ঝিম করছে। তেষ্টাও পেয়েছে বেশ। অসুস্থ শরীরে যে উঠে পানি খাবে সে সাহসও পাচ্ছে না। এর আগে এরকম অনেকবার হয়েছে। রাতে উঠে লাইট জ্বালাতে অথবা পানি খেতে যেয়ে দূর্বল শরীর নিয়ে হুড়মুড় করে পড়ে গেছে। নিজের শরীরকে নিজে বুঝতে পারে সুমন। ক্যান্সার নামের রোগটা যে তার শরীরকে দিনে দিনে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে সে নিজেও বুঝে। ক্ষীন স্বরে বাবাকে ডাকলো সুমন। সুমনের বাবা জেগেই ছিলেন। অসুস্থ ছেলের চিন্তায় প্রায় রাতেই ঘুম হয় না তাঁর। ছেলের গলার শব্দ পেয়ে পাশের রুম থেকে প্রায় ছুটে চলে আসলেন।



ছেলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে? খারাপ লাগছে?

- না। পানি খাবো।

এক গ্লাস পানি এনে ঢেলে দিলেন তিনি। এক নিঃশ্বাসে ঢক ঢক করে পানিটা খেয়ে ফেললো সুমন। ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্নের রেশটা কেটে যাচ্ছে। বিছানার উপর উঠে বসে বাবার দিকে তাকালো। এই কয়দিনে তার বাবা যেন অনেকটা বুড়িয়ে গেছে। গালে কাঁচা পাকা দাড়ি, রাত জাগার জন্যে চোখের নিচে কালি, চেহারায় স্পষ্ট হতাশার ছাপ। জীবন নদীতে কূল হারিয়ে তিনি যেন উদ্ভ্রান্ত। সুমনের বুকের মধ্যে টনটন করে উঠলো ব্যথায়। বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, বাবা?

-কি?

-আমার জন্যে তুমি এতো চিন্তা করো কেন সারাদিন?

-কই না তো!

-সবাই তো একদিন মারা যাবে বাবা। আমি না হয় কিছুদিন আগেই মারা গেলাম। মানুষ যতো আগে মারা যাবে ততোই তো ভালো। পাপ কম হবে। সৃষ্টিকর্তার কাছে বেশী কৈফিয়তও দিতে হবে না। কতো সুবিধা!

-শুধু ব্যক্তিগত পাপ পূন্যই তো জীবন না রে! ভালো মানুষের বেশীদিন বাঁচতে হয়। ভালো মানুষের দ্বারা অন্যের ভালো হয়, পৃথিবীর ভালো হয়। খারাপ মানুষেরা তাড়াতাড়ি মারা গেলে পৃথিবীর জন্যে মঙ্গল।

-বাবা, আমি কি ভালো মানুষ?

-আমার দেখা শ্রেষ্ঠ ভালো ছেলে তুই। তোকে অনেকদিন বাঁচতে হবে।



হাসলো সুমন। বাবার দিকে তাকিয়ে বললো, কিন্তু আমার যে বাঁচতে আর ইচ্ছা করে না। নিজের মৃত্যুকে মেনে নিয়েছি। এখন বেশ হালকা লাগে নিজেকে। আমার কষ্ট হয় তোমার জন্যে। তুমি শুধু শুধু আমার জন্যে কষ্ট পাও।

সুমন তার বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনি কাঁদছেন। তার নিজের চোখ ফেটেও জল বের হয়ে আসলো। বুকের মধ্যে কেমন যেন উথাল পাথাল করছে। নিজের রোগা শীর্ণ হাতটি বাবার হাতে রাখলো সুমন।

জানালা দিয়ে চাঁদের আলো রুমের মধ্যে এসে অপার্থিব এক জগত্‍ সৃষ্টি করেছে। সেই আলোয় বিধাতা ছাড়া হয়তো আর কেউই দেখলো না পিতা পুত্রের এই অদ্ভূত শেষ বিদায় আর নীরব কান্না।





গল্পঃ ভালবাসার দুঃখ





লাবনীর জন্যে অপেক্ষা করতে করতে এরই মধ্যে তিনটি সিগারেট শেষ করে ফেলেছে সুজন। সকালবেলা নাস্তা করা হয়নি। তাই খালি পেটে এতোগুলো সিগারেট খাওয়ার জন্যে একটু বমি বমি লাগছে। গাছপালা ঘেরা এই পার্কের মধ্যেও সূর্য যেন আগুন ঝরাচ্ছে। ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপটে গেছে শার্টটা। চার নাম্বার সিগারেটটা জালাতেই লাবনীকে দেখতে পেল সে। লাবনীও তাকে দেখতে পেয়েছে। রিকশা দিয়ে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। আজ লাবনী নীল রঙের সালোয়ার কামিজ পড়েছে। অবাধ্য খোলা চুল বার বার বাতাসের ঝাপটায় চোখের উপর এসে পড়ছে। বেশ সুন্দর লাগছে। তবে প্রতিদিনের মতো মিষ্টি হাসিটা আজ নেই। মুখটা থমথমে। কারনটা জানে সুজন। বাসা থেকে বিয়ে ঠিক করা হয়েছে লাবনীর। কিন্তু সে বিয়েটা করবেনা। লাবনী নিশ্চয় তাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার কথা বলবে আজ। হাসলো সুজন। মেয়েটা এতো বোকা। সাদা কালো পৃথিবীতে রঙীন ভালবাসার যে ঠাঁই নেই এই এই সাধারন কথাটা বোঝে না।

রিকশা সুজনের কাছে আসতেই নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলো লাবনী। দুজন হেঁটে পার্কের এক বেঞ্চে বসলো। সুজনের দিকে তাকিয়ে লাবনী বললো, স্যরি, আজ তোমাকে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হলো।

- আরে ধুর! অপেক্ষা করতে আমার খারাপ লাগে না। আর তোমার জন্যে তো অনন্তকাল অপেক্ষা করতে পারি।

হাসলো না লাবনী। থমথমে মুখে বললো, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।

-ছেলে কি করে?

-আমেরিকায় থাকে।

-বাহ বেশ ভাল।

-মানে কি?

-জানিনা।

-জানো না মানে! তোমার কিছু বলার নেই?

-আছে।

-কি?

- বিয়েটা করে ফেলো।

- আমি এই বিয়ে করতে পারবো না। তুমি একটা ব্যবস্থা করো। আমরা পালিয়ে বিয়ে করবো।

- আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না লাবনী।

-সুজন তুমি কি মানুষ?

মনে মনে হাসলো সুজন। মেয়েটা বোকা হলেও মাঝে মাঝে সত্যি কথা বলে ফেলে। এই যেমন সুজন মানুষ কি না। তার মতো নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের দুঃখের সাথে নিত্য বসবাস। প্রতিদিন দুঃখ নিংড়ে সুখ খুজে বের করার যে অমানুষিক চেষ্টা করতে হয় তাতে তার নিজেকেই মাঝে মাঝে মানুষ মনে হয় না। লাবনীর দিকে তাকালো সে। কাঁদছে লাবনী। তার ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রু যেন খচ খচ করে বিধছে সুজনের বুকে। কি বা করতে পারে সে নিজের প্রেমের জন্যে? লাবনীর জন্যে? তবে থাক! বাস্তবতার নির্মম ঝড়ে প্রেম যে খড়কুটোর মতো উড়ে যায় সে অভিজ্ঞতা নাই বা হলো মেয়েটার।



‘আমি চললাম’, উঠে দাড়ালো লাবনী। ‘আর হয়তো তোমার সাথে দেখা হবে না।’

হঠাত্‍ করেই কান্না পাচ্ছে সুজনের। সে নিজেও হয়তো লাবনীর মতো বোকা। না হলে কি বোকার মতো কান্না আসে? লাবনীর গমন পথের দিকে তাকালো সে। তার মাথাটা যেন দুলছে। দুলছে লাবনীর গমন পথ। দুলছে শহর। এমনকি পুরো পৃথিবী। চোখের কোনে জমে থাকা জলটা মুছে কাঁপা কাঁপা পায়ে উঠে দাড়ালো সুজন। বাবার বুকের ব্যথাটা আবার বেড়েছে। বিকেলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এদিকে ছোট বোনের স্কুলের বেতনটা দেওয়ার আজকেই লাস্ট ডেট। কিছু টাকার ব্যবস্থা করতে হবে। কতো কাজ পড়ে আছে তার!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৬

আহসানের ব্লগ বলেছেন: সামহোয়ার ইন ব্লগে আপনাকে আমন্ত্রন।
এখানে লিখুন পড়ুন আর প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে থাকুন।
এটাই হউক আপনার ঠিকানা। :)

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১

মুক্তপুরুষ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.