নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি স্বাধীন

আমি স্বাধীন, আমি স্বাধীন ভাবে বলতে চাই, স্বাধীন ভাবে বাঁচতে চাই....

মুন্না ঢালী

আমি স্বাধীন....আমরা স্বাধীন

মুন্না ঢালী › বিস্তারিত পোস্টঃ

উচ্চ আদালতের রায়ের নকল কপি পেতে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ

২০ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ২:৫৪

* গুনতে হচ্ছে সরকারী ফির অতিরিক্ত ৫০ থেকে ৬০ গুন

* অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জরিত থাকার অভিযোগ

* ত্রুটি পূর্ন প্রক্রিয়াই দায়ী: আইনজ্ঞদের অভিমত



সরকারি হিসাব অনুযায়ী সুপ্রীমকোর্ট থেকে একটি রায়ের নকল কপি ওঠানোর খরচ সর্বোচ্চ ৫৮ টাকা নির্ধারন থাকলেও বিচারপ্রার্থীদের গুনতে হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ গুন বেশি। এর কারণ হিবেবে রায়ের নকল কপি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি এবং বিচারপ্রার্থীদের অজ্ঞতাকে দায়ী করেছেন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। অতিরিক্ত টাকা না দিলে মাসের পর মাস ঘুরেও নকল কপি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ত্রুটিপূর্ন প্রক্রিয়াকে পুজি করে সুপ্রীমকোর্টের বিভিন্ন সেকশনের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, আইনজীবীদের ক্লার্ক-মুহুরীদের একটি শক্তিশালী চক্র এ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে সুপ্রীমকোর্ট থেকে রায়ের নকল কপি পেতে বিচারপ্রার্থীদের রীতিমত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা এক বিচারপ্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘সম্প্রতি আমার ভাইয়ের একটি মারামারি মামলায় আগাম জামিন করিয়েছি। ওই জামিন আদেশের নকল কপি পেতে আমাদের আইনজীবীর ক্লার্ক পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। পরে অনেক দরকষাকষি করে তিন হাজার টাকা দিয়ে প্রায় ১৫ দিন পর ওই রায়ের নকল কপি হাতে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, নকল কপি ওঠাতে কত টাকা খরচ হয় সেটাই আমার জানা নেই। তাছাড়া কোথায় গেলে কিভাবে নকল কপি ওঠানো যাবে সেটাও জানিনা। তাই বাধ্য হয়ে আমার আইনজীবীর ক্লার্কের কাছেই নকল কপিটি ওঠানোর কথা বলি।

উচ্চ আদালতে আসার সৌভাগ্য সব বিচারপ্রার্থীর হয় না। বিশেষ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোন বিচারপ্রার্থীর জন্যে হাইকোর্টে আসাটা খুবই দুঃসাধ্য ব্যপার। অন্যউপায় না থাকলে বাধ্য হয়েই অনেকে হাইকোর্টে আসেন। এর পর আনজীবী নির্ধারণ, আইনজীবীদের ফি নির্ধারণসহ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয় ওইসব বিচারপ্রার্থীকে। আইনজীবীদের ফি, মামলা দায়েরের খরচ, মামলা কার্যতালিকায় আনা, শুনানিসহ নানা ধাপ অতিক্রম করার পর রায় পক্ষে-বিপক্ষে যাওয়ার বিষয়টি আসে। তারপর রায় পক্ষে গেলে শুরু হয় রায়ের কপি পাওয়ার নিরন্তন চেষ্টা। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও হতে হয় নানা সমস্যার মুখোমুখি। রীতিমত গলদঘর্মের সৃষ্টি হয় রায় পাওয়া থেকে রায়ের কপি হাতে পাওয়া পর্যন্ত। আর এর পেছনে যুগের সাথে তালমিলিয়ে নকল পাওয়ার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে না নিয়ে যাওয়াকে দায়ী করেছেন অনেকেই।

রায়ের কপি পাওয়ার প্রকৃত খরচ : সুপ্রীমকোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য মতে সরকারি হিসাবে রায়ের নকল কপি পাওয়ায়র খরচ খুবই কম। সুপ্রীমকোর্টে রিট, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলার নকল সংগ্রহের জন্য তিনটি শাখা রয়েছে। জরুরি (সাত দিনের মধ্যে) নকল উঠাতে সরকারি ফি ১০ টাকা ও কোর্ট ফি ১০ টাকা। এছাড়া প্রথম পাতার জন্য ১০ টাকা, পরবর্তী কোর্ট ফলিও দুই টাকা, এছাড়া প্রতি পাতায় দুই টাকার স্ট্যাম্প লাগাতে হয়। সব মিলিয়ে জরুরিভিত্তিতে ১০ পৃষ্টার নকল উঠাতে খরচ ৫৮টাকা। সাধারণ খরচ ১৬টাকা। সাধারণ জাবেদা নকলের জন্য দরখাস্ত, দুটি ফলিও দিয়ে নকল ওঠাতে খরচ ১৮টাকা এবং ৬টি ফলিও দিয়ে নকল ওঠাতে খরচ ২৬টাকা নির্ধারিত। কিন্তু এ হিসাব শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ। বাস্তব চিত্র ভয়াবহ। নাকল কপি ওঠাতে কোন কোন ক্ষেত্রে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রক্রিয়ার ত্রুটি : নকল কপি ওঠানোর ক্ষেত্রে বেশি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পেছনে-এটা পাওয়ার প্রক্রিয়ার ত্রুটি ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিচারপ্রার্থীদের অজ্ঞতাকে দায়ী করেছেন আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত কোন মামলায় রায় হওয়ার পরে বিচারপ্রার্থী দ্রুত ওই রায়ের কপি পেতে চায়। এজন্যে সে প্রথমেই আইনজীবীর সহকারি, ক্লার্ক বা মহুরির কাছে ধরণা দেন। এর পেছনের কারণ, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা কোন বিচারপ্রার্থী সাধারণ রায়ের কপি পাওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানেন না। তাছাড়া সে ধরণের কোন চার্টও সপ্রীমকোর্ট অঙ্গণে টাঙানো নেই। কোন রুমে গেলে কি পাওয়া যাবে, বা কোন কাজের জন্যে কত টাকা দিতে হবে, কত সময় লাগবে-এ ধরণের কোন তালিকা নেই। পাশাপাশি নেই কোন হেল্প ডেস্কও। ফলে বাধ্য হয়ে বিচারপ্রার্থী প্রথমেই কারও কাছে নিজেকে সমার্পণ করেন। আর এ সুযোগ কাজে লাগান আদালত অঙ্গণের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।

সূত্র মতে, রায় হওয়ার পরে প্রথমেই ধরণা দিতে হয় রায়ের কপিটি টাইপ হয়েছে কিনা-সেটা দেখার জন্যে। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে ফাইল নামেনি বলে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে বেঞ্চ অফিসার, জমাদ্দার, পেশকার, এরপর পিয়নকে ম্যানেজ করে সেকশনে ফাইল আনতে হয়। এসব ক্ষেত্রে টাকা ছাড়া কোন ফাইল নড়ে না। এবার সেকশনে শত শত ফাইলের মধ্যে থেকে ফাইল খুজে বের করতেও টাকা লাগে। ফাইল নকল শাখায় গেলে, সেখানেও ধরণা দিতে হয়। আর কপি পাওয়ার বিষয়টি নির্ভর করে তদবিরের ওপর। যার তদবির যত বেশি, সে তত তাড়াতাড়ি কপি পেয়ে যায় বলেও জানা গেছে।

ত্রুটির সমাধান: এসব ত্রুটির সমাধানের বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, সমস্ত ফাইল যদি অনলাইনে মুভমেন্ট করানো হতো, রায়ের কপি যদি অনলাইনে পাওয়া যেত তাহলে দুর্নীতি হয়রানি কমে আসতো। তাছাড়া সুপ্রীমকোর্টে একটি চার্ট টাঙিয়ে দিতে হবে। সেখানে কার কাছে গেলে, কোন রুমে গেলে কোন ব্যাপারে সাহায্য পাওয়া যাবে, কোন নকল কপির জন্যে কত ফি দিতে হবে, কতদিনের মধ্যে কপি সরবরাহ করতে হবে প্রভৃতি বিষয় উল্লেখ থাকতে হবে। এতে করে বিচারপ্রার্থীরা পরনির্ভরতা কাটিয়ে নকল চাইতে পারবে। এছাড়া একটি হেল্প ডেস্কও রাখতে হবে। যাতে বিচারপ্রার্থীরা কোন তথ্য চাইতে গেলে সহজেই পেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, নকল কপি যদি পুরোপুরি অনলাইন নির্ভর করা হত এবং অনলাইন থেকে প্রিন্ট দিয়ে শুধু সেকশন থেকে সত্যায়িত করে নেয়ার সিস্টেম চালু করা হত। আবেদনের তারিখ ও সিরিয়াল নম্বর অনুযায়ী বিচারপ্রার্থীদের নকল কপি সরবরাহ করা হত। তাহলে দুর্নীতি হয়রানি কমে আসতো। এক্ষেত্রে কত দিনের মধ্যে কপি দিতে হবে তার বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। পাশপাশি থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাববদিহিতাও।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুপ্রীমকোর্টের একজন বেঞ্চ অফিসার বলেন, নকল শাখার লোকজন টাইপ করার নামে এর আগে বিচারপ্রার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করতো। এখন আর অন্যদেরকে টাইপ করতে হয় না। বেঞ্চ অফিসাররাই তিনটি কপি টাইপ করে। একটি কপি নকল সেকশনে পাঠিয়ে দেয়। তারপরও বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি কমেনি। তিনি কর্তৃপক্ষের প্রতি সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, বেঞ্চ অফিসারের কাছ থেকে রায়ের কপি সরাসরি সার্ভারে তুলে দিতে হবে। এতে করে ডিজিটাইলজড সহজ হবে। সংশ্লিষ্ট কপিং সেকশন সার্ভারে ঢুকে রায়ের কপি করে ফলিও-এর ওপর বসিয়ে দিতে পারবে। এটি করলে অনেক রায়ের কপি-যেগুলো অপ্রয়োজনীয়-সেগুলোর ক্ষেত্রে কাগজ-কালি বেঁচে যাবে। পাশপাশি দ্রুত রায়ের কপি সরবরাহ করা যাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.