![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি স্বাধীন....আমরা স্বাধীন
শহীদ প্রজন্ম যোদ্ধা আহমেদ রাজিব হায়দার শোভনের সম্পর্কে জামায়াত পন্থী পত্রিকায় প্রকাশিত অপপ্রচারমুলক সংবাদ কপি করে সুপ্রীমকোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিদের কক্ষে বিতরণকারী হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁঞার বিরুদ্ধে ক্ষোবে উত্তাল হয়ে উঠেছে সারা দেশ। দেশের জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে আইনজীবী এবং সচেতন মহল থেকে অবিলম্বে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে এই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠেছে। বিক্ষুদ্ধরা বলছেন, একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারপতি হয়ে তিনি কোন ভাবেই এই কাজ করতে পারেননা। মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সংসদ সদস্যরা। স্পীকারসহ মহাজোটের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা অবিলম্বে সংবিধান সংঘনকারী ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজীত এক প্রতিবাদ সভায় আইনজীবীরা বলেছেন, যারা পদে আসীন হয়ে দলের প্রতি আনুগত্য দেখান তাদের পদে থাকার অধিকার নেই। স্বাধীন বিচার বিভাগকে কলুষিত করার জন্য এটা একটা কুখ্যাত কাজ। এ কাজের মাধ্যমে তিনি বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট লংঘন করেছেন। সভায় ওই বিচারপতির আদালত বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন আইনজীবীরা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটিও অবিলম্বে এই বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রীম জডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে হাইকোর্ট বিভাগের দুই বিচারপতিকে পেশাগত অসাদাচরণের কারণে চাকুরী হারাতে হয়েছিলো। এদের মধ্যে সাঈদুর রহমান নামে এক বিচারপতিকে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে চাকুরী থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছিলো এবং অন্যজন ফয়সাল মাহমুদ ফায়েজীর বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পর তিনি স্বইচ্ছায় পদত্যাগ করেন। এরা দুজনই ওই সরকারের আমলে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁঞা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০২ সালের ২৯ জুলাই হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন। দুই বছর পর ২০০৪ সালের ২৯ জুলাই তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসাবে শপথ নেন। সুপ্রীমকোর্টের একাধিক সূত্র মতে জানা গেছে, প্রজন্ম যোদ্ধা রাজিবকে নিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কতৃক অপপ্রচার চালানোর ঘটনায় হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বৈঠকের পর সোমবার বিকেলে বিচারপতিরা এ বিষয় নিয়ে প্রধান বিচারপতি মোঃ মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গেও দেখা করেছেন। সূত্র জানিয়েছে, প্রধান বিচরপতি বিষয়টি জানার পর পরবর্তী বিষয় নিয়ে ভাবছেন। এবং বিচারপতি মোঃ মিজুনুর রহমান ভূঁঞাকে ডেকে পাঠিয়ে সতর্কও করেছেন। এর আগে গত সোমবার রাজিব হায়দারকে ‘মুরতাদ’ আখ্যায়িত করে একটি প্রতিবেদন হাইকোর্টের বিচারপতিদের মাঝে বিতরণ করেছেন বিচারপতি মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁঞা। জানা গেছে, সোমবার দুপুরে তার পক্ষে জমাদার সিদ্দিকুর রহমান হাওলাদার সুপ্রীমকোর্টের খামে করে হাইকোর্টের বিচারপতিদের কক্ষে গিয়ে প্রতিবেদনটি দিয়ে আসেন। ওই লেখার এক পর্যায়ে বলা হয়, ‘তার এসব ব্লগ পোস্ট আমাদের মুরতাদ সামলান রুশদীর কথা মনে করিয়ে দেয়।’
সংসদে ক্ষোভ
এক বিচারপতি কর্তৃক তরুণ প্রজন্ম সেনা শহীদ আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অপপ্রচারমুলক সংবাদের কপি বিতরণের বিষয় নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সংসদ সদস্যরা। স্পীকারসহ মহাজোটের সিনিয়র সংসদ সদস্যরা অবিলম্বে সংবিধান সংঘনকারী ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানিয়েছেন। সংসদে প্রবল দাবির মুখে আইনমন্ত্রী ব্যারিষ্টার শফিক আহমেদ বলেন, ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি শীঘ্রই প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এ নিয়ে উত্তপ্ত অধিবেশনে ওই বিচারককে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক উল্লেখ করে মহাজোটের সংসদ সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন, দলীয় এজেন্ডা অনুযায়ী কাজ করে ওই বিচারক সংবিধান লংঘন ও শপথ ভঙ্গ করেছেন। তিনি যেভাবে সংবাদের কপি বিতরণ করেছেন তাতে শহীদ রাজীবের হত্যার সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সংসদ সদস্যরা।
সংসদ সদস্যদের আবেগকে ধারণ করে স্পীকার এ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী খুব শীঘ্রই উদ্যোগ না নিলে তিনি (স্পীকার) নিজ্ইে এ বিষয়ে সংসদে রুলিং দেবেন। সংসদের প্রধান হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ বিষয়টি সংসদে নোটিশ দিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাবের ওপর আইনমন্ত্রীকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান।
বিকালে সংসদের অধিবেশন শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য পয়েন্ট অব অর্ডারে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু স্পীকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। পরে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সংসদ সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আলোচনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজুলল করিম সেলিম, চীফ হুইপ আব্দুস শহীদ এবং আব্দুল মান্নান।
উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী আহমেদ রাজীব হায়দার শোভনকে নিয়ে সোমবার একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ‘সাম্প্রদায়িক ও উস্কানিমূলক’ সংবাদের কপি করে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। মিজানুর রহমান ভুঁইয়া নামের একজন বিচারক সুপ্রীমকোর্টের কাগজ, প্রিন্টার ও খাম ব্যবহার করে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রীমকোর্টের শতাধিক বিচারপতির কাছে ওই সংবাদের কপি বিতরণ করেন। ওই ঘটনায় আপিল বিভাগসহ হাইকোর্ট বিভাগের কয়েকজন বিচারপতি তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলামকে অবহিত করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
আলোচনার শুরুতে মুজিবুল হক চুন্নু দুটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরের বরাত দিয়ে বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের প্রথম শহীদ আহমেদ রাজীব হায়দারকে নিয়ে সংগ্রামসহ কিছু পত্রিকা অসত্য খবর প্রকাশ করছে। জামায়াত-শিবির আন্তর্জাতিকভাবে ষড়যন্ত্র করছে। ধর্মীয় বিষয়ে মিথ্যা পোস্ট দিচ্ছে। তিনি বলেন, এই খবরগুলো একজন বিচারক কপি করে সুপ্রীম কোর্টের সব জায়গায় বিলি করেছেন। এটা অন্যায়, ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে ওই বিচারপতি জড়িত। তিনি আরো বলেন, কেউই জবাবদিহিতার উর্ধ্বে নয়। ওই বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা হোক। তিনি এ সময় ৭২’র সংবিধানের আলোকে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে কাছে ফিরিয়ে আনতে ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃপ্রবর্তনের দাবি জানান।
আলোচনার এক পর্যায়ে স্পীকার বলেন, আমি এখনই শুনলাম বিষয়টি। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে দেশের মানুষ কোথায় যাবে? বিচারপতিদের যদি এই অবস্থা হয়? আইনমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ ঘটনার একটি সুরাহা আশা করি। তা না হলে আমি এ বিষয়ে একটি রুলিং অবশ্যই দেবো।
জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, একজন বিচারপতি বিচারকের দায়িত্ব নিয়ে যে কাজ করেছেন তা একেবারেই জঘন্য। নিন্দনীয়। অসদাচারণমূলক। সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে রাষ্ট্রপতি দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি কাউন্সিল গঠনে প্রধান বিচারপতিকে বলতে পারেন। আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আলোচনা করবো। যাতে কাউন্সিল গঠন করে সংবিধানের ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারপতি হয়ে কখনও এ ধরনের কাজ করা উচিত নয়। এটা সংবিধান বর্হিভূত। ইনকিলাব ও আমার দেশ পত্রিকা রাজীবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের কাজটি করেছে। এই সংবাদটি তারা মিলে তৈরি করে প্রকাশ করেছে। ছড়িয়েছে। যাতে রাজীবকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা যায়। রাজীব এ ধরনের কাজ করেনি, করতে পারে না। আমি এর বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।
আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বিচারপতি যদি তার দায়িত্ব ও কতর্ব্য সম্পর্কে না জানেন, যদি রাজনৈতিক দায়ে কাজ করেন তাহলে তার বিষয়ে আর কী বলার আছে? বিচারপতি হিসাবে ওই বিচারক যখন শপথ নেন তাতে কিছু সীমারেখা দেয়া ছিলো। ওই বিচারক সেইসব ভঙ্গ করেছেন।
সেলিম বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তিনি এমন সময়ে এই কাজটি করছেন, যেখানে গোটা জাতি শাহবাগের গণজাগরণের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, সেই গণজাগরণের একজন রাজীবকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। রাজীবকে হত্যার ধরণ একাত্তরে জামায়াত শিবিরের জঘন্য কর্মকান্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। ওই বিচারক রাজীবকে মুরতাদ বলে আখ্যায়িত করেছেন। একজন বিচারপতি হয়ে কীভাবে তিনি এ কথা বলেন? তিনি জামায়াত-শিবিরের পক্ষে কাজ করছেন। তাহলে কী এই হত্যার সঙ্গে তিনি জড়িত? তা না হলে তিনি এ কাজ কেন করলেন? রাজীব হত্যার ঘটনায় তাকেও ইন্টারোগেশনের আওতায় আনা হোক। তাহলে পেছনের অনেক ঘটনা বেরিয়ে আসতে পারে।
সেলিম বলেন, একটি দুটি পত্রিকা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য রাজীব সম্পর্কে তার মৃুত্যুর পর অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা নিজেরাই রাজীবের নামে লেখা তৈরি করে প্রচার চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ওই বিচারপতি বিএনপি-জামায়াতের সময় বিচারপতি হন। আমরা জানি, কারা বিএনপি-জামায়াতের সময় বিচারক হয়েছিলেন। ওই সময়ে জাল সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকে বিচারপতি হন। তারা ওইসব দলীয় লোকদের বিচারপতি বানিয়েছে। তাদের নিয়োগকৃত বিচারপতি এখন রাজাকারের পক্ষ নিয়ে শপথ ভঙ্গ করে আইন লংঘন করে কাজ করছেন। তিনি এই কাজটি করেছেন শাহবাগের গণজাগরণকে নস্যাত করার জন্য। বিচারক হয়ে এ কাজ তিনি করতে পারেন না।
শেখ সেলিম ওই বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য যত দ্রুত সম্ভব সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানান। তিনি বলেন, গত বারও দেখেছি স্পীকারের একটি বক্তব্য নিয়ে একজন বিচারক অযাচিত মন্তব্য করেছিলেন। ওই সময় ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য একটি প্রস্তাব রেখেছিলাম। অথচ ওই প্রস্তাবের বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, স্বাধীনতার চেতনা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার জন্য শাহবাগে গনজাগরণ তৈরি হয়েছে। সেই তরুণদের একজন শহীদ রাজীবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। রাজীব নবীজীর বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক লেখা প্রকাশ করেছেন বলে অপপ্রচার করা হয়েছে। যে ধরনের কথা প্রচার করা হচ্ছে তাতে যেকোন মুসলিম মনে আঘাত পাবেন। তিনি বলেন, রাজীবকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার মুখে সাতটি কোপ পাওয়া গেছে। এরপরও জবাই করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। একাত্তরের মতো তারা একই কায়দায় হত্যা করেছে। হত্যার ধরণ দেখেই বোঝা যায় কারা হত্যা করেছে। রাজীবের বাবা মাও বলেছেন, এটা জামায়াত-শিবিরের কাজ। অথচ একজন বিচারক যিনি রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, সেই দায় শোধ করার জন্য রাজীবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারমুলক লেখা প্রচার করে এমন গর্হিত কাজ করতে পেরেছেন। খুনীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ওই বিচারক যে কাজ করেছেন তাতে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তির বিধান করে বিচারবিভাগের মযার্দা রক্ষা করতে আইনমন্ত্রীকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান আব্দুল মান্নান।
জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আবদুস শহীদ বলেন, আজ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তরুণ সমাজ উত্তাল। কয়েকদিন আগে সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করেছেন। ৩৩ জন সংসদ সদস্য এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। সেই তরুণদের একজন শহীদ রাজীবের বিরুদ্ধে এ ধরনের মনোভাব প্রকাশ করাই নগ্নতা ও ধৃষ্টতার প্রকাশ। অথচ ওই বিচারক সেই কাজ করেছেন।
চীফ হুইপ বিচারকের এ ধরনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যদের আলোচনা ও একটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব নেয়ার সুযোগ করে দেয়ার আহবান জানান স্পীকারের প্রতি। তিনি বলেন, ৬৮ বিধিতে যে ব্যবস্থা আছে তাতে নোটিশ দিলে এ বিষয়টির ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করার সুযোগ পাবেন সংসদ সদস্যরা। জাতি জানতে পারবেন। সংসদীয় পদ্ধতিতে কীভাবে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত দেয়া যায় সেই প্রস্তাবও উঠে আসবে। আইনমন্ত্রী সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তিনি বলেন, আজ ওই বিচারক অপপ্রচারমূলক সংবাদ হকারের মতো লিফলেট আকারে বিতরণ করে ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ করেছেন।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির প্রতিবাদ
প্রজন্ম যোদ্ধা রাজিবকে নিয়ে জামায়াত পন্থী পত্রিকায় প্রকাশিত খবর কপি করে বিতরণকারী সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মোঃ মিজানুর রহমান ভূঁঞার বিরুদ্ধে সুপ্রীম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন আইনজীবীরা। মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় তারা এ দাবি জানান। সভায় ওই বিচারপতির আদালত বর্জনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। সভা শেষে রেজুলেশন পড়ে শোনান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক মোমতাজ উদ্দিন মেহেদী।
সভায় এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নিলে তিনি আর কোনো দলে থাকেন না। যারা পদে আসীন হয়ে দলের প্রতি আনুগত্য দেখান তাদের পদে থাকার অধিকার নেই। তিনি অবিলম্বে যদি পদ ছেড়ে দেন। তাহলে বিচার বিভাগ বাঁচবে।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, তিনি (বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁঞা) বিচারপতি হওয়ার যোগ্য কিনা সেটা এখন প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে। পত্রিকার কপি করে বিতরণ করা দলীয় আনুগত্যের প্রকাশ করেছেন। এখন তিনি তার পদে থাকার যোগ্যতা নেই। তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের পর নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার কোর্ট বর্জন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আইনজীবী, ফৌজদারী আইন বিশেষজ্ঞ এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, এই খবর পড়ে আমি অত্যন্ত ব্যথিত হয়েছি। স্বাধীন বিচার বিভাগকে কলুষিত করার জন্য একটা কুখ্যাত কাজ করেছেন।এর মাধ্যমে দলের আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। এটা ক্ষমতার অপব্যবহার। শাহবাগে নতুন প্রজন্মের আন্দোলন কারীদের নয়, এর মাধ্যমে তিনি সারা জাতিকে অপমান করেছেন। এ বিচারপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি প্রধান বিচারপতির প্রতি অনুরোধ জানান।
সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, মানবতা বিরোধী অপরাধী ও তাদের দোসররা ছাড়া পুরো জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। সে সময় কিছু রাজাকার ও ঘাতক অপরাধীরা অপ্রপচার চালাচ্ছে। এ কাজের মাধ্যমে তিনি বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট লংঘন করেছেন। বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঞা অসদাচরণ করার কারণে তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির জেষ্ঠ সহ-সভাপতি কেএম সাঈফুদ্দিন আহম্মেদ। সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, সমিতির সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সাবেক সহ সম্পাদক সৈয়দ মামুন মাহবুব প্রমূখ।
এর আগে দুপুরে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, সোমবার বিচারপতিগণ আমাকে জানিয়েছেন ব্লগার রাজিবের বিরুদ্ধে কুৎসামূলক রিপোর্ট কপি করে বিতরণ করছেন একজন বিচারপতি। এবং আমাকে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে বললো। এ কপি ওই বিচারপতি জমাদার ও পিয়ন প্রধান বিচারপতির দপ্তরেও দিয়েছেন। বিচারপতির নাম মিজানুর রহমান ভূঁঞা। তার জমাদারের নাম হচ্ছে সিদ্দিকুর রহমান হাওলদার ও কোর্ট পিয়নের নাম নুরুল আলম। আমি তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছি। ওরা স্বীকার করেছে। তারা বলেছে, চীফ জাস্টিসকেও এটা দিয়েছি। শামসুল ইসলাম আরো বলেন, প্রধান বিচারপতি আমাকে বলেছেন ওনাকে (বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূঁঞা) খবর দিতে। ওনাকে খবর দেওয়ার পর বিকালে উনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছেন।
নির্মুল কমিটির দাবি
রাজিব হায়দারকে মুরতাদ আখ্যাদানকারী সুপ্রিম কোর্টের বিচাপরতি মিজানুর রহমান ভ্ূঁঞাকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিচার করে অপসারণের দাবি জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। মঙ্গলবার সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লেখক শাহরিয়ার কবির, সহ সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, ভাস্কর ফেরদৌস প্রিয়ভাষিণী, চলচ্চিত্র নির্মাতা শামীম আখতার, ডা. সৈয়দ শাফিকুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল এ বিষয়ে এক বিবৃতি দিয়ে তাকে অপসারণের দাবি জানান। একটি দৈনিক পত্রিকার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, অত্যন্ত উদ্বেগ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ্য করেছি সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি মিজানুর রহমান ভূ্ঞাঁ জামায়াতের ঘাতকদের হাতে নিহত ব্লগার রাজিব হায়দারকে ‘মুরতাদ’ আখ্যায়িত করে বিচারপতিদের মাঝে তার বক্তব্য বিতরণ করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির এ ধরণের অসৎ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত কর্মকা- শুধু উচ্চতর আদালতের বিচারপতিদের মর্যাদা ক্ষুণœ করেনি একই সঙ্গে এ ধরণের বক্তব্য শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের মাহজাগরণের নায়কদের বিরুদ্ধে ’৭১ এর ঘাতক ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামীর চরম ধৃষ্টতাপূর্ণ বিষোদ্গারের অন্তর্গত। এই চরম নিন্দনীয় কর্মকা- আমাদের সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিশ্বাসঘাতকদের শামিল। এই বিচারপতি জামায়াতের একজন গভীর অনুরাগী ও স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পরিচিত। শান্তির ধর্ম ইসলামকে জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদি যেসব বই লিখে হত্যা ও সন্ত্রাসের ধর্মকে পরিণত করতে চেয়েছেন তার একটি হচ্ছে ‘মুরতাদের সাজা’। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যখন যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচারের জন্য গণআদালতের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন তখন জামায়াত তাঁকেসহ কবি সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, অধ্যাপক আহমদ শরীফ, কর্নেল (অব.) কাজী নূরউজ্জামান প্রমুখ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় জামায়াতের বিভিন্ন ব্লগ ও প্রচার মাধ্যমে শাহবাগের চলমান মহাসমাবেশের নায়কদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিষোদ্গার করে তাদের ইসলাম বিরোধী ও মুরতাদ আখ্যা দিয়ে হত্যার ক্ষেত্র তৈরি করছে। এমনকি হত্যার পরও তাদের রেহাই দিচ্ছে না, যার প্রমাণ জামায়াতপ্রেমী বিচারপতি মিজানুরের বিবৃতি। আমরা সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, অবিলম্বে জামায়াতি বিচারপতি মিজানুর রহমানের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধানবিরোধী এবং উচ্চতর আদালতের মর্যাদা হানিকর কদর্য কর্মকা-ের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। অন্যথায় জামায়াতিদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী কর্মকা- উৎসাহিত হবে এবং সংবিধানের রক্ষক সুপ্রিম কোর্টের ভাবমূর্তি ম্লান হবে।
©somewhere in net ltd.