নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুনতাসির রাসেল

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বৈরাচারের পতন এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের করণীয়: ইতিহাস ও বাস্তবতার বিশ্লেষণ

০৯ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৫

যুদ্ধে রাজা পরাজিত বা নিহত হলে সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, আত্মসমর্পণ করে বা পালিয়ে যায়—এটাই ইতিহাসের শিক্ষা। শাসকের পতনের সঙ্গে সঙ্গে তার সাম্রাজ্যেরও পতন হয়।

বাংলাদেশের রাজনীতির নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা আওয়ামী লীগ ৫ আগস্ট ২০২৪-এ ক্ষমতা হারিয়েছে এবং শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ইতিহাস সাক্ষী, যখন কোনো স্বৈরাচারী শাসকের পতন ঘটে, তখন তার দল এক ভয়াবহ সংকটে পড়ে—নেতারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়, অনুসারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, এবং অনেকেই প্রতিশোধের শিকার হয়।

তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের কী করা উচিত? তারা কি আত্মসমালোচনা করে নিজেদের সংশোধন করবে, নাকি পুরনো অপরাধীদের আড়াল করার চেষ্টা করে আরও ক্ষতির মুখে পড়বে? ইতিহাস ও বাস্তবতার নিরিখে বিষয়টি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা জরুরি।

➤স্বৈরাচারের পতনের পর রাজনৈতিক বাস্তবতা

একনায়কতন্ত্রের পতনের পর তার দল সাধারণত তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়:

১. যারা আত্মসমর্পণ করে এবং নতুন শাসনের সঙ্গে আপস করে

২. যারা পালিয়ে যায় এবং রাজনৈতিকভাবে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে

৩. যারা ষড়যন্ত্র চালিয়ে পূর্বশক্তিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে, শেখ হাসিনা ভারতের সহযোগিতায় দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরির চেষ্টা করছেন এটা এখন প্রমানিত সত্য । যদি এখনও তিনি রাজনৈতিক পুনরুদ্ধারের ষড়যন্ত্র করেন, তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে। কেননা, মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরাই যেকোনো প্রতিহিংসার শিকার হয়, অথচ বড় নেতারা নিরাপদে বিদেশে পালিয়ে যায়।

আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি—

◑১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের অনেক সাধারণ কর্মী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছিল, কারণ দল তখন রাজনৈতিকভাবে অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল।

◑১৯৯০ সালে এরশাদের পতনের পর জাতীয় পার্টি টিকে থাকলেও তার মূল ভিত্তি ভেঙে পড়ে, এবং সাধারণ কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।

◑১৯৪৭ সালের পর মুসলিম লীগ পাকিস্তানে টিকে থাকলেও বাংলাদেশে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যায়, কারণ জনগণের আস্থা ফিরে আসেনি।

আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থাও এই একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে। দলটির শীর্ষ নেতারা পলাতক এবং অনেকেই জেলে থাকায় এটি রাজনৈতিকভাবে মৃতপ্রায়।

➤আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের করণীয়

এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের জন্য বাস্তবসম্মত করণীয় হতে পারে চারটি পথ:

১. আত্মসমালোচনা ও ভুল স্বীকার করা

আওয়ামী লীগ ২০০৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত সময়কালে যে দমননীতি চালিয়েছে, সেই ইতিহাস অস্বীকার করা অসম্ভব। সবশেষ জুলাই অভ্যুত্থান যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তা ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়। এছাড়াও বিরোধীদের গুম, খুন, নির্যাতন, ভোটাধিকার হরণ, অর্থনৈতিক লুটপাট—এই সবকিছুই জনগণের মনে গভীর ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের উচিত নিজেদের ভুল বোঝা এবং স্বীকার করা।

অতীতে যেসব অন্যায়-অবিচারের অংশীদার ছিলেন না, তারা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করতে পারেন।

ইতিহাস বলে, যারা জনগণের রোষের শিকার হওয়ার আগেই নিজেদের সংশোধন করে, তারা ভবিষ্যতে নিরাপদ থাকে।

২. দলের অপরাধীদের বিচারের দাবি তোলা

যেসব নেতারা আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম, খুন, দুর্নীতির মাধ্যমে দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তাদের বিচারের দাবি তোলা সাধারণ কর্মীদের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।

সাধারণ কর্মীদের বোঝা দরকার, অপরাধীদের রক্ষা করতে গেলে তারাই প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

মুসলিম লীগের সাধারণ কর্মীরা যদি ১৯৪৭-৫৪ সালের মধ্যে দলের ভুলগুলো স্বীকার করে নতুন ধারার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হতো, তবে হয়তো দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকে থাকতে পারত।

যারা সত্যিকারের দেশপ্রেমিক, তাদের উচিত দলের দুর্নীতিগ্রস্ত ও অপরাধী অংশকে বর্জন করা এবং জনমতের সঙ্গে সংযুক্ত থাকা।

৩. স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা

অনেক কর্মী শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের ব্যানারে থাকার কারণে এখন সামাজিকভাবে চাপে আছেন। তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত হলো রাজনীতি থেকে সাময়িক অবসর নিয়ে সাধারণ জীবনে ফিরে আসা।

প্রতিশোধমূলক রাজনীতির শিকার হওয়ার চেয়ে নিরপেক্ষ থাকা নিরাপদ।

যারা অতীতে নিরীহ রাজনীতি করেছেন, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য বা চাকরির দিকে মনোযোগ দিতে পারেন।

ইতিহাস বলে, যারা সময়মতো নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান বদলাতে পারে, তারাই দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকে।

৪. আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতহীনতা মেনে নিয়ে নতুন পথ খোঁজা

স্বৈরাচারের পতনের পর সংশ্লিষ্ট দল সাধারণত আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে না।

মুসলিম লীগ ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর একদম বিলীন হয়ে গিয়েছিল।

জাতীয় পার্টি ১৯৯০-এর পর আর কখনো রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরতে পারেনি।

আওয়ামী লীগেরও একই পরিণতি অপেক্ষা করছে, কারণ দলটির প্রতি জনগণের আস্থা উঠে গেছে।

সাধারণ কর্মীদের তাই বুঝতে হবে, আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নেই। তারা চাইলে নতুন রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন অথবা পুরোপুরি রাজনীতি থেকে সরে যেতে পারেন।

স্বৈরাচারের পতনের পর সাধারণ কর্মীদের তিনটি পথ খোলা থাকে—

১. আত্মসমর্পণ করে নতুন ধারার রাজনীতির সাথে আপস করা

২. নিরপেক্ষ থেকে পরিস্থিতি বোঝা

৩. সাবেক নেতাদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে আরও বিপদে পড়া

যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়, তারা নিরাপদে থাকে। আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের উচিত—

◑নিজেদের ভুল স্বীকার করা

◑দলের অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার হওয়া

◑রাজনীতি থেকে বেরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া

◑আওয়ামী লীগের ভবিষ্যতহীনতা মেনে নিয়ে নতুন পথ খোঁজা

যারা এই বাস্তবতাকে মেনে নিতে পারবে, তারাই ভবিষ্যতে ভালো থাকবে। যারা অন্ধ আনুগত্যে আবদ্ধ থাকবে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: আওয়ামী লীগ সাপোর্টার ও নেতা-কর্মীদের মধ্যে সাধারণ মানুষের প্রেজেন্ট লাইফ ফেইস করা প্রব্লেম নিয়ে যে ধরণের হাসি-তামাশা করতে দেখা যাচ্ছে এটাই তাদের ডুবাবে। :-0

২| ০৯ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:১৩

কৃষ্ণের মুরলী বলেছেন: অ্যামেরিকার গুড লিস্ট থেকে আওয়ামীলীগের নাম কাটা গেছে। মোদী সাহেব হাসিনাকে নিয়ে জুয়া খেলছেন। অচিরেই ভারত রাজনৈতিক পাশা খেলায় তার ভুল দান বুঝতে পারবে। বোঝা শুরু হয়ে গেছে। মোদী সাহেব এখন তারেক জিয়াকে দলে টেনেছেন। বিএনপি কবুল বলেছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.