নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছায়া ও সত্তার সংলাপ

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৫


রাত্রি যখন নিঃশব্দের উর্বর বুকে তার ছায়া ফেলে,
তখন আসে সে— আমার অন্তর্গত বিবেক।
আলোর মতো নয়, ছায়ার মতোও নয়,
বরং এক প্রাচীন আর্তি হয়ে বসে পড়ে চোখের পাতায়—
ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“এতদিন ধরে ধ্বংসের ভিতরে বেঁচে আছো কীভাবে?
কোথায় রেখে আসো প্রতিদিনের বিষ,
প্রতারণার হিমশীতল চুম্বন,
বেদনাগুলোকে কোথায় ঢেকে রাখো তুমি,
যে এখনো মানুষ হয়েই দাঁড়িয়ে আছো আলোর মতো?”

আমি কিছু বলি না,
তবে আমার বুকের ভিতর থেকে উঠতে থাকে
এক প্রাচীন মৌন সংগীত—
যে গান জলে শুয়ে কেঁদেছিল সহস্রাব্দ আগে,
যে গান বাতাসে ছুঁয়ে দিয়েছিল আগুনের দগ্ধ স্মৃতি।
আমার নীরবতা তখন বর্ণহীন নয়,
তা এক বর্ণিল আর্তনাদ—
যা শব্দ ছাড়াই কাঁদতে জানে।

সে ফের বলে—
“তোমার তো ক্লান্ত হবার কথা,
ভেঙে চুরমার হবার কথা ছিল অনেককাল আগেই,
তবু তুমি বহমান— কে শেখায় তোমায় এমন সীমাহীন ধৈর্য?”

আমি কিছুই বলি না,
তবে আমার চোখে তখন জ্বলে ওঠে
সহনশীলতার একটি গোপন দীপ্তি—
সে দীপ্তি কোনো সূর্য ধার নেয়নি,
বরং জন্ম নিয়েছে প্রান্তরের কাঠফাটা রোদের নিচে,
একাকীত্বের বুকে পুষে রাখা ক্ষতের ভিতর।
আমি তখন কেবল মাথা নিচু করে বলি—
“যে ব্যথা শব্দ খুঁজে পায় না, সে-ই তো শেখায় অমরত্ব ।”

সে থেমে যায় না,
জিজ্ঞেস করে—
“এই যে কেউ নেই তোমার পাশে,
এই যে দুনিয়ার পাঁজরে তুমি একা রক্তিম রেখা—
তবুও এই উজ্জ্বলতা কোথা থেকে নিয়ে আসো তুমি?”

আমি তখন দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি,
নিঃশ্বাসে মিশে থাকে অনন্তকাল জমে থাকা এক বিষণ্ন আকাশ—
আর বলি—
“আমি তো মাটি,
আমাকে যত পায়ের নিচে চেপে দাও, আমি ততই অঙ্কুরিত হই।
আমি তো সুর,
আমাকে যত অপমান করো, আমি ততই গেয়ে উঠি অনন্তের গান।
আমি তো আলো,
আমার কাজই হলো অন্ধকারে ঝলকে ওঠা—
নিজেকে পোড়াতে পোড়াতে কারো পথ চিনিয়ে দেওয়া।”

সে তখন প্রথমবার কাঁপে—
তার চোখে কিছুটা জল,
তবু সেই জলও যেন নিজের জন্য নয়—
আমার নীরবতার অতলে হারিয়ে যাওয়া
এক অনুচ্চারিত আর্তির জন্য।
সে বলে—
“তুমি চাইলে কাঁদো, একটু কাঁদো তো—
এই কঠিন পৃথিবীর সামনে একটু ভেঙে পড়ো,
তোমার কান্নাও তো একদিন প্রয়োজন ছিল!”

আমি তখন এক নীরব দীপ্তির মতো মাথা তুলে বলি—
“আমার কান্না তো সন্ধ্যার গোধূলিতে গলে যায়,
আমার শূন্যতা তো মহাকাশের অজানা নক্ষত্রে বাসা বাঁধে।
আমি তো নিজেই জানি, কোথায় আমি আর কোথায় আমার না-বলা ভাষা।
তুমি শুনতে চাও? তবে শোনো—
আমি আজও বেঁচে আছি, কারণ মৃত্যু এখনো আমার জন্য যথেষ্ট কোমল হয়নি,
আর জীবন— সে তো প্রতিদিনের এক নতুন প্রশ্ন।
আমি হাঁটি, কারণ থেমে গেলে
আমার ব্যথাগুলোই আমাকে গ্রাস করবে—
তখন আর কিছু থাকবে না, শুধু পড়ে থাকবে এক নীরব বিলুপ্তি।”

আমার অন্তর্গত বিবেক তখন থেমে যায়—
যেন কোথাও হারিয়ে ফেলে তার সব যুক্তি।
সে একবার আমার দিকে তাকায়,
তার চোখে তখন বিস্ময়ের অন্ধকার,
আর আমি?
আমি আমার সমস্ত ছিন্নভিন্ন হৃদয় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি,
এক অনন্ত আলোর অভিমুখে—
যেখানে কান্না নেই,
কেবল জ্বলতে থাকা নিরব আত্মা আছে।

১৬ই বৈশাখ,১৪৩২

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৫

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

০১ লা মে, ২০২৫ রাত ২:৪৫

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ!

২| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর কবিতা।

০১ লা মে, ২০২৫ রাত ২:৪৬

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে!

৩| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৩০

সামরিন হক বলেছেন: ভালো লাগলো কবিতাটা।

শুভেচ্ছা রইলো।

০১ লা মে, ২০২৫ রাত ২:৪৭

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.