নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী কমিশন বিতর্ক: সংস্কারের ভাষ্যে প্রান্তিকতার অনুপস্থিতি ও বিশ্বাসের সংঘাত

০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৪:০৬


বাংলাদেশে নারী-অধিকার প্রশ্নে বিতর্ক নতুন নয়, তবে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সাম্প্রতিক প্রস্তাবনা যেন একটি আগুনের স্ফুলিঙ্গ ছুড়ে দিয়েছে। বাল্যবিবাহ, পারিবারিক আইন, নারী-পুরুষের ভূমিকা ও ধর্মীয় বিধানের নতুন ব্যাখ্যা নিয়ে উত্থাপিত সুপারিশগুলো সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বহুমাত্রিক উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে একটি মৌলিক প্রশ্ন: এই প্রস্তাবনা আসলে কাদের জন্য, কার অভিজ্ঞতা থেকে, এবং কাদের বাস্তবতাকে প্রতিনিধিত্ব করে?

প্রান্তিক কণ্ঠের অনুপস্থিতি
প্রস্তাবনাটিতে গার্মেন্টস শ্রমিক, গৃহকর্মী, কৃষিশ্রমিক, কিংবা যৌনকর্মী নারীদের বাস্তবতা কোথায়? ঢাকার অভিজাত শ্রেণির নারীদের সমস্যা, অভিজ্ঞতা ও আকাঙ্ক্ষা যেমন—নাগরিক নিরাপত্তা, চাকরিতে হেনস্তা, বা কর্পোরেট সমতা—তা প্রান্তিক নারীর জীবনের বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে না। ফলে যেসব প্রস্তাবনা এসেছে, তা হয়ে উঠেছে একরকম "উচ্চবর্গীয় নারীবাদ"-এর দলিল, যেখানে বাস্তবতার বদলে কনফারেন্স রুমের অভিজ্ঞতা ও এনজিও-কেন্দ্রিক ভাষা প্রাধান্য পেয়েছে।
ধর্মীয় মূল্যবোধ ও পারিবারিক কাঠামোর সাথে সংঘাত
কমিশনের যে সুপারিশগুলো সবচেয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে রয়েছে:
◑পারিবারিক আইন সংস্কার ও ধর্মীয় বিধানের "নতুন ব্যাখ্যা" চাওয়ার বিষয়টি;
◑নারীর নিজস্ব সিদ্ধান্তে অভিভাবকত্ব ছাড়াই বিয়ের অধিকার নিশ্চিত করার প্রস্তাব;
◑সমঝোতামূলক তালাক বা বিচ্ছেদকে সহজ করার প্রক্রিয়া;
◑যৌন ও প্রজনন অধিকার প্রসঙ্গে স্বাধীনতা ও নীতিমালার প্রশ্ন।


এসবই দেশের একটি বৃহৎ ধর্মপ্রাণ জনগোষ্ঠীর চেতনাবিশ্বের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, জামায়াতে ইসলামী, এমনকি বাংলাদেশের খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন পর্যন্ত এই প্রস্তাবনার বিরোধিতা করেছে। তাদের ভাষ্যে, প্রস্তাবনাগুলো ধর্মীয় বিধানকে খণ্ডিত করছে, পারিবারিক কাঠামোকে দুর্বল করছে এবং পশ্চিমা মডেলের ছায়ায় সংস্কার চাপিয়ে দিচ্ছে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারাও এই প্রস্তাবনার বিষয়ে মতামত দিয়েছেন। হিন্দু মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি মন্তব্য করেছেন যে, “নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট একপাক্ষিক এবং পশ্চিমা প্রেসক্রিপশনে তৈরি। এর সঙ্গে নারী উন্নয়নের কোনো সম্পর্ক নেই। নারীর কাঁধে বন্দুক রেখে এরা মূলত এদেশের মানুষকে ধর্মহীন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কমিশনের রিপোর্টে হিন্দু সম্প্রদায়ের আইনের পরিবর্তে সিভিল ল’ তৈরির প্রস্তাব করেছে। আমরা তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি।”

রাজনৈতিক ও আদর্শিক একপাক্ষিকতা
প্রস্তাবনায় যেভাবে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও এনজিও সংশ্লিষ্ট নারী নেতৃত্ব এসেছে—সেখানে ইসলামী দল, গ্রামীণ নারীকর্মী, এমনকি প্রধান রাজনৈতিক দলের নারী অঙ্গসংগঠনগুলোর কেউ নেই। এটি প্রশ্ন তোলে: এটি কি আদৌ ‘জাতীয় ঐকমত্য’? নাকি এটি ‘নির্বাচিত আদর্শিক নারীবাদ’-এর একপাক্ষিক রূপ?
এখানে প্রকট হয়ে উঠেছে একটি "জ্ঞান-ঔপনিবেশিকতা", যেখানে ‘উন্নত সমাজে কী হয়’ সেই যুক্তি দিয়ে ‘বাংলাদেশে কী হওয়া উচিত’ তা নির্ধারণের চেষ্টা চলে। এই প্রবণতা সমাজে সাংস্কৃতিক সংঘাত ডেকে আনছে।

উদ্ভূত দ্বন্দ্বসমূহের বিশ্লেষণ
১. ধর্ম বনাম অধিকার
প্রস্তাবনায় ধর্মীয় বিধান পর্যালোচনার আহ্বান এসেছে। ফলে, ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলো এটিকে তাদের বিশ্বাসের ওপর আঘাত হিসেবে দেখছে। এতে ধর্ম ও অধিকারের বিরোধ তৈরি হচ্ছে, যা সমাজে বিভাজনকে আরও তীব্র করে তুলতে পারে।
২. নগর বনাম গ্রাম
এটি একধরনের নগর-এলিট বনাম গ্রামীণ-ধর্মাশ্রয়ী সমাজের দ্বন্দ্ব। নগরের কিছু নারী যেসব ‘স্বাধীনতা’ বা ‘অধিকার’-এর কথা বলেন, তা গ্রামীণ সমাজে একটি বিপরীত অভিঘাত তৈরি করে। ফলে প্রস্তাবনাগুলোর গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
৩. সচেতনতা বনাম সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা
প্রস্তাবনায় ব্যবহৃত ভাষা ও যুক্তির কাঠামো পশ্চিমা নারীবাদী চিন্তা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার নীতিনির্ধারণ থেকে নেয়া। এতে বাংলার সমাজ কাঠামো, ধর্মীয় ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক বাস্তবতা অন্তর্ভুক্ত হয়নি। এই ব্যর্থতা একটি আত্মপরিচয় সংকট সৃষ্টি করতে পারে।
৪. স্ববিরোধিতা ও অসংগতির উপস্থিতি
প্রস্তাবনায় নারীর সমানাধিকার নিশ্চিত করতে গিয়ে কোটার মতো পৃথকীকরণের ধারণা এসেছে, যা একদিকে সমতার কথা বলে, অন্যদিকে আবার বৈষম্য প্রতিষ্ঠা করে। এই দ্বৈততা নীতিগতভাবে দুর্বলতা তৈরি করে।

নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজনীয়, তবে তা হতে হবে বাস্তবভিত্তিক, সাংস্কৃতিকভাবে সংবেদনশীল এবং সর্বস্তরের নারীর অংশগ্রহণে গঠিত। বর্তমান প্রস্তাবনায় উচ্চবিত্ত ও আদর্শিকভাবে নির্বাচিত নারীদের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পেয়েছে, যেখানে প্রান্তিক নারীর কণ্ঠ অনুপস্থিত। এর ফলে একপাক্ষিকতা ও সাংস্কৃতিক বিভাজনের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে।
সংস্কার তখনই টেকসই হয়, যখন তা সমাজের শিকড় ও বাস্তবতার সঙ্গে সংলাপে প্রবেশ করে। নারীর মুক্তি কেবল আইন দ্বারা নয়—তাকে তার বিশ্বাস, সংস্কৃতি ও জীবনপ্রবাহের প্রেক্ষিতে বুঝেই এগোতে হয়। তাই প্রয়োজন এমন একটি নীতিমালা, যা ধর্ম, সংস্কৃতি ও শ্রেণির বাস্তবতাকে সম্মান করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান উপস্থাপন করবে।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মে, ২০২৫ ভোর ৫:৫১

যামিনী সুধা বলেছেন:



আপনার ভাবনাচিন্তা বেদুইন আমলের; নারীরা দেখুক, কি রকম হয়েছে!

২| ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আচ্ছা।

৩| ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ৯:২৯

Sulaiman hossain বলেছেন: নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত আইন: মুসলিম সমাজের জন্য এক বিপজ্জনক পদক্ষেপ

সম্প্রতি বাংলাদেশে নারী সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবিত আইন উত্থাপিত হয়েছে, যা নানা মহলে বিতর্ক ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। আইনটির মূল উদ্দেশ্য বলা হয়েছে নারীর অধিকার রক্ষা ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধ। কিন্তু খসড়া আইনটির ভেতরে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি মুসলিম সমাজের ধর্মীয় ও পারিবারিক কাঠামোর ওপর একটি সুপরিকল্পিত আঘাত।

১. শরিয়া-বিরোধী ধারা ও অভিপ্রায়

প্রস্তাবিত আইনটির একাধিক ধারা এমনভাবে রচিত হয়েছে, যা ইসলামী শরিয়া মোতাবেক বিবাহ, তালাক, উত্তরাধিকার ও পিতৃত্ব সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে হুমকির মুখে ফেলবে। বিশেষ করে ইসলাম অনুমোদিত ‘তালাক’, ‘পুরুষ অভিভাবকত্ব’ এবং উত্তরাধিকার আইনকে পাশ কাটিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।

২. পরিবার ব্যবস্থার ভাঙন ঘটাতে পারে

মুসলিম সমাজে পরিবার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভিত্তি। প্রস্তাবিত আইনে নারীর “স্বাধীনতা” নামে এমন সব ধারা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার পারস্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্যকে ভেঙে দিতে পারে। এতে স্বাভাবিক বৈবাহিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে, যার পরিণতিতে সন্তানরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৩. পশ্চিমা ভাবাদর্শের প্রতিফলন

প্রস্তাবিত আইনটি গভীরভাবে পশ্চিমা নারীবাদী মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। এতে নারীর ক্ষমতায়নের নামে এমন কিছু ধারা আছে যা মুসলিম নারীদের মূল ধর্মীয় পরিচয় ও দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত করতে চায়। অথচ ইসলাম নারীকে যথার্থ সম্মান, নিরাপত্তা এবং অধিকার প্রদান করে এসেছে যুগ যুগ ধরে।

৪. সামাজিক বিভেদ ও ধর্মীয় উত্তেজনার ঝুঁকি

এ ধরনের একটি আইন প্রয়োগ হলে সমাজে বিভাজন সৃষ্টি হতে পারে। একদিকে ধর্মভিত্তিক আইন অনুসারী জনগণ, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষ আইন চাপিয়ে দেওয়া—এই দ্বন্দ্ব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সমাজে চরম উত্তেজনা ও সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।

৪| ০৪ ঠা মে, ২০২৫ সকাল ১১:০০

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সংস্কার করে নতুন কমিশন গঠন করে নতুন প্রস্তাব উত্থাপন করা হোক।

৫| ০৬ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.