নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শব্দ আমার আশ্রয়, চিন্তা আমার পথ। ইতিহাস, সমাজ আর আত্মপরিচয়ের গভীরে ডুব দিই—সত্যের আলো ছুঁতে। কলমই আমার নিরব প্রতিবাদ, নীরব অভিব্যক্তি।

মুনতাসির রাসেল

আমি তোমাদের মাঝে খুজিয়া ফিরি আমার বিশ্বলোক; নরকে গেলেও হাসিয়া বলিব আমি তোমাদেরই লোক।

মুনতাসির রাসেল › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেকাহ নয়, ফতোয়ার ফাঁদে আবদ্ধ এক জাতির বিলাপ

২৫ শে মে, ২০২৫ দুপুর ২:৩৯



“বিশ্ব যখন এগিয়ে চলেছে, আমরা তখনও বসে
বিবি-তালাকের ফতোয়া খুঁজছি ফেকা ও হাদিস চষে!”
— কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলামের এই পঙ্‌ক্তি যেন আজকের মুসলিম সমাজের আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মসমালোচনার দর্পণ। একসময় যে জাতি ছিল বিশ্বের জ্ঞান, বিজ্ঞান ও সভ্যতার পথপ্রদর্শক—আজ সেই জাতিই বিশ্বদরবারে পিছিয়ে পড়েছে প্রযুক্তি, গবেষণা ও চিন্তাশীলতার প্রতিটি ক্ষেত্রে। আমরা হারিয়ে ফেলেছি সেই আত্মবিশ্বাস, উদ্যম ও প্রজ্ঞা, যা আমাদের পূর্বসূরিদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসিয়েছিল।
যে সময় আমরা নেতৃত্বে ছিলাম
ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায়, মুসলিম সভ্যতাই একদিন ছিল মানবজাতির অগ্রগতির আলোকবর্তিকা। আল-খাওয়ারিজমি, ইবনে সিনা, আল-বিরুনি, ইবনে রুশদদের হাত ধরে জন্ম নিয়েছিল আধুনিক অঙ্কশাস্ত্র, চিকিৎসাবিদ্যা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ও দর্শনের ভিত্তি। বাগদাদের ‘হাউস অব উইজডম’ ছিল জ্ঞানচর্চার তীর্থস্থান। কায়রো, কর্ডোভা, নিশাপুর, সামারকন্দ হয়ে উঠেছিল বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
কিন্তু আজ?
ধর্মীয় গোড়ামি ও অন্তহীন বিতর্কে বন্দি উম্মাহ
বর্তমান মুসলিম সমাজের বড় একটি অংশ ব্যস্ত আছে ফতোয়াবাজি, হিজাবের দৈর্ঘ্য, দাড়ির পরিমাণ বা কোন দোয়া কখন পড়লে ‘সওয়াব’ বেশি—এসব বিষয় নিয়ে বিতর্কে। অথচ এই সমাজই প্রায় অনুপস্থিত বিশ্ব গবেষণা, প্রযুক্তি উন্নয়ন বা মৌলিক চিন্তাচর্চার জগতে।
ধর্মচর্চা যে কখন ধর্মান্ধতায় রূপ নিয়েছে, তা বুঝে ওঠার আগেই আমরা এক অন্ধ সুড়ঙ্গে ঢুকে গিয়েছি, যেখানে প্রশ্ন নিষিদ্ধ, অনুসন্ধান গোনাহ্, আর ব্যতিক্রম চিন্তা 'কাফেরি'।
ফতোয়া বনাম ফিকহ: দৃষ্টিভঙ্গির সংকট
ইসলাম চেয়েছিল মুক্ত বুদ্ধির বিকাশ, চেয়েছিল মানবিকতা ও ন্যায়বোধের প্রতিষ্ঠা। ‘ফিকহ’ মানে ছিল প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত, প্রাসঙ্গিক চেতনা। কিন্তু আজ তা রূপ নিয়েছে স্থবির ফতোয়ার কারখানায়, যেখানে যুক্তির বদলে চলে অনুকরণ, আর করুণার বদলে ঘৃণা। একদল নিজেদের 'শুদ্ধ মুসলিম' প্রমাণ করতে গিয়ে অন্যদের কাফের ঘোষণা করছে। বিভেদই যেন একমাত্র ধর্মচর্চার ভাষা হয়ে উঠেছে।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানচর্চায় শূন্যের কোঠায় মুসলিম বিশ্ব
বিশ্ব আজ এগিয়ে যাচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, জিনতত্ত্ব, মহাকাশ গবেষণা আর ন্যানোপ্রযুক্তির দিকে। অথচ এই যাত্রায় মুসলিমদের অবদান আশঙ্কাজনকভাবে শূন্যপ্রায়। আর যে সব উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি আমরা ব্যবহার করি, সেগুলোর মালিক ও নিয়ন্ত্রক ইহুদি, খ্রিস্টান ও নাস্তিকদেরই প্রভুত্বে।
সবচেয়ে পরিহাসের বিষয় হলো—মুসলিমরা যখন কোনো জাতির বিরুদ্ধে পণ্য বর্জনের ডাক দেয়, তখন সেই ডাক আসে ফেসবুক, ইউটিউব, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটারের মতো প্ল্যাটফর্মে—যেগুলোর উৎপত্তি ও নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই যাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ!
এই আত্মবিরোধিতা আমাদের দৈন্যই প্রকাশ করে, আর কিছু নয়।
পথ কী তাহলে?
পথ একটাই—আত্মসচেতনতা, শিক্ষা ও চিন্তার নবজাগরণ।
মুসলিম উম্মাহকে ফিরে যেতে হবে তার প্রকৃত ঐতিহ্যে, যেখানে মুক্ত বুদ্ধি, প্রগতিশীলতা, বিজ্ঞানমনস্কতা এবং মানবিক মূল্যবোধ ছিল ইসলামের মুখ্য চেতনা। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর শিক্ষার মর্মার্থ ছিল জ্ঞানচর্চা, ন্যায়বিচার ও দয়ার ঐক্যবদ্ধ রূপ—not blind conformity.
আজকের মুসলিম সমাজ যদি সত্যিকার পরিবর্তন চায়, তাহলে ফতোয়ার গহ্বরে আটকে না থেকে প্রশ্ন করতে শিখতে হবে, নতুন করে ভাবতে হবে, এবং বৈজ্ঞানিক ও মানবিক চর্চায় নিজেকে জড়াতে হবে। নইলে ইতিহাসের পাতায় আমরা রয়ে যাব এক পতিত জাতি হিসেবে, যারা একসময় শিখরে ছিল, কিন্তু পরে নিজেদের সংকীর্ণতায় ডুবে গিয়েছিল।
“আমি মুসলমান, আমি হিন্দু – তাই নিয়ে রই কহাকাহি,
দুনিয়া আজ দিগ্বিদিক ধাইছে, আমি বসে আছি তাহি!”
— কাজী নজরুল ইসলাম

আজ যদি আমরা না জাগি, তাহলে কাল আর ইতিহাসও আমাদের নাম উচ্চারণ করবে না।
শুভ জন্মবার্ষিক হে বিশ্ব মানবতার কবি!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:১৫

লুধুয়া বলেছেন: এইসব বলবেননা । এই ভ্লগে অনেক গুহাবাসি/ যাযাবর আরবী মানসিকতার লোক আছে। সবাই মিলে আপনা কে ভ্লগ থেকে বের করে দেবে।

২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৪

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ভুল কিছু লিখেছি কি?

২| ২৫ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:২৬

কিরকুট বলেছেন: কাজীর ব্যটা বুঝেছিলো অথচ আধুনিক যুগের পঙ্গপালেরা বোঝে না ।

৩| ২৫ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৩

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: শুভ জন্মদিন কাজীর ব্যাটা !

৪| ২৫ শে মে, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪

অল্প বিদ্যা ভয়ংকর বলেছেন: আমাদের আগে সবকিছুতে ধর্ম টেনে আনা বন্ধ করতে হবে।

২৬ শে মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৬

মুনতাসির রাসেল বলেছেন: ধর্ম টেনে আনা ঘটনা না; অধর্ম-কুসংস্কার টেনে আনাই মূল ফ্যাক্ট।

৫| ২৫ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬

ফেনিক্স বলেছেন:




আদি বেদুইনদের হাবিজাবি কথা বাদ দিয়ে, বাংগালীদের রচিত সংবিধান পড়ে বুঝতে পারেন কিনা সেটা বলেন।

৬| ২৫ শে মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৩

কামাল১৮ বলেছেন: মুক্ত চিন্তার চর্চা না হলে এই সব আবর্জন দুর হবে না।

৭| ২৬ শে মে, ২০২৫ সকাল ১০:০২

রাজীব নুর বলেছেন: ধর্মই সব নষ্টের মুল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.