নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসুন, সব ধরনের খারাপকে 'না' বলি

মোর্শেদ হায়দার

আমি সাধারণ একজন মানুষ ... তবে অসাধারণ কিছু করবার ইচ্ছা সবসময় বুকের মধ্যে লালন করি ..

মোর্শেদ হায়দার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্র্যান্ড বিল্ডিং- slowly but surely

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ ভোর ৪:০৪

আপনার বন্ধুদের মধ্যে সবচেয়ে আড্ডাবাজ কে ছিল, একটু মনে করে দেখুন তো? আর সবচেয়ে দুরন্ত? সব থেকে মজার? আর সবচেয়ে শান্তশিষ্টই বা কে ছিল? মনে করতে পারছেন? হুমম, পারারই কথা। আসলে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্ব কিংবা পরিচয় একজন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে এবং বুঝতে অনেক সাহায্য করে আর তাকে তখন সহজেই 'লোকটা খুবই মজার' কিংবা 'লোকটা একটু পাগল টাইপ' - এরকম এক কথায় বা এক বাক্যে অন্যের কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া যায়। ঠিক তেমনি, ব্র্যান্ডের ব্যাপারটাও কিন্তু অনেকটা একই। টয়োটা গাড়ী শুনলেই আমাদের মাথায় কাজ করে 'এটার মেইন্টেনেনস খরচ অনেক কম', লেক্সাস-এর নাম শুনলেই মনে হয় ব্যয়বহুল গাড়ী, বিবিসি-র কথা শুনলে মনে হয় খবরটা নির্ভরযোগ্য। কোকাকোলা, টয়োটা, অ্যাপল এবং আরো যত নামীদামী ব্র্যান্ড- এরা কি একদিনে এই সাফল্য অর্জন করেছে? নিশ্চয়ই নয়। ব্র্যান্ড বিল্ডিং হুটহাট করে হয় না, ব্র্যান্ডের পরিচিতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করে কাস্টমার বন্ডিং-এর জায়গাটা তৈরী হয়।



ধরুন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন, কোনো এক সুন্দরীর প্রেমে পড়ে গেলেন। (ইচ্ছে করে 'সুন্দরী' কথা বললাম, কেননা বেশিরভাগ ছেলেই সুন্দরী মেয়েদেরই প্রেমে পড়ে। আপনার প্রডাক্টের ব্যাপারটাও তাই, দেখতে আকর্ষনীয় হলে ভেতরে কি আছে না জেনেই অনেকে পছন্দ করে ফেলবে।) এখন প্রেমে যেহেতু পড়েছেন, আপনি কি করবেন? আপনি তখন স্বাভাবিকভাবেই তার দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবেন, আপনি তাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করবেন। আপনি হয়তো আগের চাইতে পরিপাটি হয়ে, চুলে জেল দিয়ে, মান্জা মেরে সেই মেয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করবেন, তার নজরে পড়ার চেষ্টা করবেন। যেকোনো ব্র্যান্ড-এর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই - অ্যাডের মাধ্যমে টার্গেট কাস্টমারদের নজরে পড়ার চেষ্টা করাটাই হলো প্রথম ধাপ।



প্রথম ধাপ যদি হয় 'নিজের উপস্থিতি জানান দেয়া', তবে দ্বিতীয় ধাপ হচ্ছে 'প্রাসঙ্গিকতা' অর্থাৎ এটা কি আমার আদৌ দরকার কি না, সেটা বিচার করা। আপনি তো পরিপাটি হয়ে সেই মেয়ের আশেপাশে ঘুরঘুর করলেন, কিন্তু সেই মেয়ের যদি অলরেডি বয়ফ্রেন্ড থেকে থাকে, তাহলে তো আপনার চান্স শুন্যের কোঠায়! অর্থাৎ, সে অলরেডি অন্য একটা ব্র্যান্ডের প্রতি loyal, কাজেই সেই ব্র্যান্ডের কোনো খুঁত না পেলে (সেই বয়ফ্রেন্ডের সাথে বড় কোনো ঝামেলা না হলে) এবং আপনার ব্র্যান্ডের বাড়তি যোগ্যতা (অর্থাৎ, আপনার বাড়তি কোনো আকর্ষনীয় গুন না থাকলে) 'প্রাসঙ্গিকতা' শুরুতেই মাঠে মারা যাবে। আর যদি তার বয়ফ্রেন্ড না থেকে থাকে, তাহলেও যে ব্যাপারটা খুব সহজ তা তো ভালোই বুঝতে পারছেন, কম্পিটিটরের তো আর অভাব নেই, আপনার মত অনেকেই যার যা আছে তা নিয়ে চেষ্টা করে যাবে সেই মেয়েকে বাগানোর জন্য। আপনার পকেট যদি ছোট হয় (অর্থাৎ, মার্কেটিং-এর বাজেট যদি কম থাকে), তাহলে তো আপনি শুরুতেই পিছিয়ে গেলেন।



প্রাসঙ্গিকতা-র পরের ধাপ হচ্ছে পারফরম্যান্স। ধরা যাক, আপনি দ্বিতীয় ধাপে সফল হয়েছেন অর্থাৎ মেয়েটি আপনার সাথে কথা বলা শুরু করেছে - পরিচয় থেকে ব্যাপারটা বন্ধুত্বে এসে ঠেকেছে। এখন বন্ধুত্ব থেকে ব্যাপারটাকে প্রনয় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কিন্তু আপনার। আপনি একাই কিন্তু তার বন্ধু নন, আরো অন্যান্য বন্ধুরাও কিন্তু বিভিন্নভাবে তার মন জয় করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। আপনার স্বভাব-চরিত্র, আপনার গুনাবলী, আপনার আস্থা অর্জনের ক্ষমতা - এসবই বলে দিবে আপনি তার মন জয় করতে পারবেন কি না, সম্পর্কটা দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না। আপনার প্রডাক্ট কিংবা সার্ভিসের পারফরম্যান্সের ওপরই নির্ভর করবে কাস্টমার সেটা বারবার কিনবে কি না। অর্থাৎ, বাড়তি কিছু একটা থাকতে হবে যা আপনাকে (কিংবা আপনার প্রডাক্টকে) অন্যদের (কিংবা অন্যগুলো) থেকে আলাদা করে চেনাতে পারে।



একটা ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকা দরকার: over promise. অনেক সময়ই অনেক বিজ্ঞাপন এতই অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয় যে পরে সেটাকে বাটপারি বা শঠতা বলে মনে হয়। প্রেমের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। নিজেকে জাহির করার জন্যে অনেক সময় নিজের সম্পর্কে কিংবা পরিবার সম্পর্কে অনেক বাড়তি কথা বলে পরে শেষমেষ ধরা খেতে হয়। আসলে যে যেটা, সেটাই ঠিকভাবে উপস্থাপন করার জরুরি। কোনো কিছু লুকালে একদিন না একদিন ধরা পড়তেই হয়, আর তখন আম আর ছালা দুটোই হাতছাড়া হয়।



সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে বন্ডিং ক্রিয়েট করা, অর্থাৎ কাস্টমার যেন মনে করে 'nothing else can beat it'. বিয়েটা যেমন প্রণয়ের পরের ধাপ, তেমনি একজন কাস্টমারকে পাকাপাকিভাবে আপনার ব্র্যান্ডের প্রতি অনুগত করে তোলাটাও ব্র্যান্ড বিল্ডিং-এর সর্বশেষ ধাপ। তবে বিয়ে মানেই কিন্তু কাজ শেষ নয়। বিয়ের পরের সম্পর্কটা ঠিকঠাক বজায় রাখা যেমন কঠিন কাজ, তেমনি রেগুলার কাস্টমারের দিকে খেয়াল রাখাও খুবই জরুরি। লয়াল কাস্টমার যদি আশাহত হয়, তাহলে আপনার ব্র্যান্ডের রেপুটেশনেরও বারোটা বেজে যেতে পারে।



কাজেই, ব্র্যান্ড বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হচ্ছে: ধাপে ধাপে এগোন - slowly but surely.



M Murshed Haider, FCMI

Motivational Speaker & Corporate Coach

CEO, optiMA HR Solutions

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.