নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সমালোচক,তবে তা সংশোধনরে জন্য। আবার একজন প্রশংসাকারিও বটে, তবে তোষামোদকারি নয়।জানতে চাই অনেক কিছু।হতে চাই কালের সাক্ষী।

মুসাফির নামা

সত্যানুসন্ধানী

মুসাফির নামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের কাঠগড়ায়:জিন্নাহ,কংগ্রেস ও মুসলিম জাতীয়তাবাদ (তৃতীয় কিস্তি)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:২১



১৯১৪ সালের মধ্যে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে জিন্নার সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।এর মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ে স্বার্থান্বেসী মহল সক্রিয় হয়ে উঠল।আর তাতে জাতিগত বিভেদ,ধর্মীয় বিভেদ বেড়ে চলল।তাই জিন্না চরম বা মধ্যপন্ত্রী নয় বরং হিন্দু মুসলিম ঐক্য তৈরী করার কাজে হাত দিলেন।জিন্না, গোপাল কঞ্চ গোখলের সাথে পরামর্শ করে একটি সাংবিধানিক সূত্র বের করার চেষ্টা করলেন,যা ভারতের নানা রাজনৈতিক স্বার্থকে যুক্ত করবে।এ সময় ১৯১৫ সালে গোখলের মৃত্যু জিন্নার জন্য তার চিন্তাধারা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়ে।তারপর ১৯১৬ বলা যায় তার একক চেষ্টায় 'লখনই চুক্তি' সাক্ষরিত হয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সাথে।এ সময় সর্বভারতীয় স্তরে নেতা হিসাব জিন্নার অবস্থান দৃড় হল তবে এবার আর হিন্দু মুসলিম ঐক্যের দূত হিসাবে নয় বরং মুসলিম হিসাবে।এসময় তিনি মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।চুক্তি সাক্ষরিত হলেও কার্যত কংগ্রেসের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় ব্যাপক সাম্প্রদায়িক চিন্তা ঢুকে পড়ছে।তারপরও ১৯১৮ সাল পর্যন্ত মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস সহযোগিতার নীতি অনুসরণ করে চলছিল।কিন্তু আঞ্চলিক স্তরে সংঘাত বেড়েই চলছিল। মূলত কংগ্রেসে এসময় চলছিল গাঁধীর একক আধিপত্য। যিনি সংঘাত না চাইলেও তার স্বরাজ, রামরাজত্ব স্বপ্নে বিভোর ছিলেন।এদিকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষপ্রান্তে এসে অটোম্যান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে পড়ল এবং তুর্কি সেনাপতি কামাল আতাতুর্ক নিজেই খেলাফত ভেঙ্গে দেন।আর এই সময় বিখ্যাত আলী ভাইদ্বয় তাদের খেলাফত আন্দোলন শুরু করেন।খেলাফত আন্দোলনের শুরুতে গাঁধী এই আন্দোলনের সমর্থন ব্যক্ত করেন। গাঁধী বলতেন,হিন্দু এবং মুসলমান একই মায়ের সন্তান এবং একই মাটির সন্তান।অতএব তারা একে অপরের সুখ দুঃখের ভাগীদার হবেন।এই হিন্দু মুসলিম মাখামাখি এমন পর্যায়ে পৌছে যে তারা আল্লাহ আকবর এবং ওম একই বলে প্রচার শুরু করেন।মুসলমানরা এতে এতো আহলাদিত হয়ে পড়ল মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে গাঁধীকে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করলেন।জিন্না এমনিতে কংগ্রেসে আগ থেকে কোনঠাসা হয়ে ছিল আর খেলাফত আন্দোলন মুসলিম লীগেও তার অবস্থান নড়বড়ে করে দেয়।খেলাফত আন্দোলন ছিল নিছকই একটি বাস্তবতা বর্জিত ধর্মীয় আবেগী আন্দোলন।কারণ তুর্কিরা নিজেরাই খেলাফত ভেঙ্গে দিয়েছে।এসব জানা সত্ত্বে গাঁধীর এ আন্দোলনে সমর্থন নিছকই রাজনৈতিক সুবিধা।এ সময় অনেক জায়গায় মুসলিমরা হিন্দুদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে গোহত্যা বন্ধ রাখে।গাঁধীজি মুসলিমদের এই গোহত্যা বন্ধ রাখাকে তার বিশাল কৃতিত্ব বললেন।এমনকি তিনি এমন ভবিষ্যৎ বাণী করে ছাড়লেন ”একদিন ভারতীয় হিন্দুরা তরবারী হাতে গোহত্যা বন্ধ করবে।” হয়তো তার সে স্বপ্ন পূরণে ভারতে শিব সেনারা এত তৎপর।হিন্দুদের গোহত্যা সহ বিভিন্ন অযোক্তিক রসমরেওয়াজ সম্পর্কে গাঁধীকে একবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন ,"আপাত দৃষ্টিতে এগুলো অযোক্তিক মনে হলেও এগুলো ভারতের চিরায়ত ধর্ম।" জিন্না গাঁধীর জনপ্রিয়তা ও ক্ষমতা উত্তরণের ব্যাপারটা বুঝতে পারলেও তার করার কিছুই ছিলনা।১৯১৭ সালে জিন্না মেস্টনকে বলেছিলেন, ”চরমপন্ত্রীদের একটি নির্দিষ্ট কর্মসূচি রয়েছে,যা হয়তো অবাস্তব,কিন্তু তা মানুষের মর্যাদাবোধের কাছে আবেদন রাখে।নরমপন্ত্রীদের তেমন কোনও মতবাদ নেই,সরকারকে বিশ্বাস করা ছাড়া।” আসলে গাঁধীর নেতৃত্ব ছিল প্রায় সম্পূর্ণ ভাবে ধর্মীয় এবং আঞ্চলিক চরিত্রের,যেখানে জিন্না ছিলেন আসাম্প্রদায়িক,জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত এক নেতা।একজন ধর্মকে তাঁর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছিলেন,অন্যজন নৈতিক কারণে সেই ব্যবহার থেকে দূরে থাকতেন।১৯২০ সাল অবধি জিন্না ভারতীয় রাজনীতির নানা শক্তিকে ধরে রেখেছেন এবং একই সঙ্গে সরকারের উপর চাপ বজায় রেখেছেন ।জিন্না চেয়েছিলেন একটা ফেডারেশন ব্যবস্থা,যেখানে অবশিষ্ট ক্ষমতাগুলি থাকবে রাজ্যের হাতে।সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ইন্ডিয়ার দফতরটি তখন যে আকার ছিল,তার পক্ষে তিনি ছিলেন না।তিনি মনে করতেন,ভাইসরয় এবং গভর্নরদের হাতে একতান্ত্রিক ক্ষমতা থাকা উচিত নয়।কেবলমাত্র জননিরাপত্তা এবং পুলিশি প্রশাসনের বিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকবে,কিন্তু তাঁদের আইন সভার কাছে দায়বদ্ধ করতে হবে।আইনসভা আর্থিক ক্ষমতা সহ সব ক্ষমতার অধিকারী থাকবে।আঞ্চলিক এবং কেন্দ্রীয় আইনসভায় সদস্য মনোয়ন প্রথা বন্ধ করতে হবে।সব আসনই নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণ করতে হবে।তার নানা প্রস্তাবের মধ্যে এও বলা হয়েছিল যে ইংল্যান্ডের জনজীবনে যারা উজ্জ্বল,তেমন মানুষদের মধ্যে থেকে গভর্নর বাছা হোক,যাতে তারা ভারতের সমাজে নতুন চিন্তা আনতে পারেন।আঞ্চলিক ক্ষমতা ভারতীয়দের হাতে দেওয়া হোক,যারা আঞ্চলিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকতে পারেন,গর্ভনরের কাছে নয়।অথচ ইংল্যান্ড সরকার ভাইসরয় এবং গর্ভনরদের হাতে সকল ক্ষমতা রেখে আঞ্চলিক পর্যায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নিলেন। এর প্রতিবাদে ১৯২০ সালে জিন্না ব্যাপক ক্ষোভের সাথে বলেন,"ইংল্যান্ডের অভিজাত সমাজ আসলে বুদ্ধিহীন রক্ত দিয়ে তৈরী।” ভারতীয়রা অসহযোগিতা করলে তার ফল কি হবে।সে সতর্কবানীও তিনি ছুঁড়ে দেন।



পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু

ঐ বছর কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে গাঁধীজী অসহযোগিতা আন্দোলনের প্রস্তাব দেন।যা জিন্নার বলা অসহযোগিতা থেকে ভিন্ন।একমাত্র মতিলাল নেহেরু গাঁধীজীর অসহযোগিতা আন্দোলনকে সমর্থন করেন।তারপরও গাঁধীজীর প্রস্তাবই ১৮৮৬ ভোটে পাশ হয়ে যায়।এ অবস্থা হোম রুল লিগের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অ্যানি বেসান্ত পদত্যাগ করেন,গাঁধীজী হন নতুন প্রেসিডেন্ট।জিন্না বারবার সতর্ক করেন তার এই সহযোগিতা আন্দোলন নিশ্চিত সংঘাতে রুপ নিবে।গাঁধীজী হোম রুল পরিবর্তন করে এক বছরের মধ্যে স্বরাজ লাভের লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেন।এই স্বরাজ বলতে কি? জিন্না প্রশ্ন তুললেন।প্রায় একই সময় মুসলিম লীগের একটি অধিবেশনে গাঁধীর অসহযোগিতা আন্দোলনের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়।জিন্না বুঝলেন,এ সময়টা তার নয়,সবাই গাঁধীকেই অনুসরণ করছে।কার্যত গাঁধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের আহমাদাবাদ অধিবেশন(১৯২১)পৌঁছল তাঁর শেষ পরিণামে।এই অধিবেশনে আগতদের জন্য কোনও চেয়ার টেবিলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।সকলে মাটিতে বসলেন,খাদি পরলেন এবং বসে বসে চরকায় সুতো কাটতেছিলেন।ঐ অধিবেশনই ছিল জিন্নার কংগ্রেসের শেষ অধিবেশন।তিনি একমাত্র প্রতিনিধি ছিল যাতে তিনি তার সহজাত পোশাক পরে এলেন এবং চরকায় সুতো কাটেননি।ততদিনে জিন্নার নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন পুরোই বেস্তে যায়।অসহযোগ আন্দোলনের ফলে কংগ্রেসেরও আইনসভা প্রবেশের পথও বন্ধ হয়ে যায়।গাঁধীর আন্দোলনের ধর্মীয় রুপ প্রথম দিকে সহযোগিতার সেতুবন্ধন রচনা করলেও তার স্থায়িত্ব অল্প রইল।প্রথম শুরু হয় মালাবার বিদ্রোহের মাধ্যমে এর জন্য ইংরেজরা খেলাফত আন্দোলনকে দায়ী করে।দ্রুত তা পুরো ভারতে ছড়িয়ে পড়ে।মুলতানের দাঙ্গায় জন্যও মুসলিমদের দায়ী করা হয়।গাঁধীর সমকালীন নেতা বি আর আম্বেকর তাঁর বই 'পাকিস্থান অথবা দেশবিভাগ' বইটিতে লিখেছেন, "কলঙ্কজনক সত্য এই যে, বেশ কিছু উজ্জ্বল হিন্দু যারা মুসলিম ধর্মীয় আবেগে আঘাত দিয়েছিলেন।" মালাবার ও মুলতান এর জিগির তুলে ১৯২২ এর ডিসেম্বরে গয়ায় হিন্দু মহাসভার বার্ষিক অধিবেশনে পন্ডিত মদন মোহন মালব্য প্রচারের সুরটি বেঁধে দিলেন।তিনি প্রস্তাব করলেন,প্রত্যেকটি গ্রামে হিন্দুসভা গড়ে তোলা হোক।এই অধিবেশনে পন্ডিত মালব্যের প্রস্তাব কেবল সমর্থনই পায়নি,অধিবেশন শেষ হল আরও অনেক বেশি জঙ্গি মানসিকতায়।হিন্দুরে এই সংগঠিত প্রচারের মোকাবেলায় মুসলমানরা ছিল একেবারেই অসংগঠিত। মূলত গাঁধীর ধর্মীয় ধারায় অসহযোগিতা আন্দোলন ভারতের স্বাধীনতা অনেকদূর পিছিয়ে দিল।নামে মাত্র যে নির্বাচনগুলো ১৯২৩, ১৯২৬ এসব নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি পুরো মাত্রায় নষ্ট হয়ে গেল। অবস্থা এতদূর গড়ালো গাঁধীজী শত চেষ্টা করেও সে অবস্থার আর উত্তরণ ঘটাতে পারেননি।সম্ভবত এই কারণে ১৯২৬ সালে নির্বাচনে কংগ্রেসের পক্ষে শোচনীয় হয়ে উঠল।জিন্না এই সময় মুসলিমলীগকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেন।ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলিম নেতৃবৃন্দকে ঐক্যে আনার চেষ্টা করলেন।পরিবর্তিত পরিস্থিতি জিন্না আবার দূঢ়ভাবে বলতে পারলেন দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়েছে,সংবিধানের অামূল পরিবর্তন দরকার।এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের লক্ষ্যে তিনি আরেকটি ’লখনউ প্যাক্ট’ প্রণয়নের চেষ্টা চালিয়েছেন।কিন্তু হিন্দু মহাসভা পৃথক নির্বাচকমন্ডলীর দাবী কোন ভাবে মানতে রাজী নয়।এহেন পরিস্থিতি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে হিন্দু মহাসভা অনেকটা হিন্দুদের মুখপাত্র হয়ে উঠল।শেষ পযর্ন্ত কংগ্রেসও মুসলমানদের পৃথক নির্বাচক মন্ডলীর দাবীটা বাতিল করলেন।যদিও গাঁধী পৃথক নিবার্চক মন্ডলীর পরিবর্তে আনুপাতিক সুবিধা দিতে রাজি ছিলেন কিন্তু হিন্দু মহাসভার আপত্তিতে তাও হলোনা।১৯২৫ সালে ইংল্যান্ডের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হল,ক্ষমতায় এল কনজারভেটিবরা।তারা সোজা সাপ্টা জানিয়ে দিল সহযোগিতা না করলে কোন সাংবিধানিক সংস্কার না।এর বিরুদ্ধে জিন্না কড়া প্রতিবাদ জানালেন এবং বললেন ভারতের সব বড় নেতাই গাঁধী ,মতিলাল নেহেরু যখন তাদের সহযোগিতা করছে,তখন এধরনের বক্তব্য উদ্দেশ্য প্রণোধিত।কিন্তু তিনি হেরে গেলেন।তার সর্বভারতীয় জাতীয়বাদী লড়াই থমকে গেল।এই অচলাবস্থায় জন্য মোতিলাল নেহরু ডিসেম্বরে ১৯২৮ সালে কলকাতায় কংগ্রেসের অধিবেশনে আক্ষেপ করে বললেন, "ঐক্যবদ্ধ না হলে বিদেশীদের সামনে দাঁড়ানো মুশকিল।কিন্তু আমাদের মধ্যে বিদেশী আধিপত্য থাকলে ঐক্যবদ্ধ হওয়াও মুশকিল।” ফিরে যাওয়া যাক পাঞ্জাবে।১৯২৭ সালে জিন্নার উদ্যোগের ফলে পাঞ্জাবের মুসলিম লীগ তাঁর প্রতি স্বন্দিগ্ধ হয়ে উঠে।বস্তুত পাঞ্জাবের মুসলিমরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় সেখানকার নেতৃবৃন্দ পাঞ্জাবের পৃথক নির্বাচকমন্ডলীর দাবী প্রত্যাক্ষান করে।এর ফলশ্রুতিতে মুসলীম লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এতে জিন্না হারান ফিরোজ খান নূন, স্যার মহম্মদ ইকবাল, হযরত মোহানির মত নেতৃবৃন্দকে।মুসলীম লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হলেও বাস্তবতা হচ্ছে ঐখানে শতদা ভাগে বিভক্ত গোষ্ঠি ছিল।এ রকম পরিস্থিতিতে জিন্না হতাশ হলেন।এর মধ্যে তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী রাত্রি মৃত্যুবরণ করেন।১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডে চলে যান।এই বছর গুলি ছিল, একাকিত্ব, মানসিক এবং নৈতিক সংযমের সংমিশ্রণ এবং সততা যা এতই তীব্র যে প্রায় আত্মনির্যাতনের পর্যায়ে পৌঁছে যায়।তাঁর গুণগুলি ছিল তীব্র,তুলনায় দোষগুলো ছিল খুবই নগণ্য।

১৯২৭ সালে কলকাতা অধিবেশনে (সর্বদলীয় জাতীয় কনভেনশন,ডিসেম্বর ১৯২৮)দিল্লি থেকে জিন্না একটি টেলিগ্রাম করে,এই বলে যে তিনি এবং তাঁর ছয় সহকর্মী কংগ্রেস কমিটির সঙ্গে দেখা করে কিছু বিষয় আলোচনা করতে চান-এগুলি ছিল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের সমঝোতার শর্ত।জওহরলাল নেহেরু ছিলেন তখন কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট।যিনি পুরো ওষ্টেমিনিষ্টার স্টাইলে গণতন্ত্রের পক্ষে ছিলেন।সংখ্যাগরিষ্ঠতা সর্বশেষ কথা।জিন্না দাবীগুলো একটি বিশেষ কমিটির কাছে রাখলেন কিন্তু কমিটি সেগুলো খারিজ করল।বিপক্ষে ছিল ১৮ জন,পক্ষে মাত্র ২ জন।তাঁরা হলেন গাঁধী ও জামশেদ নাসের ওয়ালিন।জিন্না চোখে জল নিয়ে ফিরে গেলেন।সকালে জামশেদ স্টেশনে জিন্নাকে বিদায় জানাতে গেলেন।তিনি তার সাথে করমর্দন করলে এবং এই কথাগুলি বললেন, "জামশেদ,আমাদের রাস্তা আলাদা হয়ে গেল।” যবনিকা ঘটল তার ভারতীয় জাতীয় আন্দোলনের।জিন্না সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল আঞ্চলিক পর্যায়ে রাজনীতি না করা এবং জাতীয় পর্যায়ে মজবুত কোন মঞ্চ না থাকা।ফলে বিশাল হৃদয় সম্পন্ন এবং ধর্মীয় সংকীর্ণতা মুক্ত হয়েও তিনি পাননি তার উপযুক্ত রাজনৈতিক অবস্থান।কারণ তিনি যতই যোগ্যই হন না কেন তার সবচেয়ে বড় পরিচয় ছিল যা তিনি অনুধাবন করেছেন অনেক পরে তা হচ্ছে তিনি ছিলেন একজন মুসলিম।ক্রমান্বায়ে সে আত্মপরিচয়ে তিনি রাজনৈতিক অভিষ্ট নির্ধারন করলেন।আঞ্চলিক পর্যায়ে মুসলিম নেতাদের সাথে সমন্বয় শুরু করলেন।আর তাতে ১৯২৭ সালে তার চারদফা ,১৯২৮ সালে দাঁড়াল ছয়ে এবং ১৯২৯ সালে চদ্দোয়।আঞ্চলিক নেতৃবৃন্দের নিষ্ঠুর যুক্তি এবং তাদের নিরন্তর দাবির চাবুক শেষ অবধি জিন্নাকে পাকিস্থানের 'কায়েদে-ই আজম’করে তুলল।
এ পর্যায়ে জাতি ও জাতীয়তাবাদ এবং মুসলিম জাতীয়তা নিয়ে আলোচনার দাবী রাখে।জাতি,জাতীয়তা ও জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝায়? কোন সব মৌল উপাদানের সমন্বয়ে জাতীয়তা গড়ে উঠে? একটি রাষ্ট্রে একটি জাতিই থাকা জরুরী,না কতিপয় জাতীর সমাবেশ হতে পারে? বহুসংখ্যাক জাতি বা জাতিসত্তা যদি একই রাষ্ট্রে বসবাস করে,তাহলে সে রাষ্ট্রের ইনসাফপূর্ণ,ন্যায়নুগ ভিত্তি ও সঠিক কর্মনীতি কি হতে পারে? এ কয়টি নিতান্ত তত্ত্বমূলক প্রশ্ন।এ কয়টি প্রশ্ন সম্পর্কে গভীর ও ধীরস্থির চিত্তে এবং মননশীলতা ও দায়িত্ববোধ সহকারে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা একান্ত আবশ্যক।






(চলবে...)

তথ্যসূত্রঃ-
১) জিন্না.ভারত দেশভাগ স্বাধীনতা-যশোবন্ত সিংহ
২)ভারত স্বাধীন হল-মৌলানা আবুল কালাম আজাদ
৩)ইসলামের দৃষ্টিতে জাতি ও জাতীয়তাবাদ-মাওলানা আব্দুর রহীম
৪)বাঙলা ও বাঙালির হাজার বছর-ড: আনু মুহাম্মদ
৫)আরো কিছু বই ও আর্টিকেল যা আমাকে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সহযোগিতা করে।

ছবিঃ-নেট

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৬

প্রামানিক বলেছেন: পোষ্টের জন্য ধন্যবাদ

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:০৯

মুসাফির নামা বলেছেন: প্রামানিক ভাই,এই সিরিজের সবগুলো পোস্ট পড়ার অনুরোধ রইল।

২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:১৪

মুহাম্মাদ শহিদুল্লাহ বলেছেন: অসাধারণ। চালিয়ে যান।

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:২৩

মুসাফির নামা বলেছেন: এই সিরিজের সবগুলো পোস্ট পড়ার অনুরোধ রইল। ধন্যবাদ, ভাল থাকবেন।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৫২

কালনী নদী বলেছেন: যদিও পোস্টটি এখনও পড়ি নাই তারপরেও সংগ্রহে রাখলাম অন্যসময় সম্পূর্ন পড়ে মন্তব্য করবো।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৩

মুসাফির নামা বলেছেন: এই সিরিজের সবগুলো পোস্ট পড়ার অনুরোধ রইল।সে সাথে অসংখ্য ধন্যবাদ সবসময় পাশে থাকার জন্য।

৪| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৮

কালনী নদী বলেছেন: কথা দিলাম সময় নিয়ে একদিন সব সিরিজগুলা পড়ব। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের জন্য এতকষ্ঠ করে লিখার জন্য।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:১১

মুসাফির নামা বলেছেন: সত্য আর বস্তুনিষ্ঠ কিছু দেওয়ার মাঝে যে আনন্দ,তা আপনিও জানেন।

৫| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

নেক্সাস বলেছেন: দরুন পোষ্ট। প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:১৮

মুসাফির নামা বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ,ভাল থাকবেন।

৬| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:২২

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: আপনি অনেক বড় বিষয়ে হাত দিয়েছেন, কিন্তু এটিকে হালকাভাবে নিয়েছেন। আপনার তথ্যগুলিকে প্রথম নির্ভরযোগ্য সূত্রনির্দেশসহ প্রতিষ্ঠিত করতে হবে, তারপর মন্তব্যের প্রশ্ন। দুঃখ নেবেন না, ইতিহাস এবং সত্য উদ্ঘাটনের স্বার্থে বলতে বাধ্য হচ্ছি, আমার মনে হচ্ছে ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধানের প্রশিক্ষণ আপনার নেই। আমার পরামর্শ হবে, আপাতত এ কাজ স্থগিত রাখুন, আগে প্রশিক্ষণ নিন; নাহলে পণ্ডশ্রম হবে। রূঢ়তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭

মুসাফির নামা বলেছেন: পরামর্শের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।এটা ঠিক ইতিহাস অনুসন্ধানে আমার প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই, তার মানে এই নয় যে, আমি না বুঝে হাত দিয়েছি। এই শিরোনামে আমি তিন কিস্তি প্রকাশ করলাম। কোথাও কোন ভ্রান্তি থাকলে বলুন,আমি অবশ্যই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব।আমার লেখার দায়দায়িত্ব আমি নিতে প্রস্তুত,তবে আপনার মন্তব্যের দায়দায়িত্ব আপনি নিতে প্রস্তুততো?

৭| ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: আবারও ধন্যবাদ জনাব মুসাফির এই বিষয়টিতে আপনার শ্রম এবং উত্তর দেবার জন্য। আপনার নির্বাচিত বিষয়টি আমারও আকর্ষণের বিষয়, তাই কঠিন মন্তব্য করেছি। আবারও সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। আমি প্রথম কিস্তিটা পড়েছি মাঝেরটি মিস করেছি, এটা পড়লাম। আপাতত একটি বিষয় সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব। ইতিহাস এখন কিন্তু বিজ্ঞানের পর্যায়ে। বিজ্ঞানে যেমন ইতিহাসেও তেমনি - অন্ধ বিশ্বাসের স্থান নেই। আপনি যে তথ্য দেবেন, তা পাঠক অন্ধভাবে বিশ্বাস করবে না; অর্থাৎ সেগুলি যাচাইযোগ্য হতে হবে। সেজন্য আপনাকে বিশদভাবে সূত্র নির্দেশ করতে হবে, অর্থাৎ আপনার তথ্যের উৎস ঠিক কোথায়; যাতে পাঠক ইচ্ছে করলে যথাসম্ভব সহজে সেটি দেখে নিতে পারে। সেজন্য আপনাকে প্রতিটি তথ্যের সাথে শুধু বইয়ের নাম দিলেই হবে না, তার সাথে প্রকাশক (শহরের নাম এবং প্রকাশনার সন সহ), সংস্করণ, অধ্যায় এবং পৃষ্ঠা সংখ্যা উল্লেখ করতে হবে। যদি কোনো ঐতিহাসিকের মন্তব্য উদ্ধৃত করেন তাহলেও একইভাবে সেটির সূত্র নির্দেশ করতে হবে। আর যেগুলো আপনার নিজস্ব মন্তব্য সেগুলো প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তি দিয়ে উপস্থাপন করতে হবে।

এই কিস্তির একেবারে শুরু থেকেই একটি উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি শুরু করেছেন এই বলে, "১৯১৪ সালের মধ্যে জাতীয় স্তরের রাজনৈতিক নেতা হিসাবে জিন্নার সুনাম প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।এর মধ্যে নির্বাচন কেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ে স্বার্থান্বেসী মহল সক্রিয় হয়ে উঠল।আর তাতে জাতিগত বিভেদ,ধর্মীয় বিভেদ বেড়ে চলল।তাই জিন্না চরম বা মধ্যপন্ত্রী নয় বরং হিন্দু মুসলিম ঐক্য তৈরী করার কাজে হাত দিলেন।" -এগুলি কী কোনো প্রতিষ্ঠিত তথ্য, নাকি আপনার সিদ্ধান্ত, নাকি অন্য কোনো ঐতিহাসিকের মূল্যায়ন? আমি তো এই প্রশ্নের কোনো জবাব পাচ্ছি না। তাহলে আমি আপনার লেখা কীভাবে গ্রহণ করবো? কেন বিশ্বাস করবো?

লেখাটুকু লিখতে আপনি যথেষ্ট কষ্ট করেছেন বুঝি। আরও একটু কষ্ট করুন। এটি নিয়ে ইতিহাসের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক বা বিশেষজ্ঞ ঐতিহাসিকের কাছে যান এবং তাঁর পরামর্শ নিন। আমার মনে হয় সেটিই সবচেয়ে ভাল হবে। আমি নিছক পাঠক হিসেবে মন্তব্য করেছি। এতে যেন নিরুৎসাহিত হবেন না।

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৫২

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনাকে আবারও ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। আমি বুঝতেছিনা, যাদের কথা বলতেছেন তারা কি ভিনগ্রহের প্রাণী।ব্যাপক টিকা দিয়ে আমি লেখার কলেবর বৃদ্ধি করতে চাইনি। যদি কখনও বই আকারে প্রকাশ করি তবে অবশ্য আপনার সবগুলো দাবী পূরণ করব, কারণ তখন এটা একটি দলিল হবে,অনেক কতৃপক্ষ থেকে অনুমতি নিতে হবে।আমার জানা মতে ব্লগের লেখা কখনও দলিল হিসাবে গৃহিত হয় না।আর ইতিহাসতো মনগড়া হতে পারেনা, এই জন্য আমি বইয়ের রেফারেন্স দিয়েছি,যে বইগুলো ব্যাপক স্বীকৃত বই।তবে আমি মূল্যায়ন করার অধিকার রাখি।ভালভাবে পড়লে অবশ্যই আমার মূল্যায়নগুলো ধরতে পারবেন।

৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩২

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: আমার একটি তথ্য যাচাইয়ের জন্য তো পাঠক গোটা বইটা পড়বে না। এই জন্য কোনো বই থেকে তথ্য সংগ্রহ করলে তথ্যটির সাথে পৃষ্ঠা নম্বর বা অন্তত অধ্যায় দিয়ে দিতে হয়। আমি যদি পাঠকের জন্য যাচাইয়ের বিষয়টা সহজ না করে দেই, যদি ফাঁকি দেই, পাঠকও আমায় ফাঁকি দেবে। মোদ্দা কথা হলো প্রতিটি তথ্য যাচাইযোগ্য হতে হবে, প্রতিটি মন্তব্য যুক্তিসঙ্গত হতে হবে। তা না করলে, কোনো কৈফিয়ৎ দেওয়ার সুযোগ পাঠক দেবে না। জানিনা সমস্যাটার গুরুত্ব বোঝাতে পারলাম কিনা। ভাল থাকুন।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭

মুসাফির নামা বলেছেন: বুঝতে পারলাম। মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.