নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন সমালোচক,তবে তা সংশোধনরে জন্য। আবার একজন প্রশংসাকারিও বটে, তবে তোষামোদকারি নয়।জানতে চাই অনেক কিছু।হতে চাই কালের সাক্ষী।

মুসাফির নামা

সত্যানুসন্ধানী

মুসাফির নামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষের মধ্যে প্রচারিত নজরুল সম্বন্ধে কিছু ভুল ধারণার অপনোদন এবং তার কিছু কবিতার অংশ নিয়ে ডকুমেন্টারি ব্লগ

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৩৯





তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল বৈশাখীর ঝড়!


কাল বৈশাখীর ঝড়ের মতোই নূতনের কেতন উড়িয়ে কাজী নজরুল ইসলামের আগমন।যে ঝড়ে নড়ে উঠেছিল বাংলার সমাজ,রাজনীতি,সাংস্কৃতিক অঙ্গন।


হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান
তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিষ্টের সম্মান।






ভাগ্য বিধাতা তার নিয়তিতে রেখেছিলেন সংগ্রাম।তাই জীবনের শুরুতেই তাকে করতে হয়েছে বাঁচার সংগ্রাম।সম্ভ্রান্ত কাজী পরিবার হলেও ইংরেজ শাসনের দু’শ বছরের এ ধরণের সম্ভ্রান্ত সব পরিবার দারিদ্র্যতার সাথে তখন নড়ছে।তার উপর অল্প বয়সে পিতাকে হারান।তাই তাকে যোগ দিতে হয়েছে লেটোর দলে,রুটির দোকানে।

তবে এসবের মধ্যেও তিনি তার পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন।যারা তার দারিদ্রতার কারণে পড়ালেখা ঠিকমত হয়নি,তারা না জেনে লিখে থাকেন। ক্লাসে একটু অন্যমনস্ক থাকলেও রেজাল্টে তার প্রভাব কখনও পড়েনি।তার বাল্যবন্ধু এবং বলা যায় শেষ পর্যন্ত থেকে যাওয়া অকৃত্রিম বন্ধু শৈলজানন্দই বলেছেন:বৃটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগ পযর্ন্ত তিনি প্রতিক্লাসে ১ম ই ছিলেন।এছাড়া লেটোর দলের সাথে থাকায় অবস্থায় কোরআন,হাদীস,রামায়ন,মহাভারত সহকারে অনেক বই তিনি শেষ করে ফেলেন।একটু অন্যমনস্ক থাকলেও তার মেধা শক্তি ছিল প্রখর ও পড়ালেখার প্রতি ছিল ব্যাপক ঝোক।এ সম্পর্কে জিহাদ আলী , ’নজরুল প্রতিভার উৎস’ বইটিতে অনেকের অহেতুক বাড়াবাড়ি নিয়ে তার সে সময়ের জীবন তুলে ধরেন।এসব তথ্য তিনি তার বন্ধু,শিক্ষকবৃন্দ এবং ময়মনসিংহসহ যেসব জায়গা যারা তাকে আশ্রয় দিয়েছেন,স্নেহ দিয়েছেন তাদের থেকে সংগ্রহ করেন।

অনেকে তাকে তার প্রথম গল্প ' বাউন্ডুলে আত্মজীবনী’ বইটি দিয়ে তাকে ছোটবেলায় খুবই বাউন্ডুলে অমনযোগী ছিল, এসব তুলে ধরেছেন।বস্তুত বাউন্ডুলের ’আত্মজীবনী’ বইটি তার এক বন্ধুকে নিয়ে লেখা।



ওরে আয়
ঐ মহা সিন্ধুর –পার হতে ঘন রণ ভেরী শোনা যায়।






বাঙ্গালীরা যুদ্ধের জন্য উপযুক্ত নয়,এজন্য ইংরেজরা বাঙ্গালীদের সৈনিক হিসাবে বিবেচনা করত না।ফলে বাঙ্গালীরা যেমন চাকরি থেকে বঞ্চিত হত,তেমনি এটা ছিল বাঙ্গালিদের জন্য অমর্যাদার।পরে বাঙ্গালী রাজনীতিবিদদের চাপে বাঙ্গালি পল্টন নামে একটা রেজিমেন্ট অনুমোদন করে।দরিদ্র নজরুল প্রথম সুযোগে বাঙ্গালি পল্টনে যোগদান করে।তার ঐ অল্পসময়ের সৈনিকজীবনই হয়তো তাকে ইস্পাতসম নজরুল হিসাবে গড়ে তুলে।অবশ্য এতেই নজরুলের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা ইতি ঘটে।হাবিলদার কাজী নজরুল ইসলাম নামে তিনি করাচি থেকে সওগাত পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা পাঠানো শুরু করেন।তখনতো শুরু, কেউ তাকে চিনে না কিন্তু হাবিলদার পরিচয় থাকাতে সওগাত পত্রিকায় কর্তৃপক্ষ সহজে তার কবিতাগুলো ছাপাতে থাকে।


আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে
মোর মুখ হাসে মোর চোখ হাসে মোর টগবগিড়ে খুন হাসে



১১২০ সালে ৪৯ নং বাঙ্গালী রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হলে নজরুল করাচি থেকে দেশে ফিরে আসেন।নিজ বাড়িতে না গিয়ে বাল্যবন্ধু শৈলজার গৃহে উঠেন।

নজরুল সৈনিক থাকাকালে একবার গ্রামে গিয়ে কোন এক অজানা কারণে তার মায়ের সাথে ব্যাপক মনোমালিন্য হয়।তাই জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি আর গ্রামে ফিরে যাননি।এমনকি তিনি জেলে থাকা অবস্থায় তার মা তাকে দেখতে গেলেও তিনি দেখা দেননি।যা আজও অজানা।অনেকে কুহেলিকা উপন্যাসে তার কারণ খোজার চেষ্টা করেন।তবে মনে রাখতে হবে, কুহেলিকা একটি উপন্যাস।সৈন্য পেশা থেকে আসা সৈনিকদের জন্য ইংরেজ সরকারের পক্ষ থেকে সাবরেজিষ্টারী কাজের জন্য চিঠি পান।কবি সে চাকুরি গ্রহণ না করে চিরদুঃখময় বিপ্লবের পথ বেছে নেন।

নজরুল লিখতে থাকেন একে পর এক কবিতা।কখনও প্রেম,কখনও বিদ্রোহ,কখনও বা মানবতা, কখনও ধর্ম।অল্প দিনে নজরুলের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে।তবে কলকাতার জীবনে হিন্দুদের জাতভেদ অনেকসময়ই তাকে বিভ্রান্তিতে ফেলে দিত।নিজ বাসায় জায়গা দেওয়া বন্ধু শৈলজাকে পরিবার এবং তার ঘনিষ্ট অনেকজনের কাছে ব্যাপক লাঞ্চনার শিকার হতে হয়।
এতকিছুর পরও কলকাতাতে তার বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী দিন দিন বৃদ্ধি পেত।তিনি যেখানে যেতেন আড্ডা ব্যাপক জমিয়ে তুলতেন।”দে গরুর গাঁ ধুয়ে" দিয়ে তিনি আড্ডা শুরু করতেন।এরপর শুরু করতেন রবীন্দ্রনাথের গান,যা সহজে আর থামত না,তখন রবীন্দ্রনাথের গানই ছিল বাংলার একমাত্র প্রসিদ্ধ গান।



একি সেই পুন্য গোমতীর কুলে
প্রথম উঠিল কাঁদি’অপরুপ ব্যথা-গন্ধ নাভি-পদ্মমূল্যে




১৯২১ সালে স্কুল পাঠ্যপুস্তুক প্রকাশক আলী আকবর খানের নিমন্ত্রনে নজরুল কুমিল্লা যান।সেখানেই নজরুলের সাথে পরিচয় হয় বিরাজাসুন্দরী দেবীর সাথে।আলী আকবর খান তাকে মা বলে ডাকতেন।নজরুলও তাকে মা বলে ডাকা শুরু করেন।এই স্নেহময়ী মহিলার প্রভাব নজরুলের জীবনে অনেক ছিল।নজরুল হুগলী জেলে থাকায় অবস্থায় চল্লিশদিন অনশন করার পরে উনার হাতে লেবুর রস পান করে অনশন ভঙ্গ করেন।নজরুল তাঁর ’সর্বহারা’ গ্রন্থটি উনাকে উৎসর্গ করেন।নজরুল পত্মী প্রমীলা দেবী উনার বিধবা ঝাল গিরিবালা দেবীর কন্যা।

আলী আকবর খানেরই বিধবা বোনের কন্যা সৈয়দা খাতুন,ওরফে নার্গিস।নজরুলের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল কিনা জানা যায় না।তবে আকবর আলী খানের উদ্যোগে তাদের বিয়ে ঠিক হয়।বিয়ের সংবাদ কলকাতার বন্ধুবান্ধব অনেককে জানালে তারা নজরুলের এই হঠাৎ সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারেনি।তবে পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে লেখা চিঠি থেকে বুঝা যায়-পল্লী বালিকা সৈয়দা খাতুন নজরুলকে যথেষ্ঠ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়।দুর্ভাগ্যবশত নজরুলের বিবাহ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে পারেনি।ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানে বিরাজসুন্দরী দেবী উপস্থিত ছিলেন।তার বর্ণনায় জানা যায়,বিয়ের আসনের কাবিনের শর্ত নিয়ে তর্কাতর্কি হয়েছিল, তাছাড়া কন্যা পক্ষ এমন দাবীও করেছিল যে,বিয়ে হলেও নজরুল বউ নিয়ে যেতে পারবে না এবং নজরুলকে শশুর বাড়ীতেই থাকতে হবে।নজরুল বিয়ের অনুষ্ঠান থেকেই উঠে যেতে পারত কিন্তু এতে গ্রামের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে নজরুলকে অপমান করতে পারত।তাই বিয়ে প্রহসনের পর নজরুল শশুর বাড়ীতে একরাত্রিও থাকেননি।তাই বলা যায়,নজরুল ও সৈয়দা থাতুনের আকদ পরিপূর্ণতা লাভ করেনি।পরবর্তীতে সৈয়দা নার্গিস খানম ও তার মামা অনেক চেষ্টা করে তাকে আর ফেরাতে পারেননি।নজরুল গবেষক অধিকাংশের বর্ণনা মতে সৈয়দা খাতুন আর তার মামা আলী আকবর খান নজরুল সাথে ভালবাসার অভিনয় করেছেন শুধুমাত্র।




বল বীর-
বল উন্নত মম শীর!
শির নেহারী’আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!



১৩২৮ সাল নজরুলের প্রথম গ্রন্থ,গল্প সংকলন ’ব্যথার দান’ প্রকাশিত হয়।নজরুল প্রায় প্রতিটা গ্রন্থের ক্ষেত্রে প্রকাশকরা বলা য়ায় নজরুলকে ঠকিয়েছেন।কারন সবসময় তিনি অর্থ সংকটে থাকায় প্রকাশরা এই সুযোগ নিতেন।



আয় চলে আয়রে ধূমকেতু,আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু
দুর্দ্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িদে তোর বিজয় কেতন?
অলক্ষের তিলক রেখা রাতের ভালো হোক না লেখা,
জাগিয়ে দে চমক মেরে ! আছে যারা অর্ধচেতন।




রবীন্দ্রনাথের তখন বিশ্বজোড়া খ্যাতি আর নজরুলের সবে শুরু।জুহুরি যেমন জুহুরি চিনে তেমনি রবীন্দ্রনাথও নজরুলকে চিনতে ভূল করেননি।১৯২১ সালে রবীন্দ্রনাথে জোড়াসাকোর ঠাকুর বাড়িতেই নজরুল রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করতে যান।প্রথম দেখাতে নজরুল রবীন্দ্রনাথ এর মধ্যে কবিতা-সাহিত্য নিয়ে আলাপ হয়।উপরের লাইনগুলো নজরুলের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ নজরুলের ধুমকেতু পত্রিকার জন্য লিখে দেন, যা ধুমকেতুর উপরে লেখা থাকত।পরবর্তীতে নজরুল তার ’সঞ্চিতা’ কাব্য গ্রন্থটি রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন।
আর আলিপুর জেলে থাকা অবস্থায় রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে ’বসন্ত’ নাটিকাটি উৎসর্গ করেন।আর এতে নজরুল এত খুশি হন যে তার জেল জীবনে সকল কষ্ট ভুলে গিয়ে রচনা করেন তার বিখ্যাত কবিতা ’আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’।







বিশ্বাস করুন,
আমি নেতা হতে আসিনি,আমি কবি হতে আসিনি-আমি প্রেম দিতে এসেছি,প্রেম নিতে এসেছি।


”বসন্ত দিয়েছেন রবি
তাই হয়েছেন কবি”

নজরুলকে ব্যঙ্গ করে লেখা।শুধুমাত্র নজরুল বিরোধীতার জন্য ’প্রবাসী' থেকে শনিবারের চিঠির জন্ম হয়।কবি মহিতলাল মজুমদার,সজনীকান্ত দাস,অশোক চট্রোপাধ্যায়,হেমন্ত চট্রোপাধ্যায়,যোগানন্দ দাস প্রমুখ নজরুলের প্রত্যেকটি কবিতার ব্যাঙ্গ রুপ দিয়ে শনিবারের চিঠিতে প্রকাশ করতে থাকে।নজরুলের বিদ্রোহীকে ব্যাঙ্গ করে শনিবারের চিঠিতে সজনীকান্ত লিখে,

আমি ব্যাঙ
লম্বা আমার ঠ্যাং

তারা তার বিরুদ্ধে লেখে ক্ষান্ত হয় নাই।তারা তার বিরুদ্ধে বলার জন্য শেষ পর্যন্ত শরৎচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের দ্বারস্থ হয়।শেষ পর্যন্ত তারা সফলও হয়।রবীন্দ্রনাথ নজরুলকে আক্রমণ করে রচনা করেন,’সাহিত্যের ধর্ম’ এতে নজরুল খুবই কষ্ট পান।শেষে এক সংবর্ধনা সভায় নজরুল কষ্ট পেয়ে বলে ফেললেন ’হিন্দু মন আমায় বিষিয়ে তুলেছে,আমি যত অসাম্প্রদায়িক হতে চাই ,তারা তত সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠছে।’ কবি সত্যিই প্রেম দিতেই এসেছেন,তাই কবি গুরুর মৃত্যুতে সব ভুলে তিনি শোকাতুর হয়ে লেখেন ’রবিহারা’।



তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু,আর আমি জাগিব না।
কোলাহল করি,সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না।
নিশ্চল, নিশ্চুপ!
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধ বিধুর ধূপ








নামের সাথে কারো জীবন ভাগ্য জড়িয়ে যায়,নজরুল সে হতভাগা দুখু।শুধু বই লেখার জন্য জেল খাটতে হয়েছে,পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম উদাহরণ বিরল।তবু থেমে যান নি।মানুষের জন্য রাজনীতিও করেছেন।সংগ্রামই যার জীবনের ব্রত তিনি এসবে থেমে থাকার নয়। সংগ্রামের সাথে তার জীবনে নেমে আসে একের পর এক ট্র্যাজেডি।নজরুলের জীবনে প্রথম ট্র্যাজেডি ১৯৩০ সালে তার প্রাণপ্রিয় পুত্র বুলবুলের মৃত্যু।এই ট্যাজেডি আরো গভীর ১৯৩৯ পত্মী প্রমীলা গুরুতর অসুস্থায়।প্রমীলা দেবী মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসলেও তার নিন্মাঙ্গ সারা জীবনের জন্য অবশ হয়ে যায়।পুত্র আর স্ত্রীর চিকিৎসা করতে গিয়ে তিনি পুরো নিঃস্ব হয়ে যান।এমনকি তার বইগুলোর স্বত্বও বিক্রি করে দেন।সবার দেখাশুনা করতেন প্রমীলার মা গিরিবালা দেবী।তিনি ১৯৪৬ সালে আগষ্টমাসে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান।১৯৪২ সালে কবি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঐ বছর তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন।অনেক চেষ্টা করেও কবিকে আর সুস্থ করা যায় না।তিনি মূলত মস্তিষ্কের ব্যাধি পিকজ ডিজেজ এ আক্রান্ত হন এবং তার সাহিত্য সাধনার ইতিও ঘটে সেখানে।১৯৬২ সালে তার প্রিয়তমা প্রমিলাও তাকে ছেড়ে চলে যান।১৯৭৪ সালে মারা যান তার কনিষ্ট পুত্র কাজী অনিরুদ্ধ এবং ১৯৭৯ সালে মারা যান কাজী সব্যসাদী।




ফুলের জলসায় নীরব কেন কবি?
ভোরের হাওয়ায় কান্না পাওয়া তব ম্লান ছবি
নীরব কেন কবি




১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানের অনুরোধে ভারত সরকার কবিকে বাংলাদেশে যাবার অনুমতি প্রদান করে।বিমান বন্দরে সেদিন হাজার হাজার মানুষ কবিকে দেখার জন্য আসে।বাংলাদেশের মানুষের ভালবাসায় কবির চেহারা হাসি ফুটে উঠে।১৯৭৩ সালে কবির ৭৩ তম জম্মদিনে নজরুল জয়ন্তি পালন করা হয় মহা সমারোহে।১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি,লট ডিগ্রী প্রদান করে।১৯৭৬ সালে কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।


মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই
যেনো গোরের থেকে মুয়াযিনের আযান শুনতে পাই।



ঢাকা ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় ২৮ নং সড়কের ৩৩০ বি,র খোলামেলা সবুজলেনে ঘেরা দোতলা বাড়িতে এসে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হয় এবং তিনি হাসি খুশিই থাকতেন।১৯৭৫ সালের ২২ জুলাই হঠাৎ তিনি ব্যাপক অসুস্থ হয়ে পড়েন। নজরুলকে পি.জি হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য এ্যাম্বুলেন্সে তোলা কঠিন হয়ে পড়ছিল,দোতলা থেকে কিছুতেই নামতে চাইছিলেন না তিনি।জোর করে রেলিং আকড়ে ধরেছিলেন।হাত ছাড়িয়ে ফিরে যেতে চাই ছিলেন নিজের ঘরে। শেষ পর্যন্ত ডাঃ সকল চেষ্টা সত্ত্বে ১৯৭৬ সালে ২৯ আগষ্ট কবি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বেতার টেলিভিশনে প্রচার হওয়া মাত্রই স্তব্দ হয়ে যায় পুরো জাতি,তাদের প্রাণপ্রিয় কবির মৃত্যুসংবাদে।তিনি ছিলেন বাংলার কবি,বাঙালীর কবি,সাম্যের কবি।কবিকে একনজর শেষ দেখার জন্য ছুটে আসে লাখো লাখো মানুষ।সোহরাওয়াদীঁ উদ্যানে জানাযা শেষে তার শবাদার বহন করে নিয়ে যান তদানিন্তন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সায়েম,সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান,নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার এডমিরাল এম-এইচ খান,বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল এ.জি মাহমুদ,বি.ডি.আর প্রধান মেজর জেনারেল কাজী গোলাম দস্তগীর।

কবি চির নিদ্রায় শায়িত আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রিয় মসজিদ প্রাঙ্গনে।


আজ এই মহান কবির ১১৭ তম জন্মবার্ষিকীতে তার প্রতি রইল অকৃত্রিম ভালবাসা, আর আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।



ছবিসূত্রঃ-নেট।
তথ্যসূত্রঃ-নজরুল ইনষ্টিটিউট

মন্তব্য ৫৩ টি রেটিং +১৫/-০

মন্তব্য (৫৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৫

প্রামানিক বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম। অনেক কিছু জানা হলো। ধন্যবাদ

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৩৬

মুসাফির নামা বলেছেন: প্রামাণিক ভাই,আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৫৭

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: অসাধারন লিখনি। পুরো পোষ্টটি পড়েছি। জানার আছে অনেক। অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এগিয়ে যান হে।

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৩৭

মুসাফির নামা বলেছেন: হাফেজ ভাই,আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৩| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০৩

পুলহ বলেছেন: প্রিয়তে নিয়ে রাখলাম, পরে সময় করে পড়ার ইচ্ছা রাখি।
তবে ভাই একটা সাজেশন- এ ধরণের লেখায় তথ্যসূত্র উল্লেখ করা উচিত। তাতে নিঃসন্দেহে লেখাটা আরো সমৃদ্ধ আর গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে পাঠকের কাছে।
ভালো থাকবেন ! ভাল্লাগলো নজরুলকে স্মরণ করেছেন দেখে।
শুভকামনা

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৪৬

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনার সচেতনতা সবসময় ইতিবাচক,আমি সবসময় সে দিকে নজর রাখি-তারপরও ভিন্ন কেউ এডিট করার সুযোগ কম থাকায় ভুলভ্রান্তি থাকে।

তারপরও কারও কোন প্রশ্ন থাকলে ,অবশ্যই উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি।নোটিফিকেশন সমস্যার কারণে আমি যেমন অনেকের উত্তর পাইনা,আপনাদের ক্ষেত্রে তাই ঘটছে।

আমি কিন্তু আমার পলোনিয়াম ২১ গল্পে আপনি যে প্রশ্ন করেছেন তার উত্তর দিয়েছি,পড়ে না থাকলে পড়তে পারেন।

৪| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:০৬

পুলহ বলেছেন: ৩ নং মন্তব্যের জন্য দুঃখিত, আপনি তথ্যসূত্র উল্লেখ করেছেন ঠিকই, আমার চোখ এড়িয়ে গেছে সেটা কোনভাবে।
আবারো আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি ভাই।

২৮ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯

মুসাফির নামা বলেছেন: আপনার বিনয়পূর্ণ মন্তব্য সবসময় সুন্দর।

৫| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:১৪

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল।

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৪৮

মুসাফির নামা বলেছেন: সুজন ভাই,আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৬| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:২৪

Enigmatic jihad বলেছেন: জ্ঞানবহুল। ধন্যবাদ।। ।

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১:৪৯

মুসাফির নামা বলেছেন: ভাই,আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৭| ২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:৪০

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: অনেক বড় পোস্ট, তবে তথ্যবহুল। ধন্যবাদ।

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

মুসাফির নামা বলেছেন: ভাই,আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

৮| ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৩৭

হাফিজ বিন শামসী বলেছেন:


তথ্যবহুল লেখা। প্রিয় লেখকের লেখা প্রিয়তে রেখে দিলাম।

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩০

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ,হাফিজ ভাই।শুভকামনা রইল।

৯| ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯

সুমন কর বলেছেন: দেখে পোস্টে ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম.......+।

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩১

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ,সুমন ভাই।শুভকামনা রইল।

১০| ২৫ শে মে, ২০১৬ সকাল ১১:৫১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার গোছানো এবং সুলিখিত পোষ্টে +++

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ,মনিরা আপু।শুভকামনা রইল।

১১| ২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:০৬

মিজানুর রহমান মিরান বলেছেন: জানা ছিলো অনেক, আরও জানলাম। ভালই লিখেছেন। সুন্দর পোষ্টে+++

২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৪

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ মিরান ভাই।

১২| ২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৫

অদৃশ্য বলেছেন:



'' আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।''

শুভকামনা...


২৫ শে মে, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮

মুসাফির নামা বলেছেন: '' আল্লাহর কাছে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।''

আপনার প্রতিও রইল শুভকামনা...

১৩| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২২

বিজন রয় বলেছেন: ভাল পোস্ট।

২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৮

মুসাফির নামা বলেছেন: দাদা,অসংখ্য ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।

১৪| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১০

জেন রসি বলেছেন: মূল্যবান কিছু তথ্য শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৪০

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ,।শুভকামনা রইল।

১৫| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১৬

Bangladeshi Moinul বলেছেন: তথ্যবহুল পোস্ট। জানা হল অনেক কিছু। লেখককে ধন্যবাদ।

২৫ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:৪২

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।

১৬| ২৫ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৫:১৯

নীলপরি বলেছেন: লেখাটা খুব ভালো লাগলো । তবে এক জায়গায় একটু একপেশে মনে হোলো । মনে হয় আরেকটু রিসার্চ করলে ভালো করতেন ।

যেমন রবীন্দ্রনাথের গোরা গল্পটি থেকে ফিল্ম তেরী করছিলেন নরেশচন্দ্র মিত্র । তাতে মিউজিক অ্যারেন্জ করছিলেন নজরুল । কিন্তু বিশ্বভারতী প্রপারলি টিউন অ্যাডপ্ট না হওয়ার অজুহাতে ফিল্মটি আটকে দেয় । তখন নজরুল স্বয়ং ফিল্মের রাশ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কাছে যান । গানগুলি দেখার পর রবীন্দ্রনাথ বলেন ' বিশ্বভারতী কি আমার গান তোমার থেকে বেশী বুঝবে ? ওরা আমার গানকে তোমার থেকে বেশী সম্মান জানাতে পারে ? ' তারপরই রবীন্দ্রনাথ নো অবজেকশন পেপারে সাইন করে দিয়েছিলেন ।

রবিহারা ছাড়াও নজরুল রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আরও কবিতা লিখেছেন , যেমন অশ্রু পুষ্পাজ্ঞলী , কিশোর রবি ।

শুভকামনা ।

২৬ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৪:২৮

মুসাফির নামা বলেছেন: আমার পরী আপু,পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। আমিতো সংক্ষেপে সব তুলে আনার চেষ্টা করেছি। চেষ্টা করেছি রবীন্দ্রনাথের সাথে নজরুলের ভালো সম্পর্ক ছিল,সেটাও তুলে ধরতে। তবে একটা মহল শুধুমাত্র সাম্প্রদায়িক কারণে উনার পেছনে লেগে ছিলেন,এমনকি তারা এই অপকর্মে রবীন্দ্রনাথকেও জড়াতে চেয়েছে,তারা কিছুটা সফলও হয়।

১৭| ২৫ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চমৎকার।

যেন ঝিনুক থেকে তুলে আনা মুক্তো মালা! অসাধারন এক কাজ করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

এক নজরে যেন পুরো নজরুলকে পেলাম।
প্রিয়তে ++++++++++++++++

২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।

১৮| ২৫ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সংকল পোষ্টে আপনার পোষ্টটা যুক্ত করে সংকলনকে আরও সমৃদ্ধ করলাম। :)

২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।

১৯| ২৫ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৬

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: দুখু মিয়ার প্রতি ভালবাসা থাকবে আজীবন। চমৎকার সাজানো পোস্ট।

২৯ শে মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মুসাফির নামা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।শুভকামনা রইল।

২০| ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৪৭

কালনী নদী বলেছেন: বাহ আপনি দেখি নজরুল মাজারের খাদেম!
অনেক সুন্দর লিখা হয়েছে। প্রিয়তে গেল।

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩০

মুসাফির নামা বলেছেন: খাদেম সত্যের ও সন্দরের।শুভকামনা রইল।

২১| ২৯ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯

দীপান্বিতা বলেছেন: খুব ভাল লাগল ---

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩১

মুসাফির নামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২২| ০৪ ঠা জুন, ২০১৬ দুপুর ২:৩০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: অসাধারণ , অনেক সুন্দর লিখা হয়েছে।

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৩

মুসাফির নামা বলেছেন: ধন্যবাদ,শুভকামনা রইল।

২৩| ০৬ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫১

কবি হাফেজ আহমেদ বলেছেন: কবি আপনার খোঁজ পাইনা অনেক দিন। কেমন আছেন জানাবেন?

১১ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:৩৫

মুসাফির নামা বলেছেন: শহর থেকে বহু দুরে-দুর্গম এলাকা।তবে আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।

২৪| ১০ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:২৫

কল্লোল পথিক বলেছেন:



চমৎকার পোস্ট।

২৬ শে জুন, ২০১৬ রাত ১০:৫৫

মুসাফির নামা বলেছেন: ধন্যবাদ,কল্লোল ভাই।

২৫| ২২ শে জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: সুন্দর পোস্ট অনেক কিছু জানা গেলো

২৬| ২৪ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৬:১৪

কালনী নদী বলেছেন: আপনি কি এখনও গ্রামে অবস্থান করছেন? অনেকদিন হলো তাই ! ভালো আছেন সহোদর?

২৭| ৩১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৫১

বিজন রয় বলেছেন: নতুন পোস্ট দিন।

২৮| ১১ ই নভেম্বর, ২০২১ সন্ধ্যা ৬:৩৮

খায়রুল আহসান বলেছেন: চমৎকার শ্রদ্ধাঞ্জলি ও মূল্যায়ন। + +
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল কবির নামাযে জানাজা এবং দাফন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার।
আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন প্রেমের কবি, ভালবাসার কবি, মানবতার কবি, দ্রোহের কবি নজরুলকে বেহেস্ত নসীব করুন!

২৯| ১৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৪২

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: চমৎকার লেখা, সুন্দর বয়ান!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.