![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চায়ের একটা প্রাচীন বিজ্ঞাপন নারায়ণগঞ্জ স্টেশনে দেখেছিলাম। কলাই করা ধাতব পাত্রের ওপর লেখা ছিল, 'ইহাতে নাহি কোনও মাদকতা দোষ/ ইহা পানে হয় চিত্ত পরিতোষ!' ভুল-ত্রুটি মাফ করবেন নিজগুণে। পুরাটাই স্মৃতি হাতড়ে বলা।
সোনা নিয়ে অনেক কথাই শুনেছি। সোনা নিয়ে শোনা কথার শুরুতেই চায়ের কথা কেনও এলো? মানে ইহাতে কোনও রাজনীতির বিন্দু-বিসর্গ নেই। নেহাতই হাসি বা মশকরা। কিংবা 'ফলিত ঠাট্টা' মানে প্র্যাকটিক্যাল জোক! শুরুতেই তাই স্মরণ করিয়ে দিতে 'চা-কথার' বিকল্প আর কি হতে পারে!
আশির দশকে আমাদের এক অতীব সরল বান্ধব মধ্যপ্রাচ্যের চাকরি থেকে ছুটি উপলক্ষে দেশে ফিরেন। সে সময় তেজগাঁতে ছিল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। যে কোনও কারণেই হোক তার চাল-চলনে কাস্টমকর্তাদের সন্দেহের উদয় হয়েছিল। তার ওপর নজর রাখছিলেন একজন। এক পর্যায়ে তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে এ কথা সে কথার পর জিজ্ঞাসা করা হলো, -'লুকিয়ে কোনও সোনা এনেছেন কি?' মনে রাখতে হবে তখনও ঢাকার বিমান বন্দরে এ কালের মতো সোনার 'খনি' আবিষ্কৃত হয়নি। এমন প্রশ্ন শুনে খানিকটা ঘাবড়ে গেলেন তিনি। তারপর মাথা নিচু করে জানাল –'জি এনেছি।' কাস্টমকর্তার ভঙ্গিতে এবারে সাক্ষাৎ 'ইউরেকা' ভাবের উদয় হলো। তিনি তুলনামূলক কড়া গলায় বললেন, -'কতো সোনা আনছেন? কোথায়?'
-'জি পায়জামার ফিতে যেখানে বাঁধি সেখানে আছে চকলেট সাইজের দুইটা সোনার বার।'
কাস্টমকর্তা তার মুখের দিকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। তারপর বললেন-'আপনার মালপত্র কই?' ততক্ষণে মালগুলো এসে গেছে। তাই সে গুলো দেখাতে অসুবিধা হলো না। এবারে মালামালসহ তাকে বের করে আনলেন সেই কাস্টমকর্তা। তারপর বেশ কড়া গলায় বললেন-'যান সাহেব ভাগেন। দুই সোনার চকলেট আইন্যা যা ভাব দেখাইতাছেন। আমাগো মাথা খারাপ করার আর রাস্তা পাইলেন না। যান চলদি যান।'
কাস্টমকর্তাদের এমন ঘটনা নতুন নয়। আমাদের এক পরিচিত ছেলে কোলকাতা যাচ্ছিল। তাও আশির দশকেরই কথা। সে সময় ডলার নেয়ার ওপর বেশ কড়াকড়ি ছিল। সে পায়ে মোজার ভেতর দুইশ ডলার পুরে নিয়েছিল। প্রশ্নের জবাবে বেশ ঘাবড়ে যায়। মোজার মধ্যে লুকিয়ে রাখা ডলারের কথা স্বীকার করে সে। কর্তা ব্যক্তি কিছুক্ষণ এ কালের 'আবদুল কাদের জিলানি'র মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলেন,-'খুব ভাল কাজ করেছেন। এবার যান।' কোলকাতাগামী বিমানে উঠতে তার আর কোনও অসুবিধা হয়নি। এ ঘটনা শোনার পর আমাদের এক বন্ধু বুক ঠুকে বলেছিল, -'বুঝলি না দুনিয়ার সব জায়গায় আমার মতো কিছু ভাল মানুষ এখনো আছে। না হলে বৃষ্টি হতো না, ফসল ফলতো না!'
সোনা নিয়ে শোনার কথায় ডলার আসতে পারলে কেনও ধনরত্নের গালগপ্পো আসতে পারবে না! তা ছাড়া, বৃষ্টি ও ফসলের কথার চিন্তাসূত্র ধরেই এ গপ্লো আসতেই পারে। হ্যাঁ, এবারে তাই বলছি।
'সেকান্দর বাদশা' মানে আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট একবার ঘুরতে ঘুরতে এক উপজাতীয় এলাকায় গেছেন। 'সেকান্দর বাদশা'কে চিনতে পেরে মহা তাজিমের সঙ্গে বরণ করে নেন সেখানকার 'রাজা।' অতঃপর সেখানকার 'রাজ্যপাট' পরিচালনার বিষয়টা আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকেন সেকান্দর সাহেব।
তিনি দেখলেন, রাজ দরবারে সালিশ চলছে। বিষয়টা বেশ জটিল। এক লোক জমি বিক্রি করেছেন। ক্রেতা সে জমি চাষ করতে যেয়ে গুপ্তধনের বিশাল ভাণ্ডারের খোঁজ পেয়ে যান। সোনা-রুপা-হিরা-জহরত মিলিয়ে সে এক এলাহি কাণ্ড। সুশীল ক্রেতা এবারে জমি বিক্রেতাকে তামাম গুপ্তধন ফিরিয়ে দিতে গেলে বিপত্তিতে পড়েন। বিক্রেতার সাফ কথা, -'জমি বিক্রি করে দিয়েছি। এখন ওখান থেকে গুপ্তধন বের হোক বা সাপখোক বের হোক তার মালিকানা আর আমার নয়।'
এতে বেজায় 'চেতে' ওঠেন ক্রেতা। তার যুক্তি –'আমি জমি কিনেছি। কিন্তু গুপ্তধন কিনেনি। ওতে আমার কোনও হক নেই। হক নেই এমন হারাম মাল আমি চাই না।' এ নিয়ে ঝগড়া-কাইজা করে সুরাহা হয়নি। শেষপর্যন্ত মামলা গড়িয়েছে 'রাজদরবারে।'
সদাশয় রাজা দু'পক্ষের কথাবার্তা শুনে তৃতীয় সমাধান বের করলেন। ক্রেতার সুন্দরী কন্যার সঙ্গে বিক্রেতার সুদর্শন যুবক পুত্রের বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। আর সব গুপ্তধন নব দম্পতিকে উপহার হিসেবে দেয়ার ব্যবস্থা করলেন। মামলা খতম। সাবেক ক্রেতা-বিক্রেতা বর্তমান দুই বেয়াইসহ নব দম্পতি 'রাজা'র জয়গান করতে করতে দরবার ছাড়লেন।
এবারে 'রাজা' জানতে চাইলেন, -'আপনার দেশে এমন ঘটনার বিচার কি হতো ?' জবাবে 'সেকান্দর বাদশা' বললেন, -'প্রথমত গুপ্তধন পাওয়া গেলে ক্রেতা তা গোপন করতে চাইতেন। কিন্তু ঘটনা ফাঁস হলে বিক্রেতা তা দাবি করতেন। এ নিয়ে হয়ত দু' পক্ষের মধ্যে মারাত্মক মারপিট এমনকি খুনাখুনিও হতো। শেষ পর্যন্ত ঘটনা জানতে পারতো 'বাদশা'র পাইক-পেয়াদারা। তারা ছুটে যেয়ে তামাম গুপ্তধন বাজেয়াপ্ত করে রাজকোষে জমা দিতো। ব্যাস মামলা শেষ। ঘটনা খতম।'
এমন 'ন্যায় বিচারের' কথা শুনে বিস্মিত 'রাজা' শেষ পর্যন্ত বললেন, -'স্রেফ গরু-ছাগল-বক-কাকের মতো নিরীহ প্রাণীকুলের বরকতে তোমাদের দেশে বৃষ্টি হয় আর ফসল জন্মায়।' ভুবনজয়ী 'সেকান্দর বাদশা' নিশ্চয়ই এর জবাব দিয়েছিলেন। তবে গপ্পোকার তা হয়ত শুনতে পান নি!
এবারে সোনা নিয়ে শোনা আরেক ঘটনায় ফিরি। তবে এটি সবার কাছে 'সুস্বাদু' মনে নাও হতে পারে। সংবিধিবদ্ধ সতর্কীকরণের মতো সে কথা আগেই বলে নিলাম।
হ্যাঁ এও ঢাকা বিমান বন্দরের ঘটনা। তরুণ এবং উদ্ধত এক যুবক এর নায়ক। মধ্যপ্রাচ্য ফেরত যুবকের কাছে কাস্টমকর্তা যথারীতি জানতে চাইলেন –'সোনাদানা কিছু আছে?'
'চির উন্নত মম শির' যুবক সাথে সাথেই জবাবের তীর ছুঁড়ল,-'প্রাণীজ না খনিজ?' হতভম্ব কাস্টমকর্তাকে তার এক সহকর্মী সেখান থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
©somewhere in net ltd.