![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই তো গত বছরের ঘটনা। মূল্যবোধে আঘাত দেওয়া ও আরও কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওপার বাংলার নির্মাতা অনিকেত চট্টপাধ্যায়ের চলচ্চিত্র ’ভবিষ্যতের ভূত’য়ের প্রদর্শনী বন্ধ করে দেয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর প্রতিবাদে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল সৌমিত্র চট্টপাধ্যায়কে। সত্যজিৎ রায়ের ’হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্রে উদয়ন পণ্ডিত বলেছিলেন- দড়ি ধরে মার টান, রাজা হবে খান খান; সেই বিখ্যাত সংলাপ। হীরক রাজার দেশের উদয়ন পণ্ডিত সংলাপে যা যা বলছেন তার অনেক কথাই তৎকালীন জ্যোতি বসুর বামশাসিত সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা। অথচ, তিনি মনে প্রাণে একজন বামপন্থী বলেই নিজেকে সারা জীবন দাবি করেছেন। ভারত রাষ্ট্রচরিত্রের বর্তমান দক্ষিণপন্থী সাম্প্রদায়িক প্রবণতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।
একজন মানুষ সৌমিত্র, শিল্পী সৌমিত্র, লেখক সৌমিত্র, নাট্যকার সৌমিত্র, কবি সৌমিত্র- এসব বিশাল শিল্পের অরণ্যে তার প্রত্যহ দিনরাত্রির ভিড়ে সমসাময়িক দেশ,কাল,সমাজ,রাজনীতি নিয়ে তার অভিব্যক্তির বেদনাবিধুর সমাপ্তিতে একটা যুতসই বাক্য এমন হতে পারে- ১৯৫৮ সালে শুরু হওয়া অপুর সংসার থেকে অপুর বিয়োগ ঘটলো। চারদিকে তাই শোক!!
৮৫ বছরের কর্মময় জীবনে কি করা বাকি রেখেছেন তিনি? একজন মানুষের মহাকাল পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য কম কিছু করেন নি। চলচ্চিত্রের মত বিশাল অরণ্য ছাড়াও সৌমিত্রের কর্ম চিরস্মরণীয় হওয়ার জন্য যথেষ্ট। তার আবৃত্তির অমন গুরুগম্ভীর কণ্ঠ এখনও বাংলা কবিতায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী। কবিতা আবৃত্তি করেছেন, লিখেছেনও। কলকাতায় তার সময়ের নগরজীবনে যে কজন মধ্যবিত্ত তরুণ দাপিয়ে থিয়েটার করে বেরিয়েছেন তিনি তাদেরই একজন। বাংলা থিয়েটারের প্রবাদপ্রতিম ব্যক্তিত্ব শিশির কুমার ভাদুড়ীর হাত ধরেই মঞ্চে হাতেখড়ি তার। কাজ করেছেন বিভাস চক্রবর্তী, উৎপল দত্ত, রবি ঘোষসহ বাঘা বাঘা নাট্য ব্যক্তিত্বের সঙ্গে। নাটক লিখে গেছেন সমানতালে, নাট্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আঁকিবুকির রং তুলিও তার হাতের পরশ পেয়েছে। এক্ষণ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকাও সম্পদনা করতেন তিনি। অন্যদিকে, সিনেপ্রেমীদের জন্য যা রেখে গেলেন তার সীমানা ছোঁয়ার সাধ্য কারও নেই, সত্যিই নেই।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসোলিনির পতনের পর ইতালীয় নব বাস্তববাদ আন্দোলন, ফরাসি নব তরঙ্গ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রের ভাষা বদলে যাচ্ছিল। ইতালীয় নির্মাতা ভিক্তোরিয়া ডি সিক্কার ’দ্য বাই সাইকেল থিফ’ তখন সিনে সমালোচকদের মন জয় করে নিয়েছে। স্টুডিওর বাইরে এসে ইউরোপ, আমেরিকায় উন্মুক্ত প্রকৃতিতে শ্যুট করা হচ্ছে। ঠিক ওই সমকালে সত্যজিৎ ’পথের পাচালী’তে অপু-দুর্গার প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর কাশবনের মধ্য দিয়ে ট্রেন চালিয়ে দিলেন। এর মধ্য দিয়ে ভারতীয় নির্মাতাদের স্টুডিওর বাইরে আসার সাহস যোগালেন। এরপর সত্যজিৎ তার অপু ত্রয়ীতে দ্বিতীয় অংশেই তাকে নিতে চেয়েছিলেন কিন্তু সত্যজিতের কাছে তখনও মানানসই হয়ে উঠেন নি তিনি। কিন্তু সৌমিত্রকে ক্ন্দ্রে করে তখন থেকেই সত্যজিৎ ভেবেছিলেন ত্রয়ীর শেষ ’অপুর সংসার’ এ অপু হবেন তখন রেডওিতে ঘোষক হিসেবে কর্মরত যুবক সৌমিত্র। হলিউডের সংঘাত কিংবা কাঠিন্য অথবা ইউরোপীয় শাস্ত্রীয় বুদ্ধিবৃত্তির বিপরীতে লাতিন আমেরিকায় ফার্নান্দো সোলানাস, অক্টাভিও গেটিনো কিংবা আফ্রিকায় ওসমান সেমবেনেরা যখন তৃতীয় বিশ্বের ’তৃতীয় সিনেমা’ বানাচ্ছেন তখন এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক ঘরানার বলিউড বা বাংলা ইন্ডাস্টির দাপুটে সময়ে ‘তৃতীয় চলচ্চিত্র’ আন্দোলনের সঙ্গে মানানসই নামগুলো মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটক। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের স্বজাতির জীবনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৃতীয় চলচ্চিত্র কেমন হবে তার উত্তর হলো অপুর সংসার, অরণ্যের দিনরাত্রি, চারুলতা, ফেলুদা, অভিযান, অশনি সংকেত ইত্যাদি। বলাবাহুল্য, বাঙালির প্রথম গোয়েন্দা ফেলুদা। বিশ্ব চলচ্চিত্রের আকিরো কুরোসাওয়া ও তোসিফে মাফুনের জুটি কিংবা লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রওির সঙ্গে মার্টিন স্করসিসির জুটি, এসব বিশ্ব সমাদৃত জুটির তুলনায় মোটেও হালকা নয় এক সঙ্গে ১৪টি সিনেমা করা সত্যজিৎ-সৌমিত্রের রসায়ন। বরং ষোল আনাই সরেস ও সফল।
বাংলা সিনেমার সে সময়ের নারীরা উত্তম কুমারকে কল্পনা করেছে একজন মধ্যবিত্ত বাঙালি সুদর্শন পুরুষ হিসেবে যার গালগুলো ভরাট, দেখতে আদুরে আদুরে। উত্তম তাদের চোখে কখনও দেশপ্রেমিক, কখনও নিখুঁত স্বামী, কখনও ফ্যাশন সচেতন, অতিমানবীয় সংবেদনশীল, কখনও মারকাটারি ও নায়িকার ত্রাণকর্তা। কিন্তু ওই সময়ে দাড়িয়ে সৌমিত্র বাংলা সিনেমার 'নায়ক' নামক পরিচয়কে ভেঙে চুরমার করেছেন, নিজেকে উপস্থাপন করেছেন একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, আরও স্পষ্ট করে বললে-দর্শকের জায়গা থেকে দর্শককে খুজে পাওয়া চরিত্রে। তবে বাণিজ্যিক ছবির পর্দায় তিনি হাটেননি এমন নয়, তবে বরাবরই সেসবে নিজের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেননি। সুচিত্রা সেন থেকে শুরু করে সাবিত্রী চট্টপাধ্যায় , সুপ্রিয়া দেবী, মাধবী মুখোপাধ্যায় সবার সঙ্গেই বাণিজ্যিক সিনেমার পর্দা কাপিয়েছেন। অপুর সংসার থেকে এই তো সেদিনের নির্মিত শিবপ্রসাদ চক্রবর্তীর বেলাশেষে সিনেমায়- নিজেকে ভেঙেছেন, গড়েছেন। অন্তিমকালেও নিজেকে নিয়ে এত নিরীক্ষা করার নেশা!
২| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২০
রাজীব নুর বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৩
সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। হ্যাঁ, শেষ ব্যসেও তার অনেক ছবির অভিনয় স্মরণ রাখার মত ছিলো।