![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ, যশোর, ফরিদপুর এবং এর আশেপাশে কিছু অঞ্চলে শ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ভাবশিষ্য হিন্দু জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং অধুনা বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়ে এমনকি অতীতেও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার জেরে এ জনগোষ্ঠির লোকজন দলে দলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পাড়ি জমিয়েছে। দেশত্যাগ করা এ ধরনের জনগোষ্ঠীরা ‘মতুয়া সম্প্রদায়’ নামে পরিচিত। এখনও বহু হিন্দু ভারত থেকে এদেশে তাদের তীর্থ দর্শন করতে আসে যেটি গোপালগঞ্জে অবস্থিত। তাদের ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মভিটা এপার বাংলার গোপালগঞ্জে। পশ্চিমবঙ্গে দেশান্তরী মতুয়ারা বনগাঁ এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে বসবাস করে। সেখানে এরকম বহু পরিবার আছে যারা নব্বই এর দশকের শুরুতে, শেষের দিকে, এই শতাব্দীর শুরুতেও সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। মতুয়াদের আধিক্য এতই বেশি যে লোকসভা, বিধানসভা ভোটে সেখানে মতুয়ারাই নির্ণায়ক। সে কারণে দলগুলোর প্রার্থী তালিকায় বনগাঁ থেকে মতুয়াদের একজনকেই বেছে নেয় দলগুলো। লোকসভা ভোটের আগে আগে সেখানে নরেন্দ্র মোদি পর্যন্ত সভা করে গেছেন। সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়ে সর্বশেষ লোকসভায় বিজেপির শান্তনু ঠাকুর সেখান থেকে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন। মতুয়াদের কথাগুলো আসলো প্রসঙ্গক্রমে এবং উদাহরণ হিসেবে। কারন বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ স্টাইলটাই সারা ভারতের জন্য প্রযোজ্য। গতকাল লোকসভায় পাস হওয়া ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন’ বা ‘সিএএ বিল’ দ্বারা এই ধরনের রাজনৈতিক অঙ্কই কষছে বিজেপি। মতুয়াদের যে যখনই আসুক বিজেপি সেখানে তাদের নাগরিকত্ব দেবে- এটাই মোদ্দাকথা। মতুয়াদের অনেকেই এখনও আছেন সেখানে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত নন। অনেক পরিবার সেখানে উদবাস্তু জীবন কাটাচ্ছে। বিজেপি এই দেশান্তরের আবেগকে ধরতে চাইছে। তাকে অবলম্বন করে গোটা হিন্দু ভাবাবেগকে নাড়িয়ে দিচ্ছে। বিজেপি মতুয়াদের মাঝে নাগরিকত্বের সওয়াল করেই প্রথমবারের মতো বনগাঁতে সাফল্যের মুখ দেখেছে।
বিজেপি এই হাওয়া তুলেছে এখন সারা ভারতে। ভারতের হাজারো সমস্যার বাইরে গিয়ে জনগণের সামনে মূর্ত করাচ্ছে এটাই ভারতের মূল এজেন্ডা। বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্থান থেকে চলে যাওয়া হিন্দু জনগণের বিরাট অংশের বসবাস ভারতের অসম, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, বিহার, ওড়িয়া, পাঞ্জাব প্রভৃতি অঞ্চলগুলোতে। মতুয়াদের মতো করে অন্য ধর্মের যে কোন জনগণ (তবে মুসলিম ছাড়া) যদি নির্যাতিত হয় কিংবা কোনো কারণে দেশত্যাগ করে তবে মোদী-অমিত শহদের অনুসারীরা তাদের শরনার্থী বলবে কিন্তু মুসলিম হলেই তারা অনুপ্রবেশকারী বলবে। আর তারা সকল অনুপ্রবেশকারীদের তাড়িয়ে দেবার কথা বলছে জোর দিয়ে। অসমে যে নাগরিক পঞ্জীকরণ নিয়ে এত তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেল সেটার প্রেক্ষাপট কিন্তু অন্য রকম। বিজেপির নাগরিকত্ব আইন আর অসমের নাগরিক পঞ্জীকরণের মধ্যে একটা সুক্ষ্ম সীমারেখা বা পার্থক্য বিদ্যমান। অসমের মানুষের মধ্যে বিরাজমান বাঙালি বিদ্বেষ থেকে জন্ম নেয়া ‘বাঙালি খেদাও’ এর অংশ হিসাবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী এনআরসির প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু বিজেপি হেমন্ত বিশ্বশর্মা এবং সর্বানন্দ সেনোয়াল নেতৃত্বে অসমে শক্তি বৃদ্ধি এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠান করার পর সেখানে অসমীয় ভাবাবেগকে ভিন্ন রঙে রাঙাতে চেয়েছে। অসমে বাঙালি মুসলিমরাই এর শেষ টার্গেটে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পুরনো দলিল দস্তাবেজ, কাগজপত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে নাগরিক পঞ্জিকরণের বাধ্যবাধকতাই কাল হয়েছে। কারণ এর দ্বারা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে ব্যর্থ হয়েছে সেসব কাগজ বা দলিল দাখিল করতে; আর এখানেই বিজেপির যাবতীয় পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাই হেমন্ত বিশ্বশর্মার মতো নেতা যিনি নাগরিক পঞ্জিকরণের কুশীলব তিনি অব্দি বলছেন, ‘আগে নাগরিকত্ব আইন হোক তারপর এনআরসি’ অর্থ্যাৎ সর্বশেষএনআরসি বাতিল করার কথা বলছেন তিনি। যার অর্থ হচ্ছে, এনআরসি প্রত্যাশিত পরিমাণের মুসলিমকে ‘অনাগরিক’ বানাতে পারেনি সুতরাং এমন আইন লাগু করা দরকার যাতে এই মুসলিম বাঙালিদের খেদানোর ফর্মুলা আবিষ্কার করা যায়।
সদ্য পাস হওয়া আইনবলে কোন হিন্দুকে ভারতছাড়া করা সম্ভব নয় তারা যে দেশ থেকে যখনই আসুক কিন্তু যদি মুসলিমদের কেউ ব্যর্থ হলে তবেই তাদের ভাষায় ‘ভারত থেকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করা’ সহজ হবে। অসমের বিজেপি সরকার এই নাগরিকত্ব আইনের নতুন প্রয়োগ করবে এখন। বিজেপি প্রকৃতপক্ষে নাগরিকত্ব আইন দ্বারা ভারতের বাকি হিন্দুদের ভাবাবেগকে নাড়াতে চায়। বিজেপি বিলটি দ্বারা মুসলিমদের একদিকে রেখে ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলজুরে খ্রিশ্চিয়ান অধ্যুষিত রাজ্যগুলো থেকে সিম্প্যাথি আদায় করতে চায়, ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলনও দেখতে চায়। একইভাবে বৌদ্ধ, জৈনদের ক্ষেত্রেও। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর অঞ্জন চৌধুরী বলছেন, ‘নাগরিকত্বের ভিত্তি কি ধর্ম?’ এটাই মৌলিক প্রশ্ন হওয়া উচিত ভারতের বাকি বিরোধীদের কাছে। কিন্তু ভারতের বিরোধীরা কাশ্মীরের স্বশাসন বাতিল প্রশ্নে এবং নাগরিকত্ব বিলের প্রশ্নে একাট্টা হতে পারেনি। বিজেপির হয়ে ভোট দিয়েছে অনেক বড় বড় বিরোধীরা। নাগরিকত্ব বিলের বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৮০ টি। এটাই বিজেপির একচেটিয়া হিন্দুত্ববাদের আপাত গৌরব। একটি নজিরবিহীন প্রস্তাবকে সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মাবেগ দ্বারা প্রতিষ্ঠা করা যায়। যারা ভোট দিয়েছে তাদের হিসেবটা দেখলেই বুঝা যাবে ধর্মের ঘুটি কতটা আড়ালে থেকে রয়ে গেছে বিলের ভোটাভুটিতে। যে শিবিসেনাকে নিয়ে কংগ্রেস মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ল কদিন আগে সেই শিবসেনা বিজেপির পাশে। বিহারে নিতীশ কুমারের জেডিইউ, ওড়িষ্যার নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি; এছাড়াও ওয়াইএসআর কংগ্রেস, এআইএডিএমকে, আরএলডির মতো আঞ্চলিক দলগুলোও মোদী-অমিত শাহদের পাশে ছিল বিলের ভোটাভুটিতে। বিলের স্বপক্ষে থাকা আর তিনটি দল হলো মিজো ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-এমএনএফ, নাগাল্যান্ডের এনডিডিপি এবং মেঘালয়ের এনপিপি । এখানে নাগাল্যান্ড, মিজোরাম এবং মেঘালয়ে খ্রিশ্চিয়ান এবং বৌদ্ধদের বড় ভোট আছে। শুধু বড় ভোট নয় সেখানে হিন্দু ভোটই সংখ্যালঘিষ্ঠ। সেখান থেকে এইসব দলগুলোকে ধর্মীয় ভাবাবেগকে কাজে লাগাতে বিলের স্বপক্ষে গেছে আবার বিজেপিও একই কৌশল মাথায় রেখে এগিয়েছে। বিশাল ভারতভূখনণ্ডে নাগরিকত্ব কি ধর্ম নির্ধারণ করতে পারে- সে প্রশ্নের উত্তর বিজেপির কাছে তুলছে বিরোধীরা। ভারতের বিরোধী শিবিরের আওয়াজ লোকসভায় যারপরনাই দুর্বল এখন। ওয়াকআউট, হৈচৈ করে বিলকে আটকাবার সাধ্য কারোরই নেই। একদা শক্তিমত্তায় বলিয়ান কংগ্রেসেরও নেই। ভারতের যে রাজ্যে নাগরিকপঞ্জীকরণে মোদি সবচেয়ে জোর দিচ্ছে বেশি সে রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ এবং এখানে বিরোধী তৃণমূল ক্ষমতায়। বিজেপির আক্রমণের কেন্দ্রতেও তৃণমূলই বেশি কারণ বিজেপি মনে করে পশ্চিমবঙ্গেই অনুপ্রবেশকারীরা অধিক পরিমাণে লুকিয়ে আছে। মমতা ব্যানার্জিও হুঁশিয়ারি ছুড়ছে বাংলাতে তিনি এনআরসি করতে দেবেন না। কিন্তু সারা ভারতে এটা কার্যকর করলে তার বাধ্যবাধকতা থাকবে। আবার এটাই ভাববার বিষয় অসমে এনআরসি করতে গিয়েই যে ব্যাপক পরিমান অর্থের অপচয় হয়েছে তাতে সারা ভারতে সেটা কার্যকর করতে গেলে কি অবস্থা দাঁড়াবে আর রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া কি হবে সেটা ভাবাও বেশ কষ্টসাধ্য। তবে মোদী-অমিত শাহরা সেটাও করে ফেলতে পারেন। আইন পাস হওয়ার অসমে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে বিলের বিরুদ্ধে যাএনআরসির আঁতুড়ঘর। কলকাতায়ও বিক্ষোভ হয়েছে। বিজেপি যখন হিন্দিভাষী এবং হিন্দু সংখগ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যগুলোতে হিন্দুত্বের রাম-লক্ষণ-মন্দিরের তাস খেলা শেষ, কাশ্মিরের কার্ড খেলাও শেষ তখন শেষ অস্ত্রটা নাগরিকত্ব বিল। এটাও সটান এগুচ্ছে। ভারতের অর্থনৈতিক অবস্থা খুব ভালো যাচ্ছে না, অর্থনীতির জিডিপিও নিম্নস্তরে, পাবলিক প্রপার্টিগুলোকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে, কর্মসংস্থানের সূচক ব্যাপকভাবে হ্রাসমান অথচ এই সময়ে ভারতকে প্রত্যক্ষ করতে হচ্ছে এহেনও একটি অগুরত্বপূর্ণ ইস্যুকে। শুধুমাত্র ভারতীয় জ্যাত্যাভিমান এবং সাম্প্রদায়িক নীতি বিজেপির নীতিনির্ধারণে রসদ জোগাচ্ছে। তবে মোদির দীর্ঘ সময়ের শাসনে সম্প্রতি কৃষি বিলের বিরুদ্ধে তৈরি হওয়া বিক্ষোভ বিজেপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। (কৃষি আইন নিয়ে কথা হবে আরেকদিন...)। এবার ভারতের ভারতের ভবিষ্যত রাজনীতি ধর্মের মধ্যে বন্দী রাখার কৌশল ভোঁতা হয়েছে-এটাই আশা জাগাচ্চে।
২| ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১
মুশফিকুর মুজাহিদ অনিক বলেছেন: ধন্যবাদ।।
৩| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: ব্লগ জীবন হোক আনন্দময়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩
নতুন নকিব বলেছেন:
ব্লগে স্বাগত। অনেক কথা হবে ইনশাআল্লাহ। আপনার পথচলা শুভ হোক।