![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রতা এবং শত্রুতা- উভয় সম্পর্কই বিশ্ববাসী প্রত্যক্ষ করেছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র বনাম তালেবান- লড়াইটা এমনভাবে শেষ হচ্ছে যেখানে কেউ কারো বড় শত্রু নয় অর্থাৎ একটা সাম্যবস্থায় এ সম্পর্ক টিকে থাকছে। ন্যাটোর এই দীর্ঘ যুদ্ধে কার লাভ আর কার ক্ষতি? সেই হিসাব বা পরিসংখ্যান নির্ণয় করাটা বেশ তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু একটি বিষয় পরিষ্কার আফগানিস্তানের জনগণের জন্য এটি নি:সন্দেহে পরাজয় এবং এ পরাজয়ের দায়ভার তালেবান ও পশ্চিমাদের। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আফগানিস্তানকে একটা বড় দুর্যোগক্ষেত্র বা নরক বানিয়ে রেখে চলে যাচ্ছেন পশ্চিমারা। শোনা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের ৩৪টি প্রদেশের মধ্যে প্রায় ১৫টি এখন তালেবানদের পাকাপোক্ত নিয়ন্ত্রণে। এসব জায়গায় সরকারি বাহিনী শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়েছে। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে, তালেবানরা ১৩ আগস্ট দেশের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর কান্দাহারের দখল নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কাবুলের পতন কী তাহলে আসন্ন? এ প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতই বলে দেবে। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, আফগান সরকার তালেবানদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দিয়েছে। এছাড়া বিগত কয়েক মাস ধরে তালেবানরা পাকিস্তান, চীনে তাদের কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে তালেবানরো এখন অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু আফগানিস্তানের এ পরিস্থিতি ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগের- সেই প্রশ্নটা বেশ জোরালো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত তালেবানদের অগ্রযাত্রাকে নিছক আফগানিস্তানের ভেতরগত সংকট যদি ভাবা হয় তাহলে বিষয়টা সর্বৈব ভুল।
দক্ষিণ এশিয়া জিহাদীদের উর্বর ভূমি হতে যাচ্ছে
মোল্লা ওমর, আয়মান আল জাওয়াহিরি, হাকিমুল্লাহ মেহসুদ, বাইতুল্লাহ মেহসুদ কিংবা এরকম আরো বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী ইসলামপন্থী নেতার নাম পাওয়া যাবে যারা এই শতাব্দীর প্রথম দশকে আফগানিস্তান ও পাকিস্থানের পাহাড়ি এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করেছেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সন্ধান মিলেছিল ইসলামাবাদের ভেতর থেকেই। আফগানিস্তান-পাকিস্তানের মধ্যকার দুর্গম পাহাড়ি সীমান্ত অঞ্চল এক সময় তালেবানসহ আল কায়েদা, লস্কর ই তাইয়্যেবা ও অন্যান্য ছোট-বড় জঙ্গি গোষ্ঠীর আধিপত্য ছিল । এখনো রয়েছে তবে তা আগের মতো শক্তিশালী অবস্থায় নেই। ন্যাটো ও মার্কিন সৈন্যদের তৎরতায় তালেবানরা এসব জায়গায় এতদিন মোটামুটি কোণঠাসা অবস্থায় ছিল। আফগানিস্তানের এসব জঙ্গি গোষ্ঠীর আদর্শিক গোষ্ঠী বাংলাদেশে ও ভারতেও ছিল। এখনো তাদের আদর্শিক সংগঠনের অস্তিত্ব রয়েছে। এমন অনেক ধর্মীয় নেতা রয়েছে যারা একসময় সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এদেশ থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি নাইন-ইলেভেন পরবর্তী প্রেক্ষপটে যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতেও গিয়েছিল অনেকে। জেএমবি'র প্রধান শায়খ আব্দুর রহমান তাদের অন্যতম। তার নেতৃত্বাধীন জেএমবি ২০০৫ সালে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা চালিয়েছিল। এমনকি মুফতি ফজলুল হক আমিনীও আফগানিস্থানে যুদ্ধ করতে গিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। এরকম আরো অনেকেই রয়েছেন যারা ধর্মীয় ভাবাবেগে সেখানে গিয়েছিলেন যুদ্ধ করতে। ভারতে মুম্বাই হামলা থেকে শুরু করে ছোটখাটো আরো বেশকিছু সন্ত্রাসী হামলার চিন্তাক্ষেত্র ছিল ওইসব পাহাড়ি এলাকা। এখন নতুন করে ভাবার বিষয় হচ্ছে, তালেবানদের এই নতুন অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ এবং ভারতের ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো কী উৎসাহিত হবে না? অবশ্যই হবে। শুধু তাই নয়, ভারত ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ইসলামপন্থী সন্ত্রাসী হামলার ঘটানগুলো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশে একটি প্রবণতা রয়েছে, জামাত কিংবা শিবিরকে সবচাইতে উগ্রপন্থী গোষ্ঠী বলা হয়। অপরদিকে কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন আমাদের নজর থেকে দূরে থাকে। মূলত, দুই গোষ্ঠীর তৎপরতা ও ভিত্তি দুই ধরনের। মোটাদাগে, শিক্ষাদীক্ষায় একটু বেশিই পশ্চাদপদ শিক্ষার্থীরা কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক জঙ্গী কর্মকাণ্ডের ভিত্তি। অপরদিকে, শিবিরের তৎপরতা আধুনিকতার খোলসের মধ্য দিয়ে। তাদের টার্গেট, প্রায় সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই। মূল বিষয় হচ্ছে, তালেবানের চিন্তুগত ভিত্তি শক্তিশালী হওয়ার নজির রয়েছে কওমী মাদ্রাসায়। দেশের বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলের বক্তব্য থেকে তা সহজে অনুমান করা যায়। আর কওমী মাদ্রাসার ছেলেদের জিহাদে আনা অনেক ক্ষেত্রেই সহজ কারণ তালেবানী চিন্তার বর্বরতার সঙ্গে কওমী মাদ্রাসার শিক্ষাগত সংকটের মিল রয়েছে।
ভারত ও বাংলাদেশের সামনে ঝুঁকি রয়েছে
বাংলাদেশে বর্তমানে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী রয়েছে। প্রতিবেশী মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত এসব মুসলিমরা ধর্মীয়ভাবে খুবই সংবেদনশীল। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করে দেশের অভ্যন্তরে তালেবানপন্থী আরো শক্তিশালী গোষ্ঠীর উত্থানের সম্ভাবনা কী উড়িয়ে দেওয়া যায়? মোটেই না। তালেবানদের সাফল্যে এদশের ইসলামপন্থীদের উৎসাহ বাড়বে না- এ কথা অন্তত বিশ্বাস করার সুযোগ নেই। অর্থাৎ ইসলামপন্থী সন্ত্রাসবাদী তত্পরতার জন্য রোহিঙ্গারা বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারে। তাদেরকে কাজে লাগনোর উদ্দেশ্য রয়েছে এবং সামনে তা আরো শানিত হবে। এছাড়া দেশের কওমী মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শিক্ষার অবাধ প্রসার দেশে তালেবানী চিন্তার উর্বর ক্ষেত্র এমনিতেই প্রস্তুত করে রেখেছে। সুতরাং ভবিষ্যতে গোটা বাংলাদেশে 'রাজনৈতিক ইসলামের' একটি বড় উন্মাদনা লক্ষ্য করা যাবে বলে মনে হচ্ছে।
অন্যদিকে, ভারতের জন্যও এ কথা ব্যপকভাবে সত্য। সেখানকার হিন্দুত্ববাদী সরকারের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি উপমহাদেশের সকল প্রানে্তর ইসলামপন্থীদের জিহাদী প্রচারণায় রসদ জোগাবে। ভারতে মুসলিমরা নির্যাতিত-এই প্রতিচ্ছবি যত প্রতিষ্ঠা পাবে ইসলামপন্থীদের ততো লাভ। অন্যদিকে, উপমহাদেশে ইসলামি জয়জয়কার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন জিহাদীরা অনেক আগে থেকেই লালন করেন। বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশের মতো। সেখানে জিহাদী তৎপরতার ঝুঁকিটা প্রবল। ওদিকে, কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। পাকিস্তান সীমান্তের ওপারে জিহাদী গোষ্ঠীগুলো প্রবল উৎসাহ পাবে। অর্থাতৎ গোটা ভারতে হিন্দুত্ববাদী ভাবাবেগের প্রসার এবং তালেবান গোষ্ঠীর অগ্রযাত্রা-উভয় সমীকরণ জিহাদের গোড়াকে শক্ত করে তুলবে। যার পরিণতিতে সামনে মুম্বাই বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটবে না তার নিশ্চয়তা নেই। তবে ভারত সরকারের গত কয়েক মাসের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে, তারা তালেবানের সঙ্গে সম্পোর্কন্নয়নের চষ্টো করবে। কিন্তু শেষমেশ এসব কাজে দেবে না। কারণ তালেবানের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ ভারতের জিহাদীদের কাছে এসব কূটনৈতিক বার্তার মূল্য একদম শূন্য। অন্যদিকে, তালেবানরাও নেহায়েত কূটনৈতিক সম্পর্ক মেনে চলবেন তা হলফ করে বলা যায়না। তালেবানদের কাছে শরীয়াহ আইন প্রতিষ্ঠাই সর্বাগ্রে। সেকারণে গোটা পরিস্থিতিটাতে একগুচ্ছ জটিল সমীকরণ রয়েছে। এসব সমীকরণ দক্ষিণ এশিয়ার জন্য ভাল কিছু নয়।
©somewhere in net ltd.