নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মুসফিক ফাহাদ

"বৃষ্টি ভালোবাসি। দিন নেই রাত নেই, যখনই বৃষ্টি হয় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। আর যদি বের হতে না পারি জানালার পাশে গিয়ে বসি। গভীর রাতে জ্যোস্নার আলো আমার বুকে হাহাকার জাগায়। তখন কবিতার খাতা খুলে বসি। মনের আবেগগুলোকে কবিতার রূপ দেয়ার চেষ্টা করি। কখনও পারি, কখনও পারি না!"

মুসফিক ফাহাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

“জামাত-শিবির, আন্দোলনকারী ও থাবা-বাবা প্রসঙ্গ!”

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২১

আমি গণজাগরণের পক্ষে আছি এবং চাই সব যুদ্ধাপরাধীদের নিঃশর্ত ফাঁসী হোক। আর বাংলাদেশ থেকে জামাত-শিবিরের মত দলকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হোক। কিন্তু যে কারনে আপনারা জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছেন, আমি কিন্তু সে কারনে তাদের নিষিদ্ধ করতে চাচ্ছি না। আমার কারণটা ভিন্ন। সেটা কি, বলছি, শুনুন।







জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে মিডিয়াগুলোতে বার বার বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চায় না। এ দেশ থেকে সব রকমের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। অর্থাৎ বুঝানো হচ্ছে যে জামাত-শিবির একটা সাম্প্রদায়িক তথা মুসলিম রাজনৈতিক দল, তাই না? কিন্তু আমার মতে জামাত-শিবির কোন মুসলিম রাজনৈতিক দল নয়, তারা হল একদল পথভ্রষ্ট মানুষ। আমার এ কথায় কেউ মনে করবেন না যে আমি জামাত-শিবিরের সবাইকে ঢালাওভাবে অমুসলিম বা কাফির বলছি। হয়ত তারা মুসলমান, কিন্তু কোন মুসলিম রাজনৈতিক দল নয়। কারণ তাদের আমীরগণ তথা নেতৃবৃন্দ (যাদের অধিকাংশই যুদ্ধাপরাধী), তাদের ঈমান নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে! আর যে দলের নেতারা ঈমানদার কিনা এটা পরিষ্কার নয়, সে দলকে আমরা সাম্প্রদায়িক বা মুসলিম রাজনৈতিক দল বলছি কিভাবে? এটা শুধু আমাদের জন্যে লজ্জাজনক নয়, ইসলামের জন্যেও অপমানজনক! জামাত-শিবির ইসলামের যে রূপ আমাদের দেখিয়েছে সেটা প্রকৃত ইসলাম নয়। ইসলাম কখনও ভেদাভেদ সৃষ্টি করেনি, করবেও না। আমরা যে মিডিয়াগুলোতে গলা ছেড়ে চিৎকার করে চলেছি, “কোন সাম্প্রদায়িকতা নয়, আমরা মানব ধর্মে বিশ্বাসী”, এটা ইসলাম ধর্মের কত বড় অপমান সেটা কি বুঝতে পারছেন? ইসলামের চেয়ে বড় কোন মানব ধর্মের নাম বলেন তো, শুনি! যতদিন বেঁচে আছি আন্দোলন চালিয়ে যাবো, তাই বলে নিজের পরিচয় ভুলে নয়। স্বাধীনতা যেমন আমাদের অধিকার, ধর্ম আমাদের সম্ভ্রম। ইসলাম ধর্ম বাদ দিয়ে মানবধর্ম ‘লিজ’ নেয়ার ব্যাপারে আমি কঠোরভাবে দ্বিমত পোষণ করছি। অন্য ধর্মের ভাইদের সাথে আমরা এখন যেভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, ইসলামকে বরণ করে নিলেও সেভাবে থাকতে পারবো, কোন সমস্যা হবে না। ইসলাম কিভাবে শাসন করে দেখতে চাইলে খলিফা ও সাহাবীদের জীবনী পড়ুন। ইসলাম কখনও অন্যায় করেনি, অন্যায় সহ্যও করেনি। আমাদের দেশ প্রকৃত ইসলামিক নিয়মে চললে অনেক আগেই সব যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যু কার্যকর হত এবং সে মৃত্যু হত ভয়ানক কষ্টদায়ক! মোদ্দাকথা, আমরা অসাম্প্রদায়িকতার নামে আমাদের ‘সুযোগ্য’ রাজনীতিবিদদের শোষণ সহ্য করতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু ন্যায়পরায়ণ ইসলামিক রাজনীতি সহ্য করতে পারবো না। যাই হোক, জামাত-শিবিরকে যে দুটো কারনে নিষিদ্ধ করতে চাই,



১) স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশের অপরিমেয় ক্ষতিসাধন করেছে, যা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ এবং

২) তারা একটি মুখোশধারী মুসলিম রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করেছে, যা ইসলাম ধর্মের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।





আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলছি। গত কয়েকদিন ধরে আমি কিছু ব্যাপার লক্ষ্য করেছি, যা আমাকে ব্যথিত ও লজ্জিত করেছে। আমরা জামাত-এ-ইসলামকে এতটাই ঘৃণা করতে শুরু করেছি যে, ইসলামের নামটা পর্যন্ত সহ্য করতে পারছি না! কেন এমন করছি আমরা? কেন বুঝেও বুঝতে পারছি না যে, ‘জামাত-এ-ইসলাম’ আর ‘ইসলাম’ এক জিনিস নয়! জামায়াত ইসলামকে ঘৃণা করুন, অবশ্যই করবেন, তারা ঘৃণারই পাত্র, কিন্তু তাই বলে এখানে ইসলাম আসছে কেন! ইসলামকে তারা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে বাংলার ধর্মভীরু মানুষদের বিভ্রান্ত করার জন্য। এখানে ইসলামের তো কোন দোষ নেই। তাহলে ইসলামের উপর ক্ষেপেছেন কেন! আন্দোলনের শুরু থেকে আমরা কম-বেশি সবাই অসাম্প্রদায়িকতার অজুহাতে ইসলামকে পাশ কাটিয়ে চলছি। কেন? সাম্প্রদায়িকতা কি মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে? অন্য ধর্মের কথা জানি না, কিন্তু আমাদের ইসলাম ধর্ম কোন বিভেদ সৃষ্টি করে না। আমাদের ধর্মে স্পষ্টত বলা হয়েছে, “যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে।” এটা শুধু বলা হয়নি, আমাদের পালন করার জন্য তাগাদা দেয়া হয়েছে। তাহলে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা মিডিয়াতে ইসলামের কথা শুনলেই এমন ভড়কে উঠছি কেন? কোন আন্দোলনকারী যদি ভুলেও ইসলামের কোন কথা তুলেন সাথে সাথে সে ‘রাজাকার’, ‘ছাগু’ আরও কত কি হয়ে যান, হায় আল্লাহ্‌! অনেকে তো আবার বলেও বসেন, “ভাই সব কথায় ইসলাম টাইনা আইনেন না তো!”, যেন ইসলাম নিয়ে মহা ঝামেলার মধ্যে আছেন! ইসলাম তো কোন ‘অপশনাল সাবজেক্ট’ নয়, যে ইচ্ছা হলে একটু নেড়েচেড়ে দেখলাম, নাহলে নেই! এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। জীবনের সবক্ষেত্রে ইসলামের কথা আসবেই; মানুন বা না মানুন, সেটা পরের কথা। রাজীব হায়দারের জানাজা তো ঠিকই পড়লাম, কিন্তু ফরজ নামাজগুলো আদায় করার ইচ্ছে কারও নেই! এ কথাটি কেউ একটিবারের জন্যেও তোলেননি। নামাজ তো পড়বে ছাগুরা, আমরা কেন! আমরা তো নবজাগরণে উদ্বুদ্ধ তরুণ সমাজ, নামাজ-কালাম সেকেলে ব্যাপার, তাই না? আপনারা হয়ত জানেন কিছুদিন আগেই মিশরে আমাদের দেশের মত এক গণজাগরণের উদ্ভব হয়েছিল। ওনারা কিন্তু আন্দোলনের ফাঁকে ফাঁকে ঠিকই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে আদায় করেছিলেন। আসলে ইচ্ছেটাই বড়।





রাজীব হায়দার রাজনীতির শিকার! শাহবাগ আন্দোলনে শুরু থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন। উনি অনলাইনে লেখালেখি করতেন 'থাবা বাবা' ছদ্মনামে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে রাজীব সবসময় লেখালেখি করে এসেছেন। এজন্যে ওনার উদ্দেশ্যে রইল আমার আন্তরিক শুভকামনা। ওনার ফেসবুকের প্রোফাইলটির ওয়ালের লেখাগুলো পড়লেই কিছুটা আঁচ করতে পারবেন-

'থাবা বাবার ফেসবুকের পাবলিক প্রোফাইল'



এটা সত্য যে রাজীব হায়দার ঘোর নাস্তিক ছিলেন, কিছুটা ধর্মবিদ্বেষীও। বিভিন্ন ধর্মকে কটাক্ষ করে অনলাইনে লেখালেখি করেছেন। এটা স্বীকার করতেই হবে যে ওনার লেখাগুলো পড়লে ধর্মীয় অনুভূতি বিশেষভাবে আহত হয়। লেখাগুলো পড়ে আমারও খুব খারাপ লেগেছে। এজন্য ব্যক্তিগতভাবে ওনাকে আমি ঘৃণা করি! কিন্তু আমি এত বড় আহাম্মক নই যে, আবেগের বশে ইসলামের নামে করা এই অবৈধ হত্যাকাণ্ডে সমর্থন জানাবো! অনেক ‘আবেগী’ মুসলিম এ নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডে মানসিক সম্মতি জানিয়ে গুনাহর ভাগীদার তো হচ্ছেনই; ওই সব খুনিদের ইসলামের নামে আরও হত্যাকান্ড চালিয়ে যাওয়ার ‘সার্টিফিকেট’ ও দিয়ে দিচ্ছেন! শুনুন, যে আল্লাহ্‌-পাক ঈমানদারদের সৃষ্টি করেছেন, তিনিই বেঈমানদেরকেও সৃষ্টি করেছেন। তিনি যদি ঈমানদারের পাশাপাশি বেঈমানকে রিজিক দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারেন, আমি-আপনি কে তাকে কুপিয়ে হত্যা করার? ইসলামে এমন অনেক মহাপুরুষ ও মহীয়সী আছেন, যারা প্রথমে ইসলামের জন্য আতঙ্ক ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের জন্য শহীদ পর্যন্ত হয়েছেন। রাজীব হয়তো মৃত্যুর আগে তওবা করার একটা সুযোগ পেত, হয়ত তওবা করতোও। কিন্তু তাকে এভাবে খুন করায় সে সুযোগটি সে পেল না। জামাত-শিবির যদি এ খুনের সাথে জড়িত থেকে থাকে, তাহলে তাদের কুবুদ্ধির প্রশংসা করতে হয়! পুরো শাহবাগ থেকে এমন একজনকে বেছে নিয়েছে, যার মৃত্যুতে গোটা মুসলিম-উম্মাহর কাছে তারা রাতারাতি ‘ত্রাতা’ হয়ে গেছে! হায়রে মুসলিম!





শেষ কথা বলছি। আমরা কিন্তু শুধুমাত্র জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করার জন্য মাঠে নামিনি, সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাওয়ার জন্য মাঠে নেমেছিলাম। শুধু জামাত-শিবির নয়, অন্যান্য প্রধান-অপ্রধান রাজনৈতিক দলগুলোতে অনেক যুদ্ধাপরাধী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। এদের অনেকেই বর্তমানে সরকারী গাড়ীবহরে বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। জামাত-শিবিরকে হয়ত শীঘ্রই নিষিদ্ধ করা হবে। এটা আমাদের জন্য এক বিশাল অর্জন! কিন্তু তারপর যদি এই আন্দোলন আর কোন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের ব্যবস্থা করতে না পারে, তাহলে বুঝতে হবে আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছি। আরও বুঝতে হবে, বিশেষ কোন রাজনৈতিক দল আমাদের আবেগকে সাময়িকভাবে পূঁজি করে ‘বিনে পয়সায়’ খাটিয়ে নিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করেছে মাত্র।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.