পাখি বিষয়ক একটি অসাধারন অভিজ্ঞতা

১৩ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৫০

কয়েকদিন থেকেই রুমে আসলেই পাখির কিচির মিচির ও তার সাথে ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম। রাতের বেলায় এটা বেশী টের পাওয়া যায়। বুঝতে পারছিলামনা কোথা থেকে এ আওয়াজ আসে। রমনা পার্কের পাশেই যেহেতু বাসা খুব ভোরে পাখির কিচিরমিচির সবসময়ই শুনতে পাই। শুধুমাত্র ভোরের পাখির ডাক শুনার লোভেই মাঝে মাঝে সকালবেলা উঠে পড়ি। জানলাটা খুলে দিলেই সকালের মৃদু বাতাস আর তার সাথে হরেক রকম পাখির কিচির মিচির আওয়াজ, মনে হয় যেনো স্বর্গে আছি। কিচির-মিচির শুনতে শুনতেই আবার ঘুমিয়ে পড়ি। যদিও দুঘন্টা পর বেরসিক এলার্ম ও বৌএর ডাকে উঠে যেতে হয়, কারন অফিস আছে না। ডায়াবেটিস জনিত কারনে আম্মু প্রতিদিনই হাঁটতে পার্কে যান। প্রায়ই আমাকে বকাঝকা করেন পার্কে যাবার জন্য, কেননা মায়ের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসএর সম্ভাবনা ৮৫% প্রায়। আমি অফিসের ছুতো দিয়ে ঘুমের লোভে যাইনা । তাঁকে বলি আমি বিকেলে যাব। যদিও চাকুরীজীবনে বন্ধের দিন ছাড়া বিকেল দেখা আমার হয়ই না।



ওহ্ হো, কি বলেতে গিয়ে কি বলা শুরু করলাম। মূল প্রসংগে আসি। রাতের বেলায় পাখির ডানা ঝাপটানোর আওয়াজ ও মাঝে মধ্যে কিচির মিচির ডাক নিয়ে ভালই ছিলাম। তবে মনের মধ্যে খচখচ রয়েই গেলো আওয়াজটার উৎস না জানার কারনে। দিনের বেলা সব ভুলে যাই অফিসে থাকার কারনে। রাতে আবার আওয়াজ এবং সেই খচখচ। তন্বী'র গুতাগুতিতে গতকাল সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম উৎস আজ বের করবই। যদিও আমি কনফার্ম ছিলাম আওয়াজের উৎস ঘরের বাইরেই। এখানে বলে নেই, আমার বাসা একটা হাইরাইজ বিল্ডিং এর ৭ম তলায়। আশে পাশে ভাল করে চেক করলাম আওয়াজের উৎস সনাক্ত করার জন্য । জানালার পাশে গাছ আছে। তবে গাছের উচ্চতা আমার বাসার ফ্লোরের চাইতে নিচে। তাই গাছের পাখির চিন্তা বাদ দিলাম। একবার ভাবলাম, পাশের বাসায় কেউ পাখি পুষছে নাতো। এটা ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মাথায় আসলো, আচ্ছা এটাসড বাথরুমের উপর যে ছোট দরজা ঘেরা ফাঁকা জায়গা আছে সেখান থেকে আওয়াজটি আসছে নাতো। সে চিন্তা বাদ দিলাম কারন সেটাতো পুরো পুরি বন্ধ। আমার রুম থেকেই একমাত্র সেখানে মই দিয়ে উঠে ঢোকা যায়। তারপরও মনে হচ্ছে আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে। যুক্তি বলছে সেখানে কিছু থাকতে পারে না, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, আওয়াজটা সেখান থেকেই আসছে।



একটা উঁচু টুল নিয়ে ছোট দরজাটা খুলে হাতে মোবাইলে ফোনের টর্চ নিয়ে সেখানে উঠে পড়লাম। টর্চের আলো ফেলে সেখানকার দৃশ্য দেখে বোকা বনে গেলাম। একজোড়া পাখির বাচ্চা। সামান্য খড়কুটোসহকারে ছোটখাট একটা বাসা। এরা এখানে ঢুকলো কিভাবে ? ভালকরে খেয়াল করে নিশ্চিত হলাম, দু-তিনমাস আগে বাথরুমের পাইপের লাইন ঠিক করতে মিস্ত্রিরা বিল্ডিং এর বাইরে দিয়ে কাজ করেছিলো। সেখানেই পাইপের পাশদিয়ে ছোটখাট একটা ফোকর রয়ে গেছে। সেখান দিয়েই পাখি ভিতরে ঢুকে ডিম দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে। কি পাখি এখনও বুঝা যাচ্ছে না যেহেতু বাচ্চাগুলির গায়ে এখনও পালক গজায়নি, মা পাখিটার দেখা পাইনি। দেখেই তাড়াতাড়ি নিচে নেমে গেলাম। তন্বীকে বললাম ঘটনাটা। সেতো মহা উৎসাহী বাচ্চাগুলিকে দেখবে বলে। টেবিলে উঠে মাথা ঢুকিয়ে দুর থেকে একটু দেখেছেও। একে একে ঘরের সবাই এই আশ্চর্য্যকর দৃশ্য দেখেছে। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি - এই শেষবার দেখা, আমার অনুপস্থিতিতে কেউ যেন এখানে আর না উঠে। সবাই যদি বার বার এখানে উঠে পাখির বাচ্চাগুলিকে দেখতে চায় মা পাখিটা হয়তো এতে বিরক্ত হয়ে আর না আসতে পারে।



কাল রাতেও লাইট বন্ধ করার পর পাখির ডানার আওয়াজ শুনেছি। এমনকি আজ এ পোষ্ট লিখার সময়ও পাখির কিচির মিচির শুনতে শুনতেই লিখছি। যদিও ছোট দরজাটা আমি তালা দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি।



মনে পড়ছে মৌসুমী ভৌমিক এর গাওয়া আমার প্রিয় একটি গানের কয়েকটি লাইন-



"আমার ঘরের পাশে গাছ আছে এক, তাতে বাসা বেঁধেছিলো এক প্রসূতী পাখি........"

৬ টি +৫/-০