নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কল্পনার মেঘমালা

না_ম_হী_ন

না_ম_হী_ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বড় মামা - মাসুদ আহমেদ রুমি

১১ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১০:৫৫

আজকে বড় মামা মাসুদ আহমেদ রুমি কে নিয়ে লিখতে চাই । আমার কাঁচা লেখা হয়ত আমাদের কাছে তাঁর মূল্যের সঠিক পরিচয় দিতে পারবে না তাও লিখছি। সবসময়ই মনে হয় লিখি কিন্তু আর লেখা হয়ে উঠে না কিভাবে লিখব ভেবে।



আমার বড় মামা সবসময়ই হাস্যোজ্জ্বল থাকতেন আর সবার মন ভাল করে দিতেন মজা করে। নানা বাড়ি গেলে চাকরির কারণে দেখা হত রাত ১১টা- ১২টার দিকে । এসেই আমাকে আর আমার বোনকে ভয় দেখানোর জন্য জানালায় নক করত। অফিস থেকে যে বাসায় ফিরেছে মামা তা আমরা সহজেই বুঝে যেতাম। শীতকালে জিজ্ঞাস করতো " শীত্তি নাগছে?" আমাদের সাথে থাকলে আমাদের বয়সেই যেন চলে আসত।.



সেদিন গল্প করতে করতে আম্মুর কাছ থেকে বড় মামার আরো কথা যেনেই মূলতঃ লিখতে ইচ্ছা হল। বড় মামা ল্যাবরেটরী স্কুলে পড়তেন । ভাল ছাত্র হবার কারণে টিচারসহ সবারই পরিচিত ছিলেন। ১৯৬০ সাল, তখন ক্লাস এইটে পড়েন। ২১শে ফেব্রুয়ারীতে স্কুলে নিজে একটা কালো পতাকা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। শিক্ষকরা তা ভাল চোখে না দেখে বরং তাকে শাস্তি দিয়েছিল। পুরো আ্যসম্বলীর সবার সামনে এই কাজ কে করেছে জানতে চাওয়া হয়। আমার মামা স্বীকার করেন। তাকে অনেক মারা হয় সেদিন। মারের মাত্রা বেড়ে যায় যখন মামা বলেন sorry বলবেন না কারণ কোন অপরাধ করেছেন বলে তিনি মনে করেন না ।

উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর air force এ পড়ার চিন্তা করেন। সহজেই লিখিত পরীক্ষায় টিকে যান। আমার নানার একদমই ইচ্ছা ছিল না মামা ওলাইনে পড়বে, তাও মামার ইচ্ছা ..... ভাইভা বোর্ডে সবাই প্রায় পাকিস্তানি ছিল। সব প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবেই চলছিল। এমন সময় একজন বলল , তোমার মাতৃভাষা কি? মামা বলল, বাংলা। একটু বিরক্ত হল বলল , রাষ্ট্রভাষা ? এই প্রশ্নের জবাব মামা দেননি চুপ করে থেকে চলে আসেন। পরে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে physics পড়া শুরু করেন।



স্বাধীনতাপূর্ব সময়ে ছাত্র রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে প্রথমে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিবাহিনীর খুব অল্প ক'জন ট্রেনারের মধ্যে একজন হিসেবে কাজ করেন।



স্বাধীনতার পর রাজনীতি থেকে দূরে সরে আসেন এবং physics ছেড়ে সাংবাদিকতার উপর পড়েন। পরে ক্রীড়া সাংবাদিক হিসাবে দৈনিক বাংলা এবং এরপর বাসদ এর সাথে যুক্ত হন।ক্রীড়া সাংবাদিকতাকে নিজের গুনে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যান তিনি। বাসদ এ থাকাকালীন সময়েই একদিন সবাইকে ছেড়ে চলে যান তিনি।



২০০৩ সাল। ১১ই মার্চ হঠাৎই তাঁর এ চলে যাওয়া পরিবার পরিজন আর সহকর্মী-বন্ধুদের নির্বাক করেছে । একটা সুস্থ মানুসের এভাবে চলে যাওয়াটা আমাদের মেনে নিতে খুবই কষ্ট হয়েছে। বহুদিন মনে হত এই বুঝি বড় মামা কাচে নক করবে .... কিন্তু তা তো আর হবার নয়।



আমার বড় মামা একটা আদর্শ ছেলে, ভাই, মামা, হবার পাশাপাশি একজন মুক্তচিন্তার মানুষ ও দেশপ্রেমিক ছিলেন সর্বোপরি একজন ভাল মানুষ ছিলেন। আমি তাঁর আত্মা মাগফেরাত কামনা করি। সবাই দোয়া করবেন বড় মামার জন্যে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:০৪

রোবোট বলেছেন: আপনার মামা একসময় খুব পরিচিত ছিলেন সাংবাদিক হিসেবে। উনি কি বিচিত্রায়ও লিখতেন? কিভাবে মারা গিয়েছিলেন?

১১ ই মার্চ, ২০১০ সকাল ১১:২৬

না_ম_হী_ন বলেছেন: জ্বী বিচিত্রায়ও লিখতেন।

বড় মামার হার্ট আ্যটাক হয়েছিল সেদিনই।

২| ১১ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:২৩

অলস ছেলে বলেছেন: আপনার লেখাটা মন ছুঁয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুন।

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:২৪

পারভেজ বলেছেন: উনার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৩৩

মুনশিয়ানা বলেছেন: পত্রিকার পাতায় আপনার মামার নাম অনেক দেখেছি, উনার অনেক লেখাও পড়েছি...।

মাসুদ আহমেদ রুমির জন্য অনেক শ্রদ্ধা।

৫| ১১ ই মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৩৫

হ্যামেলিন এর বাঁশিওয়ালা বলেছেন: অনেক শ্রদ্ধা ও দোয়া।

৬| ১১ ই মার্চ, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৩

না_ম_হী_ন বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদের সকলকে।

৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:৫৬

মামুন রাইয়ান বলেছেন: আমার সৌভাগ্য হয়েছে আপনার মামার সাথে কাজ করার। তিনি অনেক ভাল মানুষ ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন। তার স্নেহ পেয়ে আমি ধন্য। আপনার লেখায় একটি তথ্য সামান্য ভুল আছে। তা হলো তিনি বাসদ এ নয় কাজ করতেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা বাসস এ। আপনার লেখায় তার সম্পর্কে খুবই সামান্য তথ্য আছে। তিনি অনেক বড় মানুষ ছিলেন। তিনি নির্লোভ, দেশপ্রেমিক ছিলেন। তাই রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.