নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বন্ধু তোমার লাল টুক টুক স্বপ্ন বেচো না

জন্মের প্রয়োজনে ছোট ছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি

চতুরঙ্গ

করর্পরেট চাকর... সাধারন ভাবনা

চতুরঙ্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরী ও প্রলয়ের গল্প - প্রথম পর্ব

১২ ই মার্চ, ২০১৪ দুপুর ১২:০৭

অক্টোবর ২০১০



পরী,



জানি খুব অবাক হচ্ছেন। চতুর্থ প্রজন্মের যোগাযোগ মাধ্যমের এই যুগে সভ্যতার আদি যুগের এক মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করছি। নিতান্তই বাধ্য হয়েই এই মাধ্যমে আসতে হল। প্রথমতঃ আপনার মুঠোফোনের নম্বরটি আমার জানা নেই, দ্বীতিয়ত আমার নিজস্ব কোন মুঠোফোনও নেই আর শেষ কারনটি হচ্ছে আমি মোটেই বাকপটু নই। যতখানি আমি লিখে বলতে পারব তার এক ভাগও মুখে বলতে বা বলা যায় গুছিয়ে বলতে পারব কিনা সন্দেহ আছে। তাই এই মাধ্যমের ব্যবহারে অবাক হলেও অনুগ্রহ করে রাগ করবেন না।



আপনি হয়ত আমাকে চিনতেই পারেন নি.. কিংবা পেরেছেন। তবু আপনার সুবিধার্থে একটু নিজের ঢোল পিটিয়ে নেই। আপনার সাথে আমার একবারই দেখা হয়েছিল। সেটা নিতান্তই দেখাই বলা যেতে পারে। আপনি ছবির হাটে ইমনের দোকানে সেদিন সন্ধায় এসেছিলেন। আমরা আগুন জ্বালিয়ে গল্প করছিলাম। আপনি সেখানে এসে কিছুক্ষন সময় কাটিয়েছিলেন। ভেবেছিলাম আমাদের মাঝে যে ছেলেচি গান গাইছিল হয়ত তার গান কিংবা আগুনের উ¯œতা যেকোন একটি কিংবা হয়ত দুটিই আপনাকে টেনে এনেছিল এখানে। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি আপনি আমার বন্ধুদের পূর্ব পরিচিতা। আমি সেদিন সেখানেই বসে ছিলাম। যদিও বরাবরের মতই সেখানেও মুক হয়ে বসেছিলাম। ভয় পাবেন না.. বধির নই। শুনতে পাই। কথাও বলি কিন্তু একটু হয়ত কম। আমার নামটাই বলিনি। আমি প্রলয়। নানা ভয় পাবেন না। নামের কোন গুনাগুন আমার মাঝে নেই। বরং উল্টোটাই বেশি। তবুও ঠিক কোন আশায় বাবা-মা এই নাম রাখলেন ঠিক জানিনা।



এবার মূল প্রসঙ্গে আসি। জানি এতক্ষনে আপনার হয়ত ধৈর্য্যচুতিও হয়ে গেছে। কেন এত বিতং করছি আপনার সাথে। গত পরশু ফেবুতে এক পুরোনো বন্ধুকে খুজতে গিয়ে আপনার নাম দেখালো। সেখানে আপনার ছবির বদলে একটা বিড়ালের ছবি দেয়া ছিল। সেই বিড়ালকে আমার বন্ধু ভেবে অত্যন্ত উষ্মা প্রকাশ করে একটি চিঠি পাঠাই। সাথে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট। যেটি মূলত আমার ভেবে নেওয়া বন্ধুর বদলে আপনার কাছেই পৌছে। আজ সকালে মেসেজ বক্স দেখতে গিয়ে দেখলাম বিড়ালের ছবি বদলে আপনার ছবি..। আমি প্রচন্ড ভাবে লজ্জিত ও বিব্রত পুরো বিষয়টার জন্য। চিঠির উত্তর দেন বা না দেন, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট ইগনোর করেন বা একসেপ্ট করেন ক্ষমা প্রার্থনা করছি। অন্তত এটুকু করবেন। পুরো ঘটনার জন্য মরমে মরে যাচ্ছি।



ভালো থাকবেন এবং হাশি যেনো সব সময় আপনার সঙ্গী হয়।



প্রলয়।



মেঘবালিকা, কেমন আছো ?

রোদ পোহাতে আসবে কাল ?

মেঘবালিকা, তোমার নাকি

দু'চোখ জুড়ে বর্ষাকাল ?



আকাশ তোমায় দেয়নি চিঠি,

এই ভেবে কি মনটা ভার ?

বিষ্টি-কাজল মাখামাখি,

ঠুনকো অভিমান হাজার...



আমায় যদি বন্ধু ভাবো,

হাত বাড়িয়ে মন ছোঁবো

ওই দু'চোখে ঠাঁই যদি দাও

তোমার চোখের জল হব !!




পুনশ্চ : ঠিাকানাটা আপনার ফেবু থেকে পাওয়া। আপনার মুঠোফোনের নম্বর টা নাই কেন সেখানে?





-------------------------------------------------------------------------





অক্টোবর ২০১০





জনাব প্রলয়,



আপনার চিঠি পাবার পর আমি যারপরনাই বিস্মিত হইয়াছি। আমি সাধারনত কোন চিঠি পাইনা। সাধারনত বললে বরং ভুলই হবে। মাঝে মাঝে দু একটা আমন্ত্রন পত্র ছাড়া চিঠি বলতে আপনারটাই প্রথম। তাই ডাকপিয়নের হাতে হলুদ খামে আসা চিঠিটা নিতে প্রথম প্রথম অস্বস্তিতেই পড়ছিলাম।



সত্যি বলতে কি আপনাকে আমি এখনো চিনতে পারিনি। সেদিন আমি খুব অল্প সময়ের জন্য এসেছিলাম। কারো সাথে তেমন কোন কথাও হয়নি। অন্ধকার ছিল বলে তেমন করে দেখিওনি কাউকে। ফেইসবুকে আপনার দেয়া মেসেজটা আমি দেখেছি। পড়েই বুঝেছি ওটা আমার জন্য ছিলনা। তাই আমি সেটা নিয়ে ভাবিনি। আপনারো ওটা নিয়ে ওত বিব্রত না হলেও চলবে। তবু, আপনাকে আশ্বস্ত করার জন্যই বলছি ওই উষ্মা ভরা মেসেজটি ও পরবর্তী ক্ষমাপ্রার্থনা পূর্বক চিঠিটির জন্য না হলেও শেষের কবতিাটির জন্য আপনার ‍‍"ক্ষমা প্রার্থনা" গৃহীত হইল। কবিতাটি কার জানালে খুশি হবো।



পরী।



পুনশ্চত্তর : অকারনে বিরক্ত করে বলে মোবাইল নম্বরটা দেইনি ফেইসবুকে।



--------------------------------------------------------------------------





অক্টোবর ২০১০





পরী,



আপনার নামটা বেশ। প্রতিবার লিখতে গেলেই মন ভালো হয়ে যায়। ছোটবেলায় শোনা রুপকথার গল্পগুলো মনে পড়ে যায়।



অনেক ধন্যবাদ এত দ্রুত উত্তর দেয়ার জন্য। ওটা আসলে কবিতা নয়। ওটা একটা গান। অনন্ত রাহাত রাকীব এর লেখা আর গেয়েছিল চমক হাসান। খুব ভালো লাগে ওর গান। বুয়েটের কলকজ্বা নিয়ে গুতোগুতি করলেই যে রোবট হয়না সেটা যেনো আরেকবার প্রমান দিলো।



আপনি আবার কবে আসবেন ছবির হাটে? খুব বোকার মত প্রশ্নটা হয়ে গেলো। আমাকে চিঠি দিয়ে জানাবেন হয়ত ওমুক দিন আসবেন। পোষ্ট অফিসের কল্যানে সেটা হয়ত সেইদিন পার করে তিনদিন পর জানতে পারবো।



সেদিন সন্ধায় আগুনের পাশে যখন বসেছিলেন, লাল আভা যখন আপনার মুখে এসে পড়াছিল আপনাকে অপ্সরার মত লাগছিল। পটানোর জন্য বলছিনা, সত্যি বলছি।



ভালো থাকবেন এবং হাশি যেনো সব সময় আপনার সঙ্গী হয়।



প্রলয়।



কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা,

তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা।

বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে,

তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে?



না, বসবে না, আমি বলছি, লিখে নাও,

আকাশকে তো মহান মানি এ-কারণেই।

মনুষ্যবৎ হলে কি মানুষ তাকে মানতো?



প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়,

আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়।

তোমরা মানুষ, তাই সহজেই দুঃখ পাও,

হে ঈশ্বর, আমাকে আকাশ করে দাও।




পুনশ্চ : আপনার নামটা সুন্দর।





-------------------------------------------------------------------------



অক্টোবর ২০১০





প্রলয়,



চমক হাসানের কোন গান আমি আগে শুনিনি। আপনার কাছথেকে জানতে পেরে গত তিনদিন শুধু তারই গান শুনেছি। অনেক ধন্যবাদ এজন্য।



নাম টা নানু রেখেছিলেন। কেন তা জানতে পারিনি। তার আগেই উনি চলে গিয়েছেন। আচ্ছা, আপনার মতলব টা ঠিক বুঝতে পারছিনা। আমি খুব সাধারন। সাধারন ভাবে থাকি, খুব সাধারন জীবন যাপন করি, খুব সাধারন জামা পড়ি, খুব সাধারন ভাবেই সাজি। কিন্তু আপনার অতি সাধারন (অসাধারন) প্রশংসা গুলো আমার জন্য ঠিক মানায় না। তাই ঠিক বুঝতে পারছিনা আপনি হঠাৎ আমার এত প্রশংসা করছেন কেন।



আপনার কি কোন কারনে মন খারাপ ছিল সেদিন? কবিতা পড়ে তাই মনে হলো। এরপর কোন কবিতা লিখলে বা গান লিখলে দয়া করে নামটাও দিয়ে দিবেন। বারবার চাইতে গেলে নিজেকে কেমন গবেট গবেট মনে হয়। এ জীবনে কত কিছুই পড়িনি।



পরী।



পুনশ্চত্তর : ধন্যবাদ।





----------------------------------------------------------------------------





নভেম্বর ২০১০





পরী,



এবার উত্তর পেতে বেশ দেরি হল। পুরো ৭ দিন পর এলো।



জানি হয়ত বিশ্বাস করবেন না, তবু সত্যি করেই বলছি। আমার কোন মতলব নেই। যেটুকু ভালো লেগেছে সেটুকুই প্রকাশ করেছি মাত্র। এর বাইরে অন্য কিছু না। তবে হ্যা। বন্ধু হিসেবে আপনাকে আশা করতেই পারি। যদি এটাকে মতলব মনে করতে চান করতে পারেন।



সেদিন আমার মন আসলেই খারাপ ছিল। আমার একটা ছোট্ট কাঠবিড়ালি ছিল। অফিস থেকে ফিরলেই লাফ দিয়ে এসে আমার পকেটে ঢুকে বসে থাকত। মাঝে মাঝে পকেট থেকে মাথা বের করে দেখতো। সেদিন অফিস থেকে ফেরার পর কাঠবিড়ালি টা কাছে অসেনি। অনেক খোজাখুজির পর জানতে পারলাম বিড়াল মেরে ফেলেছে। প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি।



কবিতাটি নির্মলেন্দু গুণের। কবিতার নাম আকাশ ও মানুষ। পৃথিবীর সবকিছু পড়তে হবে বা জানতে হবে আর সব পড়লেই বা জানলেই জ্ঞানী হবেন এটা কিন্তু ঠিক না। লালন থেকে শুরু করে অনেকেরই কিন্তু পড়াশোনার কোন ইতিহাস জানা যায়নি। কিন্তু জ্ঞানের দিক থেকে কিন্তু কেউ কম যায়নি। আপনি কবিতাটি পড়েননি বলে নিজেকে গবেট ভাবছেন.. এটা কিন্তু ঠিক না। এত্ত এত্ত কবি, এত্ত এত্ত কবিতা.. সব কি এক জনমে পড়ে শেষ করতে পারবেন? সুতরাং ইনফিউরিটি কম্প্লেক্সে ভোগার কোন কারন নেই।



ভালো থাকবেন এবং হাশি যেনো সব সময় আপনার সঙ্গী হয়।



প্রলয়।



কোনো প্রাপ্তিই পূর্ণ প্রাপ্তি নয়

কোনো প্রাপ্তির দেয় না পূর্ণ তৃপ্তি

সব প্রাপ্তি ও তৃপ্তি লালন করে

গোপনে গহীনে তৃষ্ণা তৃষ্ণা তৃষ্ণা।



আমার তো ছিলো কিছু না কিছু যে প্রাপ্য

আমার তো ছিলো কাম্য স্বল্প তৃপ্তি

অথচ এ পোড়া কপালের ক্যানভাসে

আজন্ম শুধু শুন্য শুন্য শুন্য।



তবে বেঁচে আছি একা নিদারুণ সুখে

অনাবিষ্কৃত আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বুকে

অবর্ণনীয় শুশ্রূষাহীন কষ্টে

যায় যায় দিন ক্লান্ত ক্লান্ত ক্লান্ত।




পুনশ্চ : কবি ও কবিতার নাম দিলাম না। অন্তত এটুকু জানার জন্য যদি চিঠি লিখেন এই আশায়।



---------------------------------------------------------------------------





নভেম্বর ২০১০





প্রলয়,



আপনার চিঠি মাত্রই হাতে আসল। খুব কষ্ট পেলাম আপনার কাঠবিড়ালীর কথা শুনে। আমার একটা টিয়া পাখি ছিল। খাচায় না। খোলাই থাকত। নিজের মত করে ঘুরে বেড়াত। আমার কাধে বসে থাকত মেলা সময় ধরে। একদিন তাকেও হারাতে হল। এখনো মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি।



যাক সে কথা। বন্ধু হবার জন্য এত প্রশংসা করার দরকার নেই মশাই। আমি এমন কোন মহারথী নই যে আমার সাথে বন্ধুত্ব পাতাতে ঘি পোড়াতে হবে। আপনার নামটাও সুন্দর। একটু ভাঙচুর ভাঙচুর টাইপ যদিও... কিন্তু শুনতে ভালই লাগে।



ভাল থাকবেন।



পরী।



পুনশ্চত্তর : আপনি খুব পাজি। এবারের কবিতার নাম তৃষ্ণা, কবি হেলাল হাফিজ। দেখলেন তো, জানার পরও চিঠি লিখলাম আপনাকে।



(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.