নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বন্ধু তোমার লাল টুক টুক স্বপ্ন বেচো না

জন্মের প্রয়োজনে ছোট ছিলাম এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি

চতুরঙ্গ

করর্পরেট চাকর... সাধারন ভাবনা

চতুরঙ্গ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরী ও প্রলয়ের গল্প - পঞ্চম পর্ব

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:০৪

মার্চ, ২০১১



প্রলয়,



এতদিন তুমি আগে লিখতে আমি উত্তর দিতাম। আজ আর তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকতে পারিনি। তুমি চলে যাবার পর থেকেই প্রতিটা মূহুর্ত নিজের মাঝে তোমাকে অনুভব করছি। আমার স্বপ্নের ঘোর যেনো কাটতেই চাইছেনা। তুমি যখন চলে যাচ্ছিলে জানলার গ্রীল ধরে তোমার চলে যাওয়ার পথটুকুর একটি কনাও চোখের আড়াল হতে দেইনি। তুমি ফিরে ফিরে তাকিয়েছিলে তিন বার। একটা সময় খুব কষ্ট লাগছিল তখন। মনে খুব বাজে ভাবনা আসছিল। আর যদি ফিরে না আস?



আমি এখনো স্বপ্নের মধ্যেই ভাসছি। নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে। এই হাসছি, এক ছুটে যচ্ছি বারান্দায় মনে হচ্ছে তুমি গলির মুখে দাড়িয়ে হাসছ। নিজের কান্ড দেখে নিজেরই লজ্জা লাগছে। এই বয়সে টিন এজদের মত কি করছি আমি!!



আমার আর কোন দুঃখ কাজ করছেনা সত্যি। মনে হচ্ছে আমার জীবন আজ পরিপূর্ন হয়ে গেছে। নিজের ভেতর প্রচন্ড একটা প্রান শক্তি পাচ্ছি। যে আমি কোন দিন মাথা তুলে আকাশ দেখিনি সেই আমি আজ আকাশের তারার মাঝে তোমার ছবি একেঁছি, যে আমি শেষ কবে গান গেয়েছি মনে পড়েনি.. সেই আমি আজ গুনগুন করে না রীতিমত হেড়ে গলায় গান গেয়েছি... আমার এ বদলে যাওয়া সব তোমারি জন্য। যেনো এক জাদুর কাঠি দিয়ে আমার ভেতরের আমাকে এক মূহুর্তে জাগিয়ে দিয়ে গিয়েছ। কেন এমন করলে? আমাকে কেন এমন ভাবে গ্রাস করে নিলে.. আমার জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে তুমি রঙ্গীন করে দিয়ে গেলে। এখন বার বার কেবল তোমার কাছে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে সব স্বপ্নগুলো একসাথে সত্যি করতে।



প্রলয়.... জানিনা কবে তুমি মুখ ফুটে বলবে.. কিন্তু মেয়েরা এই কথাটা আগে শুনতেই ভালবাসে। কিন্তু আমি সে সময়টুকু পর্যন্ত অপেক্ষা আমি করতে পারবনা। তাই আমিই বলছি... ‍‍‌‌‌‍‍‌"অনেক ভালবাসি তোমাকে"। অনেক বেশি ভালবাসি, তোমার কল্পনাতীত। তোমার প্রতিটি চিঠি আমি প্রতিদিন একবার করে পড়ি। তোমার প্রতিটি চিঠি আমাকে তিল তিল করে তোমার করে দিয়েছে। মনে আছে রাগ করে একবার লিখেছিলাম আমাকে আর লিখবেনা। পোষ্ট করে প্রতিদিন প্রচন্ড কষ্ট নিয়ে অপেক্ষা করতাম। মনে হত যদি সত্যি তুমি আর না লেখ... তখন আমি কি করব। কিন্তু এর পরও যখন লিখলে চিঠিটা নিয়ে অনেক্ষন বুকের উপর রেখে কেদেছি। না.. কষ্টে না। আনন্দে। তোমাকে পাবার আনন্দে। এসব কথা কিছুই বলিনি এতদিন। আজ বললাম। কারন আজ আর কোন কিছুই গোপন করার নেই তোমার কাছে।



আমাকে কখনো ছেড়ে যেওনা প্রলয়। আমি বড় অভাগা। কোন কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। আর কিছুই চাইনা এ জীবনে। কেবল মাত্র তোমাকে আর তোমার ভালবাসা। আমাকে তোমার ভালবাসা দিয়ে আগলে রেখ সারাটা জীবন।



খুব লজ্জা লাগছে। কি সব লিখেছি। ভাবছ কি অসভ্য বেহায়া। হোলাম না হয়। তোমার কাছেই তো। তোমার কাছেই অসভ্য বেহায়া হতেও আমার কুন্ঠাবোধ হয়না। বড় বেশি ভালবাসি গো।



পরী।



কে জানে কখন মিশেছি আমরা

একে অপরের ভালোতে মন্দে

রন্ধ্রে রক্তে মিশে মিলে যাওয়া মোহনার মতো ।



আমাদের সব হাসি ও অশ্রু ভাগাভাগি কো্রে

নিয়েছি যেদিন - সেদিন ছিলো কি অপরূপ রাত

অর্ধেক চাঁদে আধেক আঁধারে ভেসে থাকা নীল ফুল্ল আকাশ !

সেদিন ছিলো কি সুখের মতো্ন বুকে এতোটুকু বেদনার দাহ !



জানি না কখন মিশে গেছে দুটি এলো্মেলো পথ

দুটি উদাসিন মাতাল হৃদয় দুটো সৈনিক

পেছনের পথ ভুলে এসে এক গড়েছে নতুন স্বাধীন সীমানা ।



আলোতে যেমন মিশে থাকে হাওয়া

তেমনি একটি আঁধারের অনু মিশে গেছে শাদা রোদের তনুতে

দুইটি নদী্র মোহনার মতো- জানিনা কখন , জানি না কখন !






পুনশ্চ : সারাদিন রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মাতাল মোহনা কবিতাটা আমার মাথা চিবিয়ে খাচ্ছে। পুরো চিঠিতে তোমার কথা একবারো জিজ্ঞেস করাও হয়নি। বলেছিলে বাসায় গিয়ে এসএমএস করবে। তাও তো করলেনা। শরীর কেমন তোমার? চোখের নিচে কালি টা কিন্তু কমছে না। রাগ জাগলে কিন্তু খুব রাগ করব। আমার রাগ কিন্তু ভয়াবহ। সুতরাং সাধু সাবধান।





------------------------------------------------------------------------





এপ্রিল ২০১০



প্রলয়



কই গো তুমি? আজ ১৫ দিন হয়ে গেল তোমার কোন চিঠি পাইনি। আমার চিঠিরো কোন উত্তরও দেওনি? চিঠি কি পেয়েছো? চিঠি টা কি তবে হারিয়েই গেলো?



সেদিনের পর থেকে প্রতিটা দিন খুব অস্থির ভাবে কাটছে। তোমাকে নিয়ে প্রচন্ড টেনশন হচ্ছে। আমার খুব টেনশন হলে বুক ব্যথা শুরু করে জানো তুমি। তবুও চিঠি দিচ্ছনা। প্রতিদিন একটা আশা নিয়ে ভোর হয়। ভাবি আজই হয়ত চিঠি পাব। বেলা যতই বাড়তে থাকে আশাটা ততই ক্ষীন হতে থাকে। সারাদিন বাসায় বসে থাকি। যদি কোন কারনে ডাকপিয়ন এসে না পায় আমাকে কিংবা যদি ভুলে অন্য কোন বক্সে ফেলে চলে যায়।



তোমার শরীর ভালতো? সেদিন ফিরতি পথে কোন বিপদ হয়নি তো? মুঠোফোনের যে নাম্বারটা দিয়েছ তাও বন্ধ পাচ্ছি। ফোন করলেই ধাতব কন্ঠে বলতে থাকে ”দ্যা মোবাইল ক্যান নট বি রিচড্ এট দ্যা মোমেন্ট”। প্রচন্ড রাগ হয় তার চেয়ে বেশি কষ্ট হয়। তোমার সাথে যোগাযোগ করার আর কিছুই তো আমার কাছে নেই। ফেইসবুকেও কতগুলো টেক্সট দিলাম। তারো কোন উত্তর দেওনি।



কি হয়েছে তোমার প্লিজ জানাও। আমি খুব কষ্টে দিন পার করছি। তোমার পরী প্রতিদিন রাতে বালিসে মুখ বুজে কাঁদছে তোমার জন্য। তুমি না বলেছিলে আর কোনদিন কাঁদতে না.. রাগ হলে তোমাকে খুব করে বকে দিতে। না গো.. তোমাকে বকবো না.. কিন্তু আমি সত্যি আর কান্না ঠেকাতে পারছিনা। প্লিজ তুমি কেমন আছ অন্তত এটুকু জানাও।



পরী।



তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর

তোমার চুলের ধোয়া জল

তুমি যেখানেই খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে

আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর

চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে

তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই

তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে

খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার

সেখানেই শরীর আমার হয়ে ওঠে রক্তজবা ফুল

তুমি যেখানেই ঠোঁট রাখো সেখানেই আমার চুম্বন

তোমার শরীর থেকে প্রবল অযত্নে

ঝরে যায়৷

আমি পোকা হয়ে পিচুটির মতো

তোমার ঐ চোখের ছায়ায় প্রতিদিন খেলা করে যাই

ভালোবেসে নিজেকে কাঁদাই

তুমি শাড়ির আঁচল দিয়ে আমাকে তাড়িয়ে দিলে

আমি রথ রেখে পথে এসে তোমারই দ্বৈরথে বসে থাকি

তোমার আশায়৷

তুমি যেখানেই হাত রাখো

আমার উদগ্রীব চিত্র থাকে সেখানেই৷

আমি যেখানেই হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা,

তুমি নেই।






পুনশ্চ: নির্মেলেন্দু গুনের তুলনামুলক হাত কবিতাটিই যেনো আমার জীবনের অংশের মত হয়ে আছে আজ কদিন। যত ভাবি আর মনে করবো না ততই মনে পড়ে... যত ভাবি কাঁদবো না ততই কান্না পায়।





------------------------------------------------------------------------





মে ২০১১,



প্রলয়,



আজ দেড় মাস ধরে তোমার কোন চিঠি পাইনা। তোমার মুঠোফোনটাও যথারীতি বন্ধ। এমনকি কদিন থেকে তোমার ফেইসবুক একাউন্ট টাও ডিএক্টিভেটেড। আমি সত্যি বুঝতে পারছিনা কি করব। তুমি কি আদৌ আমার চিঠি পাচ্ছ কিনা তাও জানিনা। তোমার বাসাও আমি চিনিনা। যে ঠিকানায় চিঠি দেই সেখানে খোঁজ নিব সেই সাহসও আমার নেই। তুমি জানো, আমি ঢাকার খুব কম জায়গা চিনি। আমার সর্বোচ্চ দুরত্ব রাইফেলস স্কয়ার পর্যন্ত। তোমার এলাকার নাম শুনেছি কিন্তু এটা কোনদিকে তাও জানিনা। কাউকে জিজ্ঞেস করব সেই উপায়ও নেই। হাজার টা প্রশ্নের মধ্যে পড়তে হবে সাথে সাথেই। তুমি যদি আমার চিঠি নাও পাও তবু তো নিজ থেকেই আমাকে লিখতে পারো। এতদিন তো তুমিই আগে লিখতে। এবারই আমি প্রথা ভেঙ্গে লিখেছি।



সত্যি করে বলেতো তুমি কি আমার উপর কোন কারনে রাগ করে আছ? যদি তাও হয় তবু তাই বলো। তোমার এই নিশ্চুপ থাকাটা আমাকেই যে জীবন্ত মৃত করে তুলছে। আমাকে আর কত খানি শাস্তি তুমি দেবে? কাদঁতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। আমার অপরাধ টুকু অন্তত বল। শুধরাতে না পারি তবু সান্তনা তো দিতে পারব অপরাধের সাজা পাচ্ছি জেনে। তোমার এই মৌনতার চেয়ে তোমার বকাও অনেক বেশি ভাল। তুমি না হয় ইচ্ছে মত কুৎসিত ভাষায় বকা দেও। তবু তুমি কিছু বল সোনা। আমি আর পারছিনা। আমার শরীর মন যেন স্থবির হয়ে আছে। সবার সামনে অভিনয় করছি আমি ভাল আছি কিন্তু আমার ভেতরে যে দহন তার খবর কেবল আমিই জানি। উদভ্রান্তের মত সারাদিন ঘরের এক কোনে চুপ করে বসে থাকি আর ভাবি সেদিন কি আমি কোন ভুল করেছি কিংবা কোন ভাবে তোমাকে কষ্ট দিয়েছি? না হয় ভুল করেছি হয়ত কষ্টও পেয়েছো তবে কি সেটা বলার অযোগ্য কিংবা ক্ষমার উর্ধে?



প্রলয়, জানিনা কেন জানি প্রচন্ড ভয় লাগছে। ঠিক ভয় না.. আতংক বলতে পার। প্রতি মুহুর্তে মনে হচ্ছে তোমাকে আর কখনো দেখতে পাবনা। এই ভাবনাটা যখনই মনের মাঝে আসে কেমন জানি হিম হয়ে যায় বুকের মাঝখানটায়.. সব কিছু অসাড় হয়ে যায়। তুমি সুস্থ আছ ভাল আছ এটুকুও যদি জানতে পারতাম তবুও হয়ত মন একটু শান্ত হত। তুমি অন্তত আমাকে এটুকুও জানাও। আমি আর কিচ্ছু জানতে চাই না।



আমার সব কষ্ট ভুলে গেছি আজ.. তোমার এমন নিরুদ্দেশ হওয়ার কষ্ট সব কষ্টকে ছাপিয়ে গেছে।



পরী।



কষ্ট নেবে কষ্ট

হরেক রকম কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।



লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট

পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,

আলোর মাঝে কালোর কষ্ট

মাল্টি কালার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।



ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট

দাড়ির কষ্ট

চোখের বুকের নখের কষ্ট,

একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।



প্রেমের কষ্ট ঘৃণার কষ্ট নদী এবং নারীর কষ্ট

অনাদর ও অবহেলার তুমুল কষ্ট,

ভুল রমণী ভালোবাসার

ভুল নেতাদের জনসভার

তাসের খেলায় দুইটি জোকার নষ্ট হবার কষ্ট আছে

কষ্ট নেবে কষ্ট।



দিনের কষ্ট রাতের কষ্ট

পথের এবং পায়ের কষ্ট

অসাধারণ করুণ চারু কষ্ট ফেরীঅলার কষ্ট

কষ্ট নেবে কষ্ট।



আর কে দেবে আমি ছাড়া

আসল শোভন কষ্ট,

কার পুড়েছে জন্ম থেকে কপাল এমন

আমার মত ক’জনের আর

সব হয়েছে নষ্ট,

আর কে দেবে আমার মতো হৃষ্টপুষ্ট কষ্ট






পুনশ্চ: কবি হেলাল হাফিজ হয়ত অনেক কষ্ট পেয়েই কোন একদিন এ কবিতাটি লিখেছিল। আমি কবিতা লিখতে পারিনা। ভাষার ব্যবহার জানিনা। তবু খুব সাদামাটা ভাবেই যদি বলি.. "প্রলয় অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার" তুমি কি বুঝবে তার মাত্রাটা কতখানি?





------------------------------------------------------------------------







জুলাই, ২০১১



প্রলয়,



রাত আসে ভোর হয়। আর আমি প্রতিটা রাত জেগে থাকি একই ভাবে। ঘুম কি জিনিস যেনো আজ ভুলেই গিয়েছি। শুধু মনে হয় সেদিন তুমি যখন গলি দিয়ে যাচ্ছিলে তখন কেন ছুটে গেলাম না, কেনো তোমার হাত ধরে বল্লাম না তুমি যেওনা কোথাও.. যদি যেতেই হয় তবে আমাকেও নিয়ে যাও। তাহলে তো তোমাকে হারাতে হতনা।



আমি আজো জানিনা তুমি কেন আমাকে এভাবে ফেলে চলে গেলে। এখনো প্রতিদিন সহস্রবার তোমার মুঠোফোনে বৃথা ফোন দেই.. সেই একই একঘেয়ে প্রতিউত্তর শুনি। জানি বন্ধই আছে তবু দেই.. যদি ভুল করেও কোনদিন খোলা থাকে। প্রতিটি ক্ষুদেবার্তা ঘুরে ফিরে আমার কাছেই ফিরে এসে বলে তোমাকে খুঁজে পায়নি। আন ডেলিভারড্। সেদিন বাধ্য হয়েই তোমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কথা। বলল তুমি ভালই আছ। অফিস করছ। দেখাও হয় প্রায়ই। মানুষের মন কত অদ্ভুত জানো। যেই আমি গত কয়েকমাস ধরে শুধু একটাই কামনা করছিলাম যেনো তোমার কোন বিপদ না হয়, যেনো তুমি ভাল থাক, সুস্থ থাকো। আমার আর কিচ্ছু চাইনা। অথচ সেদিন যখন শুনলাম তুমি সুস্থ আছ, ভাল আছ প্রচন্ড কষ্টে বুকটা যেনো ছিড়ে যাচ্ছিল। কেবল মনে হচ্ছিল তবে কেন তুমি একটি বারও আমার সাথে যোগাযোগ করলে না, কি অপরাধ ছিল আমার।



প্রলয়, জানিনা তুমি আদৌ আমার চিঠি পড় কিনা, হয়ত না পড়েই ওয়াস্ট বাস্কেটে ফেলে দেও। কিংবা পড়লেও সেগুলোর কোন মূল্যই তোমার কাছে নেই। অথচ জানো.. তোমার প্রতিটি চিঠি আমি যক্ষের ধনের মত বুকে আগলে রাখি। আমার খুব দুঃখ বিলাসিতায় পেয়েছে আজকাল। কোন কারন ছাড়াই চোখ দিয়ে পানি পড়ে। নাহ! ভুল বললাম... কারনটা তুমি। তুমি আমাকে নিঃশেষ করে দিয়েছো। মাঝে মাঝে মনে হয় বেশ তো ছিলাম আমি। আমার কোন স্বপ্ন ছিলনা, কোন চাওয়া পাওয়া ছিলনা, কোন আনন্দের উপলক্ষও ছিলনা। আমি আমার ব্যর্থতা, ক্ষুদ্রতা আর কষ্টগুলো নিয়ে তো বেশ ভালই ছিলাম। তুমি হঠাৎ ই এলে, আমার সব কষ্ট, দুঃখকে ভুলিয়ে দিলে.. আমাকে কত কত স্বপ্ন দেখালে আমাকে আনন্দের সাগরে ভাসালে। এর পর যেনো আমার সব আঁধার করে সেই সাগরেই ঝড় তুললে তুমি। আমাকে সব কিছু দিয়ে আবার সব কিছুই কেড়ে নিলে। তবে কেন জীবনটুকুও রেখে গেলে ? আমার তো এখন কেবল প্রানটুকুই আছে। এটুকু নিয়ে গেলেও তো বেঁচে যেতাম। এত কষ্ট সহ্য করতে হতনা।



এতদিন ভেবেছিলাম তোমার কোন বিপদ হয়েছে, নতুবা শরীর খারপ। হায়রে... এক জীবনে কত ভুল করে মানুষ। কত ভুলের পর মনে হবে ভুল করেছি অনেক আর না। এই যে তোমাকে লিখছি এখন, সারাদিন বসে তোমার কথাই ভাবছি সে ভুল জনি। কি করব বল, আমি যে পারিনা নিজেকে সামলাতে।



খুব অবাক লাগে তোমর চিঠি গুলো পড়তে গিয়ে। তবে এত কথা এত এত স্বপ্ন তার সবই কি বানানো। জানিনা সত্যিটা কি? হয়ত তুমিই বলতে পারবে। তবু কেন জানি আদোও বিশ্বাস করতে পারিনা ওই চিঠি গুলো বানানো। খুব জানতে ইচ্ছে করে তাই, ভুলটা তবে কোথায় ছিল? হয়ত এই উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই আমার বাকী জীবনটা কেটে যাবে।



ভালো থেকো।



পরী।



বেকসুর আমি তবু আমাকেই মৃত্যুদন্ড দিলে!

কী করে তোমার কাছে অপরাধী, এখনও জানি না;

কস্মিনকালেও আমি শত্রুতা সাধিনি, শুধু বীনা,

অলৌকিক, প্রেমময়, বাজিয়েছি। সেই সুরে ছিলে

মিশে তুমি বসন্তের পাতার গভীরে, শান্ত ঝিলে,

শস্যক্ষেতে নীলিমায়। এই কি আমার অপরাধ?

আমার সর্বস্ব দিয়ে রাত্রিদিন একটি নিখাদ

প্রেমস্বপ্ন গড়ি, তা-ও ভেঙ্গে যায় কী কর্কশ ঢিলে।



আমাকে পাঠালে নির্বাসনে, দিলে দন্ড ভয়ংকর।

তোমার সান্নিধ্য থেকে, অমন দৃষ্টির থেকে দূরে,

বহুদুরে চকিতে সরিয়ে দিলে- এই শাস্তি, বলো,

মৃতের চেয়েও বেশি, ঢের বেশি নয় কি কঠোর?

তুমি কি দেখতে চাও সর্বদা আমার ছলছল চোখ?

চাও আমার হৃদয় খাক কীট কুরে-কুরে?






পুনশ্চঃ আমার এলোমেলো জীবনটকে মেনেই নিয়েছিলাম। এখন সেই এলোমেলো জীবনটাই লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এটাকে কেন জানি আর মেনেই নিতে পারছিনা। প্রতিদিন একবার করে বাঁচি আর প্রতিরাতেই একবার করে মরি। এটাই মনে হয় আমার প্রাপ্তি তোমার কাছে। তুমি অনেক কবিতা ভালবাস। হয়ত কবিকেও। অামাকে না হয় নাই বাসলে, শামসুর রহমান অথবা তার মৃত্যুদন্ড কবিতার দোহাই... একবার অন্তত কিছু বল।





-----------------------------------------------------------------------





সেপ্টেম্বর ২০১১,



প্রলয়,



ভেবেছিলাম আর লিখবনা তোমাকে। এতদিনে যখন একটিও উত্তর মেলেনি তখন আমার আগের সব চিঠির উত্তর গুলোর আমার জানা হয়ে গেছে। তবু কেন জানি না লিখে পারলাম না। হয়ত ভালবাসা মানেই এমন। যত পালাতে চাই ততই যেনো ফিরিয়ে নিয়ে আসে। অবাকই হচ্ছ জানি। এতদিনেও কেন ভালবাসা মজে যায়নি। নাহ! আসলেই যায়নি। খুব বেশি দিন তোমাকে চিনি তা নয়। খুব অল্প কিছু সময়। তবু পারিনি আজো সেই অল্প সময়ের দিন গুলোকে ভুলে যেতে। কারো সাথে এক যুগ কাটানোর পরও ভালবাসা তো দুরের কথা মনের মিলটুকুও হয়না আর কারো সাথে এক মুহুর্তের দেখাতেই মনে হয় জনম ধরেই চিনি, আজ তারই ভালবাসা এখনো আমাকে কাদিঁয়ে বেড়ায়। ভালবাসা রংটাই হয়ত এমন।



আজ অনেকদিন পর হঠাৎই কেন জানিনা আয়নায় নিজেকে দেখলাম। যে চোখ দেখে তুমি তোমার সর্বনাশ দেখেছিলে আজ সেই চোখটাই যেনো সর্বনাশার দ্বার প্রান্তে। কোটরের অনেক খানি ভেতরে ঢুকে যেনো পালাতে চাইছে। চুল কাটতে খুব বারন করেছিলে। না কাটিনি। তুমি খুব বেশি কিছু চাওনি। এটুকুই চাওয়া ছিল। কিন্তু চুলের অনেক খানি হঠাৎই সাদা হয়ে উকি দিয়ে আমাকেই বিদ্রুপ করছে। জানিনা কেন.. আজ খুব সাজতে ইচ্ছে হল। খুব যত্ন করে চুলে মেহেদি দিলাম। চোখে কাজল পড়লাম। আমি শাড়ি পড়তে পারিনা। আজ অনেক সময় নিয়ে তাও পড়লাম। মনে হল.. আচ্ছা যদি কখনো ফিরে আস। যদি কখনো এই পরীর কথা তোমার মনে পড়ে। যদি হঠাৎই অামার সামনে এসে দাড়াও.. তখন আমার এই ভগ্নদশা দেখে যদি আবারো হারিয়ে যাও। হাহ হাহ হাহ। কি উদ্ভট অদ্ভুত ভাবনা আমার। সেদিন আর কখনোই আসবেনা। আমার গেছে যে দিন তা চীরতরেই গেছে। আমার তারা রাতে গভীরেও জ্বলেনা, দিনের আলোতেও নেই। আয়নার সামনে বোকার মত কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলাম। কি বোকা আমি? আজো তোমার পথ চেয়ে বসে আছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই কাজলের সাথে পানি মিশে সারা মুখ লেপ্টে গেলো। মুছলাম না। কি হবে মুছে। কে দেখবে আমায়। নিজের চেহারাও নিজেরে কাছে অসহ্য লাগে।



মানুষ আঘাত পেলে শক্ত হয়। কিন্তু তোমার দেওয়া আঘাতে আমি পারিনি আজো শক্ত হতে। পারবোওনা কোনদিন। যে যায়গায় তুমি আঘাত করেছ সে জায়গাটি যে আমার মাঝেও নেই। মনটা তো তোমার কাছেই রয়ে গেল। ফিরেয়ে আনব সে সাধ্যও নেই আমার।



হয়ত তোমাকে ভালবাসি কথাটা বলা ভুল হয়েছে। হয়ত তখন থেকেই খুব সচেতন ভাবেই আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছ। কিন্তু কি করব বল। তোমার কাছে তো আমার লুকোনোর কিছুই নেই। ভালবাসি একথাটাও লুকানোর কিছুই ছিলনা। আমার স্বত্তা আর তোমার স্বত্তার মাঝে তো কোন সীমারেখাও টানিনি। তাই অকপটেই বলেছিলাম.. আমার বলার ও শোনার জন্য তুমিই ছিলে।



প্রলয়, আমি কখনো স্বপ্ন দেখিনা, দেখতে চাইও না। তুমি আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছো।বৃষ্টিতে ভেজা,কবিতা পড়েনো সবই তোমারি অবদান। আর তাই আজো অপক্ষোতেই আছি যদি কখনো সামনে এসে দাড়াও যদি কখনো আবারো পরী ডাকো, আমাকে তোমর দ-বাহুতে ঠাঁই দেও। জানি আসবেনা, জানি উত্তরও আসবনা তবু আশা কির.. তুমিই তো বলতে স্বপ্ন দেখো... আমি তাই করি... আজো তোমাকে ঘিরে জমে থাকা স্বপ্ন গুলো কল্পনাতেই দেখি।



ভাল থেকো।



পরী।



কেবল তোমার জন্য

কত সহস্র রাত জেগে কাটালাম

কতো দীর্ঘ শীতরাত্রি পাড়ি দিলাম,

সমুদ্রে ভাসালাম ভেলা

কিন্তু তোমার অভিমান ঘুচলো না,

অভিমান ঘুচলো না ।



সেই যে তুমি গেলে

আসবো আসবো করে

আর ফিরে এলে না,

আমার বুকে কত পাথর গলে জল হলো

ফুল ফুটলো, ঝরে গেলো,

শিশির ঝরে ঝরে ভিজিয়ে দিলো মাটির তপ্ত বুক

কিন্তু তুমি সেই যে গেলে ফিরে এলে না,

ফিরে এলে না ।



কেবল তোমার জন্য

কত সহস্র শীতরাত্রি

এভাবে জেগে কাটালাম,

পাড়ি দিলাম কতো বরফযুগ

সমুদ্রে ভাসিয়ে দিলাম এই ছোট্ট ভেলা,

কিন্তু তোমার অভিমান ভাঙলো না

অভিমান ভাঙলো না






পুনশ্চঃ মহাদেব সাহার তোমার অভিমান কবিতাটিও তোমার অভিমান ভাঙতে পারবেনা জানি। উত্তর দিবে সে কথা বলবও না। তোমাকে কোন উত্তর দিতে হবে না। ভয় পেয়েনো। তোমাকে কেড়ে আনবার কিছুই আমার নেই শুধু ভালবাসা টুকু ছাড়া।





--------------------------------------------------------------------------





নভেম্বর, ২০১১



প্রলয়,



আজ হঠাৎই দেখলাম তোমার ফেসবুক একাউন্ট এক্টিভেটেড। বন্ধুদের মাঝে হাস্যজ্জল হয়ে বসে আছ। নাহ! রাগ হয়নি, কষ্ট যেটুকু সেটা সারাজীবনের অংশই হয়ে আছে এখন। বরং তোমাকে দেখে ভাল লেগেছে। কতদিন পর দেখলাম তোমাকে। অথচ কি বোকার মত তোমার চোখে নিজেকে খুজঁলাম ছবিতে তখন। পেলাম না। পাবো না জানি।



মাঝে মাঝে মনে হয় তুমি আমাকে কত সস্তা ভেবেছ। তখন নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হয়, ঘৃনা হয়। আবার ভাবি.. ভুল তো কিছু করিনি। যাকে ভালবেসেছি তার হাতেই তো সপে দিয়েছিলাম নিজেকে। অথচ কি আশ্চর্য জানো। আমি তোমাকে ঘৃনা করতে পারিনা। পারিনা তোমার উপর প্রচন্ড রাগ করতে। পারিনা তোমাকে ভুলে এক মুহুর্ত কাটাতে। কোন সুন্দর কিছু দেখলে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে আমি দেখতে চাইনা তোমাকে ছাড়া এ সৌন্দর্য্য। আমার সবকিছুই ম্লান, সব কিছু বিবর্ন। কোন কিছুই আমাকে স্পর্শ করেনা।



জানি আমি খুবই অপাংতেয় তোমার কাছে। জানি এসব কিছুই ছোয়না তোমাকে। তবে তবু কেন বলি তোমাকে? আমার যে কেউ নেই তুমি ছাড়া। না হয় আমি তোমার কোন কালেরই কিছু ছিলাম না। কিন্তু তুমি তো আমার সবটুকুই জুড়ে আছো আজো, থাকবে সারা জীবন। তোমাকে না বলে আমি কার কাছে বলব। তোমার হাতে পৌছায় কিনা জানিনা, পড় কিনা তাও জানিনা, উত্তর দিবে সেও আশাও আর করিনা... তবু এটুকু শান্তনা... আমার প্রলয়কে অন্তত মনের কথাটুকু বলে হালকা হতে পারি।



ভাল থেকো।



পরী।



তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি

তোমাকে ছাড়াতে গিয়ে আরো বেশি গভীরে জড়াই,

যতোই তোমাকে ছেড়ে যেতে চাই দূরে

ততোই তোমার হাতে বন্দি হয়ে পড়ি,

তোমাকে এড়াতে গেলে এভাবেই

আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা পড়ে যাই

এভাবেই সম্পূর্ণ আড়ষ্ট হয়ে পড়ি;

তোমাকে ছাড়াতে গেলে আরো ক্রমশ জড়িয়ে যাই আমি

আমার কিছুই আর করার থাকে না।



তুমি এভাবেই বেঁধে ফেলো যদি দূরে যেতে চাই

যদি ডুবে যেতে চাই

তুমি দুহাতে জাগাও।

এমন সাধ্য কী আছে তোমার চোখের

সামান্য আড়াল হই,

দুই হাত দূরে যাই

যেখানেই যেতে চাই সেখানেই

বিছিয়ে রেখেছো ডালপালা,

তোমাকে কি অতিক্রম করা কখনও সম্ভব

তুমি সমুদ্রের চেয়েও সমুদ্র

আকাশের চেয়েও আকাশ তুমি আমার

ভেতরে জেগে আছো।



তোমাকে ভুলতে চেয়ে তাই আরো বেশি ভালোবেসে ফেলি,

তোমাকে ঠেলতে গিয়ে দূরে

আরো কাছে টেনে নেই

যতোই তোমার কাছ

থেকে আমি দূরে যেতে চাই

ততো মিশে যাই নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে,

ততোই তোমার আমি হয়ে পড়ি ছায়ার মতন;

কোনোদিকে যাওয়ার আর একটুও

জায়গা থাকে না

তুমিই জড়িয়ে রাখো তোমার কাঁটায়।



তোমাকে ছাড়তে গিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে আরো জড়িয়েছি

তোমাকে ভুলতে গিয়ে আরো ভালোবেসেছি তোমাকে।






পুনশ্চঃ সকালে মহাদেব সাহার "তোমাকে ভুলতে চেয়ে আরো বেশী ভালোবেসে ফেলি" কবিতটি খুব কষ্ট দিচ্ছিল। তখন ভেবেছিলাম তোমার চিঠি গুলো একবার ইচ্ছে হল নষ্ট করে ফেলব। পারলাম না। মনে হল তোমাকে নাই বা পেলাম। তোমার একটু খানি স্মৃতি তো আমার হয়ে থাকল। আমার এইটুকুন জীবনে এও বা কম কিসের। এই চিঠিগুলো পড়তে পড়তে ছোট্ট জীবনটা অনায়েশেই পার করে দেওয়া যায়।



(চলবে কিংবা হয়ত এটাই শেষ পর্ব)



পরী ও প্রলয়ের গল্প - প্রথম পর্ব



পরী ও প্রলয়ের গল্প - দ্বীতিয় পর্ব



পরী ও প্রলয়ের গল্প - তৃতীয় পর্ব



পরী ও প্রলয়ের গল্প - চতুর্থ পর্ব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.