নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আসল নাম নাহিদ হোসেন, ব্লগ যেহেতু সীমিত তাই আমাকে নক করতে পারেন এই ঠিকানায়: about.me/nahidh

নাহিদ০৯

ভালোবাসি বাংলা

নাহিদ০৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঢোপকল - ঐতিহ্যবাহী পানি সরবরাহ প্রকল্প

০২ রা নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:০৫



ঢোপকল রাজশাহী শহরের অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্য। এ ঢোপকলের সঙ্গে রাজশাহীর সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য জড়িত। মহারাণী হেমন্ত কুমারীর প্রচেষ্টা ও অনুদানে ১৯৩৭ খ্রীষ্টাব্দে রাজশাহী বাসীর জন্য সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে পানি সরবরাহ প্রকল্প মহারাণী হেমন্ত কুমারী ওয়াটার ওয়ার্কস নির্মিত হয় যার অন্যতম নিদর্শন রাজশাহী শহরে অবস্থিত এই ঢোপকলসমূহ।

এই ঢোপকল তৈরীর সময়ে রাজশাহী পৌরসভার (বর্তমানে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন) দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলেন রায় ডি এন দাশগুপ্ত। সে সময় রাজশাহী শহরে পানযোগ্য পানির খুব কষ্ট ছিল। বিশুদ্ধ পানির খুবই অভাব ঘটেছিল তখন। যার ফলশ্রুতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল কলেরা-আমাশয় সহ নানারকম পেটের পীড়া। বেশ কিছু লোকের মৃত্যুও ঘটেছিল সেই সময় এই অসুখের জন্য।

রায় ডিএন দাশগুপ্ত রাজশাহী পৌরসভার চেয়ারম্যান (১৯৩৪-৩৯) থাকাকালে রাজশাহী অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় নগরবাসীকে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেন। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাস্তার মোড়ে মোড়ে পানির কল স্থাপন করা হবে। ১৯৩৭ সালের অগাষ্ট মাসের কোন একটি দিনে মিনিষ্ট্রি অব ক্যালকাটার অধীনে রাজশাহী ওয়াটার ওয়াকর্স নামে পানি সরবরাহ ও বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়। এবং ব্যায় করা হয় প্রায় আড়াই লক্ষাধিক টাকা। এই কাজে নগরীর নামকরা ধণী লোকেদের এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করা হয়। সেই সূত্র ধরেই মহারাণী হেমন্তকুমারী নিজেই দান করেন প্রায় ৬৫ হাজার টাকা। বিশাল অঙ্কের একক অনুদানের কারণে রাজশাহী জেলা বোর্ডের দান করা জমিতে মহারানী হেমন্ত কুমারীর নামেই ওয়াটার ওয়ার্কস স্থাপিত হয়। কালক্রমে তার নাম হেমন্তকুমারী ঢোপকল নামেই পরিচিত হতে থাকে।

রাজশাহী শহরে এখনো টিকে থাকা কিছু ঢোপকলের ছবি সংগ্রহ করে উইকিপিডিয়ায় যোগ করেছিলাম। এদের কিছু কিছু স্থানীয় ভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে, কিছু হয়েছে বিলুপ্ত আবার কিছু কোনরকম ভাবে পড়ে আছে ভগ্ন দেহ নিয়ে। নিচে তার কিছু ছবি যোগ করলাম।





পুরো শহর জুড়ে প্রায় শতাধিক এমন ঢোপকল স্থাপন করা হয়। মহারাণী হেমন্তকুমারী পানি শোধন কেন্দ্রে পানিকে বিভিন্ন ট্রিটমেন্ট করে পানি থেকে আয়রন ও পানির ক্ষারতা দুর করা হতো। তারপর সেটা সরবরাহ করা হতো সেই ঢোপগুলোতে। তবে সর্বপ্রথমে সেটা পাথরকুঁচির ফিল্টার দিয়ে পানি ফিল্টার করা হতো। এরপর সেটা সিমেন্টের তৈরী মোটা পাইপের সাহায্যে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হতো।

এই ঢোপকলগুলোর প্রতিটির পানি ধারণক্ষমতা ৪৭০ গ্যালন। প্রতিটি ঢোপকলেই ছিল একটি 'রাফিং ফিল্টার'। এতে বালি ও পাথরের স্তর থাকায় সরবরাহ করা পানি আরও পরিশোধিত হয়ে বের হতো এবং গরমের সময় মোটামুটি ঠান্ডাও থাকতো। সেই সময় সারাদিনে মাত্র দুই ঘণ্টা পানি সরবরাহ করা হতো। মোড়ে মোড়ে ঢোপকলগুলোতে পানি ধরে রাখা হতো। ফলে সারাদিনই পানি পাওয়া যেত।

প্রায় প্রতি দুই মাস পর পর এই ঢোপকল গুলোকে পরিষ্কার করা হতো। পরিষ্কারের নিয়মটি ছিল খুবই ভালো। এই ঢোপকলের উপরের ঢাকনাটি খোলা যেত। তারপর ভিতরে মানুষ নেমে ব্লিচিং পাউডার ও অন্যান্য জিনিস দিয়ে সেটা পরিষ্কার করতো। প্রতি দুই মাস পর পর প্রত্যেকটি ঢোপকল থেকে পানির স্যাম্পল সংগ্রহ করা হতো। পরে সেটা পাঠানো হতো পরীক্ষাগারে পানির মান ঠিক আছে কিনা সেটা দেখার জন্য। বর্তমানে এই ঢোপকল প্রায় বিলুপ্ত। শহরের স্মৃতি বলতে ২-১ টি ঢোপকল রয়েছে। যার মধ্যে একটি কুমারপাড়ায় অবস্থিত।

ঢোপকল গুলো লম্বায় প্রায় ভুমি থেকে ১২ ফুট উঁচু এবং ব্যাস প্রায় ৪ ফুট। ঢোপকলগুলো তৈরী করা হয়েছিল সিমেন্টের ঢালাই করে। এই ঢোপকলের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঢেউ খেলানো একটা প্লাষ্টার করা হতো। যে নকশাটা করা হতো টিনের সাহায্যে। চারিদিকে টিনের একটা রাউন্ড বানিয়ে তার মধ্যে সিমেন্ট আর ইটের খোয়ার ঢালাই ঢেলে দেয়া হতো। এর ঢালাই খুবই শক্ত। সহজে কোন কিছুর ধাক্কায় বা আঘাতে এটা ভাঙ্গে না।

- নিবন্ধটি সর্বপ্রথম উইকিপিডিয়ার জন্য লিখেছিলাম।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৫

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পড়লাম...

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

নাহিদ০৯ বলেছেন: ধন্যবাদ। সেইফ হওয়ার আগের লিখা এগুলা। সেইফ ছিলাম না বলে লিখতে ইচ্ছে হতো না, আর কিছু না লিখলেও সেইফ হচ্ছিলাম না দেখে লিখা।

আপনি কষ্ট করে যে পড়লেন তাতে আমি ‍খুব আনন্দিত হয়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.