নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://www.facebook.com/nana.bhai.5209

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। https://www.facebook.com/nana.bhai.5209

নানাভাই

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। https://www.facebook.com/nana.bhai.5209

নানাভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার’...স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম আলোচিত ক্রসফায়ার সিরাজ সিকদার হত্যা

০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:২৮



সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার—১৯৭৫ সালের ইংরেজি নববর্ষের দ্বিতীয় দিন। এইদিন রাতে (২ জানুয়ারি) রাতে ‘পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি’র প্রধান নেতা সিরাজুল হক সিকদার ওরফে সিরাজ সিকদার তত্কালীন সরকারের নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে হত্যার শিকার হন। এর আগের দিন অর্থাত্ ১৯৭৫ সালে ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রেফতার হন সিরাজ সিকদার। এ দিনই তাকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আনা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে তত্কালীন শেখ মুজিবুর রহমানের সরকারের আমলে প্রথম আলোচিত ক্রসফায়ারের এই ঘটনার বিবরণ পুলিশের প্রেসনোটের উদ্ধৃতি দিয়ে ছাপা হয় সেই সময়ের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজ শিকদার গ্রেফতার হওয়ার পর তার পার্টি-কর্মীদের কয়েকটি গোপন আস্তানা এবং তাদের বেআইনি অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার স্থানে পুলিশকে নিয়ে যেতে রাজি হন। সে অনুযায়ী ২ জানুয়ারি রাতে একটি পুলিশ ভ্যানে তাকে ওইসব আস্তানায় নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাভারের তালবাগ এলাকায় ভ্যান থেকে লাফিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ গুলিবর্ষণ করলে তত্ক্ষণাত্ ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে সাভার থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

অন্যদিকে সিরাজ শিকদার হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৭ বছর পর ১৯৯২ সালের ৪ জুন সিরাজ সিকদার পরিষদের সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন আহমদ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করেন। সিরাজ সিকদারকে গ্রেপ্তার ও হত্যার বিবরণ দিয়ে এ মামলার আর্জিতে বলা হয়, ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর বিশেষ স্কোয়াডের অনুগত সদস্যরা গণভবনে মরহুম শেখ মুজিবের কাছে সিরাজ সিকদারকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। সেখানে শেখ মুজিবের সঙ্গে তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলীসহ আসামিরা, শেখ মুজিবের ছেলে মরহুম শেখ কামাল এবং ভাগ্নে মরহুম শেখ মনি উপস্থিত ছিলেন। সে সময় আসামি মাহবুব উদ্দিন তার রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সিরাজ সিকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। এর পর শেখ মুজিব, মনসুর আলী এবং আসামিরা সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং মাহবুব উদ্দিন আহমদ নির্দেশ দেন। মাহবুব উদ্দিন আহমদ অন্য আসামিদের সঙ্গে বন্দি সিরাজ সিকদারকে শেরে বাংলানগর রক্ষীবাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যান। সেখানে তার ওপর আরও নির্যাতন চালানো হয় এবং ২ জানুয়ারি আসামিদের উপস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রক্ষীবাহিনীর সদর দফতরেই সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে বিশেষ স্কোয়াডের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পনা মতো বন্দি অবস্থায় নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ সাভারের তালবাগ এলাকা হয়ে সাভার থানায় নিয়ে যায় এবং সাভার থানা পুলিশ পরের দিন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

অর্থাত্ পুলিশের প্রেসনোট এবং সিএমএম আদালতে দায়ের করা মামলায় সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে দু’রকম তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ হত্যাকাণ্ড বিষয়ে তত্কালীন সরকারপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান দম্ভের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘কোথায় আজ সেই সিরাজ সিকদার’। মুজিব সরকারের আমলে ক্রসফায়ারে সিরাজ সিকদারকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা এবং তাকে নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমানের ওই উক্তি দেশের রাজনীতিতে নানা সমালোচনা ও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও সাংবাদিকরা তাদের লেখায় সিরাজ সিকদার হত্যাকাণ্ডকে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি অমার্জনীয় অপরাধ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রয়াত বুদ্ধিজীবী ড. আহমদ শরীফ ‘বিপ্লবী বীর সিরাজ সিকদার প্রসঙ্গে’ শিরোনামে এক লেখায় বলেন, ‘সিরাজ সিকদার আজ আর কোনো ব্যক্তির নাম নয়। সিরাজ সিকদার একটি সংকল্পের, একটি সংগ্রামের, একটি আদর্শের, একটি লক্ষ্যের ও একটি ইতিহাসের অধ্যায়ের নাম। এ মানবতাবাদী সাম্যবাদী নেতাকে হাতে পেয়ে যেদিন প্রচণ্ড প্রতাপ শঙ্কিত সরকার বিনা বিচারে খুন করল, সেদিন ভীতসন্ত্রস্ত আমরা তার জন্য প্রকাশ্যে আহা শব্দটি উচ্চারণ করতেও সাহস পাইনি। সে গ্লানিবোধ এখনও কাঁটার মতো বুকে বিধে।’

বিশিষ্ট রাজনীতিক মাহমুদুর রহমান মান্না ‘খবরের কাগজ’-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে লেখেন, ‘সিরাজ সিকদার একজন অসাধারণ যোগ্যতাসম্পন্ন সংগঠক ছিলেন। আমি যদ্দূর জানি, একথা তার ঘোর সমালোচকরাও স্বীকার করেছেন। সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর ঘটনাটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে— ইতিহাসের একটি বর্বরতম ঘটনা। আমরা মধ্যযুগ কিংবা হিটলার মুসোলিনির আমলে এ ধরনের বর্বরতম ঘটনার নিদর্শন পাই। বুর্জোয়া যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কথা বলে থাকে আজকাল, এমনকি আমাদের দেশেও, তাতে সিরাজ সিকদার অপরাধ করে থাকলেও তার বিচার পাবার দাবি তো উপেক্ষিত হতে পারে না। সিরাজ সিকদার যে বিচারবঞ্চিত হয়েছিলেন, সরকারি প্রেসনোটে তখন যা উল্লেখ করা হয়েছিল (জিপ থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার গুলিতে তিনি নিহত হন) তা যে বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে না। একথা যারা এ প্রেসনোট নিয়েছিলেন তারাও স্বীকার করবেন। আর সব চেয়ে ন্যক্কারজনক হলো তত্কালীন সংসদে প্রধানমন্ত্রীর উল্লসিত আস্ফাালন— কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’

সিরাজ সিকদারের মৃত্যুর পর পুলিশের প্রেসনোটের উদ্ধৃতি দিয়ে ১৯৭৫ সালের ৩ ও ৪ জানুয়ারি দৈনিক ইত্তেফাক যথাক্রমে ‘গ্রেফতারের পর পলায়নকালে পুলিশের গুলিতে সিরাজ সিকদার নিহত’ এবং ‘সিরাজ সিকদারের লাশ দাফন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদন দুটি এবং ৯২ সালে দায়ের করা সিরাজ সিকদার হত্যা মামলার আংশিক বিবরণী তুলে ধরা হলো :

গ্রেফতারের পর পলায়নকালে

পুলিশের গুলিতে সিরাজ

সিকদার নিহত

গতকাল (বৃহস্পতিবার) শেষ রাত্রিতে প্রাপ্ত পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে, ‘পূর্ববাংলার সর্বহারা পার্টি’ নামে পরিচিত একটি গুপ্ত চরমপন্থী দলের প্রধান সিরাজুল হক সিকদার ওরফে সিরাজ সিকদারকে পুলিশ ১লা জানুয়ারি চট্টগ্রামে গ্রেফতার করেন। একই দিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাহাকে ঢাকা পাঠানো হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি স্বীকারোক্তিমূলক এক বিবৃতি দেন এবং তাহার পার্টি কর্মীদের কয়েকটি গোপন আস্তানা এবং তাহাদের বেআইনি অস্ত্র ও গোলাবারুদ রাখার স্থানে পুলিশকে লইয়া যাইতে রাজী হন। সেইভাবে ২রা জানুয়ারি রাত্রে একটি পুলিশ ভ্যানে করিয়া তাহাকে ওইসব আস্তানার দিকে পুলিশ দল কর্তৃক লইয়া যাইবার সময় তিনি সাভারের কাছে ভ্যান হইতে লাফাইয়া পড়িয়া পলায়ন করিতে চেষ্টা করেন। তাহার পলায়ন রোধ করার জন্য পুলিশ দল গুলিবর্ষণ করিলে তত্ক্ষণাত্ ঘটনাস্থলেই তাহার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে সাভারে একটি মামলা দায়ের করা হইয়াছে।

“এখানে উল্লেখ করা যায় যে, সিরাজ সিকদার তাহার গুপ্ত দলে একদল দুর্বৃত্ত সংগ্রহ করিয়া তাহাদের সাহায্যে হিংস্র কার্যকলাপ, গুপ্তহত্যা, থানার উপর হামলা, বন অফিস, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ইত্যাদির উপর হামলা, ব্যাংক, হাটবাজার লুট, লঞ্চ ট্রেন ডাকাতি, রেললাইন তুলিয়া ফেলার দরুন গুরুতর ট্রেন দুর্ঘটনা, লোকজনের কাছ হইতে জোর করিয়া অর্থ আদায়ের মতো কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করিয়া আসিতেছিলেন। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৩ জানুয়ারি ১৯৭৫)

সিরাজ সিকদারের লাশ দাফন

(ইত্তেফাক রিপোর্ট)

নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ গতকাল (শুক্রবার) তাঁহার পিতা জনাব আবদুর রাজ্জাক সিকদার কর্তৃক শনাক্তকরণের পরে সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর গোরস্তানে দাফন করা হইয়াছে। গতকাল সকাল সোয়া ১১টার দিকে তাঁহার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়।

পুলিশের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় : “সিরাজুল হক সিকদার ওরফে সিরাজ সিকদারকে গত ১লা জানুয়ারি চট্টগ্রাম হইতে গ্রেফতার করিয়া ঐদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় আনা হয় এবং তাঁহার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গত ২রা জানুয়ারি রাত্রে একটি পুলিশের ভ্যানে তাঁহাকে তাঁহার দলের লোকদের একটি গোপন আস্তানার দিকে লইয়া যাওয়ার সময় তিনি পালায়নোর চেষ্টা চালাইলে পুলিশ গুলি চালায় এবং জনাব সিকদার ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।” এই ঘটনা রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাভারের তালবাগ এলাকায় ঘটে বলিয়া জানা গিয়াছে।

রাত ৩টায় দিকে জনাব সিকদারের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়। গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে ময়নাতদন্ত হয়। তাঁহার শরীরে ৫টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গিয়াছে। ৪টা বুলেট দেহ ভেদ করিয়াছে। একটি বুলেট ফুসফুসের ভিতরে পাওয়া গিয়াছে। তাঁহার পরনে ক্রিম রংয়ের টেট্রনের প্যান্ট ও গায়ে সাদা টেট্রনের শার্ট ছিল এবং বাম হাতে হাতকড়া দেখা যায়।

অপরাহ্ন ২টার সময় সিরাজ সিকদারের পিতা জনাব আবদুর রাজ্জাক সিকদার, মরহুমের কয়েক ভাই ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন হাসপাতালে মর্গে উপস্থিত হন। বেলা সোয়া ২টার সময় জনাব রাজ্জাক শিকদার তাঁহার পুত্রের লাশ শনাক্ত করেন। লাশ সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কড়া পুলিশ প্রহরায় লালবাগ থানায় ছিল। সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর গোরস্তানে নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ পুলিশ প্রহরায় তাঁহার পিতা ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন দাফন করেন বলিয়া পুলিশের পক্ষ হইতে বলা হইয়াছে। জনাব আবদুর রাজ্জাক সিকদার ও অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের বক্তব্য অনুযায়ী সিরাজ সিকদারের বয়স ছিল প্রায় তিরিশ বছর। তিনি পিতার ৬ পুত্র ও ২ কন্যার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন সময়ে ১৯৬৬ সালে তিনি তত্কালীন শেরেবাংলা হল ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৭ সালের দিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পাস করার পর ১৯৬৮ সালের প্রথমদিকে মাস দেড়েক সিএন্ডবিতে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করেন। ইহার পর তিনি তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে লেকচারার হিসেবে প্রায় এক বছর চাকরি করেন। ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসের পর হইতে পরিবারের সহিত তাহার সম্পর্কচ্ছেদ ঘটে।

তিনি ১৯৬৬ সালে রওশান আরা বেগমের সহিত পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। তাহার দুই ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। মেয়েটির নাম শিখা (৭), আর একটি ছেলের নাম শুভ্র।

সিরাজ সিকদারের বড় ভাইও একজন প্রকৌশলী ছিলেন। তিনি পাক সেনাদের হাতে নিহত হন। তাঁহার ছোট অপর এক ভাইও প্রকৌশলী। অপর ভাইয়েরা লেখাপড়া করিতেছেন। এক বোন চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভাস্কর্য নিয়ে অধ্যয়ন করিতেছেন। বৃদ্ধ পিতা জনাব আবদুর রাজ্জাক সিকদার বর্তমানে অবসর গ্রহণের পূর্বে ছুটিতে রহিয়াছেন। তাহার মাতাও জীবিত আছেন। (দৈনিক ইত্তেফাক, ৪ জানুয়ারি ১৯৭৫)।

সিরাজ সিকদার হত্যা মামলার বিবরণী

১৯৯২ সালের ৪ জুন সিরাজ সিকদারকে হত্যার দায়ে অতিসম্প্রতি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ ও মোহাম্মদ নাসিমসহ সাতজনকে আসামি করে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের (সিএমএম) আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। সিরাজ সিকদার পরিষদের সভাপতি শেখ মহিউদ্দিন আহমদ বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলার আসামিরা হলেন : ১. সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ২. আবদুর রাজ্জাক এমপি, ৩. তোফায়েল আহমেদ এমপি, ৪. সাবেক আইজিপি ই এ চৌধুরী, ৫. সাবেক রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নুরুজ্জামান, ৭. মোহাম্মদ নাসিম এমপি গং। আসামিদের বিরুদ্ধে ৩০২ ও ১০৯ নম্বর ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

আর্জিতে বলা হয়, আসামিরা মরহুম শেখ মুজিবের সহচর ও অধীনস্থ কর্মী থেকে শেখ মুজিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ও গোপন শলা-পরামর্শে অংশগ্রহণ করতেন এবং ১নং থেকে ৬নং আসামি তত্কালীন সময়ে সরকারের উচ্চপদে থেকে অন্য ঘনিষ্ঠ সহচরদের সঙ্গে শেখ মুজিবের সিরাজ সিকদার হত্যার নীলনকশায় অংশগ্রহণ করেন। তারা এ লক্ষ্যে সর্বহারা পার্টির বিভিন্ন কর্মীকে হত্যা, গুম, গ্রেফতার, নির্যাতন ও হয়রানি করতে থাকেন। সিরাজ সিকদারকে গ্রেফতার ও হত্যার বিবরণ দিয়ে আর্জিতে বলা হয়, মরহুম শেখ মুজিব ও উল্লিখিত আসামিরা তাঁদের অন্য সহযোগীদের সাহচর্যে সর্বহারা পার্টির মধ্যে সরকারের চর নিয়োগ করেন। এদের মধ্যে ই এ চৌধুরীর একজন নিকটাত্মীয়কেও চর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এভাবে ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের নিউমার্কেট এলাকা থেকে অন্য একজনসহ সিরাজ সিকদারকে গ্রেফতার করে ওই দিনই বিমানে করে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকার পুরনো বিমানবন্দরে নামিয়ে বিশেষ গাড়িতে করে বন্দিদের পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মালিবাগ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিরাজ সিকদারকে আলাদা করে তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর বিশেষ স্কোয়াডের অনুগত সদস্যরা গণভবনে মরহুম শেখ মুজিবের কাছে সিরাজ সিকদারকে হাত ও চোখ বাঁধা অবস্থায় নিয়ে যায়। সেখানে শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম ক্যাপ্টেন (অব.) মনসুর আলীসহ আসামিরা, শেখ মুজিবের পুত্র মরহুম শেখ কামাল এবং ভাগ্নে মরহুম শেখ মনি উপস্থিত ছিলেন। আর্জিতে আরও বলা হয়, প্রথম দর্শনেই শেখ মুজিব সিরাজ সিকদারকে গালাগাল শুরু করেন। সিরাজ এর প্রতিবাদ করলে শেখ মুজিবসহ উপস্থিত সবাই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। সিরাজ সে অবস্থায়ও শেখ মুজিবের পুত্র কর্তৃক সাধিত ব্যাংক ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপকর্ম, ভারতীয় সেবাদাসত্ব না করার, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য শেখ মুজিবের কাছে দাবি জানালে শেখ মুজিব আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। সে সময় ১নং আসামি মাহবুব উদ্দিন তাঁর রিভলবারের বাঁট দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সিরাজ সিকদার মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। ওই সময় সব আসামি শেখ মুজিবের উপস্থিতিতেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কিল, ঘুষি, লাথি মারতে মারতে তাঁকে অজ্ঞান করে ফেলেন। এরপর শেখ মুজিব, মনসুর আলী এবং ২ থেকে ৭নং আসামি সিরাজ সিকদারকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন এবং ১নং আসামিকে নির্দেশ দেন। ১নং আসামি মাহবুব উদ্দিন আহমদ আসামিদের সঙ্গে বন্দি সিরাজ সিকদারকে শেরে বাংলানগর রক্ষীবাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যান। এর পর তাঁর ওপর আরও নির্যাতন চালানো হয়। অবশেষে ২ জানুয়ারি আসামিদের উপস্থিতিতে রাত ১১টার দিকে রক্ষীবাহিনীর সদর দফতরেই সিরাজ সিকদারকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে ১নং আসামির সঙ্গে বিশেষ স্কোয়াডের সদস্যরা পূর্বপরিকল্পনা মতো বন্দি অবস্থায় নিহত সিরাজ সিকদারের লাশ সাভারের তালবাগ এলাকা হয়ে সাভার থানায় নিয়ে যায় এবং সাভার থানা পুলিশ পরের দিন ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে প্রেরণ করে।

সুত্রঃ আমার দেশ



এই সিরাজ শিকদারের বোন ভাস্কর শামীম শিকদার বহুদিন পিস্তল নিয়ে ঘুরে ছিলেন, তার ভাইর হত্যাকারীদের হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে। কিন্তু শামীম মনে হয় তার প্রতিশোধ নিলেন আওয়ামী লীগ আমলেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ বছর আগে শেখ মুজিবের একটি মুর্তি বানিয়ে। কি জবাব দেবেন শামীম শিকদার হাজারো সর্বহারা পার্টির শহীদের আত্নার প্রশ্নের??? বিচিত্র দুনিয়া!!!!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৩:৪৫

""ফয়সল অভি "" বলেছেন: বিপ্লবের বাঁশিওয়ালা : সিরাজ সিকদার ও তাঁর সর্বহারা পার্টি

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:০০

shapnobilash_cu বলেছেন: পাপ কাউকেই ক্ষমা করেনি। অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে। সিরাজ শিকদারকে বাগে আনতে না পেরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশেই তাকে হত্যা করা হয়। এ্যান্থনী মাসকারেনহাসের লিগ্যাসি অব ব্লাড বইতে সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর সুপুত্র আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা রাতের অন্ধকারে হন্যে হয়ে ঢাকায় রাস্তায় সিরাজ শিকদারকে খুঁজেছিল অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে, পরে পুলিশের সংগে ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গোলাগুলিও হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে।।


রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের সূচনা করে বঙ্গবন্ধু মূলত আইনের শাসনকেই কলুষিত করে গেছেন। তাঁর পরিণতিও অবশ্য ভাল হয়নি। পাপ কাউকেই ক্ষমা করেনি।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:০৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: প্রত্যেক হত্যাকান্ডের সুবিচার হওয়া উচিত।

৪| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৪:১৬

দিকভ্রান্ত একা বলেছেন: এই সিরাজ শিকদারের বোন ভাস্কর শামীম শিকদার বহুদিন পিস্তল নিয়ে ঘুরে ছিলেন, তার ভাইর হত্যাকারীদের হত্যা করে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে। কিন্তু শামীম মনে হয় তার প্রতিশোধ নিলেন আওয়ামী লীগ আমলেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ বছর আগে শেখ মুজিবের একটি মুর্তি বানিয়ে।
:| :| :|

৫| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ ভোর ৬:২৮

স্বাধীকার বলেছেন:
জন্মভূমির পরতে পরতে বিদ্যমান বৈষম্য যাকে পাগল করে দিয়েছিলো। বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নেবিভোর এই বিপ্লবীর দেশপ্রেমকে বাংলাদেশের মানুষ জীবনভর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। বীর মুক্তিযোদ্ধা দেশের এই সূর্য্য সন্তান পাকিস্তান শাসক গোষ্ঠির কাছে যেমন ছিলেন আতংকের নাম, তেমনি স্বাধীন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠির কাছেও হয়ে উঠেন জীবন্ত আতংকের নাম। যুদ্ধের মাঠে অনুপস্থিত হীনমন্য নেতৃত্ব ক্ষমতাকে কণ্টকহীন, জবাবদিহিতাবিহীন রাখতে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ সিকদারকে মেনে নিতে পারেনি। পারার কথাও নয়। সিরাজ সিকদারের মতো ত্যাগী মানসিকতা শাসক গোষ্ঠির কোনো কালেই ছিলোনা, থাকতে পারেনা। কারণ বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য তৎকালীন শাসকরা ক্ষমতায় যায়নি, গিয়েছিলো কম্বলচুরি, লবণচুরি, ব্যাংকলুট, বিদেশী সাহায্যলুট করতে। কিন্তু একজন নিখাদ দেশপ্রেমিক বিপ্লবীর এটা মেনে নেওয়া সম্ভব হয়নি। সঙ্গত কারণেই পাকিস্তানী শাসকের প্রেতাত্মা দেখা গিয়েছিলো আম্লীগের নেতৃত্বের মধ্যে। চারদিকে হরিলুটে ব্যস্ত শাসকগোষ্ঠি অন্যায়ভাবে নিরস্ত্র এই বিপ্লবী মুক্তিযোদ্ধাকে খুন করে। তারপর সংসদে গিয়ে আস্ফালন করে। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করেনি।

বাংলাদেশে বর্তমান শাসক গোষ্ঠির মধ্যে যে আইয়ুবীয় ভ্রাম্যমান আদালতের ভূত, ভারতীয় শোষনের ভূত চেপেছে-সেই ভূত ছাড়ানোর জন্য অনেক গুলো সিরাজ সিকদার দরকার। যাদের দেশপ্রেমের জোয়ারে ভেসে যাবে বিদেশী প্রভূতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ‍কুউপদেষ্টারা। যখন নির্লজ্জ শাসকের দেশপ্রেমের চিপায় পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায় তিতাসের মতো প্রমত্ত নদী, চেতনার শ্লোগানে ফেনা তুলা শাসকের পায়ের তলায় পিষ্ট হয় নিরপরাধ বিনিয়োগকারী, কর্মহীন স্বামী বউয়ের জন্য দেহখদ্দের-তখন সিরাজ সিকদারদের বড়ই প্রয়োজন।

স্যালুট এই মুক্তিযোদ্ধা দেশপ্রেমিক সূর্য্যসন্তানকে।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৮:৫৮

অথৈ সাগর বলেছেন: সব ধরনের হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া উচিত । /:)

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ৯:৫৯

এমদেশ বলেছেন: সিরাজ শিকদারকে হাত-পা বেঁধে শেখ মুজিব ও তার সাঙ্গপাঙ্গের সামনে হাজির করা হলো যেভাবে, তা শুনে মনে হলো দেশে তখন একটি পারিবারিক রাজতন্ত্র কায়েম ছিল।

.... শেখ কামাল রাগের মাথায় গুলি করলে সিরাজ সিকদারের হাতে লাগে। ....
--- শেখ কামালের হাতে অস্ত্র আসলো কোত্থেকে? শেখ কামাল কী সবসময় অবৈধ অস্ত্র বহন করতো?


শামীম শিকদার আওয়ামী লীগ আমলেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২ বছর আগে তারই বড় ভাইয়ের হত্যাকারী শেখ মুজিবের একটি মুর্তি বানালেন কীভাবে? এর রহস্য কী?

সিরাজ শিকদারের হত্যাকাণ্ডের বিচার কী হবে না? এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত কারা কারা বেঁচে আছেন?

সিরাজ শিকদার হত্যা মামলার প্রধান আসামিরা ১. সাবেক পুলিশ সুপার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ২. আবদুর রাজ্জাক এমপি, ৩. তোফায়েল আহমেদ এমপি, ৪. সাবেক আইজিপি ই এ চৌধুরী, ৫. সাবেক রক্ষীবাহিনীর মহাপরিচালক কর্নেল (অব.) নুরুজ্জামান, ৭. মোহাম্মদ নাসিম এমপি গং - এর সবাইকে নিয়ে একটি আলাদা পোস্ট দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছি।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩৩

মো দি কা বলেছেন: অনেক অপেক্ক্ষার পর সিরাজ সিকদার কে নিয়ে পোস্ট পেলাম ।
আপনাকে ধন্যবাদ নানাভাই ।

৯| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০১

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: সিরাজ শিকদার হত্যাকারীদের বিচার চাই।


আর শত ধিক্কার সিরাজ শিকদারের বোনকে। এরকম পা চাটা কুত্তাকে ঘৃনা করতেও ঘৃনা হয়।

১০| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:০১

নাহিয়ান বিন হোসেন বলেছেন: সিরাজ শিকদার হত্যাকারীদের বিচার চাই।


আর শত ধিক্কার সিরাজ শিকদারের বোনকে। এরকম পা চাটা কুত্তাকে ঘৃনা করতেও ঘৃনা হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.