নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাহা বলিব সত্য বলিব

সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার

তীরন্দাজ

গান ভালোবাসি, সাহিত্য ভলোবাসি, রাজনৈতিক দায় ও দলবদ্ধতা থেকে মুক্ত থাকতে চাই। সবার উপরে মানুষ, তারপর বাকী যা কিছু।

তীরন্দাজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেলো কড়ি, মাখো তেল, তুমি কি আমার পর ?

০৮ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ১০:৫৯

আমরা ছোটবেলায় প্রতিবছরই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে যেতাম। আমাদের গ্রাম খুব ধনী গ্রাম ছিল না। তারপরেও সেখানে একটা ভালো স্কুল ছিল। মোটামুটি শিতি একটি পরিবেশ ছিল। বিকেলে স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলা হতো। শিক্ষক, স্কুলের ছাত্র ও গ্রামের লোকজন, সবাই মিলেই খেলতো। স্কুলের পাশেই বাজার। চায়ের দোকান ছিল কয়েকটি। চায়ের আড্ডায় বসে গ্রাম ও রাজনীতি নিয়ে গরম আলাপ আলোচনা হতো। এ গ্রাম থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দুরেই আরেকটি গ্রাম। সেখানে থাকতেন আমার ফুপু। ওনি চাইতেন যে আমরা সেখানেও বেড়াতে যাই। যেতামও, তবে বেশীদিন থাকতে চাইতাম না। ভালো লাগতো না তেমন একটা। সুতোর ব্যবসায় ওই গ্রামের লোকজন মোটামুটি অবস্থাপন্ন হলেও শিক্ষার অভাব ছিল। ওথানে কোন স্কুল ছিল না। যারা পড়াশোনা করতো, তারা এত কিলোমিটার দুরে থানার স্কুলে পড়তে যেত। তারা সেজন্যেও অহংকার করতো। যদিও শিক্ষার অভাব টের পাওয়া যেত বেশ ভালোভাবেই। আমাদের শহুরে লোক দেখে ওরা অবাক হয়ে যেত। কিন্তু এই অবাক হবার মাঝে অপরিচিতের প্রতি কোন গ্রহনযোগ্যতা ছিল না। এমনকি চোখের সমস্যা থাকার কারণে চশমা পড়ে থাকাতেও ওদের কাছে অস্বাভাবিক মনে হতো। উল্টোপাল্টা মন্তব্য করতেও ছাড়তো না। আর বিত্তের অহংকার তো ছিলই। আমাদের গ্রামের লোকদের প্রতি অবহেলা প্রতি মুহুর্তেই টের পাওয়া যেত। এমনকি ভাষার ব্যবহারেও পার্থক্য দেখা যেতো। শিক্ষা, অশিক্ষা, ধনী ও দারিদ্রের মাঝে কতটুকু পার্থক্য, তা এই দুই গ্রাম দেখেই অনেকটা টের পাওয়া যেত।



উপক্রমনিকায় এই গ্রাম দু'টোর কথা টানলাম কেন, মনে হতে পারে। আমি এই ছোট্ট গ্রাম দু'টো ধরে ধরেই পৃথিবীতে এগিয়ে আসতে চাইছি। আমার দেখা পৃথিবী ধীরে ধীরে আমার ফুপুর গ্রামটির মতোই শিক্ষাকে একপাশে ছুড়ে ফেলে অর্থকেই আকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে চাইছে। জানিনা সবার ভেতরে এমন একটি অনুভব তৈরী হয়েছে কি না, তবে আমি এমন কিছুই একটা অনুভব করছি। এখন পৃথিবীর দিকে তাকালে একে এক বিশাল সুপারমার্কেটের মতো মনে হয়। আগেও হয়তো তেমনি ছিল। কিন্তু তখন প্রতিপত্তি ছিল ক্রেতাদের আর এখন বিক্রেতাদের। আমরা সাধারণ মানুষরা ক্রেতা হিসেবে পুরোপুরি ওদের ক্ষমতার কক্ষুগিত। আমাদেন সাধ, আহল্লাদ, আনন্দ, বেদনা ওদেরকে ঘিরেই। ওরা ওদের আলমারীতে কি সাজাবে, তা দেখার জন্যে আমরা তির্থের কাকের মতো তাকিয়ে থাকি আমরা। ওদের দেয়া ডিসকাউন্টের সুযোগ পাবার আশায় আমরা ঝাপিয়ে পড়ি শকুনের মতো। ওরা আমাদের সুখের মেশিন তৈরী করে রেখেছে। সেখানে টাকা ফেললেই যে সুখ বেরিয়ে আসে, আমরা তা আকড়ে ধরে সুখসাগরে নিমজ্জিত হই। আগে এ সহজ সুখের কবলে ফেলার ও পড়ার আগে সামান্য হলেও ভাবনা বা লজ্জাও হতো। আর আজকালের ক্রেতা বা বিক্রেতা, দুজনেই এই লজ্জাটুকু ছুড়ে ফেলে একেবারেই উলঙ্গ। চারিদিকে টাকার খেলা। লটারীর পর লটারী। টিভি তে লটারী, পত্রিকায় লটারী, টেলিফেনেও আসছে লটারীর লোভনীয় প্রস্তাব। এটা বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে নয়, জার্মানীর মতো উন্নত দেশে বসেও একই আলামত দেখতে পাচ্ছি চারিদিকে। টিভি তে এমন সহজ প্রশ্ন করা হয়, যার উত্তর প্রায় প্রতিটি লোকেরই জানা। ফোনে উত্তর দিতে হয়। একেকটা কলের চার্জ এক থেকে দুই ইউরো যেখানে সাধারন কলের চার্জ এক সেন্ট। লাখ লাখ লোক ঝাপিয়ে পড়ে ফোনের উপর। প্রায় সবার উত্তর ঠিক হলেও লটারীতে একজনকে বেছে পুরস্কার দেযা হয়। লাভ যা থাকলো তার একটা সিংহভাগ যায় আধা সরকারী সংস্থা টেলিকমের পকেটে। যে কোন সংস্থা, সরকারী বা বেসরকারী, সবখানেই মানুষ এখন নাগরিক হিসেবে যায় না, যায় ক্রেতা হিসেবে। ক্রেতার জন্যে রয়েছে টেলিফোনে অতি ভদ্র যান্ত্রিক পরামর্শ। 99 সেন্ট প্রতি মিনিটে। দু'মিনিট ধরে শুনতে হবে প্রথম যন্ত্রের কথা। তারপর অপেক্ষা বাজনার সুরে সুরে। কপাল ভাল থাকলে তারপর পাওয়া যাবে কাউকে, নইলে আবার প্রথম থেকে। আবার যন্ত্রের কথা আর অপেক্ষার পালা। সেইসাথে ভরছে টেলিকম ও বিক্রেতাদের কোষাগার।



পুজিবাদী চিন্তা ও তার প্রয়োগের এতটা নগ্নতা কবে থেকে? কবে থেকে তার এই শক্তিশালী প্রকাশ। কবে থেকে আমরা এর এত বেশী কুক্ষিগত ? আমার মনে হয় সমাজতন্ত্রের পতনের পর থেকেই এর শুরু। তখন থেকেই তো ধনতান্ত্রিক চিন্তা প্রতিপক্ষহীন। সুতরাং চলছে পুজিবাদীদের একচ্ছত্র রাজত্ব। এখন আর ঘোমটার দরকার নেই। মানবিকতা, নীতিবোধ ? চুলোয় যাক সব!



সোভিয়েট আমলের কথা। জামানর্ী যদি কোন একটি প্রজেক্ট নিয়ে আমেরিকা যেতো, বলা হতো এটা একটি ব্যবসায়িক পদক্ষেপ। একই প্রজেক্ট নিয়ে সোভিয়েট ইউনিয়ন গেলে বলা হতো, এটি একটি উত্তেজনা প্রশমণের পদক্ষেপ। একই প্রজেক্টে ভারত গেলে বলা হতো, এটি দারিদ্রতার বিরুদ্ধে সাহায্য। আজ আর উত্তেজনা প্রশমণের কোন কারন নেই। আজ আর তাই চোখে চামড়া থাকার দরকার পড়ে না। আজ সবকিছুই ব্যাবসা। আর সাহায্যের নামে কিছু লোকের ক্রয়ক্ষমতাকে কোনক্রমে টিকিয়ে রাখা, যাতে শোসনের পথটি আরো বেশী প্রশস্ত হয়। আমরা কনজ্যুমাররা আমাদের আনন্দের সংজ্ঞা পাল্টে তাদেরকে তাদের পথে খুব ভালো করেই সাহায্য করে যাচ্ছি। আমাদের আতি্বক শান্তির প্রতি কোন চাওয়া নেই, মানবিক উৎকর্ষতার প্রতি সামান্যতম মোহও নেই। আমরা তাই তাদের সাথেই গলা মিলিয়ে বলি, ফেলো কড়ি, মাখো তেল, তুমি কি আমার পর ?

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ৮:২৩

অরূপ বলেছেন: চমৎকার!

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ৯:০০

ঝরা পাতা বলেছেন: এতো চমৎকার বিশ্লেষণমূলক লেখাটা এতো দেরীতে পড়লাম !!! কপের্ারেট বিশ্ব এখন জুয়ার উপর খেমটা নাচছে।

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ৯:০৩

বাঁ শী বলেছেন: আমি কাউরেই কিছু বলতে চাই না।আমাদের মাঝে যা লুকায়িত আছে তাই বের করে আনছে এই ব্যবস্তা।

ভিতরের আমিই দায়ী এর জন্য।পুজিবাদী মন সবার ভিতরেই বাস করে।

৪| ০৯ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ১২:৪৮

অতিথি বলেছেন: ভাল লিখেছেন, বাস্তব সব কথা।

৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ১০:৪৭

অতিথি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাদেরকে। হাতে সময় কম ছিল, তাই অসাবধানতায় বানান ভুল হয়েছে বেশ। সেজন্যে দু:ুখিত......।

৬| ০৯ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ১০:৫৫

অতিথি বলেছেন: বস! দুদর্ান্ত !

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০০৬ সন্ধ্যা ৭:০৮

অতিথি বলেছেন: লেখাটা এখন পড়তে পড়তে একটু হতাশ হলাম ... এত ভাল একটা লেখায় এত কম মন্তব্য কেন?
সবার এই লেখাটা অন্তত একবার পড়া উচিৎ ...

পুঁজিবাদের ভয়াবহতা সম্পর্কেভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় ...এখনকার করপোরেটদের কাছে টাকা আসবে মনে হলে সবই হালাল ... সাথে সাপোর্ট দেয় মোরাললেস কিছু রাষ্ট্রীয় আইন !!

৮| ১৩ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ১০:১৬

অতিথি বলেছেন: আমি একবার 9 লাইভের একটা পাজল মিলাইয়া ভুদাইয়ের মত দিছি ফোন । একটু পরে কাইটা গেল । আবার দিলাম । এরকম কইরা 4র্থ বারে এক কামতুরা বল্লেন ,''einmal ist keinmal!!!!'' ততক্ষণে 2

৯| ১৪ ই আগস্ট, ২০০৬ রাত ১২:২৮

অতিথি বলেছেন: বদ্দার ভাষায়, Dabs

১০| ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ৯:৪৬

অতিথি বলেছেন: হ

১১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০০৬ সকাল ১০:০৭

অতিথি বলেছেন: দেরী করে পড়লাম! ভালো লেগেছে।
পরশুদিন এটিএন বাংলা দেখছিলাম। একটি ধারাবাহিক নাটক চলছিল। টেলপে দেখলাম কুইজ চলছে - এই নাটকটি সপ্তাহের কোনদিন প্রচারিত হয় - 1) শনিবার 2) রবিবার !!!
উত্তর পাঠাতে হবে এসএমএস করে। সর্বোচ্চ সঠিক উত্তরদাতা পাবে বিশেষ পুরস্কার।
বুঝেন অবস্থা। আজ কী বার - ঐটাও কুইজ! অদ্ভুত জুয়া খেলা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.