নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান মনের জানালা খুলে দায় এবং সেই খোলা জানালা দিয়ে না জানা বিষয় গুলো দেখি যা বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী দেখতে সাহায্য করে ।

এইচ এন নার্গিস

আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা

এইচ এন নার্গিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক জিনিয়াসের উত্থান , জেইন অস্টিনের উপন্যাস "লেডি সুজান"

১৬ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:১০



"লেডি সুজান" জেইন অস্টিনের লেখা বই


জেইন অস্টিন এর লেখা উপন্যাসের বিষয়বস্তু সমসাময়িক ব্রিটেনের সমাজ, প্রথা আর নারীর দুরাবস্থা তুলে ধরা হয়েছে।তার কিছু নামকরা উপন্যাস এর গল্পের বিষয় বস্তু  আর তার লেখা চিঠি থেকে পাওয়া নিজের জীবনের গল্প এখানে তুলে ধরা হল ।
জেইন তার বোনের কাছে হাজার হাজার চিঠি লিখেছিল । তার মধ্যে অল্প চিঠি পাওয়া যায় । সেই চিঠি আর তার উপন্যাসের মাধ্যমে তার জীবন গল্প তুলে এনেছেন কিছু গবেষক, লেখক আর একটর একট্রেস ।




জেইনের বয়স তখন সবে মাত্র ১৮। লেখায় তেমন পরিপক্বতা আসেনি। সে সময় একটি উপন্যাস লিখে ফেলেন, নাম "লেডি সুজান"।

গল্পটির বিষয়বস্তু এই রকমঃ

প্রথমে যা পাওয়া যায় তা চিঠি থেকে। তার বিষয়টি নিচের মতো—

তাদের বাড়ি বেড়াতে আসে তার কাজিন এলিজা। এলিজা স্বল্পবয়সী একজন বিধবা। তার আগের স্বামী ছিলেন একজন নোবেল, এবং তার শিরচ্ছেদ হয় ফরাসি বিপ্লবে। এই দৃশ্য এলিজা নিজ চোখে দেখে এবং তার বর্ণনা জেইনকে বলে। এই বীভৎস বর্ণনা তাকে মানসিকভাবে আক্রান্ত করে। এলিজা দ্বিতীয় স্বামী খুঁজতে আসে তাদের বাড়িতে।

হঠাৎ করে স্বামীহারা মানে অসহায় হয়ে পড়া, আশ্রয়হীন হয়ে পড়া। তার থাকার স্থান নেই, অর্থ নেই। সে সময় মেয়েরা কাজও করত না। বিধবা এই মেয়েটির সেই একই অবস্থা।

এই গল্পে জেইন ফুটিয়ে তুলেছেন অল্প বয়সে বিধবা হওয়া নারীর অসহায়ত্ব সেই সময়ের সমাজে। কারণ, মেয়েরা বাবার সম্পত্তির ভাগ পেত না, আর সে সময় মেয়েরা চাকরিও করত না। ফলে এই অবস্থায় একজন নারীকে পুনরায় বিয়ের দ্বারস্থ হতে হয় তার ভরণপোষণ চালানোর জন্য। মাথার উপর ছাদ আর প্লেটে খাবারের ব্যবস্থা করতে নারী আবার ‘ডেসপারেট’ হয়ে পড়ে একজন সঙ্গীর জন্য।

সে ছিল আকর্ষণীয়, সুন্দরী, মিষ্টি ভাষী। যে কেউ তাকে পছন্দ করতে পারে অল্প মেলা-মেশার পরেই। কারণ, তার ছিল মানুষকে আপন করে নেওয়ার গুণ।

জেইনের দুই ভাই একই সঙ্গে তার প্রেমে পড়ে—জেমস এবং হেনরি।

আর গল্পটি হল—

একজন বিধবা, যার আছে প্রচণ্ডভাবে মানুষকে আকর্ষণ করার ক্ষমতা। তার উদ্দেশ্য একটি নতুন স্বামী খোঁজা। সে ছিল সুন্দরী এবং বুদ্ধিমতী। সে জানত, যা সে চায় তা কেমন করে পেতে হয়।

তার একটি ষোল বছর বয়সী মেয়ে আছে। তার উদ্দেশ্য—যেমন করেই হোক মেয়েটিকে বিয়ে দেওয়া, তারপর সে নিজেও বিয়ে করতে পারবে।

কিন্তু মেয়েটি বিয়েতে রাজি নয়। তার উক্তি—"বিয়েই একটা মেয়ের জীবনের সব কিছু নয়।" তার আরও এগিয়ে যেতে হবে।

এই গল্পে জেইন সেই সময়ের অর্থাৎ জর্জিয়ান সমাজে নারী নিয়ে মানুষের চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন, এবং তার মনের ইচ্ছা সেই মেয়েটির উক্তি দিয়ে প্রকাশ করেছেন।

একটা মেয়ে কী চায়, কী চায় না—তার কোনও মূল্য নেই। মেয়েটিকে যেমন করেই হোক পার করে দেওয়াই পরিবারের কর্তব্য পালন বলে মনে করা হতো।

মেয়েটি স্কুলে যেতে চায়। কিন্তু সেই দিকে মায়ের কোনও নজর নেই। সেই চিরাচরিত গৎবাঁধা একই নিয়মে মায়েরা চালিয়ে যেতে থাকে।

গল্পের মূল বক্তব্য—একজন মেয়ের ক্যারিয়ার বলে কি কিছু থাকতে পারে না? নিজের জীবন চালাতে সেই পুরনো নিয়ম—‘ঝুলে পড়ো কারও সঙ্গে’, বিয়ের মাধ্যমে।

গল্পের কনক্লুশন খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলা হয়। মেয়েটার শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল তা সে (জেইন) দিতে পারেনি।

"লেডি সুজান" ফিল্মের একটি দৃশ্য

এদিকে ফ্রান্স আর ব্রিটেনের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। তার তিন ভাই—হেনরি যোগ দেয় আর্মিতে, ফ্র্যাঙ্ক এবং চার্লস নেভিতে।

ভাইরা নিয়মিত চিঠি লিখত পরিবারের কাছে, মেরিন লাইফের বিবরণ দিয়ে।

জেইন অস্টিনের মনের জানালা খুলে যায় পৃথিবীকে জানতে। বিভিন্ন দেশের কোথায় কী হচ্ছে, দেশগুলো কেমন—তা জানার দ্বার খুলে যায়।

যেহেতু সে একজন বুদ্ধিমতী মেয়ে, তাই এগুলো সে গোগ্রাসে গিলতে থাকত। ভাইদের কাছ থেকে চিঠিতে জানতে চাইত অনেক কিছু—যা কিনা তার জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করত। জ্ঞান অর্জনের পিপাসা ছিল তার অপরিসীম।

আর সেই জ্ঞান তার গল্পে প্রতিফলিত হতো।

জেইনের বাবার বুঝতে বাকি রইল না—মেয়ে তার অন্যরকম। তার আছে প্রতিভা। তার লেখালেখি ভিন্নধর্মী। সে অন্যরকমভাবে পৃথিবীকে দেখে।

গল্পে শুধু রোমান্স ফুটিয়ে তোলা নয়, আছে একটা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিও।

সমাজটিকে পরিবর্তন করার ভাবনাও আছে তাতে। সে বুঝে নিয়েছিল—মেয়ে তার একজন বুদ্ধিমতী।

চলবে...

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:০৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



খুবই সুখপাঠ্য একটি লেখা এখানে উপস্থাপন করেছেন ।
জেন অস্টেনের ইপিস্টোলারি তথা চিঠির মাধ্যমে লেখা নভেলা Lady Susan তার অন্যান্য জনপ্রিয় উপন্যাসগুলোর
তুলনায় এক ভিন্নধর্মী, তীক্ষ্ণ ও সতেজ রচনা। এই প্রাথমিক রচনায় অস্টেন এক চতুর, অথচ নৈতিকভাবে বিতর্কিত
এক নারীর চরিত্র এঁকেছেন । যেহেতু এই উপন্যাসটি সম্পূর্ণরূপে বিভিন্ন চরিত্রের মধ্যে আদানপ্রদানকৃত চিঠির
মাধ্যমে উপস্থাপিত। এর ফলে পাঠকের মনে একধরনের গোপনীয়, কৌতূহলজাগানিয়া অনুভূতি তৈরি হয় এবং
একই ঘটনার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট হয়। এই ফর্মের মাধ্যমে অস্টেন তার কৌতুকপূর্ণ ও ব্যঙ্গাত্মক লেখনীর দক্ষতা
নিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। তবে এতে করে পাঠক কখনো কখনো কাহিনির গভীরে প্রবেশে কিছুটা বাধাপ্রাপ্তও
হয়েছেন।

আপনি বেশ সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন কিভাবে কাহিনির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা সদ্য বিধবা হওয়া লেডি সুসান,
যিনি একদিকে নিজের জন্য ধনী স্বামী খুঁজছেন, অপরদিকে বিবাহে অনিচ্ছুক তার কন্যা ফ্রেডেরিকার জন্য
সুবিধাজনক বিয়ে স্থির করতে চাইছেন। এখানে নারীশক্তি, সামাজিক মোবিলিটি, এবং প্রণয় সম্পর্কের মিথ্যা
অভিনয় নিয়ে তীক্ষ্ণ মন্তব্য রয়েছে।

লেডি সুসান সম্ভবত অস্টেনের সবচেয়ে জটিল নারী চরিত্রদের একজন যিনি সুন্দরী, বুদ্ধিমতী, এবং নিঃসংকোচে
স্বার্থপর।তিনি এক অনৈতিক পথ অবলম্বন করেও সমাজে এগিয়ে যেতে চান। পাঠক যেমন তাকে ধিক্কার দিতে চান,
তেমনই তার বুদ্ধিমত্তা ও আত্মবিশ্বাসে মুগ্ধও হন। অনেক সাহিত্য বিশ্লেষক লেডি সুসানকে অস্টেনের একটি
‘আর্লি অ্যান্টি-হিরোইন’ হিসেবে গণ্য করেন।তার বিপরীতে তার কন্যা ফ্রেডেরিকা একজন বিনয়ী, সৎ ও সংযমী
তরুণী, অস্টেনের আদর্শ নারী চরিত্রদের অন্যতম। মা ও মেয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বটি এক প্রজন্ম ও মূল্যবোধের সংঘাত
হিসেবে ফুটে ওঠে।

Lady Susan উপন্যাসে নারী চরিত্রটি প্রচলিত সমাজবদ্ধ ধারণা ভেঙে চুরমার করে। পুরুষশাসিত সমাজে
লেডি সুসান তার সৌন্দর্য ও বুদ্ধিকে হাতিয়ার করে নিজের অবস্থান সুসংহত করেন। অস্টেন সমাজের ভণ্ডামি,
শ্রেণিবিভাজন ও নারীর উপর আরোপিত সীমাবদ্ধতার কড়া সমালোচনা করেছেন, আবার সেই নারীর চরম
আত্মস্বার্থপরতা নিয়েও সাবধানতা প্রকাশ করেছেন।

Lady Susan জেন অস্টেনের রচনার ভাণ্ডারে একটি অমূল্য, অথচ উপেক্ষিত রত্ন। এতে তাঁর প্রাথমিক পর্যায়ের
লেখনীশক্তি বিশেষ করে মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ, ব্যঙ্গ, ও সংলাপ নির্মাণের দক্ষতা প্রভৃতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। যদিও
এতে Pride and Prejudice বা Emma র মতো আবেগঘন পরিপক্বতা নেই, তবুও এর সাহসী ব্যতিক্রমী স্বর
ও জটিল নায়িকা চরিত্র একে অত্যন্ত মনোগ্রাহী করে তোলে। যাহোক যারা অস্টেনের ব্যঙ্গাত্মক ও বাস্তবধর্মী দিক
জানতে চান, অথবা নৈতিকভাবে দ্ব্যর্থময়ী নারী চরিত্র উপভোগ করেন, তাদের জন্য এ পোস্টে পরিবেশিত এই
লেখাটি বেশ উপভোগ্য হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ।

অস্টাদশ শতকের অন্যতম এক বিখ্যাত ইংরেজ লেখিকার রচনা সম্ভার হতে চয়নকৃত লেখার বিষয়বস্তু সহজ
সরল বাংলায় পরিবেশন সামুকে সমৃদ্ধ করবে ।

শুভেচ্ছা রইল

১৮ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ১১:২৪

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া। আপনি সুন্দর ভাবে পুরো বই টি নিয়ে লিখে ফেলেছেন । ভালো লাগলো ।

আর আমি সমসাময়িক জর্জিয়ান ব্রিটেনের সমাজে নারীর অবস্থান আর তার লেখা হাজার হাজার চিঠি থেকে পাওয়া বক্তব্য থেকে তার জীবন আর জীবন দর্সন ,কেন তিনি লিখেছেন তা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।

যদিও গবেষক রা তার বোন কাসান্দ্রার উপর বেশ ক্ষুব্ধ । কারন তার লেখা অনেক চিঠি তিনি আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। তা যদি থাকতো তবে আরও মূল্যবান কিছু পাওয়া যেতো ।
থ্যাংকস ভাইয়া ।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:০৩

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: খুব ভালো বলেছেন পুরো বইটি নিয়ে। আর আমি তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি বইয়ের কিছু অংশ ,কিছু তার নিজের জীবনের গল্প,তার লেখার উদ্দেশ্য ,তখন কার সময়ে ব্রিটেনের সমাজের চিত্র আর কিছু তার লেখা চিঠি থেকে পাওয়া বিবরণ নিয়ে তার জীবন কে তুলে ধরা।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মন্তব্য লেখা টি নিয়ে ।

৩| ১৮ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

জুল ভার্ন বলেছেন: খুব ভালো লিখেছেন।

২২ শে জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৩:৪২

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: থ্যাংকস ভাইয়া ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.