নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জ্ঞান মনের জানালা খুলে দায় এবং সেই খোলা জানালা দিয়ে না জানা বিষয় গুলো দেখি যা বাংলাদেশের সীমা ছাড়িয়ে সারা পৃথিবী দেখতে সাহায্য করে ।

এইচ এন নার্গিস

আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা

এইচ এন নার্গিস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন জিনিয়াসের উত্থান ,জেইন অস্টিনের জীবনের গল্প

১৯ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ২:৩৪





জেইন আস্টিনের জীবন

যা উত্থান-পতনের জীবন। যে জীবনে আছে দুঃখ-কষ্ট, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ব্যথা-বেদনা, সুখ-দুঃখ এবং অভাব-অনটন।

সময়টা ১৭৯৭, বড়বোন কাসান্দ্রার সাথে একজনের বাগদান হয়ে যায়। কিন্তু একটা খারাপ খবর তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল।

একদিন কালো রঙের সিল দেওয়া একটা চিঠি আসে। কালো রঙের সিল দেওয়া খাম মানে খারাপ খবর। অর্থাৎ, মৃত্যু সংবাদ।

কাসান্দ্রার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছিল, সমুদ্রযোগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়ার পথে তার হঠাৎ মৃত্যু হয়। তাকে সলিলসমাধি করা হয়।

তার বোনের এই অবস্থার জন্য জেইনের হৃদয় ভেঙে পড়ে। দুঃখভারাক্রান্ত বোনের মানসিক অবস্থা জেইনকে দুঃখের সাগরে ফেলে দেয়। জেইন বোনের দুই হাত ধরে প্রতিজ্ঞা করে—'আমরা থাকবো একে অপরের সাথে। তোমাকে একাকী ফেলে আমি যাব না।'

জেইনের প্রথম পছন্দ প্রত্যাখ্যাত হয়। দ্বিতীয় পছন্দ কিছুদিন পর মারা যায়। এবং সর্বোপরি, তার একটি বইও প্রকাশিত হয়নি তখনও।

জেইনের বড় বোনের এনগেজড হাজবেন্ডের মৃত্যু আর জেইন যাকে পছন্দ করেছিল, তার পরিবার থেকে প্রত্যাখ্যান—এই দুই বোনকে একত্রে থাকার শক্তি যোগায়।

হাজবেন্ড যোগাড় করা সে সময়ে বেশ কষ্টকর ছিল এবং প্রসেসটাও ঝামেলাপূর্ণ।

জেইন মনে মনে রিলিফ পায়—যাই হোক, আমরাতো আছি একে অপরের জন্য। আমার বিয়ে না হলেও অসুবিধা নাই। সে ডিসিশন নেয়—বিয়ে না হলেও আমরা দুই বোন একসঙ্গে থাকবো। এখন থেকে মনোযোগ দেবো লেখালেখির মাঝে।

লেখার জন্য সে যে প্রজেক্ট হাতে নেয়, তার থাকে একটা বিরাট আইডিয়া। প্রচুর বই পড়া তাকে সাহায্য করে—কোন ধরনের লেখা ভালো বিক্রি হতে পারে। গথিক নভেল মানুষ বেশ পছন্দ করে। সে সময় বেশির ভাগ লেখক ছিল পুরুষ।

Northanger Abbey এই উপন্যাসে জেইন সৃষ্টি করেন একজন তরুণী নায়িকা। গল্পের ক্যারেক্টার আর কেউ নয়—সে নিজে এবং তার বাবা। বিরাট পরিবার থেকে তারা আসে। মা সেন্সিবল, কিন্তু তেমন কিছু নয়। এই গল্পে জেইন সমাজের uncomfortable সত্য তুলে ধরেন।

সময়টা ১৮০০, সে সময়ের কিছু ঘটনা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। জেইনের বাবা বৃদ্ধ হয়ে পড়েন। চার্চের বাড়ি ছেড়ে দিতে হয়। বাবা তার সম্পত্তি প্রথা অনুযায়ী বড় ছেলে জেমসকে দিয়ে দেন। বাড়িছাড়া হয়ে তারা অসহায় হয়ে পড়েন।

জেইনের ডায়েরি থেকে পাওয়া যায়—

"The whole world is a conspiracy to enrich one part of our family"

"পুরো পৃথিবী ষড়যন্ত্রময় এবং তা আমাদের পরিবারেও প্রবেশ করেছে। আর তা হল পুরুষ শাসিত সমাজে সম্পত্তি ভাগ-বাটোয়ারা পদ্ধতি। আমি বলবো, এই সম্পত্তি ভাগাভাগির বিষয়টি আনফেয়ার।"

Frank, তার ছোট ভাইয়ের কাছে লেখা চিঠিতে পাওয়া যায়—

"At the expense of another this is about the unfairness of male inheritance."

এই বিবেচনাহীন সম্পত্তি ভাগাভাগির নিয়মটির জন্য তাদের বাড়িটি চলে যায় বড় ভাইয়ের কাছে। আর মা ও দুই বোন অসহায় হয়ে আশ্রয়হীন অবস্থায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। যা ছিল সত্যি ঘটনার উপর লেখা—নিজেদের জীবনের গল্প। উপরের কমেন্ট তারই রাগান্বিত প্রতিক্রিয়া। জেইনের অনুভূতি ছিল—ক্ষমতা ছাড়া, আশ্রয় ছাড়া এক অসহায় নারীর অনুভূতি।

তার দুঃখ সেখানেই, যেখানে এই ইনহেরিটেন্স প্রথার জন্য মেয়েদের কী অসহায় অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। তার বক্তব্য—"কেউ কি শোনার নাই?" মেয়েরা কি গুরুত্বহীন? এই আনফেয়ার প্রথা কি মেয়েদের প্রয়োজনীয়তাকে কনসিডার করবে না?

এমনকি, তাদেরকে সরিয়ে দেওয়ার খরচ সেই পারিবারিক লাইব্রেরি বিক্রি করে শোধ করতে হয়। লাইব্রেরি বিক্রি করাটা তার জীবনে ছিল খুবই দুঃখজনক একটা ব্যাপার।

জেইন আর তার বোনকে বাধ্য করা হয় এই প্রপার্টি থেকে বের হতে। বাবা-মা সহ তারা চলে যান বাথ, একটি ভাড়া করা বাসায়।

তার এক ভাই, যার নাম এডওয়ার্ড, যাকে ছোটো বয়সে তাদের চেনা-জানা এক পরিবার দত্তক নেয়—পুত্র না থাকার কারণে। প্রথা অনুযায়ী, একটি পুত্র না থাকলে সম্পত্তি দেওয়া যাবে না। ভবিষ্যতে তার ভালো হবে ভেবে বাবা তাকেই দিয়ে দেন দায়।

"কেন মেয়ে নয়?"

"কেন মেয়েকে দেওয়া যাবে না?"

"সম্পত্তি দেওয়ার জন্য কেন একটি পুত্র দরকার?"

এই ছিল তার গল্পের "Emma" উপন্যাসের বিষয়।

জেইন তার লেখালেখিতে ডায়ালগের মাধ্যমে নানা রকম রিফর্ম এর কথা বলে গেছেন। সমাজের অন্যায়-অবিচার, মেয়েদের দুঃখ-কষ্ট, সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা, ছেলে-মেয়েকে সমান চোখে না দেখা—এসবই তিনি বলে গেছেন গল্পের ছলে।

ইনহেরিটেন্স, অর্থাৎ সম্পত্তি ভাগাভাগি—ভাইদের করে তোলে ধনী, আর বোনদের করে গরিব—এই কথাটি সে বলে গেছেন নানা ভাবে।

তার সাথে বলেছেন, বিয়ের বাজারে দাম্ভিক পুরুষ এবং সেই পুরুষদের পরিবার মেয়েদের নির্বাচনের সময় অন্যায় আচরণ করে।

আর্থিক কষ্টের সময় তার লেখালেখি বন্ধ হয়ে যায়। কারণ তখন সারভাইভ করাই কষ্টকর ছিল।

তারপর, এডওয়ার্ড তার পালক বাবার মৃত্যুর পর সব সম্পত্তির মালিক হন। মা আর তার দুই বোনের এই অসহায় অবস্থায় এডওয়ার্ড Chawton ভিলেজে একটা কটেজ থাকতে দেন।

মেয়ে সন্তানকে সম্পত্তির ভাগ না দেওয়াতে কতখানি অসুবিধা হয়—তা জেইন তার লেখায় দেখিয়েছেন।

Cassandra ছিল তার জীবনের গ্রেটেস্ট সাপোর্ট। Dr. Paddy নামের একজন গবেষক বলেছেন,

"দুই বোনের সম্পর্ক অসম্ভব ঘনিষ্ঠ"

"The Formidables"।

তার বড় বোন সবসময় খেয়াল রাখতেন—সে যেন একাগ্রচিত্তে লেখালেখি চালিয়ে যেতে পারে। তাই সংসারের সব কাজ তিনি নিজে করতেন।

তার নেভিতে কাজ করা দুই ভাই তাদেরকে টাকা পাঠাতেন। তবে মৃত্যুশয্যায় বাবা তার বড় ছেলেকে বলে গিয়েছিলেন—এই তিনজনকে আর্থিক সাহায্য করতে।

সে বাবার কথামতো তাদেরকে টাকা দিয়ে সাহায্য করতে চেষ্টা করলেও, তার স্ত্রী খুব একটা পছন্দ করতেন না। তিনি বলতে চাইতেন—

"এত টাকা দেওয়ার কি দরকার? তাদের তো ক্যারেজ (ঘোড়াচালিত গাড়ি) নাই!"

জেইন তার গল্পে লিখে গেছেন—

"মেয়েদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা মানে তাদেরকে ভাইদের দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে থাকা। এটা দেখার কি কেউ নাই?"

"এটা কি অমানবিক নয়?"

কিন্তু এখানে থাকার ভাগ্য তাদের বেশি দিন হলো না। কারণ লোকাল একটি পরিবার দাবি করে বসে—এই কটেজ তার ভাই আইনত দাবিদার নয়। তাই পুনরায় বাড়ি ছাড়ার হুমকির সম্মুখীন হয় তারা।

আইন যদি তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে চলে যায়, তাহলে ভাই এডওয়ার্ড এর ৮০% সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে যাবে। জেইন তার বই লেখা থেকে যে টাকা পেতেন, তা দিয়ে নিজেদের সাপোর্ট করা সম্ভব নয়—কারণ তা এমন এক পরিমাণ যা যথেষ্ট নয়।

এই দুঃসময়গুলোতে জেইনের লেখালেখিতে অনেক বাধা সৃষ্টি হয়।

এই অবস্থা থেকে বের হতে জেইন ঠিক করেন—তাকে আরও বই লিখতে হবে, যা মানুষ কিনবে এবং যাতে প্রফিট পাওয়া যাবে।

শুধু যে জেইনের পরিবার অর্থকষ্টে পড়েছিল তা নয়—পুরো ব্রিটেন সেই সময় রিসেশন-এ পড়ে। পেছনের কারণ—ফ্রান্সে নেপোলিয়নের যুদ্ধ। ফলে খাবারের দাম দ্বিগুণ হয়ে যায়। নতুন প্রযুক্তির আবিষ্কারে অনেক মানুষ কাজ হারায়। সারা ব্রিটেনে ধর্মঘট, মারামারি আর দাঙ্গা (রায়ট) শুরু হয়।

ব্রিটেন যুদ্ধের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে অস্ত্র কিনতে—দেশ রক্ষা করার জন্য। শিল্পবিপ্লব শুরু হওয়াতে গ্রাম ছেড়ে মানুষ শহরে আসে কাজের আশায়। ফলে শহরে ঘনবসতি বাড়তে থাকে।

এর ফলে সোশ্যাল রেভলুশন হতে থাকে—চারদিকে ক্ষুধা আর অসন্তোষ। ক্রমাগতভাবে ধনী-গরিবের অসমতা বৃদ্ধি পায়, যা জেইন অস্টিনের চোখে পড়ে। তিনি লক্ষ্য করেন চারদিকে হাহাকার, বিভেদ। তিনি লিখেন—"কারো আছে, কারো নাই"। দারিদ্র্যের অভিশাপ ছড়িয়ে পড়ছে সবখানে।

জেইন যে গ্রামে বাস করতেন, সেখানেও জীবনযাত্রার ব্যয় উচ্চহারে বৃদ্ধি পেতে থাকে। তার ভাই এডওয়ার্ড তাদেরকে যে সুবিধা দিয়েছিলেন, তা আর বোধহয় থাকছে না।

জেইন আর তার মা-বোন দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। চারদিকে দরিদ্র পরিবারগুলো, ধনীদের যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো, তা থেকেও উৎখাত হচ্ছে। কারণ তারা ভাড়া দিতে পারছে না। মানুষ দলে দলে পায়ে হেঁটে মাইলের পর মাইল লন্ডন শহরের দিকে ছুটছে—কাজের আশায়।

শুধু বাড়িছাড়া নয়, খাদ্যের অভাবে না খেয়েও থাকতে হচ্ছে। আস্টিন পরিবার তাদের চেয়েও যারা গরিব, তাদেরকে কাপড় আর খাদ্য দেওয়া শুরু করল।

দেশের এই সংকটে জেইন নিজের সুখ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা বিসর্জন দিয়ে মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত করেন।

Emma

“You live in such a big nice house, rich? Do you deserve to be?”

Emma বইয়ের একটি লাইন—"তোমরা ধনী এবং বিরাট বাড়িতে বাস কর, তোমরা কি ডিজার্ভ কর ধনী হতে? মনের দিক থেকে তোমরা ধনী নও। মানুষকে দরিদ্র অবস্থায় ফেলে রেখে কীভাবে ভাবতে পারো তোমরা 'বেটার পার্সন'? অবশ্যই তোমরা ভালো মানুষ হতে পার না।"

Emma উপন্যাসে একজন ধনী, সুন্দরী, নাক-উঁচু, অহংকারী চরিত্রের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। আর তার এই অহংকারের পেছনের কারণ—তার টাকা। সবকিছু মিলিয়ে তাকে মনস্টারের মতোই মনে হয়।

Emma বইতে সে সময়ের ধনী-গরিবের তফাৎ আর শ্রেণি বিভাজন তুলে ধরা হয়।

---

জেইন অস্টিনের লন্ডন আগমন

জেইনের ভাই হেনরি, যে কিনা লন্ডনে এলিজার সাথে বিয়ের পর বসবাস করতো, সে জেইনকে বই প্রকাশের ব্যাপারে একজন ভালো প্রকাশকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য ডেকে পাঠায়। তার নাম ছিল Thomas Egerton।

হেনরি লন্ডনে বেশ সুপরিচিত ছিলেন—বিভিন্ন ব্যাংকার, ব্যবসায়ী আর প্রকাশকদের মধ্যে। এলিজার সাথে জেইনের সম্পর্কও ছিল বেশ সুমধুর।

গবেষক Dr. Priya Atwal (Oxford University) বলেন, প্রকাশক John Murray-র সাথে পরিচয় হওয়ার পর জেইন আপ্লুত হয়ে পড়েন। একটি ভালো রিভিউ পাওয়া—একটি বই বিক্রির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যা প্রকাশক করেছিল Emma বই প্রকাশের ব্যাপারে।

Prince Regent-এর কাছে পাঠানো হয় তিনটি বই বিশেষভাবে রিভিউ করার জন্য। প্রকাশক জানতেন, কীভাবে বই বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়।

Sir Walter Scott, একজন নামকরা ব্যক্তি, একটি extraordinary রিভিউ লিখে দেন, যা দ্রুত ফলও দেয়।

জেইন অস্টিনের লেখক জীবনে এই স্মৃতিগুলো আসলেই একেকটি মূল্যবান মুক্তো, যা তার জীবনের মালা গাঁথার জন্য অনন্য।

তারপর, জেইনকে আর বসে থাকতে হয়নি। বই প্রকাশ নিয়ে তিনি নিজেই নিজের বস হন। হেনরি প্রথমে বলেছিল, বই প্রকাশে স্বত্ব না দিতে। কিন্তু জেইন সেই প্রস্তাব না নিয়ে নিজেই নিজের সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তার টাকার প্রয়োজন ছিল।

সে ছিল সময়ের চেয়ে অগ্রগামী। নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিত। যা কিনা এখনো অনেক মেয়ে সাহস করে করতে পারে না।

তার বই লিখে অর্থ উপার্জন তাকে শুধু আনন্দই দেয়নি, মাথার উপর ছাদও এনে দিয়েছিল—এই কলমই ছিল তার সম্বল। শুধু অর্থ উপার্জনই নয়, আরও একটি ব্যাপার তাকে আনন্দ দিত—সে যে কথা পৃথিবীকে জানাতে চেয়েছিল, তা সে জানাতে পেরেছিল।

যদিও তার অনেক সমালোচক ছিল, কিন্তু তাদেরকে সে গ্রাহ্য করেনি।

তার বই বেস্ট সেলার হওয়ায় মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়, যা তাকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এনে দেয়।

তার তিনটি বই—Sense and Sensibility, Pride and Prejudice, Emma—লন্ডনে লেখক মহলে তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে দেয়। সবাই তাকে চিনতে থাকে। সে হয়ে যায় এক ‘সিটি গার্ল’।

জেইনের চোখ সবকিছু observe করতো। তার চোখে পড়ে লন্ডন শহরে ধনী-গরিবের বিশাল ব্যবধান। লন্ডনের ইস্টে দরিদ্রদের বসবাস, আর ওয়েস্টে ধনীদের।

১৮১৬ সাল: একটা দুঃসহ সময়

জেইন বাড়ি ফিরে আসে। সময়টা খারাপ শুধু ব্রিটেনের জন্য নয়, তাদের পরিবারেও নেমে আসে অনেক সমস্যা। জেইনের দুই ভাই ফ্রাঙ্ক আর চার্লস চাকরি হারান। একজন ব্যাংকক্রাফট হন আর একজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। দুজনের চাকরি চলে যাওয়ার পর তারা যে টাকা পাঠাতেন, তা বন্ধ হয়ে যায়। মা আর দুই বোন অর্থকষ্টে পড়েন।

এদিকে জেইনের বই যথেষ্ট বিক্রি না হওয়ায় চিঠি আসে—টাকা পাঠানো সম্ভব নয়। জেইন লেখা শুরু করেন শুধু নিজের স্যাটিসফ্যাকশনের জন্য—ব্যবসার জন্য নয়।

জেইনের বয়স এখন ৪১। অসুস্থতা ধরা পড়ে। পিঠব্যথা, তার সাথে ঘন ঘন অজ্ঞান হয়ে যাওয়া। কী অসুখ—কেউ বুঝতে পারে না। সম্ভবত যক্ষ্মা।

অসুস্থতার মধ্যেও লেখালেখি থেমে থাকে না। এর মধ্যেই তার নতুন আরেকটি উপন্যাস লেখা শুরু হয়। সে জানে, একটাই জিনিস তার পরিচয়—লেখা।

সে যে মারা যাচ্ছে, তা সে বুঝতে পারছে। তবুও সে লিখে যাচ্ছে। এবার তার লেখনী ‘মৃত্যু’ নিয়ে। যে উপন্যাস নিয়ে সে লেখা শুরু করেছিল, তাতে একজন আফ্রিকান চরিত্রও ছিল। যা কিনা সময়ের তুলনায় অনেক অগ্রগামী চিন্তা।

তার ভাইরা শহরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে নিয়ে যায়।

সে লিখে গেছে এভাবে—

"আমি আমার পরিবারের কাছে কৃতজ্ঞ।"

তবে সে বুঝতে পারে, তার আয়ু শেষ।

এবং এটাও লিখে গেছে—

"আমি যদি বেঁচে থাকতাম, তবে একজন বৃদ্ধা নারী হতাম। সে সুযোগ আর হলো না। আমাকে আগেই মৃত্যু বরণ করতে হচ্ছে।"

> "Treat death in the way that you treat life. Face it, front on with wit."

"মৃত্যুকেও হাসিমুখে বরণ করে নাও। কারণ এটা অবধারিত।"

"It’s the only way to do it."

এভাবেই জেইন অস্টিন মৃত্যুকে বরণ করে নিয়েছিলেন।

---

১৮১৭ সালের ১৫ই জুলাই

উইনচেস্টারে, তার বড় বোন ক্যাসান্দ্রা তার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন।

"যখন আমি কবরে যাবো, তখন আমি মৃত।"

> "But behold me, immortal."

"To use the D-word, the word ‘dead’ is pretty powerful."

বড় বোন বুঝতে পারছিলেন—তার ছোট বোন চলে যাচ্ছে। সেই ছোট বোন, যে কিনা তার কাছে ছিল সূর্যের মতো। শুধু বোন নয়—তার বন্ধুও।

যিনি ছিলেন আনন্দের সময় আনন্দের অংশীদার, আর দুঃখের সময় সান্ত্বনার সঙ্গী।

এটাই ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক দুই বোনের জীবনে।

Winchester Cathedral-এ তাকে দাফন করা হয়।

তার রেখে যাওয়া টাকা-পয়সা, এমনকি লেখালেখির রয়্যালটি, সে তার বোনকে দিয়ে যায়।

টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ সন্তানের জন্য রেখে যেতে হবে—এবং তার জন্য একটা সন্তান হতেই হবে—এই নীতি থেকে সে বেরিয়ে এসেছিল।

জেইন ছিলেন সেই নারী, যার আগে কোনো নারী এভাবে চিন্তা করেনি। কেউ এধরনের কথা বলার সাহস পায়নি।

> She did what she wanted to do

অর্থাৎ—সে যা করতে চেয়েছে, তাই করেছে।

লেখক হিসেবে সে তার ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিল, তাই সে করেছে। এবং লেখালেখি থেকে অর্থ উপার্জনও করেছে।

তার লেখা পড়তে পড়তে মনে হয়—আমি তাকে চিনি, জানি—এবং সে আমার এক বন্ধু।

যদিও তার জন্ম ২৫০ বছর আগে।

তার জীবন, তার কথা, তার চিন্তাধারা আজও নিজ দেশ ছেড়ে বিভিন্ন দেশ ও সংস্কৃতিতে ছড়িয়ে আছে এবং থাকবে। যার মৃত্যু নেই।

তার বই নানা দেশের নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

কারণ একটাই—

সে আমাদের পাইওনিয়ার।

---তথ্য সূত্রঃ ছবিঃ ১) লন্ডনে প্রকাশকের সাথে ২) বোনের সেবা আর মৃত্যু ৩) কবর

Best Rowlatt Writer

Dr. Paula Byrne – রাইটার

BBC Arts Presents

72 Film Production

Dr. Priya Atwal, Oxford University – গবেষক

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৩৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



সুন্দর লেখাটি পাঠ করলাম মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে ।
জন অস্টিনের জীবনের আলো-ছায়া মেশানো এই অসাধারণ লেখার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি:
এক আলোর গল্প : জন অস্টিন
পড়তে গিয়ে ডুবে যাই এক জীবনের বর্ণময় স্রোতে
যেখানে দুঃখ আর সাহস পাশাপাশি চলে, প্রতি পড়তে
জন অস্টিন, এক জাগ্রত দীপ্তি, নারী মানচিত্রের দীপ্ত নাম
ভাঙা স্বপ্ন আর লাঞ্ছনার বুকেই তিনি গড়েছেন নিজের জীবন।

কাসান্দ্রার চোখে জল, জেইনের হাতে প্রতিজ্ঞার দীপ্ত রেখা
“একসাথে থাকবো, বাঁচবো,” ছিল তাদের বোনোচিত দেখা
ভালোবাসা পেল না ঠাঁই, সমাজ দিল বিদ্রুপের সুর
তবুও জেইন হার মানে না, কলম হাতে দেয় প্রতিউত্তর।

পুরুষ শাসিত উত্তরাধিকার, তাদের ঠেলে দেয় পথহারা
মায়ের কোল আর বোনের সাথেই জেইনের সাহসী যাত্রা
সেইসব কষ্টে, অন্যায় আঘাতে জন্ম নেয় চরিত্র একে একে
Emma, Elinor, Elizabeth যেন তারা বাস্তব কণ্ঠে ডাকে।

তার লেখায় ধরা পড়ে এক বিশাল সমাজের তীব্র ব্যথা
যেখানে মেয়ে মানেই দুর্বল, যেখানে সম্পত্তি একপেশে থাকে
কেন নয় মেয়ে উত্তরাধিকার? প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় দীপ্ত মনে
কলমই ছিল তার অস্ত্র, প্রতিবাদের আগুন যার ছন্দ বাণে।

সামাজিক ভাঙন, ধনী গরিবের তফাৎ, যুদ্ধ আর অভাবের গান
সেসব দুর্যোগে জেইন ছিলেন কেবল এক নারী নয় এক কাব্যিক প্রাণ
Chawton কটেজে ছোট এক ঘর, তবু সেখানেই গড়ে ওঠে মহাকাব্য
Sense, Pride, আর Emma পাঠকের হৃদয়ে আসন গেড়ে হয় ধ্রুব।

অসুস্থ শরীর, ভাঙা বাড়ি, বন্ধুত্বহীন পুরুষসমাজ-
তবুও থেমে যায় না জেইনের কলম, সে তো ছিল স্বপ্নের বাস্তবায়ন
"Treat death like life" বলে, মৃত্যুকেও হাসিমুখে করে আলিঙ্গন,
আর রেখে যায় এমন দৃষ্টিভঙ্গি, যা আজও দেয় নবজাগরণের সংগীতস্পন্দন।

তার বোন ক্যাসান্দ্রা ছিল ছায়া, সহচর, প্রেরণার বীজ
তাঁদের ভালোবাসা যেন একটি কবিতা যেখানে বন্ধন ছিল বিচিত্র সাজ
জেইন বাঁচেননি বহুদিন, তবু থেকে গেছেন চিরদিন
তার লেখা, চিন্তা, প্রশ্ন আজও জাগায় নারী স্বাধীনতার অগ্নিকেতন।

জেইন অস্টিনের গল্প শুধু ইতিহাস নয়
একটি শিখা, যা অন্ধকারেও আলো ছড়ায়
সারা রাত জেগে এক সাধারণ পাঠক হিসেবে আমি বলি এই কথা
আপনার এ লেখা নয় শুধুই তথ্য, এটি এক প্রাণবন্ত মহাকাব্য গাথা ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

২২ শে জুলাই, ২০২৫ রাত ৯:০১

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: আপনার কবিতা আমাকে আপ্লুত করেছে। ধন্য করেছে। এই মন্তব্য আরও লেখার আগ্রহ বড়িয়ে দায়। আপনি এক মহা কবি । কি সুন্দর করে ছন্দ দিয়ে কবিতা লিখে ফেলেন। অনেক গুনে গুণান্বিত আপনি ।
অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

২| ০১ লা আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৩:১৮

জুনায়েদ আহমেদ নেজাদ বলেছেন: প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস পড়ার পর থেকেই ইনি আমার সবচেয়ে পছন্দের ঔপন্যাসিক যা এখনো বহাল আছে :)

০১ লা আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫১

এইচ এন নার্গিস বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.