![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি একজন লেখক, সমাজ কর্মি , মা এবং মুক্তিযোদ্ধা
আর্যদের আগমন আর উপমহাদেশে আমাদের আদি অতীত (প্রথম পর্ব)
আর্য রা কে? কোথা থেকে এসেছে? কেমন করে এসেছে? কেন এসেছিলো? তাদের ভাষা কি? তারা দেখতে কেমন ছিল এবং সে সময়ে এই উপমহাদেশে কারা ছিল এ নিয়ে ইতিহাসবিদ, নৃবিজ্ঞানী আর ভাষা বিদদের বিস্তর গবেষণা রয়েছে ।
গবেষণা থেকে আমরা জানতে পারি মানুষ জাতি অর্থাৎ “ হোমো সফিয়ান “ আফ্রিকাতে ২০০,০০০ বছর আগে জীবন আরম্ভ করে । হোমো সফিয়ান দের একটা গ্রুপ আফ্রিকা থেকে বের হয় ৭০,০০০ থেকে ১০০,০০০ বছর আগে । যাকে বলা হয় “ আউট অব আফ্রিকা”।
তখন মানুষ জাতি ঘরবাড়ি করে এক জায়গাতে বসবাস করতো না। তারা ছিল ‘ হান্টার এন্ড গেদারার ’ । জীবিকার জন্য ছুটে বেড়ানোই ছিল তাদের জীবন । সে সময় এই হান্টার গেদারার হিসাবেই কিছু মানুষ আমাদের এই উপমহাদেশে আসে ।
তখন এই উপমহাদেশে জঙ্গলে ভরা ছিল । আদিবাসী হিসাবে জঙ্গলে বসবাস করতো সাঁওতাল শ্রেণী । নৃবিজ্ঞানীদের মতে প্রায় ৬০ হাজার বছর আগে তাদের আগমন হয় এই উপমহাদেশে । সে সময় দেশ বলে কিছু ছিলনা । সীমানা ছিল না।
মানুষ যখন থিতু হতে শিখল তাদের দরকার হল চাষের জমি ,ঘরবারি আর তখন পোষমানাতে শিখল জীবজন্তু । এই থিতু হওয়ার সময়টা মাত্র ১০/১২ হাজার বছর আগে। মানুষ জাতি সৃষ্টি হওয়ার সময়ের কাছে এই সময় টা খুবই অল্প সময় ।
আর্কিওলজিরা সাম্প্রতিক কালে তুরস্কের আনাতলিয়াতে প্রথম মানব বসতি খুঁজে পেয়েছেন । ‘ গব্লেকিটেপে’ হল প্রথম মন্দির । সেটাও এই আনাতলিয়াতে। ১০ থেকে ১২ হাজার বছরের পুরানো । টাইগ্রিস আর ইউফ্রেটিস নদী দুটি আরম্ভ হয়েছে তুরস্কের দক্ষিন পূর্বে। সেখানেই এই পৃথিবীর প্রথম ভিলেজ বা গ্রাম গড়ে উঠে। এখন যে দেশ গুলো সেখানে আছে তখন এই নামে কোন দেশ ছিলনা ।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে প্রথম গ্রাম, আনাতলিয়া, তুরস্ক
গবেক্লেটেপে , মানব সভ্যতার প্রথম মন্দির, আনাতলিয়া, তুরস্ক
ফোটো ক্রেডিটঃ উইকিপেডিয়া
কোথা থেকে আর্যরা এখানে আসেঃ
গবেষকরা গবেষণা করে পেলেন যে মানব জাতি নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে বা মাইগ্রেনড হয়। অনেক থিওরি আছে আর্যদের আগমন নিয়ে । এক থিওরি অনুযায়ী প্রায় ১৫০০ BC বছর আগে Caucasus mountainএর পাদদেশ থেকে রাশিয়ার দক্ষিণ দিক থেকে আর্যদের আগমন হয়।এরা ছিল Catlle Herding Nomands অর্থাৎ গবাদি পশু চরানো মানুষ । আর এক থিওরি অনুযায়ী পারস্যের উত্তর দিক থেকে আর্য দের আগমন । সে সময় ইরানী বলতে পার্সিয়ান, Kurds.Oastuns, Tajiks, Baloch, Lurs মানব গোষ্ঠীকে বলা হতো । ইরান থেকে আসা জনগোষ্ঠী কে বলা হয় “ Non-indo-aryan”। মোটামুটি ভাবে বলা যায় ইরান এবং Alania যা বর্তমানে মধ্য এশিয়ায় , এই এলাকা থেকে আসে আর্য জাতি ।
মাইগ্রেসানের ম্যাপ
এইসব যায়গা থেকেই একটা শ্রেণী ইউরোপর দিকে একটা শ্রেণী আরবের দিকে আর একটা শ্রেণী আসে আমাদের এই ভারতে।
মাইগ্রেসানের কারনঃ
নৃবিজ্ঞানীদের মতে BCE ৩৫০০ থেকে BCE ৩০০০ বছর আগে ইকলজিকাল পরিবর্তন এবং পানির সমস্যা আরম্ভ হয় এই সমস্ত স্থানে এবং এরই ফল স্বরূপ বিরাট আকারের মাইগ্রেসান হয়ে ছিল ।তাহলে আমরা দেখতে পাই আর্য জাতি যুদ্ধ করতে করতে এই ভারতে আসেনি । বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারনে আস্তে আস্তে তারা এই উপমহাদেশে, ইউরোপ এবং আরবের দিকে প্রবেশ করে ।
ভাষাঃ
১৭৮৬ সালে William Jones নামে একজন ভাষাবিদ তাঁর ভাষা গবেষণার মাধ্যমে ভাষার ব্যাপারে এক বিরাট দুয়ার খুলে দেন ।
তিনি কলকাতায় এসে ছিলেন একজন জাজ হিসাবে। কিন্তু ভাষা গবেষণা নিয়ে তিনি এতো গভীরে প্রবেশ করেছিলেন যে তিনি বাকি জীবন ভারত বর্ষে থেকে যান এবং তার গবেষণা চালিয়ে যান ।
William Jones খুঁজে পেলেন সংস্কৃত , পার্সিয়ান, গ্রীক, ল্যাটিন, গথিক এবং Celtic (কেলটিক) ভাষার সাথে অনেক শব্দের মিল । ল্যাটিন ভাষাকে বলা হয় সকল ভাষার মা । এই ল্যাটিন থেকেই সংস্কৃত ভাষার সৃষ্টি । সংস্কৃত ভাষাকে বলা হয় ল্যাটিন ভাষার সিস্টার ভাষা । আর এই সংস্কৃত ভাষা থেকেই উৎপত্তি হিন্দি যা কিনা ইন্দো আরিয়ান দের ভাষা । উত্তর ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ এবং শ্রীলংকার অধিবাসী দের ভাষা এই সংস্কৃত ভাষা থেকে উৎপত্তি । ইরান তথা পারস্যের ভাষার সাথেও মিল পাওয়া যায় ইন্দ- এরিয়ান দের ভাষা ।
এই ভাবে William Jones প্রমাণ করতে সক্ষম হন একই ভাষাভাষীর মানুষ একই কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন যায়গাতে ছড়িয়ে গেছে ।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়ঃ সংস্কৃত , ল্যাটিন , ইংলিশ।
ছবিঃ মাইগ্রেসান ম্যাপ ২) গব্লেকে টেপে ,প্রথম মন্দির ৩) প্রথম আবাস
* ক্রমশ .......
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০২৫ ভোর ৬:০৪
ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


বেশ তথ্যবহুল লেখা ।
আপনার উপস্থাপিত লেখাটি সামুর পাঠকদের কাছে এক ধরনের সময় ভ্রমণ তৈরি করেছে। আফ্রিকা থেকে মানবজাতির
প্রথম উদ্ভব, ধীরে ধীরে তাদের উপমহাদেশে প্রবেশ, তারপর আর্যদের আগমন এগুলোকে ধারাবাহিকভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। লেখাটি অবশ্যই সাধারণ পাঠককে জটিল বিষয়গুলো সহজ ভাষায় বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, যা খুবই প্রশংসনীয়।
লেখাটি পাঠের সময় আমার কাছে মনে হল লেখাটিতে আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন করলে বিষয়টি আরও
প্রাসঙ্গিক ও সমৃদ্ধ হত ।
আর্য আগমনের বিতর্কিত ইতিহাস নিয়ে কিছু কথামালা হিসাবে আর্যরা বাইরে থেকে এসেছে নাকি ভারতীয় উপমহাদেশেই
তাদের বিকাশ ঘটেছে ? এ নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্ক চলছে। একদল গবেষক Aryan Invasion Theory সমর্থন
করলেও, অনেক আধুনিক ইতিহাসবিদ Aryan Migration Theory বা এমনকি Indigenous Aryan Theory
প্রস্তাব করেছেন। অর্থাৎ, কিছু প্রমাণ বলছে আর্যরা বাইরের আগন্তুক নয়, বরং এখানেই তারা দীর্ঘকাল ধরে বিকশিত
হয়েছিল। পাঠকের কাছে এই বিতর্কের উল্লেখ থাকলে বিষয়টি আরও চিন্তার খোরাক যোগাত।পাঠককুল বিষযটি নিয়ে
আরো পড়াশুনা বা জানতে আগ্রহী হত ।
লেখায় সিন্ধু সভ্যতার কথা কিছু উল্লেখ থাকলে ভাল হত।কেননা ২৫০০–১৫০০ BCE-তে সিন্ধু উপত্যকার নগরায়ণ,
লিপি, কৃষি, নর্দমা ব্যবস্থা এবং বাণিজ্য অত্যন্ত উন্নত ছিল। নীচের ছবিগুলির মত কিছু ছবি যুক্ত হলে লেখাটি পাঠকের
কাছে আরো মনোগ্রাহী হত ।
মহেঞ্জোদাড়োয় খননকার্যের ফলে আবিষ্কৃত প্রত্নস্থল, সম্মুখে মহাস্নানাগার।
মহিলা মূর্তি। পরিপক্ক হরপ্পা যুগ। সিন্ধু সভ্যতা
সিন্ধু উপত্যকায় পাওয়া হরপ্পা ওজন, (ন্যাশনাল মিউজিয়াম, নিউ দিল্লি)
আর্যদের আগমনের সময় এই সভ্যতা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছিল। পাঠকের কাছে জানানো জরুরি যে আর্যদের আগমন
ও সিন্ধু সভ্যতার পতনের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে অনেক গবেষণা ও বিতর্ক রয়েছে।এখানে তুলে দেয়া লিংকটি ফলো
করলে জানা যাবে সিন্ধু সভ্যতা ও আর্য সম্পর্কে পুনর্মূল্যায়ন; কেন সঠিক ইতিহাস প্রয়োজন
https://ongshumali.com/সিন্ধু-সভ্যতা-ও-আর্য-সম্প/
ভাষাগত বিষয়ে William Jones-এর কাজ নিঃসন্দেহে মাইলফলক। অবশ্য আজকের গবেষণা দেখায়, সংস্কৃত
সরাসরি ল্যাটিন থেকে আসেনি। বরং সংস্কৃত ও ল্যাটিন দুটোই এসেছে এক প্রাচীন সাধারণ ভাষা পরিবার থেকে,
যাকে বলা হয় Proto-Indo-European Language। ফলে এগুলো সিস্টার ভাষা—মা-ছেলের সম্পর্ক নয়।
পাঠকের কাছে এই সামান্য সংশোধনটি বিষয়টিকে আরও নির্ভুল করে তুলবে।
জিনগত গবেষণার (Genetic Studies) বিষাবলী সম্পর্কে আধুনিক ডিএনএ গবেষণায় দেখা যায়, ভারতীয়
জনগোষ্ঠীর মধ্যে বহুবিধ জিনগত মিশ্রণ রয়েছে যথা আদিবাসী, দ্রাবিড়, আর্যসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর রক্তের ধারা
এখানে মিশে গেছে। অর্থাৎ, বর্তমান দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ কেবল আর্য বংশধর নয়; বরং হাজার বছরের নানা
জাতি গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গঠিত। পাঠকের কাছে এই তথ্য যোগ করলে বোঝানো যেত যে ভারতীয় উপমহাদেশের
সংস্কৃতি আসলে বহুস্তরীয় ও বৈচিত্র্যময়।
সাংস্কৃতিক প্রভাব বিষয়ে বলা যায় আর্যদের আগমনের ফলে বৈদিক সংস্কৃতি, বৈদিক ধর্ম, এবং সংস্কৃত ভাষার
প্রসার ঘটে। তবে তারা এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির সাথেও মিশে যায়, যার ফলে পরে হিন্দু ধর্ম ও দক্ষিণ
এশিয়ার সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ভিত্তি তৈরি হয়। পাঠকের জন্য এই প্রভাবের দিকটিও প্রাসঙ্গিক হিসাবে ধরা দিত ।
যাহোক আপনার প্রয়াসলব্দ তথ্যপুর্ণ লেখাটি পাঠক হিসাবে আমাদের মনে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে কৌতূহল জাগায়।
পরের পর্ব পাঠান্তে আরো অনেক কিছু জানা যাবে । তথ্য বহুল লেখাটি প্রিয়তে তুলে রাখলাম ।
অনেক অনেক শুভ কামনা রইল
'
ছবি সুত্র - উইকিপিডিয়া