সীদ্ধান্ত এখন নিজের

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৮

একের পর এক ফোন বেজেই যাচ্ছে আদনানের। বাবা, মা অপেক্ষা করছে ছেলের রেজাল্ট শুনে সবাইকে জানিয়ে দিতে।... বোনটা অপেক্ষা করছে পাশের বাসায় মিষ্টি দিতে।... প্রচন্ড হতাশায় চশমা ঘোলা হয়ে আসে আদনানের। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটা বাবাকে ফোন করে উচ্ছাসিত স্বরে বলছে, “ বাবা, আমি চান্স পেয়েছি।” সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসে... সে পাশ করে নি। মা মুখে বালিস চেপে কাদছে। বাবার চশমার ফাক দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। একটু আগেই অফিসের খলিল সাহেব মেয়ের চান্স পাওয়ার নিষ্টি দিয়ে গেছে। কিছু কথা ও সাথে উপহার দিয়ে গেছে।... “আপনার ছেলে চান্স পেল না? ওরে দিয়ে কিছু হবে না... একটা ব্যবসা খুলে দেন...” মাথা হেট করে নিজের রুমে এসে বসে আদনান। পুরো পৃথিবীটা তার কাছে অন্ধকার হয়ে আসে। প্রচন্ড কষ্টে ফ্যানের সাথে ঝুলে নিজের জীবনের গল্পটা শেষ করে দেয়।... যে টাকা দিয়ে বাবা মিষ্টি কেনার কথা, সেই টাকা দিয়েই কাফন বাবা কাফন কিনে আনে... গল্পটা শেষ...

---

গল্পটা একটু অন্যভাবে এগিয়ে যাক। মা মুখে বালিস চেপে কাদছে। বাবার চশমার ফাক দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। মাথা হেট করে নিজের রুমে এসে বসে আদনান... প্রচন্ড জেদ চাপে তার। কেন তাকে দিয়ে হবে না? গার্লফ্রেন্ড কে কল করে বলে কিছুদিন তাদের যোগাযোগ হবে না।... যে বন্ধু আজ সান্তনা দিয়েছে প্রায়ভেটে ও ভর্তি হতে পারবে না বলে হতাশ করেছে, তার কথাগুলো বারবার কানে বাজছে।... প্রচন্ড জিদে ফেসবুক একাউন্টটা ডিএকটিভেট করল। গার্লফ্রেন্ডকে বলে দিল আপাতত বিশ্রাম! যে জিদ ছিল ফেসবুকে, যে জিদ ছিল গার্লফ্রেন্ডের উপর তা হল পড়াশুনার উপর।... কিছুদিনপর হল মেডিক্যাল পরীক্ষায় টিকে গেল আদনান। আজ বাবাকে চিল্লায়ে বলল “বাবা, পেয়ে গেছি চান্স।” যেই টাকায় বাবা কাফনের কাপড় কেনে, সেই টাকা দিয়ে কলিগের বাসায় মিষ্টি নিয়ে যায়...অফিসের সেই কলিগ বলল, “আপনার ছেলেটা আসলেই মেধাবী।” ...বন্ধুরা বলে, “কিরে মাম্মা ফাটাইলি তো।” ঠোটের ফাক দিয়ে মুচকি হাসে ছেলেটা।

---

পড়াশুনা নিয়ে বাবা-মাকে কখনো কাদতে হয়নি... ২০১২ সালের ১২ আগষ্ট (ঢাবি ক ইউনিট) ছিল জীবনের প্রথম ধাক্কা। তারপর ও কোন কিছু থেমে নেই। সব কিছু চলছে, চলবে।

...

আবেগ আর বাস্তবতার ট্রেন দুটা পাশাপাশি চলে। কেউ আবেগের ট্রেনে চড়ে পাড়ি জমায় অনন্তে, কেউ বাস্তবতার ট্রেনে করে পৌছে গন্তব্যে... সীদ্ধান্ত এখন নিজের ...

০ টি +০/-০