নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাগর পাহাড় পেড়িয়ে আমি... অচীন দূর দেশে। পাহার কূলে বেঁধেছি বাসা... সাগর জলে গিয়েছি ভেসে।

ইসলামের পথে থাকতে চেষ্টা করি...।

নাঈম আহমেদ

পেশায় চিকিৎসক, মানসিক ভাবে কবি ও পরিব্রাজক

নাঈম আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বর্তমানে বাংলা ভাষা নিয়ে পড়ছেন

০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৪



চীনের যোগাযোগ বিশ্ববিদ্যালয় (সিইউসি)-এ বর্তমানে যেসব শিক্ষার্থী বাংলা ভাষায় স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনা করছেন, তাদের সবাই ২০১১ সালে চীনের ১০টি বিভিন্ন প্রদেশ, শহর ও স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল থেকে এসেছেন। তাদের মোট সংখ্যা ১৮। বিদেশী ভাষা হিসেবে বাংলা শেখার অদম্য আগ্রহ নিয়েই তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। শুরু থেকেই তারা শ্রেণিকক্ষে একদল বন্ধুর মত পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বাংলা ভাষা শিখছেন।

অথচ এখানে ভর্তি হবার আগে তারা বাংলা ভাষা সম্পর্কে কিছু জানতেন না। কিন্তু বাংলাদেশ সম্পর্কে তারা শুনেছেন, শুনেছেন বাংলাদেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথা। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা যুদ্ধ আর চীনের সাথে দেশটির গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথাও তারা কমবেশি জানতেন। এসবই তাদের আকর্ষণ করে এ ভাষার প্রতি। বাংলা বিষয়ের ব্যবস্থাপক ইয়ু ছিউ ইয়াংয়ের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ও পেশাগত দক্ষতায় এসব শিক্ষার্থী অচিরেই বাংলা ভাষাকে আরো বেশি করে ভালোবেসে ফেলে। ম্যাডাম ইয়ু প্রায়ই বলতেন যে, একটি ভাষাকে শিখতে হলে সেই ভাষাকে ভালোবাসতে হবে, সেই ভাষায় যারা কথা বলে তাদের ভালোবাসতে শিখতে হবে এবং সর্বোপরি সেই দেশটিকে ভালোবাসতে হবে। শিক্ষার্থীরা এখন সুন্দর ও প্রাচীন ভাষা বাংলাকে ভালোবাসতে শিখেছে, বাংলাদেশকে ভালোবাসতে শিখেছে। তারা বাংলাদেশে যেতেও বিপুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তারা বাংলা ছবি ও নাটক আগ্রহ নিয়ে দেখে। বোঝার চেষ্টা করে বাংলাদেশিদের সংস্কৃতি।



স্বাভাবিকভাবেই শুরুতে তাঁরা বাংলা ভাষার বর্ণমালা ও ব্যাকরণ সম্পর্কে শিখেছেন। পরে ধীরে ধীরে বাংলা ভাষায় লিখতে ও পড়তে শিখেছেন এবং এই ধারায় ধীরে ধীরে উন্নতি করছেন। বর্তমান বিদেশি বিশেষজ্ঞের সহায়তায় তাদের বাংলা কথা বলা ও বাংলা শুনে বোঝার ক্ষমতা বেড়েছে। এখন তারা সহজ বাংলায় কথা বলতে পারে, পারে সহজ বাংলা বুঝতে।



শিক্ষার্থীদেরকে গ্রুপ করে বাংলায় নিয়মিত কথা বলার তাগিদ দেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। বেশি করে বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটক দেখতে বলেন। শিক্ষার্থীরা তা মেনেও চলে। যেহেতু নতুন একটি ভাষা একা একা শেখা কঠিন, তাই তারা নিজেদের মধ্যে সহযোগিতার ভিত্তিতে পড়াশোনা করে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সময় ১৮ জন শিক্ষার্থীর একাগ্রতায় মুগ্ধ বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ শিক্ষক। তিনি তার চীনা ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোবাসেন।



শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো করার প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, তা নয়। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা কখনোই তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কেক নষ্ট করে না। শিক্ষকরা প্রতিযোগিতাকে উত্সাহিত করেন, বিদ্বেষকে নয়। শিক্ষার্থীরা তাই সুস্থ প্রতিযোগিতায় একে অপরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।



পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে তারা সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও অংশগ্রহণ করেন। গত পহেলা বৈশাখে পেইচিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা বাংলায় গান গেয়েছেন এবং বাংলা গানের সুরে নেচে উপস্থিত সবার প্রশংসা অর্জন করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ব্যক্তিগতভাবে তাদের প্রশংসা করেছেন এবং দূতাবাসে সকল অনুষ্ঠানে এই ছেলেমেয়েদের আগাম দাওয়াত দিয়ে রেখেছেন। ২০১২ সালের মার্চ মাসে দূতাবাসের অনুষ্ঠানেও তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।



২০১২ সালের ১৭ মে ক্লাসের সকল ছাত্রছাত্রী চীনের কেন্দ্রীয় সংগীত কলেজে ভারতের দূতাবাসের উদ্যোগে 'রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের সংকলন' প্রকাশনানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে। ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর 'চীনা-বাংলা ব্যবহারিক অভিধান' প্রকাশনা অনুষ্ঠান চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে অনুষ্ঠিত হয়। সিইউসি-র বাংলা বিভাগের সকল ছাত্রছাত্রী সেই অনুষ্ঠানে অংশ নেন। তাঁরা বাংলা বিভাগের কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে।



২০১৩ সালের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চীন আন্তর্জাতিক বেতারে শিক্ষানবিস হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। এসময় তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের দক্ষতা দেখিয়েছেন। তারা এখানে শ্রেণিকক্ষে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগানোর সুযোগ গ্রহণ করেন। চীন আন্তর্জাতিক বেতারে তাদের শিক্ষানবিস কালটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা নিজেরা এ-বিষয়টি অকপটে স্বীকার করেছেন।



প্রতিজন শিক্ষার্থী নিজ নিজ স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে লেখাপড়া করেন। বাংলা ভাষা ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরাও তাদের ব্যতিক্রম নন। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশা করেন, লেখাপড়া শেষ করে তারা বাংলা ভাষার সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ করবেন। তাদের কেউ কেউ চীন আন্তর্জাতিক বেতারের বাংলা বিভাগে কাজ করার বা অনুবাদ সংশ্লিষ্ট কাজ করার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ আবার অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নিজেদের যুক্ত করার আশা প্রকাশ করেন। তবে, সবাই একটা অভিন্ন লক্ষ্যও আছে, আর সেটা হচ্ছে: চীনে বাংলা ভাষার প্রসারে অবদান রাখা। তাদের কেউ কেউ আবার খেলাপড়া শেষ করে বাংলাদেশে গিয়ে সেদেশের মানুষকে চীনা ভাষা শেখাতে আগ্রহী। নি:সন্দেহে সে কাজে তাদের বাংলার জ্ঞান কাজে লাগবে। এখানে আরেকটি তথ্য প্রকাশ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে মেয়েরা তুলনামূলকভাবে বেশি ভালো করছে। নতুন ভাষা শেখার ক্ষেত্রে মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবে কোনো সুবিধা পায় কি না কে জানে!





সুত্র- সিআরআই বাংলা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১২:০৯

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: চিনাদের বাংলাভাষা শিক্ষার অদম্য আগ্রহ
লেখাটি ভাল লাগল
ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.