![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ, আমি কবিতা পড়তে (কদাচিৎ লিখতেও) পছন্দ করি। ইতিহাস আমাকে আলোড়িত করে... আর রাজনীতি আমাকে দর্শন শেখায়।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সবচেয়ে বড় ক্রান্তিকালে সম্ভবত আমরা প্রবেশ করে ফেলেছি। এমন সময় জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে এই দেশের সবচেয়ে দায়িত্বশীল অভিভাবকের কাছে আমাদের যেরকম প্রত্যাশা ছিল সেই প্রত্যাশা এখন ‘দুরাশা’য় রূপ নিয়েছে একপ্রকার। ব্যক্তিগতভাবে আমি অনেকটাই মর্মাহত, তবে প্রসঙ্গ সেটা না। প্রসঙ্গ হচ্ছে যেরকম কথা আমরা আশা করেছিলাম তা নিয়ে; তার বদৌলতে আমরা কিছু রাজনৈতিক বক্তব্য ই পেয়েছি বলা যায়।
আপনি বলেছেন, “গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হবে যখন তা সাংবিধানিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হবে, জনগণের ভোটে নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিরা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন।” অথচ বাস্তবতা বলে ভিন্ন। আপনার দীর্ঘ উপদেষ্টা পরিষদ যারা কিনা কোনভাবেই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত নন তারাই প্রকারান্তরে দেশের নীতি নির্ধারণে যেই ভূমিকা পালন করছেন তা নিয়ে আমরা অনেকদিন ধরেই শঙ্কিত। অর্থ উপদেষ্টা, জ্বালানি উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সহ অনেকের ভূমিকা খোদ মহাজোটের মন্ত্রী-সাংসদরাই বিব্রত হন এরকম খবর পত্র পত্রিকা মারফত আমরা দেখেছি। এছাড়া আপনার উপদেষ্টা পরিষদের একজন হলমার্ক কেলেংকারির সাথে জড়িত এমন খবর ও দেখেছি। তাহলে, আসলেই কি বাংলাদেশের গণতন্ত্র হোঁচট খাচ্ছে না ??
আপনি বলেছেন, “২০০৭-এর ১/১১-এর মতো কোন তত্ত্বাবধায়ক সরকার যখন জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের বুকের উপর চেপে বসে তখন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক-ছাত্র-পেশাজীবী, ব্যবসায়ীসহ সবার উপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।” সরকারী দলের একাধিক সাংসদ, মন্ত্রী বিভিন্ন টকশোতে তাদের উপর অত্যাচারের লোমহর্ষক বর্ণণা দিয়েছেন, সংসদে দাঁড়িয়ে সাজেদা চৌধুরী পর্যন্ত বলেছেন যে স্বয়ং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে স্লো পয়জনিং এর মাধ্যমে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এমনকি আপনিও সংসদে দাঁড়িয়ে এর পক্ষেই বক্তব্য দিয়েছিলেন। বিরোধী জোটের অনেক নেতা বিশেষ করে তারেক রহমানকেও নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে তারাও দাবি করেন। কিন্তু যেই ১/১১ এর সেনা সমর্থিত সরকার এতোকিছু করলো তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন মামলা/ব্যবস্থা গ্রহণের ন্যূনতম উদ্যোগ ও তো রাষ্ট্র গত পাঁচ বছরে নেয় নি। অথচ তাদেরকে অভিযুক্ত একটা সিস্টেম বাদ দিয়ে দেয়া হলো। কেন তাদের বিচার হলো না তাও জনমনে প্রশ্ন !
আপনি বলেছেন, “বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে। মানুষের মাথাপিছু আয় ১০৪৪ ডলারে উন্নীত করেছি। প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের উপরে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।” অথচ ‘দুর্নীতিবাজ’ , ‘হাওয়া ভবনবাজ’ জোট সরকারের আমলেই (২০০৫-০৬ অর্থবছরে) বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৬.৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে, অথচ বর্তমান সরকার মাত্র একবার এই অংক স্পর্শ করেছে আর বাকি চার অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ছিল এর নিচেই। তাই অর্থনীতিতে যে খুব বেশি সুবাতাস বইছে এমন কিন্তু নয় !
আপনি বলেছেন, “বিএনপি-জামাত সরকারের আমলে যে বাংলাদেশ সারাবিশ্বে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও জঙ্গীবাদের কারণে নিন্দিত ও সমালোচিত হতো, লজ্জায় আমাদের মাথা হেঁট হয়ে যেতো, সেই বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল হিসাবে সারাবিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে।” কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে যে বাংলাদেশকে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্নীতিপরায়ন দেশ হিসেবে সর্বপ্রথম ২০০০ সালে আখ্যা দেয়া হয়, সেসময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ ই ক্ষমতাসীন ছিল। পিলে চমকে যাবার মত তথ্য হচ্ছে যে সেই বছরে দুর্নীতিজনিত আর্থিক ক্ষতি ছিল ১৭,১৯২ কোটি টাকা। আর জঙ্গিবাদের প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের শাসনামলেই কবি শামসুর রাহমানের ওপর হামলা, যশোরে উদীচির অনুষ্ঠানে এবং রমনার বটমূলে বোমা হামলার মাধ্যমেই বাংলাদেশে জঙ্গি উত্থানের সূত্রপাত। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকার-ই কিন্তু বাংলা ভাই, শায়খ আব্দুর রহমান সহ অন্যান্যদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করেছিল। আর সন্ত্রাস ! ২০০১ এ নির্বাচনে জয়লাভের পর ই সারাদেশে হঠাৎ করে আক্রমণ শুরু হয় যার অধিকাংশের সাথেই বিএনপির কর্মীরাই জড়িত;পত্র-পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী। কিন্তু সেটাকে সফলভাবে দমনের জন্য অপারেশন ক্লিনহার্ট আর সর্বোপরি ‘দুর্দান্ত’ র্যাব সেই সরকারের ই অবদান। যতদূর মনে পড়ে র্যাবের ক্রসফায়ারে আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের তুলনায় বিএনপির সন্ত্রাসী ই বেশি মারা গিয়েছিল। অথচ গত পাঁচ বছর র্যাবকে মনে হয়েছে কোন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন এর ন্যায়, রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া যাদের আর তেমন কিছু করার নেই। এবার গত পাঁচ বছরের কথায় আসি, অধিকারের তথ্য মতে গত পাঁচ বছরে গুমের স্বীকার ৮৭ জন, হিউম্যান রাইট্সের তথ্যমতে যেটা ১৫৬ জনের ও বেশি । দিনে দুপুরে যেভাবে ক্যামেরার সামনে নাটোরের সানাউল্লাহ বাবু, বিশ্বজিত সহ অনেককেই নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে তার বিচার নিয়েও চলছে টালমাটাল অবস্থা। তার উপর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২১জন আসামীকে ক্ষমা করা হয়েছে যাদের সবাই ই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে হয় সরাসরি নতুবা পারিবারিকভাবে জড়িত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এতদসত্বেও আপনি কি মনে করেন যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের আদৌ কোন গর্ব করার বিষয় আছে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “৪, ৫ ও ৬ মে’ মতিঝিল শাপলা চত্ত্বরের ধ্বংসযজ্ঞ জাতিকে আতঙ্কিত করেছিল। আমরা সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়ে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছি, নিরাপত্তা দিয়েছি।” কি ছিল সেই ‘সময়োচিত’ পদক্ষেপ ? বাজারে-গ্রামে গঞ্জে কথা রটে আছে যে হাজার হাজার মানুষ নাকি হত্যা হয়েছে। পুলিশের তথ্য মতে ১১ জন আর অধিকারের তথ্য মতে ৬১ জন, হিউম্যান রাইট্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৫০ জনের মতন। প্রশ্নটা আসলে সংখ্যায় নয়, প্রশ্নটা মানুষের জীবন নিয়ে। একজন মানুষও যদি সেদিন মারা যায় তাহলে এর জবাব রাষ্ট্রকে দিতেই হবে। যদি এটা গুজব ই হয়ে থাকে তাহলে রাষ্ট্র কেন উদ্যোগ নিচ্ছে না এই গুজব নিরসনে? নাকি আমরা ধরেই নেবো “যা রটে তা তো কিছু বটে” ?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি আরো অনেক বিষয় বলেছেন, ‘সমুদ্র বিজয়’, ‘সেনাবাহিনীকে আধুনিক সমরাস্ত্র দিয়ে আধুনিকীকরণ’, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন’ , ‘নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা’, ‘বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়ন’ , ‘দ্রব্যমূলের দাম কমানো’ সহ আরো অনেক বিষয়ে। সেসব বিষয়ে বক্তব্য ও আমাদের কাছে রাজনৈতিক বক্তব্যের মতন ই মনে হয়েছে, প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করে নিজের মাহাত্ম্য প্রদর্শনের মানসিকতার মতন। বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসাবে এই জাতির আপনার কাছে প্রত্যাশা অনেক ছিল, আপনার বক্তব্য যে কারণে আমাদের হতাশ করেছে। আমরা চেয়েছিলাম সমাধান, কিন্তু আমরা পেলাম আরো একটি সমস্যা !
আপনার বক্তব্যের শেষ দিকে আপনার ছোট ভাই মরহুম শেখ রাসেলকে নিয়ে কথাগুলো আমাদেরকেও ভাবাবেগাপ্লুত করেছে। আমারও ছোট ভাই আছে, আমাদেরও ছোট ভাই আছে, আমাদের সকলের ই পরিবার আছে, গত পাঁচ বছরে অনেক মানুষ রাজনৈতিক নির্মমতায় প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের ও পরিবার ছিল,আছে। যেই সমস্যা নিয়ে আজ পুরো দেশ চিন্তিত তার সমাধান না হলে এরকম আরো কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটবে, তাদেরও তো পরিবার আছে। স্বজন হারানোর বেদনা আপনি বোঝেন। তাই আশা করি, সবকিছু বিবেচনা করেই জাতির সবচেয়ে দায়িত্বপূর্ণ অভিভাবকের মতন ই সিদ্ধান্ত নিবেন যাতে এই ইস্যুতে আর কোন প্রাণকে হারাতে না হয় তার পরিবারের।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫০
নীল_সুপ্ত বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ৮:৩৪
শিপন মোল্লা বলেছেন: হাসিনা একজন স্বঘোষিত বেঈমান তার কাছে ভাল কিছু প্রত্যাশা করা বোকামি।
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫০
নীল_সুপ্ত বলেছেন: রাজনৈতিক শ্রদ্ধা দেখালাম মাত্র ।
৩| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬
হুমায়ুন তোরাব বলেছেন: kar kase ki bolen
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে অক্টোবর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮
অসামাজিক ০০৭০০৭ বলেছেন: শেয়ারড,,,...
আর এই প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রত্যাশার সাথে ভুলেও প্রাপ্তিটা মিলাতে যাবেননা কিন্তু ,
কারন এইদুটা জিনিষ এই আমলে যোজন যোজন দূরত্বে অবস্থান করিতেছে।