নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুকঃ ওসমান আহমেদ সাকিব

"" It is a difficult thing to tell the story of a life;and yet more difficult when that life is one's own. ""

নীল_সুপ্ত

সাহিত্যে ব্যাপক আগ্রহ, আমি কবিতা পড়তে (কদাচিৎ লিখতেও) পছন্দ করি। ইতিহাস আমাকে আলোড়িত করে... আর রাজনীতি আমাকে দর্শন শেখায়।

নীল_সুপ্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

গুমের স্বীকার একটি আত্মার আত্মকাহিনী

০১ লা মে, ২০১৪ রাত ৯:২৪

১#

লাশটি তখন নদীটির তলদেশের দিকে যাচ্ছে, যতটা ধীরে নিচের দিকে নামার কথা ততটা না, প্রায় ৩০ কেজি ওজনের পাথর আমার ৬৫ কেজি ওজনের শরীরের সাথে বাঁধা, তাই একরকম টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে, উৎসুক মাছেরা চোখগুলো বড় করে দেখছে, চোখে ভয়ের চিহ্ন ও দেখলাম, হয়তো উজবুক ভেবেছে...ছোট ছোট মাছ, বড় ছোট মাছ, দলবদ্ধ মাছ... মাছগুলোকে দেখে আমার ছোট ছেলেটার কথা মনে পরে গেল, তার ভারি শখ একুরিয়াম করার, দলবদ্ধভাবে মাছ সাঁতরাবে, সে দেখবে... তার নাকি ভারি আনন্দ হয়... কিছুদিন আগে একটা ছোট একুরিয়াম কিনেও দিয়েছি... ১০-১২টা পোনার... হঠাৎ করে শরীরটা কিসের সাথে সজোরে ধাক্কা খেলো। বুঝতে পারলাম একেবারে তলদেশে এসে পড়েছি... এমন সময় মাঝারি আকারের এক ঝাঁক মাছ এদিকে তেড়ে আসছে দেখলাম, কাছে আসতেই সব থেমে গেল... পুচ্ছ নাড়িয়ে আমাকে দেখছে... এ কি ! আমি মাছেদের প্রতিটা কথা শুনতে পারছি যে...

- মানুষটির অবস্থা এমন কেন?

- বুঝতে পারছিনা, পেটটাকে এভাবে কেটে কেটে দিয়েছে কেন? আর চোখগুলো কেমন জানি উপড়ানো !

- পায়ে শিকলও বেঁধে দিয়েছে, মৃত মানুষের সাথে এরকম ! এমন কি করেছে?

হঠাৎ করে মুরব্বীগোছের এক মাছ এসে বললো,

"এখন থেকে আর তলভাগে আসা যাবেনা, একের পর এক মানুষের লাশ আসছে, কারো চোখ উপড়ানো, কারো হাত নেই, হাত আছে তো আঙ্গুল নেই, হাত-আঙ্গুল আছে তো পা ভাঙ্গা, পা ঠিক তো পেট কেটেকেটু হৃদপিণ্ড ফুঁসে বের হয়... এত বিচ্ছিরি দৃশ্য আর অবস্থায় তলভাগ দূষিত হয়ে গেছে, এরা কদিন পর আমাদের ভূত হয়ে তাড়াবে... না জানি এরা এমন কোন দোষে দোষী ! এদের এসব দেখলে আমাদের প্রজন্মের মধ্যে এদের রোগের সংক্রমণ হতে পারে। কেউ ভুলেও আর আসবেনা এদিকে। চলো এক্ষুনি। "



আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম, আমি কোন দোষ করিনি, বিশ্বাস করো, আমি কোন রোগে অসুস্থ ও নাই... ওরা ...ওরা আমাকে বাঁচতে দেয় নি... ওমা... আমার গলা? গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কেন? আমার চিৎকারের আওয়াজ ওরা শুনছে না কেন? আমিইইইইইইইইই......



২#

আশেপাশে তাকিয়ে দেখি... আরো লাশ... ফেঁপে ফুলে থাকা লাশ... লাশের সারি সারি বাগান... পত্রিকায় পড়া গুমের খবরগুলোর বুঝি এখানেই অবস্থান... মনে হলো, গুমের স্বীকার মানুষের রাজ্যে শুয়ে আছি... এই রাজ্যেও ক্রমাগত জনসংখ্যা বাড়ছে। পৃথিবীতে জনসংখ্যা কমানোর জন্য কত্ব পরিকল্পনা; এই রাজ্যের জন্য কি কোন পরিকল্পনা নেই????????



৩#

ছোট ছেলেটার কান্নায় ঘুম ভাঙল, চোখ খুললো না... খুললেও যে লাভ হত,তাও না... চোখের মণি যে চোখের মধ্যে নেই ! ছেলে কাঁদছে আর বলছে, "আব্বু আব্বু আমাকে আরেকটা একুরিয়াম কিনে দিতে হবে, তুমি ওঠো, এখনি ওঠো।" ১৪ বছরের প্রেম করে বিয়ে করা আমার বউটা বার বার মূর্ছা যাচ্ছে আর সম্বিত হতেই বলছে, "ওগো, ওগো, ওগো, আমি তোমার কাছে কখনো আর কিচ্ছু চাইবো না, শাড়ি চাইবো না, গহনা চাইবো না, কিচ্ছু না... শুধু তুমি ফিরে এসো, শুধু তুমি ফিরে এসো।" বউয়ের কান্না শুনে খারাপ লাগলো না, হাসি ই পেলো বরং। বউটা সারাজীবন বোকা-ই রয়ে গেল, গুম হয়ে গেলে মানুষ কি ফিরত আসতে পারে??? আমি তো তাও লাশ হয়ে এসেছি, এতো তোমার সাত পুরুষের সৌভাগ্য। শুকরিয়া করো। আমার বৃদ্ধ্বা মা-কে দেখে আর সহ্য হলো না... যারা লাশ ফিরিয়ে এনেছে তাদের সব অভিশাপ দিতে ইচ্ছে হলো... মরা মানুষের অভিশাপের ই দাম নেই... আর গুমিত মানুষের , হাহ! মা কাঁদছেন আর বলছেন, "যেই ছেলেকে পেটে নিয়েছি আমি, যেই ছেলে হাঁটতে পারতো না, হাটা শিখিয়েছি আমি, যেই ছেলের কপালে টিপ দিয়ে বলে দিতাম, আমার ছেলে লাখ মানুষের মাঝে হারিয়ে গেলেও এই টিপ দেখে চিনে নিবো আমি, সেই ছেলের সারা শরীরটা দেখেও চিনতে পারিনা আমি... আল্লাহ, তোমার আরশে কাঁপন ধরে না??? মায়ের কান্না তুমি শোনো না... "

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:১৫

রহস্যময়ী কন্যা বলেছেন: পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.