নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দরজা খুলে দিয়ে হাত বাড়ালেন তিনি । বললেন- আসো, ভেতরে। 'তুমি' করে বল্লাম, কিছু মনে করলে না তো। হেসে বল্লাম- 'আপনি' বললেই অস্বস্তি হতো। হাসতে হাসতে বললো- ইয়াংম্যান , পড়া শোনা কি চলছে, না শেষ। বল্লাম চলছে।
আন্তরিক ভঙ্গিতে ঘরে ডেকে নিয়ে বসিয়ে সঙ্গীতের আলাপ জুড়লেন। ডাকলে দুই সন্তান হোমায়রা ও রাজা বশিরকে। তিনি প্রিয় শিল্পী বশির আহমেদ। আমার কাঁচা হাতে লেখনীর প্রথম দিকের ঘটনা। ২০০১ সালের শুরুর দিকে।
মোহাম্মদপুরের বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় সরাসরি বশির আহমেদের বাসা। সে সময় বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের সঙ্গীতের আলাপন অনুষ্ঠানে যেতাম। সে কারণে সঙ্গীতের কিছু বেসিক বিষয়ে ধারণা ছিল। তাই আলাপটা জমে উঠছিল।
বশির আহমেদ বললেন, এই যুগেও ঠুমরি, দাদরা নিয়ে কথা- এ শুনে আমার অবাক লাগছে। আজকাল তো সাংবাদিকরা পপুলার শিল্পীদের নিয়ে কথা বলেন, বেশি।
উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের কথা তুললে নাক শিটকায়, সবাই। অথচ এই ভাটি বাংলা কিন্তু সঙ্গীতের অসাধারণ জায়গা। আমাদের অনেক দূর যাবার কথা ছিল। পারিনি। এ জন্য আমরাই দায়ি!
প্রিয়মুখ- বিনোদন পত্রিকাটির রিপোর্টার হিসাবেই আমার তার বাসায় যাওয়া। সে সময় তার সম্পর্কে ব্যাপক ভিত্তিক কোনো ধারণা আমার ছিল না। বাসায় ঢুকলেই এক সঙ্গীতময় পরিবেশ। হারমোনিয়াম, তানপুরা, ঢোল, তবলা, গিটার- অনেক রকমের বাদ্য যন্ত্র।
বাসায় স্ত্রী মিনা বশির ছিলেন না। ছেলে রাজা ও মেয়ে হোমায়রার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। রাজার ব্যস্তা ছিল, কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে চলে গেলেন।
বশির আহমেদ জানালেন- সন্তানদের আসলে তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন। একদিকে প্রথাগত শিক্ষা আরেক দিকে সঙ্গীত। সঙ্গীতই তাদের জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম হবে তা কিন্তু নয়। তারা সঙ্গীত চর্চা করবে-শুদ্ধ সঙ্গীতের ধারা বয়ে বেড়ানোর জন্য।
কলকাতায় বেড়ে ওঠার গল্প শোনালেন। জানালেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলীর সঙ্গ পাওয়ার কথা। বললেন সঙ্গীত মনের প্রশান্তি আনে। জনপ্রিয়তা অর্জনের চেয়ে শুদ্ধ সঙ্গীতের প্রসারে কাজ করেছেন বড়ে গোলাম আলীরা।
বশীর আহমেদ ও হোমায়রা বশিরের সাথে অনেকক্ষন আড্ডা হলো। বশীর আহমেদের বেড়ে ওঠা, সঙ্গীতের নানা দিক, রাগ ঘরানার সঙ্গীত চর্চা বিষয়ে চলমান সময়ের শিল্পীদের অনীহা, রাতারাতি তারকা হওয়ার ধান্ধা, কম জানা লোকের সঙ্গীত পরিচালনা- এ সব বিষয় জানতে পারলাম।
হোমায়রা নামটা সে সময় আমার প্রথম শোনা। তাই দুবার আমাকে এটি কতার বলতে হয়েছে। নামের অর্থটাও তিনি বলেছিলেন। এখন মনে পড়ছে না। রাজার গল্পও করলেন।
অনেক্ষণ ধরে আলাপ-আপ্যায়ন। বশির আহমেদ সম্পর্কে হোমায়রার কাছে আরো অনেক জানা হলো। বিশেষ করে 'অনেক সাধের ময়না আমার বাঁধন ছিঁড়ে যায়'- গানটি নিয়ে বশীর আহমেদের উচ্ছ্বাস আমাকে মুগ্ধ করলো। একজন শিল্পীই বলতে পারেন তার কোন গানটি আসলেই গান হয়ে উঠে। বশীর আহমদে খুবই আত্ম বিশ্বাসী শিল্পী।
হোমায়রা জানালেন ভারতের খ্যাতিমান শিল্পীরা বশির আহমেদকে প্রচণ্ড শ্রদ্ধা করতেন। ভালোবাসতেন।
পরে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এক আড্ডায় জেনেছিলাম- 'আয় খুকু আয়' গানটি বাংলা সিনেমার জন্য গেয়েছিলেন হেমন্ত বাবু।
তার কাছে সিনেমার গানটি গাওয়ার অফার নিয়ে গেলে হেমন্ত বাবু বলেছিলেন, যে দেশে বশির আছে, সে দেশে আমাকে কেনো ডাকছো তোমরা। তবে শেষ পর্যন্ত হেমন্ত বাবু গানটি গেয়েছিলেন।
মূলত ব্যান্ড গানের প্রতি আমার টান ছিল প্রচণ্ড। সে কারণে এ সব গান আমার কানে নতুন মনে হচ্ছিলো। বাসায় ফিরে পুরনো রেকর্ড নিযে বসেছিলাম। শুনছিলাম তার গান।
সম্ভবত তার বাসা থেকে ফেরার পর সঙ্গীতা বা সাউন্ডটেকের পাটুয়াটুলির হেড অফিস থেকে হোমায়রা ও বশির আহমেদের গানের ক্যাসেট পেয়েছিলাম। সেখান থেকে অন্য রকম এক বশির আহমেদকে আবিষ্কার করি।
হোমায়রাকে নিয়ে আমার কয়েকটি রিপোর্ট ছিল- প্রিয়মুখে। একটা ইন্সেটারভিউও ছাপা হয়েছিল। সব রিপোর্ট তার ভালো লেগেছিল তা কিন্তু নয়।
তবে খারাপ লাগেনি বলে তার 'রহমান রহমান হকে' সিএ কোর্সের সহপাঠি শফিক ভাই মারফত জেনেছিলাম। শফিক ভাই তার বিষয়ে আমাকে বিভিন্ন বিষয় জানাতেন।
অনেক আড্ডার পর ফিরে বশির আমহেদের বাসা থেকে বেরিয়ে এলাম। বশির আহমেদ ও মেয়ে হোমায়রা বশির আমাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলেন। বললেন, শুধু রিপোর্ট না, এমনিতেই সময় পেলে চলে এসা। আড্ডা হবে। তোমরা তরুণরাই কিন্তু আমাদের সাংস্কৃতিক অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিবে। আমি অন্তত তাই মনে করি। ভালো থেকো।
পরে মাঝে মধ্যেই তাকে বাসার ফোনে কল করতাম।
বছর দেড়েক পরে সংস্কৃতি বিষয়ক রিপোর্ট লেখালেখি বন্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসাবে কাজ শুরু করলে যোগাযোগটা থেমে যায়। কিন্তু বশীর আহমেদ- নামটা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।
সবচেয়ে বেশি ভালো লাগতো তিনি সব সময় গান নিয়েই আছেন। সংস্কৃতি কর্মীর নামে রাজনীতির জোয়ারে ভাসতেন না। বলতেন সঙ্গীতই তার জীবনের অভীষ্ট। এটা নিয়েই তার জীবন কাটুক, সেটিই তার প্রত্যাশা।
এর মধ্যে আজ সকালে যখন বশির আহমেদের মৃত্যু সংবাদ পড়লাম-খুব মন খারাপ হলো। খুব। পরকালে আপনি শান্তিতে থাকুন। আপনার সঙ্গীতের সাথে আমাদের বাঁধন থাকবেই।
২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
মোরতাজা বলেছেন: হুমমম
২| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:২৫
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
মোরতাজা,
সংগীতের বর্তমান যা অবস্থা। রাজনীতির জোয়ারে না ভাসলেও তিনি আমাদের বাংলা সংগীত সুধায় অনেকদিন ভেসে রইবেন।
তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৬
মোরতাজা বলেছেন: সহমত
৩| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৪৩
ঢাকাবাসী বলেছেন: মারা যাবার পর কত্তো শ্রদ্ধা নিবেদন আমাদের দেশের সমাজের বিভিন্ন গুষ্ঠির! বশির ভাইর জীবনের না পাওয়ার তালিকার খবর কেউ রাখে? তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:৩৭
মোরতাজা বলেছেন: ঠিকই কইছেন।
৪| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭
এহসান সাবির বলেছেন: তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৮
মোরতাজা বলেছেন: শ্রদ্ধা
৫| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৮
শ্লোগান০০৭ বলেছেন: বিনিত শ্রদ্ধা বোধ
২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১০
মোরতাজা বলেছেন: শ্রদ্ধা
৬| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: আমার একজন প্রিয় গায়ক ছিলেন।
তার আত্মার মাগফিরাত কামন করছি।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১০
মোরতাজা বলেছেন: আত্মার মাগফিরাত কামন করছি।
৭| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫২
তূর্য হাসান বলেছেন: গুণী শিল্পী বশীর আহমেদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৩
মোরতাজা বলেছেন: আমীন।
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:১৭
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: -----সংস্কৃতি কর্মীর নামে রাজনীতির জোয়ারে ভাসতেন না। বলেই দেখেন না- এমন একজন গুনিশিল্পির প্রস্থানও কেমন ফ্যাকাসে!!!!!!!!!!!!!!!!!!
হায় মিডিয়া!
হায় সংস্কৃতি কর্মী!!
শিল্পের জন্যই শিল্পী শুধু
এছাড়া নেইকো তার অন্য জীবন!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!
তাঁর বিদেহী আত্মার মুক্তি কামনা করছি।