নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভীষণ কঠিন পোড়ামাটিকে আবার সেই কাদামাটিতে ফিরিয়ে আনা,ভীষণ কঠিন আঘাত দেয়া শব্দমালা গুলো ফিরিয়ে নেয়া।ভীষণ কঠিন নিজের সম্পর্কে কিছু বলা।যে চোখ দেখিনি সে চোখ কেমন করে বিশ্বাস করবে জানি না।যে কখনো রাখিনি হৃদয়ের উপর হৃদয়;সে কেমন করে বুঝবে আমায়!

নীল মনি

শিশুর মত চোখ দিয়ে দেখি আমার এই বিশ্ব।মানুষ স্বপ্নের কাছে হেরে যায় না, হেরে যায় নিজের প্রত্যাশার কাছে। প্রত্যাশা থাকে আকাশচুম্বী অথচ প্রচেষ্টায় থাকে শুধুই স্বপ্ন।

নীল মনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাছে লোকে কিছু বলে!

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৫

নিজের মাঝে অদম্য ইচ্ছা বাঁচিয়ে রাখা কতটা প্রয়োজন তা আমি প্রথম শিখেছিলাম সোফিয়ার কাছ থেকে।সেটা ছিল শরতের এক উষ্ণ সকাল,আমাদের বাৎসরিক খেলার একটি অনুষ্ঠানে সোফিয়াকে মঞ্চে ডাকা হয়েছিল সবার উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য।সোফিয়া খুব ধীর পায়ে আস্তে আস্তে তার বাকি রাস্তাটুকু শেষ করে যখন মঞ্চে গিয়ে কিছু বলার জন্য দাঁড়াল তখন তার হাতে রাখা স্ক্রিপ্টটা ফসকে পড়ে গেল।আমি দেখলাম সোফিয়ার পা দুটো কাঁপছে।সোফিয়া মাইকটা ঠোঁট থেকে আধা ইঞ্চি দূরে সরিয়ে রাখল।নিজের চশমাটা ঠিক করে নিল,ঠিক ততক্ষণে দয়াপরাবশত কেউ একজন সোফিয়ার উড়ে যাওয়া কাগজ কুঁড়িয়ে হাতে এনে দিল।মঞ্চভর্তি মানুষ আর মানুষ,শত শত এই মানুষগুলো তাকিয়ে আছে সোফিয়ার দিকে কিছু শোনার আশায়।সোফিয়া সাদা রঙয়ের টিশার্ট পরেছে,নিচে নীল রঙয়ের স্কার্ট।সোফিয়াকে শরৎতের আকাশে ছুটে চলা এক টুকরো মেঘের মত স্নিগ্ধ দেখাচ্ছিল।সোফিয়া হাতের কাগজের দিকে তাকিয়ে সামনে বসে থাকা শত শত মানুষের উদ্দেশ্য বলল,"এতটা সম্মান পাবার যোগ্যতা আমার অর্জন করার সামর্থ্য ছিল না, অথচ আপনারা সবাই মিলে আমাকে যে সম্মানটুকু দিলেন বলতে হবে এটা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন।কারণ আপনাদের ভালোবাসার সর্বোচ্চ জায়গায় আমাকে ঠাঁই দিলেন, খুব বেশিদিন হয়ত সে রাজত্বটুকু করতে পারব না,তবুও যেটুকু সময় আছি সেই সময়টুকুর সমস্ত আঙ্গিনা জুড়ে কৃতজ্ঞতা বিরাজ করবে প্রতিটা দিন।"আমি খুব করে খেয়াল করলাম সোফিয়ার কন্ঠ,প্রতিটা শব্দ,প্রতিটা বাক্য।কী চমৎকার করে সে বলে যাচ্ছে যদিও তার গলা কাঁপছে।সোফিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় মৃদু দুলুনির সাথে বলছে
"আজ অনেক দিন পর আমি কিছু বলছি,আমি আসলে ভীত কিছুটা, যেটা বলতে চাই আদৌ ঠিক সেটা বলতে পারব কিনা সে বিষয় নিয়ে।কারণ আমি জীবনের শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি।
আমার বয়স আজ আশি বছর।
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন নিত্য খেলা করতাম,ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে আমরা একসময় নিজেদেরকে বড় ভাবতে শুরু করলাম;আর তখন আমরা খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছিলাম এটাই ভেবে যে বড় হয়ে গেছি এখন আর খেলা করা যাবে না !

ভেবে দেখুন তো আমাদের বয়স বেড়ে যাচ্ছে বলেই কি আমরা খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছি?

না তা নয়,আমরা বৃদ্ধ হয়ে যাচ্ছি কারণ আমরা নিজেরাই খেলাধুলা ছেড়ে দিয়েছি।আমাদের শরীরে যত না বার্ধক্য এসেছে তার চেয়ে অধিক এসেছে আমাদের মনে।জন্মের সময় একটা সবুজ মন নিয়ে পৃথিবীতে এসেছিলাম। সময়ের সাথে সাথে, আশেপাশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনা, মানুষের নেতিবাচক কথায় প্রতিনিয়ত সেই সবুজ মনটাকে ফিকে করে ফেলেছি।যত এসব ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছি তত বেশি সেই মনকে বিবর্ণ করে ফেলেছি;যেটা জানার ও বোঝার সময় হয়ে উঠেনি।

বৃদ্ধকালটি সকলের জন্য সুখকর নয়।এই সময়টাতে বুদ্ধি বাড়ে না, আগের চেয়ে বেশি স্মার্ট হতে পারা যায় না;কোমরে ব্যথা বাড়ে হুট করে, বদহজমের সমস্যা বা চোখে ভালো দেখতে না পাওয়া, কানে কম শোনা, আর সবশেষে সবার চোখে মুখে করুণা।
আজকের এই ক্ষণে সকলের জন্য একটাই পরামর্শ বৃদ্ধ হবার আগেই নিজের মনকে বৃদ্ধ বানিয়ে নিবেন না ;এমনকি আপনি বৃদ্ধ হয়ে গেলেও আপনার মনকে বৃদ্ধ হতে দিবেন না।ভালোবাসুন জীবনের প্রতিটি মুহুর্তকে,আর মনে মনে বলুন হ্যাঁ আমি জীবনটাকে উপভোগ করলাম।"

সোফিয়ার সাথে প্রথম যেদিন দেখা হল সেদিনটাতে আমাদের প্রফেসার আমাদেরকে জানালেন আমরা একটা নতুন অভিজ্ঞতা গ্রহণ করতে যাচ্ছি।তিনি সোফিয়াকে আমাদের সবার সামনে নিয়ে আসলেন।আমি দেখলাম একজন চামড়া কুঁচকে যাওয়া একজন বয়স্ক মহিলা মুখে স্মিত হাসি দিয়ে, লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে।এরপরের দিনের ঘটনা।আমি সোফিয়ার কাছে এগিয়ে গেলাম,আমি তার নাম জানতে চাইলাম। সে জানাল তার নাম কুইন,তার বয়স । তারপর বলেছিল আমি কি তোমাকে আলিঙ্গন করতে পারি?"
আমি তার এমন কথায় বেশ জোরে হেসে উঠেছিলাম আর জানালাম কেন নয়? আলিঙ্গন কর।সে আমাকে জোরে চাপ দিয়ে ধরে ছেড়ে দিল। আমি তাকে প্রশ্ন করেছিলাম,"এত অল্প বয়সে এখনো কেন তুমি কলেজে পড়ছ?

সে মজা করে জানিয়েছিল,"আরে আমি তো একজন অল্পবয়সী একজন স্বামীর খোজেঁ এখানে এসেছি, যার সাথে নতুন করে সংসার করব,এক ডজন ছেলে মেয়ে বানাব "বলে হো হো করে হেসে উঠল।আমি তার হাসির দিকে একমনে তাকিয়ে শুধু এটাই ভাবলাম তার জায়গায় আমি হলে কখনো হয়ত আর পড়াশুনা করা হয়ে উঠত না!

"আমার স্বপ্ন ছিল আমি কলেজের ডিগ্রী টা নিব আর এখন আমি সেই পথেই হাঁটছি।" কথাটা বলে সে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চলে গেল।
এরপরের দিন সে যখন কলেজে এল আমার জন্য অনেক রকমের চকোলেট নিয়ে এল এবং সহজে আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠলাম।প্রতিদিন ক্লাস শেষে আমরা প্রচুর গল্প করতাম। সে তার জীবনের গল্প বলত।

সময় গড়িয়ে যেতে থাকল;সোফিয়া দিনে দিনে ক্যাম্পাসের সকলের প্রিয় মুখ হয়ে উঠল।অবশেষে আমরা কলেজের ডিগ্রী অর্জন করলাম।সোফিয়া তার আগের জীবনে ফিরে গেল।

ডিগ্রী অর্জনের এক সপ্তাহ পর খবর এল সোফিয়া আজ সকালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেছে।আমরা কলেজের সকল ছাত্রছাত্রী তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যোগদান করলাম।সোফিয়াকে দেখলাম। ফুলের মত লাগছে তাকে,যেন একটি ফুটন্ত সাদা গোলাপ কফিনে শুইয়ে রাখা হয়েছে।আমার বারবার অতীতের কথা মনে আসছিল;সোফিয়ার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে ব্যথিত করে তুলছিল।আমার চোখ দিয়ে জলের একটা ফোঁটা গড়িয়ে সোফিয়ার গায়ে গিয়ে পড়ল।সোফিয়া, আমার দাদির বয়সী; আমার দাদির ইচ্ছে ছিল এসএসসি পাশ করার অথচ সে তার স্বপ্নের দিকে এগিয়ে যেতে পারেনি, সে থেমে গেছে, সে থামিয়ে দিয়েছে নিজেকে শুধু এটাই ভেবে -পাছে লোকে কিছু বলে!হয়ত বিদেশের মাটিতে তাই সোফিয়া এত সুন্দর তার স্বপ্নের হাত ধরে এগিয়ে যেতে পেরেছে।আমি জানি আমার সোনার বাংলাদেশে এখনো অনেক সোফিয়া আছে যারা তাদের লালিত স্বপ্নের হাত ধরতে বিভোর;মানুষগুলো বেঁচে থাকুক লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে।সোফিয়ারা জেগে উঠুক,জাগিয়ে তুলুক নিজেকে নতুন করে,মুছে ফেলুক হৃদয় থেকে পাছে লোকে কিছু বলে!
@রুবাইদা গুলশান
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৩৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: আমি জানি আমার সোনার বাংলাদেশে এখনো অনেক সোফিয়া আছে যারা তাদের লালিত স্বপ্নের হাত ধরতে বিভোর - আছে, এমন অনেক সোফিয়া আছে, তাদের স্বপ্নটা বেশীরভাগ সময়েই অপ্রকাশিত থেকে যায়।
আর শিরোনামটা তো কবি কামিনী রায় এর একটি বিখ্যাত কবিতার নাম। সেই কবিতার শেষ চরণ দুটি আমাদের সমাজের এক চির শাস্বত বর্ণনাঃ
শক্তি মরে ভীতির কবলে,
পাছে লোকে কিছু বলে

২৮ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৩৮

নীল মনি বলেছেন: এবার এইচ এস সি রেজাল্টের পর এমন কিছু সোফিয়ার খবর পেপারে এসেছে।ভালো লেগেছে মানুষ একটু দেরিতে হলেও তার স্বপ্নে পূরণে গুরুত্ব দিচ্ছে।কৃতজ্ঞতা সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
কবি কামিনী রায়ের এই কবিতাটি সত্যিই শাশ্বত,যার আবেদন কখনোই কমে না, যত পড়ি ততই মুগ্ধ হই।
জীবনের অনেক ভালোলাগাকে ছেড়েছি এক সময় এই ভেবে পাছে লোকে কিছু বলে! যদিও কাজটি সম্পন্ন করতে পারলে ভালো কিছুই হতে পারত।ভালো থাকবেন :)

২| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৯

বিজন রয় বলেছেন: করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয়ে সদা লাজ।

ভাল লেখা এটি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.